নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মকথা-৬: বন্যার স্মৃতি...

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৩

একটানা বৃষ্টিতে যখন চারপাশের পথ-ঘাট ডুবে যায়, তখন বন্যা সম্পর্কিত একটা ভয় মনের ভেতর উঁকি দেয়।

১৯৮৮ সালে আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। বাবা তখন রাজশাহীতে ছিলেন। আমার পড়াশুনার দিকটা গুরুত্ব দিয়ে আমাকে টাঙ্গাইলের একটি আবাসিক স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তাম। আমার ২ ভাই ২ বোন আর মা এই ৫ জন গ্রামের বাড়িতে থাকতো।

আমাদের আবাসিক স্কুলটা ছিল হাফ বিল্ডিংয়ের, মনে পড়ে একদিন খুব সাধারণ ভাবেই বৃষ্টি শুরু হলো, টিনের চালে সারাদিন সারারাত ঝম ঝম আওয়াজ হতে লাগলো, দরজা-জানালা বাতাসে কাঁপতে থাকলো। আমরা এক রুমে ৬ জন থাকতাম। সবার মাঝেই আতংক বাড়তে থাকলো। এদিকে জানালায় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, একটানা বৃষ্টিতে চারপাশের পথ-ঘাট ডুবে গেলো, পুকুরের পানি আস্তে আস্তে আমাদের খেলার মাঠ গ্রাস করলো। তখন কারো বাসায়/বাড়িতে ফোনের ব্যাবস্থা ছিল না তাই কারো বাসায়/বাড়িতে খবর পাঠানো গেলো না।

এদিকে স্যার/ম্যাডামরা প্রথমে বন্যার ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিলেও শেষে তারাও আতংকিত হয়ে গেলো। এক সময় আমার রুমমেটদের আত্মীয়-স্বজনরা এলো এবং একে একে আমার রুমের সবাই বাড়ি চলে গেলো। একে একে গ্যাস লাইন, পানি লাইন, ফোন লাইন, বিদ্যুৎ লাইন সব অকেজো হয়ে গেলো। বাথরুম ব্যাবহার করার উপায়ও থাকলো না।

আমার বাড়ি থেকে কেউ আমাকে নিয়ে যেতে আবাসিক স্কুলে আসলো না। আমি বাড়ি যাবার জন্য স্যার কে বললাম, কিন্তু স্যার কারো সাথে আমাকে পাঠাতে ভরসা পেলেন না। একদিন আমাদের আবাসিক ভবনের মেঝেতে পানি আসলো। খাটের নিচের পানি বাড়তে বাড়তে এক সময় বিছানা স্পর্শ করতে যাবে এমন সময়, আবাসিক ভবনের দায়িত্বে থাকা কুবুব উদ্দিন স্যার বললেন, তুমি একা বাড়ি যেতে পারবে? আমার বয়স তখন ৯ কি ১০ বছর হবে, আমি বললাম পারবো।

তারপর, নৌকায় রওনা হলাম টাঙ্গাইল শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দুরে কালিহাতি থাকার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কদিম হামজানি গ্রামে। বৃষ্টিতে ভিজে, না খেয়ে, তিনবার নৌকা পরিবর্তন করে সন্ধ্যার আগে যখন বাড়ি পৌছালাম, শুনলাম মা দাদার বাড়ি থেকে নানার বাড়ি গেছে। আমার দাদার বাড়ির লোকজন ভেবেছিল টাঙ্গাইল আমাদের গ্রাম থেকে উচু তাই ডুববে না। তাই আমাকে বাড়ি আনার জন্য কেউ স্কুলে যায় নাই।

পরদিন দাদার বাড়ি কদিম হামজানি থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে নানার বাড়ি ঘাটাইল থানার আনেহলা গ্রামে রওনা হয়েছিলাম। বন্যায় গ্রামের মানুষজন এতো ব্যস্ত আর চিন্তিত ছিল যে, আমার কোন আত্মীয় আমার অসহায়তার বিষয়টা খেয়ালই করলো না। যখন নানার বাড়ি পৌছালাম তখন দেখি সবাই বন্যার পানি আর বাড়ির মানুষের জান-মাল নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত এবং উদ্বিগ্ন। আমার মাকে দেখলাম, তিনি তার ৫ সন্তানকে নিয়ে এই বন্যায় কিভাবে পরিকল্পনা করলেন, সংগ্রাম করলেন এবং আমাদের বাঁচিয়ে রাখলেন।

প্রকৃতির সাথে মানুষ কীভাবে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে, তা আমি নিজ চোখে দেখেছিলাম সেই ১৯৮৮ সালের বন্যায়। কত গরু-ছাগল, পশু-পাখি মরতে দেখেছি, মানুষ মরতে দেখছি…।
এখনও সে কথা মনে হলে খুব অসহায় লাগে…।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.