![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।
আমার মনে পড়ে ১৯৮৮ সালের কথা, সে বছর আমি ই.বি. (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) শিশু স্কুল, সন্তোষ, টাঙ্গাইলে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হই। আমাদের স্কুলটা ছিল বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমরা ৫০ জনের মতো আবাসিক থাকতাম। স্কুলটার নাম শিশু স্কুল হলেও তার নিয়ম এবং পরিবেশ ছিল একটি পরিপূর্ণ মাদ্রাসার মতো। স্কুলের পোশাক ছিল সবুজ রঙের পাঞ্জাবী আর সাদা রঙের পাজামা। ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কিত মিছিল করতে করতে আবাসিক হোস্টেল থেকে মাওলানা ভাষানী’র মাজারের পাশের বড় মসজিদে ফজরের নামাজের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচী শুরু হতো। সারাদিন পাঞ্জাবী পড়ে থাকার পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ-সহ সকল ইসলামী নিয়ম কানুন মানতে হতো।
স্কুলের ইতিহাস হচ্ছে, আবদুল হামিদ খান ভাসানী (ডিসেম্বর ১২, ১৮৮০ - নভেম্বর ১৭, ১৯৭৬) আমাদের স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল টাঙ্গাইলের সন্তোষে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। তিনি সেটা করতে পারেন নাই কিন্তু স্কুলের নামের সাথে ই.বি. (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) কথাটা রয়ে গেছে।
এরশাদ সরকারের শাসন আমলে ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন বাংলাদেশে সরকারীভাবে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় গাজীপুর জেলায় (বর্তমানে যেখানে জাতীয়/উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়) তারপর সেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার শান্তিডাঙ্গা-দৌলতপুর এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। যাই হোক স্কুলে পড়তে এরশাদ সাহেব কেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের সন্তোষে করলেন না এই নিয়ে আমাদের বন্ধুদের মনে অনেক দুঃখবোধ ছিল।
আমাদের আবাসিক স্কুলটা ছিল হাফ বিল্ডিংয়ের। আমরা এক রুমে ১০ জন থাকতাম। আমার রুমমেট ছিল ১। কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ইয়াকুব, ২। ঢাকার আগার গাও এর রবিন, ৩। ঢাকার মিরপুরের মাসুম, ৪। গাজীপুরের টঙ্গীর চেয়ার-আলির আতিক, ৬। পুরাণ ঢাকার ইউসুফ, ৭। টাঙ্গাইলের কালিহাতির বল্লার আজিজ, ৮। টাঙ্গাইলের কালিহাতির এলাংগা এর শওকত, ৯। টাঙ্গাইল সদরের নাসির।
ই.বি. শিশু স্কুলে আমি মাত্র ২ বছর মানে, চতুর্থ আর পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েছি। আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ১। হুজুর স্যার (নাম হযরত আলী) ২। পিটি/অঙ্ক স্যার (নাম কুতুব উদ্দিন) ৩। সঙ্গীত স্যার (নাম মনে নাই) ৪। ডাক্তার স্যার (নাম মনে নাই) ৫। গায়েত্রি ম্যাডাম ৬। শিরিন ম্যাডাম ৭। ইংলিশ ম্যাডাম (নাম আবিদা খানম)। আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর মানুষটির নাম আবিদা খানম, তিনি ছিলেন প্রধান শিক্ষিকা, পড়াতেন ইংলিশ আর আমাকে প্রায় প্রতিদিন মারধর করতেন। সেই সাদা মুখ, সুন্দর লাল টুকটুকে পান খাওয়া ঠোঁট, গোল-গোল চশমা পরা, কাচা-পাকা চুলের রাগি রাগি চোখ আমার এখনও মনেপড়ে...
আমাদের সিলেবাসে সরকারী স্কুলের পড়ানো বিষয়ের বাইরে আরও তিনটা বিষয় ছিল ১। রবুবিয়াত (যেখানে ইসলামী জিহাদ আর সরণীয় বানী পড়ানো হতো) ২। নিসর্গ (যেখানে ইচ্ছে মতো ছবি আকা শেখানো হতো) ৩। আরবি (কোরআন ও হাদিস পড়ানো হতো)
আমি ভেবে দেখলাম, আমার সেই ই.বি. শিশু স্কুলের বন্ধু/বান্ধবদের কোন প্রকার খোঁজ/খবর (ঠিকানা, ইমেল, ছবি, ফেইসবুক এই. ডি.) কিছুই আমার সংগ্রহে নাই। কি দুর্ভাগ্য তাই না…!
পুনশ্চঃ ১৯৯৯ সালে সরকারীভাবে টাঙ্গাইলের উত্তর-পশ্চিমে মাওলানা ভাসানীর স্মৃতিধন্য সন্তোষে মনোরম নৈসর্গিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হয় “মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়”। বর্তমানে ক্যাম্পাসের অধিভুক্ত জায়গার পরিমাণ প্রায় ৫৭ একর। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ, প্রশাসনিক ভবন, পাঁচটি আবাসিক শিক্ষার্থী হল, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, খেলার মাঠ ইত্যাদি ছাড়াও ক্যাম্পাসের অধিভুক্ত জায়গার ভেতরই মাওলানা ভাসানীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত ঐতিহাসিক দরবার হল, প্রখ্যাত সুফি সাধক পীর শাহ জামানের নামানুসারে পীর শাহ জামান দীঘি, মাওলানা ভাসানীর মাজার, একটি মসজিদসহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪১
খেলাঘর বলেছেন:
ভালো।
মাদ্রাসা শব্দটি তুলে দেয়ার দরকার।