![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ৫১০ নাম্বার রুমে বসে বিকেল বেলা আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এমবিএ কোর্সের শেষ পরীক্ষার পড়া পড়ছি, এমন সময় একটি ফোন এলো। আমাকে নাম ধরে চেয়ে এক ভদ্রলোক ভারী গলায় বলল, সে United Capital Limited নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন করেছে। আগামীকাল সকালে আমি ইন্টারভিউ দিতে গুলশান যেতে পারবো কিনা?
আমি বললাম, স্যার আমার আগামীকাল ঢাবি’তে এমবিএ কোর্সের পরীক্ষা আছে। আমি আগামীকাল যেতে পারছি না, তবে পরে কোনদিন শিডিউল থাকলে দিতে পারেন। সে বলল, পরে জানাবে।
আমি ফোন রাখার পর ভাবতে লাগলাম। আমার সিভি ঐ অফিসে গেলো কিভাবে?
আমি Union Capital Limited আর United Cab Limited নাম শুনেছি কিন্তু United Capital Limited শুনি নাই। আর আবেদন করার তো প্রশ্নই উঠে না! তারা হয়তো bdjobs.com থেকে আমার সিভি নিয়েছে ভেবে বিষয়টা মাথা থেকে সরিয়ে রাখলাম।
এমবিএ পরীক্ষা শেষ হবার পর সহপাঠী আব্দুল্লাহ আল মামুন টিপুর সাথে কথা হচ্ছিল। সে আমাকে জানাল, United Capital Limited নামের একটি প্রতিষ্ঠানে আমাদের কিছু সহপাঠী Interm শুরু করতে যাচ্ছে। আমাদের ফিন্যান্স বিভাগের Placement Office থেকে আমাদের ছাত্রদের মধ্যে যাদের সিভি ওরা নিয়েছে তাদের ওরা ফোন করা শুরু করেছে। এবার আমি বুঝতে পারলাম। কেন সেদিন United Capital Limited থেকে আমাকে ফোন করা হয়েছিল!?
টিপু আমাকে জানালো, সে আগামীকাল সকালে United Capital Limited অফিসে যাবে। আমি বললাম, আমিও তোর সাথে যেতে চাই। তারপর দিন সকালে টিপু আর আমি শাহবাগে বৃষ্টিতে ভিজে, পাবলিক বাসে রওনা হলাম গুলশান যার উদ্দেশ্য ছিল United Capital Limited।
আমরা সেখানে গিয়ে আমাদের সহপাঠী কিছু বন্ধুদের (হাফিজ, শরীফ, পলাশ, বাকিদের নাম মনে নেই) দেখলাম, তারাও সেই অফিসে গিয়েছে। টিপু আর আমার ইন্টারভিউ নেয়া হল। আমরা তারপর দিন থেকে United Capital Limited অফিসে প্রাথমিক ট্রেনিং শুরু করলাম।
আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ড যেহেতু ফিন্যান্স সেহেতু তারা আমাদের ফিন্যান্স নিয়ে তত্ত্বীয় তেমন কিছু না শিখিয়ে ফিন্যান্স এর ব্যাবহারিক দিকটা শেখাল। আমরা জানলাম কিভাবে Reuters Network দিয়ে NYSE (New York Stock Exchange) আর USA এর বিভিন্ন Commodity মার্কেট, Currency মার্কেটে Online Trade করা যায়।
United Capital Limited অফিসে যারা আমাদের এসব শেখাচ্ছিল তাদের একজনের নাম ছিল, মিঃ আলি জিরাজ (তার বাবা ছিল পাকিস্তানি আর মা কোরিয়ান, সে ছিল ব্রিটিশ নাগরিক), আরেক ছিল মিঃ ফাসহাদ লোদী (পাকিস্তানি নাগরিক), আর ছিল মিঃ উন (দঃ কোরিয়ান নাগরিক)। দুই জন ইন্ডিয়ান মহিলাও ছিল যারা অফিস চলাতো, মাঝে মাঝে আমাদের অফিস ডিসিপ্লিন নিয়ে কথা বলতো, তাদের নাম এখন আর মনে পড়ছে না...!?
যাই হোক, আমরা ট্রেনিং শেষে জানতে পারলাম; আমাদের বেতন হবে ১০০ ডলার (তখন ১ ডলার ৭৫ টাকার মতো ছিল), বেতন ছাড়াও যাতায়াত খরচ আর অন্যান্য ভাতাও পাওয়া যাবে। আমাদের অফিস শনি ও রবিবার আমেরিকার মতো বন্ধ থাকবে। আমাদের সকল সুবিধা শুনে ভালই লাগলো।
এক সপ্তাহ কাজ করার পরেই আমরা জেনে গেলাম, United Capital Limited প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি পরিচয় দিয়ে (Multinational Financial Information Provider) আমাদের সাথে এক প্রকার প্রতারনা করছে। কেননা তাদের ব্যবসার আর্থিক লেনদেন ও বৈধতার কথা বললে তারা প্রসঙ্গ অন্যদিকে নিয়ে যেতো অথবা বলতো তোমরা নতুন চাকরীতে যোগ দিয়েই ফিন্যান্সের এতোসব ব্যাবহারিক বিষয় কি করে বুঝবে?
আমরা বুঝে গিয়েছিলাম, তাদের আসল কাজ হচ্ছে অবৈধ পথে বাংলাদেশের মানুষকে বিদেশের Stock/ Commodity/ Currency মার্কেটে বিনিয়োগ করানো আর অর্থের পাচার করা...!?
এমন একটি অনৈতিক অফিসে কাজ করতে কি যে অসহনীয় মানসিক সমস্যা হচ্ছিল তা আমরা যারা ছিলাম, তারাই শুধু জানি...!?
এদিকে আমাদের চাকরী বলতে যা বোঝায় তা কেবল Stock/Commodity/Currency মার্কেটে দেশীয় দু’নম্বর আয়ের লোক খুঁজে বেড়ানো। যে কাজটা আমরা কেউই করতে পারছিলাম না!
এদিকে আমাদের ইন্টার্ন হিসাবে দেখাতে হবে United Capital Limited, আর থিসিস পেপার তৈরি হবে অনৈতিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভেবে আমরা যারা সেই অফিসে ছিলাম তারা একটা ভয়ংকর সমস্যায় পরে গেলাম।
তারপর একদিন আমি আর আমার কিছু সহপাঠী মিলে আমাদের ঢাবি’র ফিন্যান্স বিভাগে গিয়ে United Capital Limited এর বিষয়টা মুজিবুল কবির আর মাহমুদ ওসমান ইমাম স্যারকে বললাম। স্যাররা আমাদের United Capital Limited ছেড়ে অন্য অফিসে ইন্টার্ন করার ব্যাবস্থা করে দিলেন। আমার আর টিপুর ইন্টার্ন পড়েছিল জনতা ব্যাংক লিমিটেড বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা, পল্টন।
আমার মনে আছে আমরা সেই অফিসে মাত্র ২ মাস কাজ করেছিলাম। দ্বিতীয় মাসের শেষ সপ্তাহে United Capital Limited অফিসে গিয়ে বেতন হাতে নিয়ে একসাথে ১৬ জনের বেশি ইস্তফা মানে Resign করেছিলাম। সেদিন আমাদের Resign Letter সেই অফিসে থেকে রিসিভ করে নিয়েও এসেছিলাম। চাকরী ছাড়ার পর এতো ভাল লেগেছিল, মনে হয়েছিল যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম।
United Capital Limited অফিসের সাথে ঢাবি’র ফিন্যান্স বিভাগের কিভাবে পরিচয় হয়েছিল জানিনা, তবে আমাদের সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে হাফিজ, শরীফ আরও অনেকের সাথে সেই গুলশানের অফিসে আমাদের ভালই আড্ডা হতো। আমাদের তেমন কোন কাজ ছিল না বলে, গুলশান এলাকার পরিচিত বন্ধু – বান্ধব, আত্মীয়- স্বজন যাকেই পেতাম তার সাথেই আড্ডা দিতাম।
সকালে অফিসে গিয়ে এক ঘণ্টা সময় থেকে চা/কফি পান করে বেড়িয়ে যেতাম আড্ডা দিতে। তারপর দুপুরের খাবার বাইরে খেয়ে বিকেল ৫টার পর আবার অফিসে যেতাম। আধা ঘণ্টা অফিসে আড্ডা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূর্যসেন হলের সেই ৫১০ নাম্বার রুমে ফিরে আসতাম। কি যে আড্ডার দিন ছিল সেই সময়...!?
©somewhere in net ltd.