নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি...

০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩১

আজ ১ জুলাই ২০১৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯২১ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এবার মুল কথায় আসা যাক,

মনেপড়ে আমি টাঙ্গাইলের লায়ন নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম ১৯৯৭ সালে আর আমাদের সেই পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছিল ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭।

আমি সেই স্কুলে আর কলেজে পড়তে যতো বিখ্যাত লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী’র জীবনী আর বই-পুস্তক পড়েছি; সেখানে বেশির ভাগ গুণীজনের জীবনের একটা বিশেষ অংশ ছিল এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তাই ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করার পর ইচ্ছে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। আমার জীবনের তেমন কোন উদ্দেশ্য মানে “Aim in Life” ছিল না, শুধু একটা “Aim” ছিল; আর সেটা হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া।

যাই হোক, সে সময় ঢাকায় থাকার মতো আমার নিকট আত্মীয় তেমন কেউ ছিল না।

আমার গ্রামের বড়ভাই নাম সালাউদ্দিন, সে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগে পড়তো আর স্যার এ.এফ. রহমান হলের জি-২ নাম্বার রুমে (তখন টিন শ্যেডে ওই রুমটা ছিল, এখন নেই) থাকতো। আমি সালাউদ্দিন ভাইকে এক ছুটিতে গ্রামের বাড়ীতে পেয়ে বলেছিলাম, “আমিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই।“ সে বলেছিল, “আমার ঠিকানা লিখে দিয়ে যাচ্ছি, চলে এসো, একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।“

তারপর, একদিন এইচএসসি পরীক্ষার পর আমি ঢাকা গিয়ে সালাউদ্দিন ভাইয়ের সহযোগিতায় ধানমণ্ডি-১৫ নাম্বারের কাছে সিদ্দিকবাগ মেসে উঠেছিলাম (সেই মেস এখন নেই)। আর কোচিং করেছিলাম ঢাকা কোচিং সেন্টারে (সেই কোচিংও এখন নেই)।

আমার ঢাকা কোচিং,, ধানমণ্ডি শাখার সহপাঠী ছিল পলাশ (আমরা একসাথে ঢাবি’তে ফিন্যান্স পড়েছি), আজম (আমরা একসাথে ঢাবি’তে ফিন্যান্স পড়েছি), লিটন (সে ঢাবি’তে মার্কেটিং পড়েছে), সিব্বির (সে ঢাবি’তে একাউন্টিং পড়েছে) আরও অনেকে...।

মনেপড়ে, আমি আর আজম ৩০ মার্চ ১৯৯৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফর্ম কিনে পূরণ করেছিলাম। তারপর দু’জনে ২ মে ১৯৯৮ ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশ পত্র হাতে নিয়ে ঢাবি গিয়ে বিজনেস ফ্যাকাল্টি’র দু’তলায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম।

তারপর আমাদের ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেখতে আজম আর আমি এক বিকেলে সেই মিরপুর (আমি তখন ধানমণ্ডি -১৫ থেকে মিরপুর ১০ চলে গিয়েছিয়াম, এলিজা লস মেসে থাকতাম) থেকে বিআরটিসি বাসে ঢাবি’র বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে গিয়েছিলাম।

আমরা দুজনই ভর্তির ভাইভাতে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ পছন্দ করেছিলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে (বর্তমান নামঃ ফিন্যান্স বিভাগ) আমাদের ৪র্থ ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন হয়েছিল ১লা জুলাই ১৯৯৮ (সেই দিনটা সম্ভবত আমাদের শিক্ষিকা ফারজানা লালারুখ ম্যাডামের চাকরী জীবনের প্রথম দিন ছিল)।

সেই অনুষ্ঠানে স্যার/ম্যাডাম’রা অনেক কথা বলেছিলেন; কিছু কথা এখনও মনে আছে, যেমন এক স্যার বলেছিলেন, “তোমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস পড়ার চান্স পেয়েছ; তারা খুবই ভাগ্যবান। কেননা, আমরা বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে মাত্র ৭৫৬ জন ছাত্রছাত্রীকে পড়াতে পারি। যারা ফিন্যান্স বিভাগ নিয়েছে তারা আরও বেশি ভাগ্যবান; কেননা আমরা ফিন্যান্সে মাত্র ১৯০ জন ছাত্রছাত্রীকে পড়াই।

আমরা বিশ্বাস করি, আগামী ৪ বছরের বিবিএ আর ১ বছরের এমবিএ শেষ করার পর তোমরা নিজেদের পায়ে দাড়াতে শিখবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, আমাদের শিক্ষার মাধ্যমে তোমাদের স্বপ্নের দিকে...।“

“মনেরেখ, এদেশের এক নম্বর সমস্যা অর্থনৈতিক আর তোমরা বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে অর্থ-ব্যাবস্থাপনা শিখতে যাচ্ছ। আমাদের বিভাগের কেউ কোনদিন গরীব থাকতে পারেনা। যদি কেউ গরীব থাকে; তবে সে অর্থ-ব্যাবস্থাপনা বিষয়টি পড়েছে, সার্টিফিকেট নিয়েছে; কিন্তু জীবনকে যুক্তিযুক্তভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে তার নিজের চারিত্রিক কারনে। যাই হোক, তোমাদের সবাইকে ফুল আর কিছু খাবার দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছি।”

সে যাই হোক, তারপরের দিন মানে ২লা জুলাই ১৯৯৮ ঢাবি’তে আমাদের প্রথম বিবিএ ক্লাস শুরু হয়।

মনেপড়ে বিবিএ’র শেষ ক্লাস হয়েছিল ১লা ডিসেম্বর ২০০২ তারপর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছিল ৩০শে ডিসেম্বর ২০০২। তারমানে ৪ বছরের অনার্স কোর্স শেষ করতে আমাদের লেগেছিল ৪ বছর ৬ মাস।

আমি সূর্যসেন হলের ৫১০ নাম্বার রুমে বিবিএ’র চতুর্থ বর্ষের দিকে মানে ২ নভেম্বর ২০০২ থেকে আবাসিক থাকতে শুরু করি। আমার সূর্যসেন হলের বন্ধুদের সাথে মানে নাজমুল, পলাশ, জাহাঙ্গীর, মাহবুব, তারেক, আজাদ, ওদের সাথে আড্ডা আর আলোচনা হতো সূর্যসেন হলের মেস (নেক্সাস) এর রাতের খাবার টেবিলে। আহ! কি দিন ছিল আলোচনা আর সমালোচনার...!!

২০০৩ সালের অমর একুশে বই মেলার কোন একদিন, বাংলা একাডেমী’র মূল ভবনের সিঁড়িতে শিখার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। শিখা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে পড়তো। সে (শিখা) টিএসসি কেন্দ্রিক একটা নাট্য দলে অভিনয় আর ছায়ানটে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখতো। বন্ধু বান্ধবদের আড্ডায়, তাকে প্রায়ই গান গাওয়ার অনুরোধ সামলাতে হতো...!? আমি শিখার কণ্ঠে (তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে টুকরো করে কাছি...) প্রথম গানটা শুনি বুয়েট ক্যাফেটারিয়ার বারান্দায় বসে। আহ! কি চমৎকার ছিল আমাদের সেই ভালবাসা বাসির দিনগুলো...।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে আমাদের এমবিএ পরীক্ষা শেষ হয়েছিল ২৩ জুন ২০০৪, আর এমবিএ’র রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছিল ৫ জুন ২০০৫। তার মানে শুধু একটা পরীক্ষার রেজাল্ট দিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেগে গিয়েছিলো দীর্ঘ একটি বছর।
একটু ভেবে দেখুন, সার্টিফিকেট ছিল না তাই; কি যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বেকারত্বের দিণগুলিতে দিনের বেলা ছোট ছোট চাকরী করেছি আর সন্ধ্যায় টিউশনি…!?

এমবিএ’র রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছিল ৫ জুন ২০০৫, তারপরও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে ছিলাম ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মানে ৬ মাস অতিরিক্ত ছিলাম (সূর্যসেন হলের ছোটভাইদের কাছে এই সুযোগে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কেননা সত্যিই আমার কোন উপায় ছিলনা)

সেই ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ন্যাশনাল ব্যাংকে চাকরী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে এসেছি আজ প্রায় সাড়ে ৯ বছর হয়ে গেছে। এদিকে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন প্রেমিকা শিখা'র সাথে বিয়ে হয়েছে ২০ জুলাই ২০০৭। এখন আমাদের দু’জনের মধ্যে আমি ইউসিবিএল ব্যাংকে কাজ করি আর শিখা ৩৩ বিসিএস কোয়ালিফাই করে চাঁদপুর সরকারী কলেজে দর্শন বিভাগের প্রভাষক। আমাদের এখন একটি সাড়ে ৭ বছরের মেয়ে আছে নাম শৈলী, আর ১ মাস বয়সী ছেলে আছে নাম সৌম্য।

এখনও আমি আর শিখা; সময় পেলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো আমাদের সেই দিনগুলোর গল্প করি। যে গল্পে শিখা সামসুন্নাহার হলে থাকে, আমি সূর্যসেন হলে থাকি। যে গল্পে আমি কবিতা লেখি... আর শিখা গান গায়...। যে গল্পে প্রতিদিন বিকেল হলেই শিখার ফোন আসে আমার মোবাইলে...। আমি টিউশনি শেষ করে রিক্সা নেই পলাশীর উদ্দেশ্যে... তারপর আমরা দু’জন বুয়েট ক্যাফেটারিয়ার কামিনী ফুল গাছটার সামনে পাশাপাশি বসি...। আমাদের গল্পেরা ডালপালা মেলে ধরে...।

যাই হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হয়ে গেছে তাও আজ ১০ বছর হয়ে গেলো, কিন্তু এখনও আমরা ফিন্যান্স বিভাগের সহপাঠীরা যারা ঢাকায় থাকি তারা প্রতিবছর রমজানের “একটি ইফতার” একত্রে ঢাকার ধানমণ্ডিতে (সহপাঠী সাহিনের অফিসে), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অথবা বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে করি। ইফতার একটা উপলক্ষ্য মাত্র, আসল বিষয়টা অন্যখানে; মানে আমরা ঢাবি ক্যাম্পাসের বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে একজন আরেক জনকে যেভাবে সময় দিয়েছি; চরম প্রতিকূল সময়ে পড়াশুনার দিনগুলি কিংবা অনুকুল ভালবাসার রোমাঞ্চকর বয়সে মিলে মিশে থেকেছি। সেই আন্তরিকতাটা এখনও আমাদের হৃদয়ে রয়ে গেছে; আর তাই সেই ক্যাম্পাসের বন্ধুটাকে একবার দেখার জন্য বছরে একটা দিন যতো কাজই থাকুক... ছুটে আসি... আসতে থাকি বার বার... ঢাবি’র ক্যাম্পাসের বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে!

শুভ হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন। দেশে বিদেশে আমার সহপাঠী বন্ধুরা ভাল থাকুক; এই প্রার্থনা আজ করি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:০১

প্রামানিক বলেছেন: আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনী পড়ে আমার ছাত্র জীবনের কতা মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা রইল।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮

খোরশেদ খোকন বলেছেন: আমার লেখা পড়ে ছাত্র-জীবনকে মনে করেছেন জেনে, ভাল লাগছে।
শুভেচ্ছা

২| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২৬

শিরোনামহীনভক্ত দিহান বলেছেন: লাইক

০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮

খোরশেদ খোকন বলেছেন: শুভেচ্ছা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.