![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।
২০০৫ সালে ফিন্যান্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করার মাধ্যমে সূর্যসেন হলের ৫১০ নম্বর রুমে আমার থাকার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
মেয়াদ শেষ হবার পরও সুদীর্ঘ একটা বছর আমি নাজমুলের সাথে সূর্যসেন হলের ৫১০ নম্বর রুমেই বসবাস করেছি... একা একা ভেবেছি... কবিতা লিখেছি... বিকেলে সামসুন নাহার হলে শিখার সাথে গল্প করতে গিয়েছি...
সে সময়, সপ্তাহে ৫ (পাঁচ) দিন সকাল ১০টা-বিকেল ৫টা চাকুরী আর সপ্তাহে ৩ (তিন) দিন সন্ধ্যায় টিউশনি করে পকেট খরচ যোগার করতাম আর ভাবতাম... ভবিষ্যৎ জীবনের কথা...!
২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে, এক শীতের সকালে দৈনিক পত্রিকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের চাকুরীর বিজ্ঞাপন দেখলাম, আবেদন করলাম, লিখিত পরীক্ষা হলো, ভাইভা হলো, নিয়োগপত্র হাতে পেলাম। তারপর কাগজপত্র পরীক্ষা হলো, মেডিক্যাল হলো, সব শেষে ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০০৬, ন্যাশনাল ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার পদে যোগদান করলাম।
ভাবলে অবাক লাগে, আজ ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০১৫, তার মানে আমার চাকুরী জীবনের ৯ (নয়) বছর পার হয়ে গেছে...!
মনেপড়ে, ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সালের ছুটির পর ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারলাম, আমাকে আর ইলিয়াস মাহমুদকে বদলী করা হয়েছে রাজশাহী শাখায়। সেদিন জন-প্রশাসন বিভাগের প্রধান রুহুল আমীন স্যারকে আমার ঢাকার বাইরে যাওয়ার সমস্যাটি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম; কিন্তু তিনি বুঝতে চাইলেন না। আমি ভাঙ্গা মন নিয়ে বাড়ী ফিরে এলাম।
তারপর, আমি আর ইলিয়াস মাহমুদ (ম্যানেজম্যান্ট বিভাগ, ঢাবি) একদিন সকালে গাবতলী থেকে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গ্রিন-লাইন বাসে রাজশাহী রওনা হলাম। বিকেলে রাজশাহীতে পৌঁছে; ইলিয়াস গেলো রাজশাহী মেডিক্যালে ওর এক পরিচিত জনের সাথে থাকবার ব্যাবস্থা করতে; এদিকে আমি আর.এইচ. হোস্টেলে আমার স্কুল জীবনের বন্ধু সুমন (ইংরেজি বিভাগ, রাবি) এর রুমে উঠলাম।
সেদিন বিকেলে আমি আর ইলিয়াস হাটতে হাটতে রাজশাহীর সাহেব হাজার এলাকায় গেলাম, গিয়ে দেখি একটা বিল্ডিংয়ের দু’তলায় ন্যাশনাল ব্যাংকের অফিস দেখা যায়। আমরা দু’জন সাহস করে ঐ অফিসে গেলাম। দারোয়ানকে বললাম, আমরা আগামীকাল এই ব্যাংকে যোগদান করতে ঢাকা থেকে রাজশাহী এসেছি। সেই দারোয়ান একটি পিয়নকে আমাদের কথা বলল, তারপর পিয়নটি আমাদের অফিসের ভেতর নিয়ে গেলো। তখন ঐ শাখার ম্যানেজার ছিলেন, জনাব ওয়াসিফ আলি খান। ম্যানেজার স্যারের রুমে গেলাম, তিনি হ্যান্ডশেক করে অভিবাদন জানালেন। তারপর অফিসের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি কোক, বিস্কুট আর রাজশাহীর বিখ্যাত মিষ্টি দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করলেন। তারপরের দিন থেকে ইলিয়াস আর আমার নতুন জীবন শুরু হলো।
পনের (১৫) দিন পার না হতেই ইলিয়াসের বদলীর চিঠি এলো, সে চলে গেলো আর যোগদান করলো সোমাদিত্ত সাহা। সোমাদিত্ত সাহা রাজশাহীর ছেলে, সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র ছিল। সোমাদিত্ত আর আমি রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের চরম গরমের দিনগুলিতে তিন (৩) মাস (ফেব্রুয়ারি-মে ২০০৬) রাজশাহী শাখায় ছিলাম। আমি সাহেব বাজার এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে হাজী ভবনে (৫ তলা বাড়ির ৪ তলায়) ব্যাচেলর ছিলাম। সোমাদিত্ত আর আমি রাজশাহী কলেজের সবুজ মাঠ, শাহ মখদুম মাজারের মিনার, পদ্মার বুকে সীমাহীন জলরাশি আর বহুদুরে নদীর বুকে সাদা চর দেখে দেখে গল্প করতাম...।
ন্যাশনাল ব্যাংকের রাজশাহী শাখার পর আগ্রাবাদ শাখা, টাঙ্গাইল শাখা আর নারায়ণগঞ্জ শাখায় ছিলাম। ন্যাশনাল ব্যাংকে চাকুরী শুরু (২০শে ফেব্রুয়ারি ২০০৬) থেকে শেষ দিন (০২রা অক্টোবর ২০১১) পর্যন্ত মানে ৫ বছর ৭ মাস অনেক স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। (আগ্রাবাদ শাখা, টাঙ্গাইল শাখা আর নারায়ণগঞ্জ শাখার দিনগুলি অন্যদিন সময় পেলে লেখার ইচ্ছে আছে...)
সেই ০৩রা অক্টোবর ২০১১ ইউসিবিএল-এ চলে এসেছি। আজও ন্যাশনাল ব্যাংক-কে মিস করি…সিনিয়র সহকর্মীদের স্নেহ... ২০০৬ ব্যাচের সহকর্মীদের আন্তরিকতা, ভালবাসাকে মিস করি…ন্যাশনাল ব্যাংক-তুমি চিরদিন ভাল থেকো...
©somewhere in net ltd.