নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির জোনাকিরা... (ফিন্যান্স বিভাগ-০১)

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

মনেপড়ে, আমি আর আজম ৩০ মার্চ ১৯৯৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “গ” ইউনিটের মানে বাণিজ্য অনুষদের ভর্তি ফর্ম কিনে শহীদ জিয়া হলে গিয়ে বড়ভাইদের সাহায্য নিয়ে ফর্মটা পূরণ করেছিলাম।

তারপর দুজনে ২ মে ১৯৯৮ ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশ পত্র হাতে নিয়ে ঢাবি গিয়ে বিজনেস ফ্যাকাল্টি’র দুতলায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম।
সেই ১৯৯৮ সালের শুরু থেকে সুদীর্ঘ তিন মাস চারুকলার দ্বিতীয়/তৃতীয় ব্যাচের অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের “”নন্দন”” নামক চারুকলার ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক একটি ছবি আঁকার কোচিংয়ে আমি কোচিং করেছিলাম।

মনে আছে, সেখানে আমরা ৪০/৫০ জন কোচিং করেছিলাম। যার মধ্যে ১৫/২০ জন চারুকলায় চান্স পেয়ে ভর্তি হয়েছিল। আমার চারুকলার আড্ডা মানে সেই ”নন্দন” কোচিংয়ের বন্ধুদের সাথে আড্ডা...।

ছবি আঁকা, ছবি দেখার যে আনন্দ কিংবা উৎসাহ সেটা আমি সেই ”নন্দন” কোচিং থেকেই পেয়েছি। এখনও আমি চারুকলায় গেলে কিংবা রাস্তার পাশে কোন ছবির প্রদর্শনীর খোঁজ পেলে খুব আগ্রহ নিয়ে ছবি দেখতে যাই। আমার ছবি দেখতে এখনও খুব ভাল লাগে...।

সেই ১৯৯৭ সালে আমি ধানমণ্ডির ১৫ নাম্বারে সিদ্দিকবাগ মেসে থাকতাম আর ঢাকা কোচিং সেন্টার, ধানমণ্ডি শাখায় বাণিজ্য বিভাগ মানে “গ” ইউনিটে ভর্তির জন্য কোচিং করতাম। ক্লাস তেমন একটা করিনি কিন্তু শিট সংগ্রহ করেছিলাম আর পরীক্ষাগুলোও দিয়েছিলাম।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটা ভর্তির ফর্ম কিনেছিলাম, একটা “গ” ইউনিট (বাণিজ্য), একটা “ঘ” ইউনিট (কলা)। সে বছর সব ইউনিটের আগেই “গ” ইউনিট (বাণিজ্য) এর ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেল এবং রেজাল্ট দিয়ে দিল।

আমি যেহেতু “গ” ইউনিটে চান্স পেয়ে গেলাম তাই “ঘ” ইউনিট (কলা) এর ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোন আগ্রহ থাকলো না। তবুও যেহেতু ফর্ম কিনেছি, তাই নিয়ম রক্ষার জন্য ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেলাম।

আমার সামনে/পেছনে আর আশে/পাশে পরিচিত বন্ধুদের পেলাম যাদের সাথে একত্রে কোচিং করেছিলাম। যেহেতু পরীক্ষা ছিল শুধু নিয়ম রক্ষা তাই আশেপাশের যারাই আমার সাথে কথা বলতে চাইছিল তাদের সাথে আমিও কথা বলছিলাম। এমন সময় পরীক্ষার হলের ম্যাডাম আমার দিকে এসে বলল, এই ছেলে তুমি কথা বলছ কেন? আমি বলল, সরি ম্যাডাম, আর হবে না।

তারপর আমি এক ঘণ্টার পরীক্ষার ৪০ মিনিট যেতেই ম্যাডামকে (নাম রাশিদা হুদা) বললাম, ম্যাডাম আমি খাতা জমা দিতে চাই। সে তখন বলল, পরীক্ষা শেষ না হলে খাতা জমা হবে না। যাও, সিটে গিয়ে বসে থাকো। আমি সিটে এসে বসে থাকলাম।
কিছুক্ষণ পরে সেই ম্যাডাম আমার সিটের কাছে এসে বলল, তুমি কি অন্য কোথাও চান্স পেয়েছ? তুমিতো আজকের পরীক্ষা নিয়ে একদম সিরিয়াস না।

আমি বললাম, জি ম্যাডাম। আমি বাণিজ্য অনুষদে চান্স পেয়েছি। ম্যাডাম বলল, এই জন্যই পরীক্ষা বাদ দিয়ে ডিস্টার্ব করছ? আচ্ছা তুমি বসে থাকো, তোমার খাতা জমার সময় হলে আমি বলবো।

আমি দেখলাম, পরীক্ষা শুরুর আগে ছাত্রদের বসার সীটের সিরিয়াল অনুযায়ী খাতা দেয়া হয়; তারপর আবার সিরিয়াল অনুযায়ী খাতা জমা নেয়া হয়। আমি মনে মনে ভাবলাম, পরীক্ষা যেহেতু লেকচার থিয়েটারে হচ্ছে সেহেতু এই পরীক্ষক ম্যাডাম কলা অনুষদের কোন বিভাগের লেকচারার হবে, হয়তো। কিন্তু না ঘটনা অন্য...।

ওদিকে চারুকলায় ভর্তির জন্য আমার চারুকলার এক কোচিং সহপাঠী বন্ধু আমার জন্য ভর্তি ফর্ম কিনেছিল। আমি সেই ফর্ম তার সাথেই চারুকলায় জমা দিয়েছিলাম। একদিন চারুকলার “চ” ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দিন চলে আসলো। আমি যেহেতু বাণিজ্য অনুষদে ফিন্যান্সে চান্স পেয়ে গেছি সেহেতু আমার আর সেই ভর্তি পরীক্ষাটা দেয়া হলা না।

এদিকে ফিন্যান্স বিভাগে ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসের ২ তারিখে ক্লাস শুরু হয়ে গেল। কাকতালীয়ভাবে ক্লাসের আমাকেই ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ বানানো হল।

একদিন দেখি, ক্লাসে এসেছেন সেই ম্যাডাম (রাশিদা হুদা)। আমিতো মুখ লুকিয়ে রাখলাম কিন্তু ম্যাডাম বলল, এই তোমাদের ক্লাসের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ কে?

ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা আমাকে দেখিয়ে দিল, আর ম্যাডাম আমাকে চিনতে পারলো। বলল, তুমি এই ক্লাসের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ? আমি বললাম, জি ম্যাডাম। (আমি বুঝলাম আমার খবর আছে...!?)

সেই ম্যাডাম আমাদের ফিন্যান্স/ম্যানেজারিয়াল একাউন্টিং হবে এরকম একটা কোর্স পড়ানো শুরু করলেন। ম্যাডাম একদম নতুন লেকচারার হয়েছিলেন তাই ক্লাসে তার পারফর্মেন্স তেমন একটা ভাল হচ্ছিল না।
যাই হোক, তিনি একদিন ক্লাসে বললেন, তিনি বইয়ের অনেক যত্ন নেন। তার হাতের বইটা এক সিনিয়র স্যার পড়তে নিয়েছিলেন আর ফেরত দিয়েছেন কিছুটা ছিঁড়ে, এজন্য তার মনটা খুবই খারাপ।

ক্লাস শেষে অনেক কথা বলার পরে, আমাদের জন্য ম্যাডাম তার সেই বইটা নীলক্ষেত থেকে ফটোকপি করতে দিতে রাজি হলেন। আর নীলক্ষেত থেকে ফটোকপি করার দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই পড়লো আমার উপরে।

আমি ম্যাডামের সাথে কথা বলতে বলতে চার তলার ক্লাস থেকে দুতলায় ম্যাডামের রুমে গেলাম। তারপর তিনি আমাকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে যেই বইটা আমার হাতে দিলেন, আমি বললাম, ম্যাডাম বইটা ভাল করে দেখে দিয়েছেন তো? যদি আবার নতুন কোন অংশ ছিঁড়া পান? আপনিতো আবার বইয়ে ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে স্বভাবের।

আমার কথায় ম্যাডাম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। বললেন, তুমি কি বলতে চাও? তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বল। কি করে ম্যাডাম/স্যারদের সাথে কথা বলতে হয় তাও শিখনি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছ! আমার বই আমি ফটোকপি করতে দিবো না, তুমি যাও। এটাও জানো না, কাকে কিভাবে জিগ্যেস করতে হয়?

সে এক সাথে অনেক কথা বলতে লাগলো আর ফুঁসতে থাকলো। আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকলাম। মনে মনে ভাবলাম, সেদিন “ঘ” অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় যদি শান্তভাবে একটা ঘণ্টা বসে থাকতাম কিংবা চারুকলার ভর্তি পরীক্ষার মতো একদমই উপস্থিত না হতাম; তাহলে আজকের এই দুরবস্থা আমার হতো না...।

মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিলাম, এই ম্যাডামের কোর্সে পাশ করতে পারবো না। আগামী বছর যদি আবার এই কোর্স এই ম্যাডাম পড়ায় তাহলে ফিন্যান্স পড়ার সুযোগটাও হাত ছাড়া হয়ে যাবে।

যাই হোক, আমি আর কথা বাড়ালাম না; ম্যাডাম বই না দিয়ে আমাকে সেদিন তার রুম থেকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি ভাবলাম, এই বইয়ের বিষয়টি সে যদি আগামীকাল ক্লাসে আলোচনা করে, তাহলে আমার কি হবে? আগামীকালতো ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা বইয়ের ফটোকপি না পেয়ে আমার উপরেই চড়াও হবে...।

যাই হোক, তারপর দিন ম্যাডাম ক্লাসে এসে আমাকে ডেকে বইটা দিলেন, বললেন আগামীকাল বিকেলে অবশ্যই ফেরত দিতে হবে আর বই ফটোকপির ব্যপারে সাবধান। আমি সেদিনই বই নিয়ে নীলক্ষেত গিয়ে বইয়ের ফটোকপি শেষ করে, নিজের স্কিন সেইফ করলাম।
তারপর ক্লাসের বাইরে ম্যাডামের সাথে একদিন দেখা হল ঢাবি সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, তুমি এখানে কেন? আমাদের বাণিজ্য অনুষদে সেমিনার আছে না? আমি বললাম, ম্যাডাম আমি আমার এক হলের সহপাঠীকে খুঁজতে এসেছি। সে বলল, আচ্ছা। মনে রেখ, বানিজ্যের নতুন বইগুলো তুমি সেমিনারেই পাবে। এখানে পুরানো বই পেতে পারো তাও কোয়ালিটি ভাল হবে না। আর তোমার পড়াশুনার কি খবর? আমি বললাম, জি ম্যাডাম ভাল।

তারপর আরও একদিন মল-চত্তরে রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের সামনের রাস্তায় ম্যাডামের সাথে দেখা, সে বলল এই ছেলে কি খবর? আমি বললাম, ম্যাডাম আসসালামু-কুম, ভাল আছি। আগামীকাল বিরোধীদল হরতাল ডেকেছে, ক্লাসের কি হবে? ম্যাডাম বলল, শোন যে কোন প্রকার হরতাল মানেই ক্লাস হবে না। যদি মেক-আপ ক্লাস লাগে আমি জানাবো, সে ক্লাসও হরতালের দিন ছাড়া অন্য কোন দিন হবে। ঠিক আছে? আমি বললাম, ঠিক আছে।

তারপর আমরা জানলাম ম্যাডাম স্কলারশীপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পড়তে যাচ্ছেন। আমি মনে মনে খুব খুশি হলাম, যাক এই ম্যাডামের সাথে আর ক্লাস করতে হবে না; আর পরীক্ষা অন্য কেউ নিলেই আমার জন্য ভাল...।
শেষে ম্যাডাম একদিন ক্লাসে এসে বিদায় নিয়ে গেলেন আর সেই কোর্সটি আমাদের অন্য স্যার পড়ালেন। তারপর শুনেছি তিনি অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছেন।

আমি ফিন্যান্স বিভাগে সেই ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত প্রায় ৭ বছর পড়াশুনা করেছি আর পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু সেই ম্যাডামকে আর দেশে ফিরে ফিন্যান্স বিভাগে ক্লাস নিতে দেখি নাই।

এখন ভাবি, সেদিন যেটা ভেবেছিলাম সেটা ছিল ভুল। ম্যাডাম আমাকে পরীক্ষায় ইচ্ছে করে কখনই ফেল করাতেন না...। তিনি প্রভাষক প্রভাষকের দায়িত্বটাই পালন করছিলেন, মানে পড়াশুনার পাশাপাশি কিছুটা শাসন করেছিলেন। আর আমি ছাত্র, ছাত্রের কাজটা না করে অহেতুক ভয় আর আতংক নিয়ে ক্লাস করেছিলাম...।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.