![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।
চট্টগ্রাম শহরের টাইগার পাসের উড়াল সেতু যেখানে এসে শেষ, সেই দেওয়ানহাট মোড় থেকে বায়ে দশ-পনের কদম পায়ে হেঁটে দক্ষিণের দিকে দুই নাম্বার গলিটার দিয়ে ঢুকে গেলে যে চারতলা সাদা বাড়ি দেখা যায়, সে বাড়ীর তিন তলায় আমরা চারজন ব্যাচেলার মিলেমিশে থাকতাম। সেই সময়টা ছিল ২০০৬ সালের জুন মাস, আমরা চারজন মানে ন্যাশনাল ব্যাংকের অফিস কলিগ এবং বন্ধুঃ কল্লোল, পারভেজ, পাভেল আর আমি...।
আমাদের চারজনই ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংকে জয়েন করেছিলাম; সে সময় আমাদের ৩ মাস ৩ মাস করে ১ বছরে মোট ৪টা শাখায় কাজ করার শর্ত ছিল। ১ বছরে ৪টি শাখায় কাজ করার পর কাজের মুল্যায়ন করে চাকরীর কনফার্মেশন দেয়া হবে- এটাই ছিল শর্ত।
সে সময় আমাদের প্রবেশন পিরিয়ডের ৪ মাস চলছে, আমি ৩ মাস রাজশাহী শাখায় কাজ করে সবে-মাত্র চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা জয়েন করেছি। আমাদের ৪ জনের মধ্যে পারভেজের বাড়ী নাটোরে, সে রাবি’তে ম্যাথ পড়েছে। কল্লোলের বাড়ী রাজশাহী শহরে সে রাবি’তে পরিসংখ্যান পড়েছে। পাভেলের বাড়ী নেত্রকোনায় সে ঢাবি’তে মার্কেটিং পড়েছে। আর আমার কথাতো আপনারা জানেন, তার পরেও বলছি; আমার বাড়ী টাঙ্গাইল আর আমি ঢাবি’তে ফিন্যান্স পড়েছি।
সে সময় পারভেজে কাজ করতো ন্যাশনাল ব্যাংকের শেখ মুজিব রোড শাখায়, কল্লোল কাজ করতো পাহাড়তলি শাখায়, পাভেল আর আমি কাজ করতাম আগ্রাবাদ শাখায়। পারভেজের শাখা ছিল দেওয়ান হাট মোড়ের পাশেই, সে হেটেই অফিসে যেতে পারতো, কল্লোলও পাহাড়তলী শাখায় হেঁটে যেতো আর দেরি হলে রিক্সায়। অন্যদিকে পাভেল আর আমার আগ্রাবাদ শাখা হওয়াতে দুজন একত্রে রিক্সায় গল্প করতে করতে ধনিওয়ালা পাড়া, চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ হয়ে আগ্রাবাদ হোটেলের পাশে আমাদের ন্যাশনাল ব্যাংকের অফিসে যেতাম।
সে সময় প্রচন্ড গরম চলছিল চট্টগ্রাম শহরে; একদিকে বিদ্যুৎ থাকে না তাই পানি পাই না, অন্যদিকে মশার উপদ্রপ। আমাদের ফ্ল্যাটে রুম ছিল দুইটা, একটা বাথরুম, একটা বারান্দা আর কিচেন। রুম দুইটা হলে কি হবে, সবাই এক রুমেই ফ্লোরিং করে শুয়ে থাকতাম...। আমাদের তেমন কোন আসবাবপত্র ছিল না। থাকার মধ্যে ছিল চার জনের চার দুগনে আঁটটা ব্যাগ, হা হা হা...।
বারান্দার ব্যবহার তো আপনারা জানেন, অফিসের সিঁড়ি ঘর যেমন স্মকিং এন্ড কিসিং জোন; তেমনি আমাদের বারান্দাটা ছিল আমাদের প্রিয় স্মকিং এন্ড টকিং জোন। পারভেজ ফোনে কথা বলায় ছিল উস্তাদ-লোক, সে কত জনের সাথে যে কথা বলতো!? আমি আর কল্লোল মোবাইলে গেইম খেলতাম, খেলতে খেলতে হাত ব্যাথা হয়ে যেতো, তবুও পারভেজের কথা শেষ হতো না - প্রেম বড় ভয়ানক রোগ... হা হা হা।
যাই হোক, পাভেল জন্ডিসে আক্রান্ত হবার কারনে তখন সে ঢাকায় ছিল। আমাদের ফ্ল্যাটে আমরা তিনজন ছিলাম। সেই সময় ২০০৬ সালের জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলছিল। আমাদের যেহেতু টিভি নেই তাই খেলা দেখা হচ্ছিল না। এদিকে সারাদিন অফিসের কাজ করে, আবার রাত জেগে খেলা দেখার বিষয়ে আমার কোন উৎসাহও ছিল না।
যাই হোক, অতি উৎসাহ নিয়ে এক রাতে পারভেজ আর কল্লোল গেল বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখতে। তারা শুনেছিল, চট্টগ্রাম শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় বড় স্ক্রিনে প্রোজেক্টর দিয়ে মেইন রাস্তায় খেলা দেখানো হচ্ছে, তো তারা দুইজন দেওয়ান হাট থেকে হেঁটে হেঁটে অথবা রিক্সায় (মনে নেই) রিয়াজউদ্দিন বাজারে গিয়ে দেখে অনেক লোক জটলা করে খেলা দেখছে। তারা যেহেতু নিউ মার্কেট গেছে খেলা দেখতে; তাই বিপণী বিতানের সামনে গিয়ে এক অপরিচিত লোককে জিগ্যেস করেছিল, “ভাই, নিউ মার্কেট কোথায়?”
অপরিচিত লোকটি যখন দেখলো, নিউ মার্কেটের বারান্দায় দাড়িয়ে দুই যুবক যাদের বয়স ২৪/২৫ তাকে জিগ্যেস করছে, “নিউ মার্কেট কোথায়?” তখন সে মনে মনে নিশ্চিত বুঝে গেলো, এই রাত ১২.০০টায় যারা “নিউ মার্কেট” এর বারান্দায় দাড়িয়ে বলে, “নিউ মার্কেট কোথায়?” তারা অবশ্যই ছিনতাইকারী অথবা মতলববাজ মানুষ!? এটা ভেবে লোকটা মনে মনে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গিয়েছিলো...।
এদিকে পারভেজ আর কল্লোল জানতো না যে, চট্টগ্রামের লোকেরা “বিপণী বিতান”কে ডাক নামে “নিউ মার্কেট” বলে।
পারভেজ আর কল্লোল দুই জনে রাস্তার ওপাশে গিয়ে দেখে সাইন বোর্ডে লেখা রিয়াজউদ্দিন বাজার। রাস্তায় একপাশে বিপণী বিতান আর অন্যপাশে রিয়াজউদ্দিন বাজার...। তারা দুই জনই কনফিউসড... তারা ভাবল, আমরা যে নিউ মার্কেট এলাকায় খেলা দেখতে এলাম, সেই নিউ মার্কেট গেলো কই?
যাই হোক, লোকজন সারাদিনের ক্লান্তি শরীরে মেখে ঘুম ঘুম চোখে প্রিয় দলটির উত্তেজনার পূর্ণ খেলা দেখছিল। এদিকে চট্টগ্রামের মানুষের ভাষাটাও ছিল পারভেজ আর কল্লোলের কনফিউসড হওয়ার অন্য আরেক কারন...!? তারা খেলা দেখার শেষ দিকে এসে আবারও শেষ চেষ্টা চালালো, পারভেজ “বিপণী বিতান” এলাকা প্রোজেক্টর স্ক্রিন থেকে রাস্তা পাড় হয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের দিকে গেলো, গিয়ে এক অপরিচিত লোককে জিগ্যেস করলো, “ভাই, নিউ মার্কেট কোথায়?”
দুর্ভাগ্য হলো, এই পর্যন্ত তিন চার জনকে বিষয়টা জিগ্যেস করার পরেও কেউ খেলা দেখার উত্তেজনায় কিংবা ভীড়ের কারনে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেই নাই, কিংবা দিয়ে থাকলেও চট্টগ্রামের ভাষার কারনে ওরা বুঝতে পারে নাই...!?
দুর্ভাগ্য, কেন বলছি? প্রথম যে লোকটিকে ওরা জিগ্যেস করেছিল, “ভাই, নিউ মার্কেট কোথায়?” সেই লোকটি তাদের দুইজনকে সেই রাতে ছিনতাইকারী অথবা মতলববাজ লোক ভেবে “বিপণী বিতান” এলাকা থেকে এক ফাকে রাস্তা পাড় হয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারের দিকে নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছিল। সেই লোক যখন দেখল, যুবক দুটি আবারও তার-পাশে এসেছে আর তাকেই সেই একই প্রশ্ন করছে, “ভাই, নিউ মার্কেট কোথায়?” তখন তার ভীতির মাত্রা ভয়ানক আঁকার নিয়েছিল...। কারন তখন বাজে রাত ১.০০টা... সময় আর পারিপার্শ্বিক অবস্থান সেই লোকটির মনে কত বড় আতংকের জন্ম দিয়েছিল, একবার অনুমান করুন...!?
তো লোকটি সে সময়, বুকে সাহস এনে একদমে চট্টগ্রামের ভাষায় বলেছিল, আপনারা কি ফাজলামি পাইছেন, নিউ মার্কেটের বারান্দায় দাঁড়াইয়া, এতো রাতে নিউ মার্কেট কই, নিউ মার্কেট কই জিগান...!? এই বলে লোকটি দ্রুত হাটতে হাটতে খেলা দেখা বাদ দিয়ে কোন এক গলির ভেতর ঢুকে গিয়েছিল...।
এদিকে পারভেজ আর কল্লোল রাতে ফ্ল্যাটে ফিরে আমাকে বলল, দোস্ত চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট কোথায়? আমি বললাম, কেন? রেলষ্টেশন পেড়িয়ে গেলে রিয়াজউদ্দিন বাজার, সেই বাজারের শেষে রাস্তার বিপরীত দিকে “বিপণী বিতান” যাকে চট্টগ্রামের লোকেরা “নিউ মার্কেট” বলে।
আমার কথা শুনে, দুইজন হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যাবার যোগার...। পারভেজ বলল, দোস্ত তুই এই কথা আমাকে আগে বলবি না? আরেকটু হইলে তো এই অন্ধকার রাইতে চট্টগ্রামের মানুষের মাইর খাইয়া, জান বাইর হইয়া যাইতো...!?
তারপর, আমি তাদের এই “নিউ মার্কেটের গল্পটা” শুনি..., শুনে সেই অপরিচিত লোকটির কথা চিন্তা করে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করে ফেলি..., হা হা হা...।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৮
খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, আপনি আমাকে এই সাহায্যটা করার জন্য কৃতজ্ঞ থাকলাম। শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৫
কিচ বলেছেন: আপনারা কি ফাজলামি পাইছেন, নিউ মার্কেটের বারান্দায় দাঁড়াইয়া, এতো রাতে নিউ মার্কেট কই, নিউ মার্কেট কই জিগান...- লোকটি আসলে বলেছিলো-” মশকারি পাইওনা তোঁয়ারা! এদ্দুর রাইতত নিউ মার্কেটর বারান্দাত থিয়াই নিউমার্কেট কডে নিউমার্কেট কডে পুছ গরদ্দে” ( প্রকৃত উচ্চারণ লিখতে পারেননি তাই কথাটার চাঁটগাইয়া অনুবাদ করে দিলাম)