নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুত্ব, প্রেম আর কিছু দূরত্ব

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০২

বিভা আর অভির বন্ধুত্ব হঠাৎ করেই...।
একদিন মুবিন আর দিপু লাঞ্চে গিয়েছিলো সূর্যসেন হলে। সেখানেই পরিচয় হলো ছাত্র কল্যাণ সমিতির অন্য সদস্য অভি’র সাথে। বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ হলো এক সপ্তাহেই। অভি জেনে গেলো কথার ফাঁকে, মুবিন আর দিপু দুজনেই হাবুডুবু খাচ্ছে বিভা নামের মেয়েটার প্রেমে!
এক বিকেলে মুবিন, দিপু আর বিভা গিয়েছিল বাংলা একাডেমীর বই মেলাতে। সেখানেই ভিড়ের আড়ালে বর্ধমান হাউজের সিঁড়িতে প্রথম পরিচয় অভি’র সাথে বিভা’র। সেদিন সন্ধ্যায় বিদায় নেবার ফাঁকে অভির কাছে সাহায্য চাইলো গোপনে মুবিন আর দিপু দুজনেই; কি করে প্রেম করা যাবে বিভা’র সাথে!?
তারপর থেকে বিকেলে টিএসসি’তে নাটক আর আবৃত্তির ক্লাসের ফাঁকে যখনই ফ্রি হতো বিভা দেখা যেতো মুবিন আর দিপু সাথে আড্ডায় আরেকটা নতুন মানুষ যুক্ত হয়েছে নাম যার “অভি”। অভি আসলে মুবিন আর দিপুকে সাহায্য করতে চাইছে, নাকি অন্যকিছু!?
এক বিকেলে অভির ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়া হয় বিভা’র সাথে। তারপর গ্রামীণফোনের “রাতের গল্প খরচ অল্প” নামের প্যাকেজের আড়ালে রাত জেগে চলতে থাকে মুবিন আর দিপুর জন্য অভির আলোচনা বিভা’র সাথে। আলোচনা- সমালোচনা-কথোপকথন শেষে অভি জেনে যায়, বিভা আসলে মুবিন কিংবা দিপু নামের দুইজন ভীতুকে নয় ভালবাসে অভি নামের সাহসী ছেলেটাকে...।
এভাবেই একদিন বন্ধুত্ব হারিয়ে যায় প্রেমে; যেখানে অভির কবিতা থেকে অক্ষরগুলো মাত্রা ছাড়িয়ে হেঁটে চলে যায় ক্যাম্পাসের রাস্তা-ঘাট গাছের-ছায়া পেড়িয়ে সূর্যসেন হল থেকে সামসুন্নাহার হলের বারান্দায় আর ছুঁয়ে থাকে বিভার বিভোর মুগ্ধতা।
ছায়ানটে শিখতে থাকা রবীন্দ্র-সঙ্গীতের তাল লয় সুর বিভা’র কণ্ঠালাপে শব্দেরা এলোমেলো হয়ে যায় আর নিজেদের প্রজাপতি মনে করে হাওয়ায় উড়তে থাকে শব্দের দল, তারপর মেঘের চিঠি হয়ে শব্দের বাক্য বানিয়ে নিজেদের নতুন ঠিকানা খুঁজে নেয় সূর্যসেন হলের পাঁচ তলার ৫১০ রুমে, যে রুমের জানালায় ভালবাসা হাওয়ায় হাওয়ার খেলা করে নারকেল পাতার ছন্দে...।
তারপর গল্প আরও এগিয়ে যায়, বিভা’র কণ্ঠে “ তোমার খোলা হাওয়া” গানের সুর বুয়েট ক্যাফের নীরবতাকে টুকরো কাঁচের মতো ভাঙে আর অভি’র বুকের বামপাশে অদৃশ্য তাজমহল গড়ে তুলে...।
সেই থেকে মুবিন আর দিপু অদৃশ্য হয়ে যায় দৃশ্যপটে আর অভি-বিভা নিজেদের হ্রদয়ের দূরত্ব কল্পনার ইরেজার দিয়ে মুছে মুছে; স্বপ্নের কাঠপেন্সিলে আঁকে ভালবাসার বিকেলগুলো…।
সারাদিন ক্লাস-কাজ-ব্যস্ততা শেষে প্রতিটা বিকেলেই নিয়মিত বুয়েটে দেখা হয় দুজনার; সেই বিকেলের মৃদু আলো ছড়িয়ে পড়ে বিভার নরম ঠোঁটে আর অমির কাব্যিক চোখে...।
---
বিভাঃ আমাদের প্রথম দেখাটা কতটা সাধারণ আর কতটা অনিবার্যই ছিল! একবার ভেবে দেখেছিলে?
অভিঃ আমি এখনও ভাবি, মুবিন আর দিপুকে ধন্যবাদ দেয়া যায় কি করে?
বিভাঃ হয়তো তোমার ধন্যবাদ কোন অর্থই রাখেনা; ওদের জীবনে!
অভিঃ সেটা ঠিক, যা ওদের জন্য কিছুই না, সেই কিছুই না জুড়েই আমাদের দুজনের সবকিছু। একেই কি অনিবার্য বলে!?
বিভাঃ কী ভাবছ?
অভিঃ ভাবছি, মুবিন আর দিপু ছিল তোমার বন্ধু আর হতে চেয়েছিল আরও ঘনিষ্ঠ কেউ? কিন্তু তুমি এভাবে ফিরিয়ে দিলে?
বিভাঃ আমি ভাবছি, মুবিন আর দিপুকে পেছনে ফেলে আমার ছোট্ট মনের গহীন ভেতরে তুমি কীভাবে ঢুকে পড়লে!? ওদের বন্ধুত্ব আর ভালবাসায় মাঝখানে নিশ্চিত কোথাও একটা দূরত্ব ছিল?
অভিঃ কী জানি, হবে হয়তো! আমি দুজনকে হারালাম তোমাকে পেয়ে।
বিভাঃ আমিওতো দুজনই হারালাম। এখানে ফলাফল শুন্য, এটাকেই হয়তো অনিবার্য বলে!?
---
দিনের আলো নিভে যাওয়া সন্ধ্যায় অভি আর বিভা, ভালবাসার আলোয় দুজন বন্ধু হারানোর সূত্রটা খোঁজে; তারপর দুজনেই মনের অজান্তেই হেসে উঠে...হাতে হাত রাখে...তারপর বুয়েট ক্যাফে থেকে ভিসির অফিস পেড়িয়ে, মাঠের পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়ে কোয়ার্টার আর ওয়ার্কশপ পেড়িয়ে আবার ফিরে আসে বুয়েট ক্যাফেতে...। এভাবেই চক্রাকারে ঘুরতে থাকে বুয়েট ক্যাম্পাস জুড়ে দুটি মানুষ হাত ধরাধরি করে...।
তাদের পাশাপাশি বুয়েটের ক’জন স্যার আর ম্যাডাম তাদের শরীরের স্থূলতা কমাতে উদ্বিগ্নতা নিয়ে পথ হাটে... আর সেই উদ্বিগ্নতা দেখে দেখে ওরা মুচকি হাঁসে... তারপর ওরা ভাবে; জীবনের শেষ দিনগুলিতে ওরা উদ্বিগ্ন হবে স্থূলতার মোহন সূত্র ধরে...।
(বিঃদ্রঃ এই গল্পের “অভি” ও “বিভা” চরিত্রের আসল নাম “খোকন” ও “শিখা”)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.