![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।
ছুটির দিনটায় আকাশ একা একা ভাবছিল আর নিত্যদিনের মতোই তার বইয়ের শেলফে খুঁজে দেখছিল নতুন কেনা কিংবা উপহার পাওয়া কোন বইটা পড়া হয়ে গেছে; আর কোন বইটা এখনও পড়া হয়ে উঠেনি। ভাবছিল বিকালে পড়ন্ত রোদে বাড়ীর বারান্দা কিংবা ছাদে ঘুরাঘুরি না করে; সে যদি মেঘলার বাসায় চলে যায়, তাহলে কি খুব অন্যায় হয়ে যাবে? কিন্তু ঠিকানা কোথায় পাবে? ফোন করা যায়; কিন্তু ফোন করা কি ঠিক হবে?
সে একটা কবিতার বই পেয়ে গেলো। যেটা একদিন শামিম নামের তার এক সহপাঠী তাকে জন্মদিনের উপহার হিসেবে দিয়েছিল। সেই বইটা মনোযোগ দিয়ে পুরাটা পড়া হয়নি। আজ সেই বইটা মানে সৈয়দ সামসুল হকের “কবিতা সমগ্র” থেকে “পরানের গহীন ভিতর” একা একা বারান্দায় বসে পড়লে মন্দ হয়না। কুড়িগ্রাম অঞ্চলের জীবন যাপন নিয়ে “পরানের গহীন ভিতর” কবিতাগুলো কবি সৈয়দ হক কি যে যত্ন করে লিখেছিলেন! ভাবলে অবাক হতে হয়। আকাশ কবিতা পড়তে পড়তে, তার ফ্ল্যাটের প্রাচীর থেকে একটু দূরে ইউক্যালিপটাস গাছের পাতায় বাতাসের দোলা দেখে ভাবল, একটা কবিতাতো মেঘলাকে পাঠানো যায়, যায় না?
আকাশঃ “পরানের গহীন ভিতর: ১৪
-- সৈয়দ শামসুল হক
কি কামে মানুষ দ্যাখে মানুষের বুকের ভিতরে
নীল এক আসমান- তার তলে যমুনার ঢল,
যখন সে দেখে তার পরানের গহীন শিকড়ে
এমন কঠিন টান আচানক পড়ে সে চঞ্চল?
কিসের সন্ধান করে মানুষের ভিতরে মানুষ?
এমন কি কথা আছে কারো কাছে না কইলে নাই?
সুখের সকল দানা কি কামে যে হইয়া যায় তুষ?
জানি নাই, বুঝি নাই, যমুনারও বুঝি তল নাই।
তয় কি বৃক্ষের কাছে যামু আমি? তাই যাই তয়?
বনের পশুর কাছে জোড়া জোড়া আছে যে গহীনে?
যা পারে জবাব দিতে, গিয়া দেখি শূণ্য তার পাড়া,
একবার নিয়া আসে আকালের কঠিন সময়,
আবার ভাসায় ঢলে খ্যাতমাঠ শুকনার দিনে,
আমার আন্ধার নিয়া দেয় না সে একটাও তারা।”
আকাশঃ এই, শোন? কবিতা পাঠিয়েছিলাম, পড়েছিলে?
মেঘলাঃ হ্যাঁ পড়েছি। কেমন যেন একটা ভিন্ন রকম কবিতা, তাইনা?
আকাশঃ হ্যাঁ, কিছুটা অন্যরকম। তবে পরিবেশ আর আবেদন খুব মধুর। তাইনা?
মেঘলাঃ হ্যাঁ, আমার ভাল লেগেছে।
আকাশঃ গতকাল যখন তোমার ভারত চলে যাওয়া নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমাতে গেছি; তখন মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
আকাশঃ জানো, আমি বানী বসুর একটা উপন্যাসে কলকাতা শহর আর সেখানকার স্কটিশ চার্চ কলেজ হোস্টেলে থাকা একটি মেয়ের কথা পড়েছিলাম। উপন্যাস পড়ে মেয়েটার জন্য কি যে মায়া হয়েছিল...! মনে আছে, সেই মেয়েটার বাড়ী ছিল বনগাঁও (বনগাঁও এলাকাটা বাংলাদেশের বেনাপোলের ওপারে ভারতে) সেখানকার প্রকৃতি আর গ্রামীণ জীবন ছিল বাংলাদেশের মতোই। মেয়েটা বিষণ্ণ হয়ে হোস্টেলে থাকতো আর গ্রামের কথা ভাবতো, জেনো কি একটা রুপকথার দেশকে সে হারিয়ে ফেলেছে...!?
আকাশঃ আমি একবার কলকাতায় গিয়েছিলাম। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। তোমার সেই শান্তিনিকেতনে আমি পনের দিনের মতো ছিলাম। জায়গাটা কি মায়াবী তাইনা? আমার সেখানেই থেকে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল। যদি জানতাম, তুমি সেখানে আছ; তাহলে তোমার সাথে দেখা হতো, তাইনা?
মেঘলাঃ আমি তো ভীষণ ভাগ্যবতী মেয়ে। মিলি আর শিলা শেষ করে আমার উপর তোমার ভূত ভর করেছে?
আকাশঃ আমিতো বলেছি, মিলিকে আমার বন্ধু পছন্দ করতো। আর শিলাকে আমার পছন্দ ছিল একটা পোর্টরেইটের জন্য, যার সাথে বাস্তবতার চাইতে কল্পনাই বেশি ছিল। তুমি শিলার বিষয়টাকে এতো সিরিয়াসলি নিও না। প্লিজ...
মেঘলাঃ আমিতো সে সময় ভিলেন। মানে মেয়ে ভিলেন ছিলাম তাইনা? আমাকে কেউ প্রপজ করলেই স্যারকে বিচার দিতাম। ৪/৫ জনকে তো মার খাইয়েছিলাম হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
আকাশঃ সে জন্যই তো আমি সাহস পেতাম না। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
মেঘলাঃ জানো, স্যার/ম্যাডামরা আমাকে বুঝাতো, মন আছে বলেই তো ছেলেগুলো তোমাকে নিয়ে এতো আবেগ দেখাচ্ছে। তুমি ভালবাসবেনা ঠিক আছে। কেননা তোমার এখনও বয়স হয়নি। কিন্তু মার খাওয়ানোর জন্য বিচার দেয়া কি ঠিক হচ্ছে? ছেলেগুলোর একটা আত্মসম্মান আছে না? যেদিন তোমার আবেগ নিয়ে কেউ এরকম করবে সেদিন বুঝতে পারবে।
আকাশঃ তাই, স্যারেরা প্রেমের ব্যাপারে এতোটা উদার ছিল? ভাবাই যায় না!
মেঘলাঃ জানো, আজ বুজতে পারি। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
আকাশঃ ভেবে দেখো, সুন্দরী। সে সময় তুমি আমাকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলে, কিন্তু আমি তেমন পাইনি (বন্ধুদের জ্বালায়)! অন্যদিকে সাহসও পাইনি তোমাকে কিছু বলার। এখন আমি তুমি দ’জনেই আমাদের ছবি শেয়ার করতে পারছি, লেখা পড়তে পাড়ছি, দেখতেও পারবো (যদি চাও!)। তোমার দেখার কাজ শেষ করে, এখন মনের কাছেই চলে এসেছ। যদিও আমাদের উদ্দেশ্য শুধুই ভাল থাকা আর ভাল রাখা। জীবনের অর্থেকের বেশিতো পার হয়ে গেছে আর নতুন কি? তাই না? কিন্তু দেখ সেই সেদিনের তোমাকে আমি ভাবতে গেলেই এখনকার সুন্দর চেহারার মাস্টার মেয়েটা আমার মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে, সেদিনের বাচ্চা মেয়েটার কাছে যেতেই পারছি না? এই তোমার সেই সময়ের একটা ছবি দাও তো, ভাল করে দেখে নেই। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
মেঘলাঃ তাই? আমার টাইম লাইনে অনেক ছবি আছে তো? এই তুমি কি স্কুলের রি-ইউনিয়নে গিয়েছিলে?
আকাশঃ হ্যাঁ গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমাকে পাইনি। কেন যাও নি? ভারতে ছিলে তাইনা?
মেঘলাঃ না, দেশেই ছিলাম। শরীর ভাল ছিলনা। তার উপর স্কুলের কারো প্রতি আমার তেমন একটা টান ছিলনা যে তাকে দেখতে সেখানে যাবো।
আকাশঃ আমার কথা ভেবে আসতে পারতে?
মেঘলাঃ আরে, আমি কি আর জানি নাকি? তুমি আসবে শুনলে অবশ্যই যেতাম, বিশ্বাস করো।
আকাশঃ জানো, সেই রি-ইউনিয়নের পর, তোমার আরেক বান্ধবী প্রমা ফোন করেছিল আমাকে।
মেঘলাঃ তাই নাকি? ওর প্রতিও তোমার দুর্বলতা ছিল নাকি? কাউকেই বাদ দিচ্ছ না তুমি?
আকাশঃ আরে নাহ, স্কুলেতো ওর সাথে কোন কথা হয়নি। সেদিন ফোন করে বলল, তার স্বামী থাকে মফশল শহরে। এদিকে সে একমাত্র মেয়ের ভিকারুন্নেসা স্কুলের জন্য মেয়েটাকে নিয়ে ঢাকায় এক ফ্ল্যাটে একাই থাকে।
মেঘলাঃ প্রমা সে সময় ভাল করে কথা গুছিয়ে বলতে পারতো না। এখন দেখছি তোমার সাথে ভালই ফোনালাপ করে?
আকাশঃ না, একা থাকে তো; তাই হয়তো ফোন দিয়েছিল।
মেঘলাঃ এখনও ফোন দেয় নাকি? তোমার কিন্তু একটা ভাল পরকীয়া প্রেম করার সুযোগ যাচ্ছে! হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
আকাশঃ না, তারপর আর কোনদিন দেয়নি। তোমার সাথে যোগাযোগ নেই?
মেঘলাঃ আমার সাথে তেমন কারোই যোগাযোগ নেই। স্কুলের বন্ধুদের সাথে অনেক দিন হল দেখা হয় না। কলেজে তো মাত্র দেড় বছর পড়েছি। সব চাইতে বেশি যেখানে ছিলাম মানে শান্তিনিকেতন। সেখানকার বন্ধুদের সাথে প্রতিদিন যোগাযোগ করা সম্ভব না। কেননা আমার ইন্টারন্যাশনাল হলের সব বন্ধুই পৃথিবী’র আনাচে কানাচে ছড়িয়ে গেছে। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
আকাশঃ জানো, আমি গতরাতে ভাবছিলাম আমার জীবনের সবচাইতে ভাল সময়টাতে যখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, গল্প করছি, আড্ডা দিচ্ছি, কবিতা লিখছি কিংবা ধরো পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখ, আরও কতো উৎসব নিয়ে বন্ধু বান্ধবদের সাথে মেতে আছি; ঠিক সেই সময়টাতেই তুমি দেশে ছিলে না!
মেঘলাঃ হ্যাঁ ছিলাম না।
আকাশঃ আমার কেন জানি মনে হল, তুমি এক প্রকার আমার উপর অভিমান করেই এই ঢাকা শহর ছেড়ে দূরে কোথায়ও চলে গিয়েছিলে। যেখানে নতুন করে জীবন শুরু করার ইচ্ছা ছিল তোমার।
মেঘলাঃ বললাম তো সেরকম কিছুই না। আর তোমার আমার সে রকম কোন কমিটমেণ্ট ছিল কি?
আকাশঃ তা ছিল না। কিন্ত তুমি আমাকে পছন্দ করতে; এটা আমি জানতাম।
মেঘলাঃ জানতে, তাতে কি?
আকাশঃ আমারও যে পছন্দ ছিলনা, তা কিন্তু না। আমার ছিল অপারগতা। আমি পারতাম না তোমাকে ঠিক সেভাবে ভাবতে। কোথায় যেন একটা দুর্বোধ্য সংশয় কিংবা সংকোচ সারাদিন আমাকে কষ্ট দিতো।
মেঘলাঃ সে সময় তুমি আমাকে পাওনি; আজতো পাচ্ছ এটাও কি কম?
আকাশঃ জানো, আমার মনে হয় আমাদের মনের আকাশে তখনও কিছু কথা জমা ছিল! আজও কিছু কথা জমা আছে। আমরা দু’জনের কেউই আমাদের সেই না বলা কথাকে পরিষ্কার করে বলতে পারিনি। বলতে পারিনি সেদিন। এমনকি আজও বলতে পারছি না।
মেঘলাঃ আমি ঠিক ওভাবে ভেবে দেখি নাই। তবে হতে পারে। তুমি স্কুলে পড়তে আমাকে কি প্রপজ করতে পারতে না?
আকাশঃ বুজলাম ট্রাই করলে কাজ হতো, হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
আকাশঃ যাক ভাল বন্ধুতো হতে পেরেছি নাকি? সবটাই যে পেতে হবে; তার কি মানে আছে?
মেঘলাঃ আমি তোমার বোকা বোকা চেহারা আর পারসোনালিটি দেখেই ইমপ্রেসড হয়েছিলাম।
আকাশঃ দেখো, তুমি ছিলে ভাল ছাত্রী। আমি ছিলাম ব্যাক-বেঞ্চার। আমি কিভাবে বুঝবো...। তাছাড়া, অতো সাহস আমার ছিলই না।
মেঘলাঃ এখন ভাবলে আফসোস লাগে?
আকাশঃ আমি বুঝি, তোমার আর আমার বড় হয়ে উঠার সে পরিবেশ সেখানে তুমি কিংবা আমি কেউ মানানসই ছিলাম না। যা চাইতাম তা হবার ছিল না। একটা চাওয়ার জন্য জীবনের সব কিছুকে ধ্বংস করা যায় না। কি বল?
আকাশঃ দেখো, জীবনটা অনেক কষ্ট করে তৈরি করতে হয়, তারপর ভালভাবে বসবাস করা যায়; এখানে কতো কিছু আছে? আমি গতকাল যখন তোমার ভারতে পড়তে যাওয়া নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমাতে গেছি, বিশ্বাস কর আমার এক প্রকার বেদনা/কষ্ট হয়েছে। মনে হয়েছে আমি কেন মেয়েটাকে বিদেশে যেতে দিলাম। যদি পারতাম, তাহলে...
মেঘলাঃ তুমি কি পারতে?
আকাশঃ জানিনা, আমি খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা। যদি সেদিন সুযোগ পেতাম তাহলে নিশ্চয়ই তোমাকে যেতে দিতাম না।
মেঘলাঃ কেন? কেন দিতে না বল? আমি তোমার কে?
আকাশঃ সেটা তুমি ভাল করেই জানো। তুমি কে আর আমি কে। আর আমরা কি চাই? কতটুকু চাই? সেটাও আমরা জানি, কি জানিনা?
মেঘলাঃ বললে নাতো, সেই স্কুলের দিনটা ভেবে আফসোস লাগে কিনা?
আকাশঃ হ্যা লাগে। সে সময় ইমপ্রেস করার চাইতে... এখন ইমপ্রেস করার মূল্য অনেক বেশি, কি বল? সেই সময় কিছু হলে আবেগের স্রোতে ভেসে যেতাম, নিজেকে সামলাতে পারতাম না!? এখনতো দুজনই ভাল আছি, কথা বলছি! হা হা হা
মেঘলাঃ এই আমার কি মাস্টারি মাস্টারি স্বভাব আছে? চরিত্রের কোথায়ও?
আকাশঃ না নেই। আমি গত কয়েক দিনে বুঝিনি। তবে থাকলে ভাল হতো।
মেঘলাঃ কেন? একথা কেন বলছ?
আকাশঃ ভালবাসা মানে এক প্রকার শাসন। আমি শাসিত হতে চাই... হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
মেঘলাঃ আমার মনে হয়। আমি আসলে তোমার মতো করে; নিজেকে গোছাতে পারি নাই।
আকাশঃ কেন? একথা কেন বলছ?
মেঘলাঃ এইযে তুমি, ইঁচড়ে পাকা ছেলেদেরর মতো। আই মিন পাকু ছেলেদের মতো। আমার সাথে মানে একটা মাস্টারের সাথে দিনের পর দিন ফ্ল্যাট করে যাচ্ছ...হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
আকাশঃ শোন, আমার টাইম লাইনে দেখবে, আমি পড়াশুনা করি আর মুভি দেখি। কেননা, আমি ভাল করেই জানি; আমি একটা জীবন নিয়েই বেঁচে থাকবো। আর অন্য কোন জীবন পাবো না! যদি গল্প আর মুভির মাধ্যমে অন্যের জীবনটাকে ধার হিসেবে পাই; এজন্যই এসব করি।
আকাশঃ আমাকে ইঁচড়ে পাকা বলছ? তাহলে জেনে রেখো, আমি আসলেই সহজ সরল এবং তোমার কল্পনার মতোই...। শুধু বড় হয়েছি বলে, গতানুগতিক মানুষের মতো বলি/চলি কিন্তু মনটা আমার আগের মতোই...। তোমার সেই বোকা বোকা সহজ সরল আর ব্যাক-বেঞ্চার ছেলেটা জীবনের এতোটা পথ পেড়িয়ে এসেও, সেই ব্যাক-বেঞ্চারই রয়ে গেছে। যে বিস্ময় নিয়ে একদিন আমি তাকিয়ে ছিলাম তোমার দিকে, এখনও তাকিয়ে থাকি তোমারই দিকে…।
মেঘলাঃ তবুও আমি মেলাতে পারিনা তোমাকে?
আকাশঃ শোন, তুমি তোমার মতো তোমাকে গুছিয়ে নিয়েছ; আমি আমার মতো আমাকে গুছিয়ে নিয়েছি। এখানে তোমার মতো তুমি আর আমার মতো আমি... হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
মেঘলাঃ তুমি জানো। প্রবাস জীবনকে আমার কাছে দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথ মনে হয়েছে। যেই দড়িটা মাটি থেকে অনেক উঁচুতে টানটান করে বাঁধা থাকে, যার নীচে কোন জাল থাকেনা। আমি পারিনি প্রবাস জীবন উপভোগ করতে। তুমি যেভাবে ঢাকাতে ক্যাম্পাস জীবনকে উপভোগ করেছ। এখন ভাবলে খুব কষ্ট লাগে। তোমাকে আমি বুঝাতে পারবো না, সে কষ্ট কতটা ভয়াবহ।
আকাশঃ আসলেই, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আর পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে ভিন্ন একটা দেশে পড়ে থাকার যে কি যন্ত্রণা? তা আমি কোনদিনই বোঝার চেষ্টাই করিনি।
মেঘলাঃ গত বিশ বছরে তুমি ঢাকায় বসবাস করে যেভাবে মানুষ হয়েছ। সেটা অন্যরকম একটা ব্যাপার। তোমার প্রতিদিন বেঁচে থাকা, খাবার দাবার, হাসি কান্না, আড্ডা –কথা বলা এসব মিলে তোমার যে একটা পরিচিত জগত সেটা খুব গোছানো। আমি কিভাবে তোমার মতো এমন একটা শহর পাবো? আমার যখন ঢাকা শহরের খুব দরকার ছিল তখন আমি ছিলাম না। আজ যখন আমি ঢাকায় থাকছি তখন ঢাকা শহরটা আমার খুব অপরিচিত লাগছে। জানো, এই তোমাকে আমি সেই স্কুলের সেই তোমার সাথে মেলাতে পারিনা। তুমি কতো বড় হয়ে গেছ। কতো লোক তোমাকে চেনে-জানে। আমার কেমন যেন লাগে, বুঝাতে পারবো না।
আকাশঃ জানো, ভালবাসা হলো প্রস্ফুটিত গোলাপের মতো। যে একাকী ফুটে থাকে নীরবে। যেখানে নীরব, আরও নীরব, সবই নীরব; সেখানে নীরবতাই শত সহস্র কথা বলে। তুমি এতো নীরব কেন বলতো?
মেঘলাঃ না। নীরব কোথায়? আমিই তো সব কথা বলছি।
আকাশঃ তোমার মনের কোথায় যেন এক রাশ নীরবতা জমাট বেঁধে আছে। তুমি জানো না, সুন্দরী তুমি জানো না।
মেঘলাঃ আমি আসলেই হয়তো জানিনা। তুমি লেখালেখি করো তো; তুমিই ভাল জানো নীরবতা কাকে বলে?
আকাশঃ জানো, একটা আচ্ছন্নতাবোধ (বেদনা/শূন্যতা) আমাকে জড়িয়ে রাখে সারাক্ষণ। আমি হয়তো বলতে চাই, আসলে জীবনে ভুল-শুদ্ধ বলে কিছু নেই। জীবন জীবনই। আমাদের যেদিন গেছে তার ভুল কি আর শুদ্ধ কি। আমরা কি পারবো সেদিন ফেরাতে?
আকাশঃ দুষ্টামি বাদ দিয়ে, একটু সিরিয়াস কথা বলে ফেললাম। আমার মাথা মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে, তাই না? বার বার সেই পুরানো দিনের কথা মনেপড়ে যাচ্ছে...।
আকাশঃ ঘুমিয়ে গেলে নাকি, ইয়েস/নো বল, আমিও ঘুমাতে যাই...!?
মেঘলাঃ না বল, শুনছি...
আকাশঃ ঠিক আছে চলো, ঘুমাতে যাই। শুভ রাত্রি
মেঘলাঃ শুভ রাত্রি
তারপর আমরা দেখলাম, তাদের মেসেঞ্জারের শেষ মেসেজটি ছিল এরকম।
আকাশঃ “মেঘলা আকাশ মানে আমাদের সম্পর্কটা বিষণ্ণ মনে হলেও একটা বৃষ্টির সম্ভাবনা কিন্তু থেকেই যায়...। তুমি যেমন ভালবাস রাতের বৃষ্টি তেমনি আমি ভালবাসি বৃষ্টির জল...। মেঘলা আকাশ মানে ধোঁয়াশা হ্রদয়ের গহিনে শত সহস্র অপেক্ষা...। তুমি অপেক্ষায় থাকো, আমিও অপেক্ষায় থাকি...। অপেক্ষা মানেই হয়তো আমাদের ভালবাসাবাসি...।”
©somewhere in net ltd.