![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।
শত বছরের পুরানো দুতলা বাড়ীর দক্ষিন-পশ্চিম কোনায় আমার বিছানা ঠিক করে দেয়া হলো। বোর্ডিং স্কুলের মেইনগেট দিয়ে ঢুকে সবুজ মাঠের মাঝামাঝি গিয়ে বায়ে মোড় নিয়ে ১৫/২০ কদম হাঁটলেই ছাদবিহীন একটা সিঁড়ি সোজা চলে গেছে পলেস্তারা উঠে যাওয়া জীর্ণ আর স্যাত স্যাতে পুরানো রাজবাড়ীর দুতলায়। দুতলায় গিয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখি, মাঝে হাটা-চলার জায়গা রেখে এক সাড়িতে সাতটি আর অন্য সাড়িতে ছয়টি মোট তেরটি বিছানা সাজানো। সারি সারি বিছানার মধ্যে সিঁড়ির বিপরীত দিকে যে বিছানাটি, সেটাই হলো আমার বিছানা। দরোজা খোলা আর লাগানোর কাজটা উত্তরাধিকার সুত্রে এই বিছানার ছেলেটিই করে থাকে!?
আমার বিছানার বিপরীত দিকে মানে উত্তরে ছিল দরোজা; পূর্ব পাশে ছিল মাসুম ভাইয়ের বিছানা। পশ্চিম আর দক্ষিন পাশে দেয়াল আর একটি করে জানালা। দক্ষিনের জানালার পাশেই একটি কাঁচা রাস্তা; যে রাস্তায় মানুষ পায়ে হেঁটে, রিক্সায় অথবা ভ্যানে সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা নাগাদ যাতায়াত করে। দক্ষিনের জানালার রাস্তাটাই একটু উত্তরে বেঁকে পশ্চিমের চলে গেছে। আমার দক্ষিন আর পশ্চিমের জানালা দুটি ত্রিভুজের মতো লেপটে ছিল রাস্তার বাঁকে। দক্ষিনের জানালা দিয়ে তাকালে দেখা যেতো রাস্তাটার মাথা টাঙ্গাইল শহরের দিকে চলে গেছে; আর উত্তরের জানালা দিয়ে তাকালে দেখা যেতো রাস্তাটা হাই স্কুলের মাঠ পেড়িয়ে, বড় মসজিদ হয়ে গাছ-গাছালী ঘেরা গ্রামে চলে গেছে।
দক্ষিনের জানালা দিয়ে তাকালে, ঝাঁকড়া চুলের জটাধারী ঋষির মতো দেখতে একটা বয়সী অশ্বত্থ গাছ (বট গাছ) দাড়িয়ে ছিল একা। রাস্তাটা বেঁকে যাওয়ার মোড়ে দড়িয়ে ছিল একটা নিভু নিভু ল্যাম্পপোস্ট। প্রায়ই সেটার বাল্ব চুরি হতো আর আমাদের বোর্ডিঙের জানালা দিয়ে আলো গিয়ে পড়তো অশ্বত্থ গাছের ডালে।
সেই গাছের ঘন সবুজ আর ভারী পাতা ফাঁক দিয়ে আলো এমনভাবে রাস্তায় ছড়িয়ে যেতো, জেনো এটা রাস্তা নয় একটি ঘন-গহীন বনের আঁধার। রাস্তা আর গাছ পেড়িয়ে ১০/১৫ কদম পায়ে হাটার দুরেই ছিল সন্তোষ জমিদারদের সব চাইতে বড়পুকুর। সেই পুকুরের উপর দিয়ে দক্ষিনা বাতাস উড়ে আসতো অশ্বত্থ গাছের ডালে। আর সেই গাছের পাতার ছায়া এলোমেলো কাঁপতো সুনসান রাস্তার বুকের উপর নীরবে।
রাতে অশ্বত্থ গাছের উপর বোর্ডিঙয়ের আলো পরে যে ছায়া তৈরি করতো সে ছায়া বাতাসে কেঁপে কেঁপে ভীতি তৈরি করতো মনের কোণে। জীবনে প্রথম রাস্তার উপর সেই আলো ছায়াকেই আমি ভূত বলে ধরে নিয়েছিলাম!? সে কথা এখন ভাবলেই হাসি পায় মনে মনে।
একটি দিনের শুরু হতো বড় মসজিদে ফজরের আযানের ধবনির মাধ্যমে। আযানের সাথে সাথেই আমাদের রুমের দরোজায় বেতের লাঠির আঘাত পড়তো, আমরা সকল আলসেমি ঝেড়ে ফেলে বিছানায় উঠে বসতাম। ঘুম থেকে উঠেই সিঁড়ি ভেঙে নীচে যেতাম কারন সিঁড়ির গোঁড়ায় ছিল বাথরুম। সারি বেঁধে বাথরুম সেরে চাপকল (টিউবয়েল) চেপে পানি নিয়ে দাঁত ব্রাশ আর অজু করতাম। সবাই মিলে একটি বড় লম্বা লাইন ধরে এগিয়ে যেতাম বড় মসজিদের দিকে আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হতো, “লা ইলাহা ইল্লাল লা, মুহামাদুর রাসুল্লাহ...।”
ফজরের নামাজের পড় বোর্ডিঙয়ে ফিরে শুরু হতো আমাদের হুজুর স্যারের নেতৃতে আরবি শিক্ষা (কালেমা, নামাজের নিয়ম, আরবি হরফ, ব্যাকরণ, কোরআন আর হাদিস)। আরবি পড়ার ক্লাসে হযরত আলী হুজুর বেতের ব্যাবহার শুরু করতেন। প্রথমেই খবর আসতো আজ কে কে নামাজে যায়নি? তারপর কে কে বিছানায় প্রস্রাব করেছে? আর কে কে পড়া শিখেনি? তিন দফা বেতের মার শেষ হলে নতুন পড়া শুরু হতো। চিৎকার করে উচ্চারণ করে করে আরবি পড়ানো হতো। আমাদের দু’চোখের আলসেমি ঘুমগুলো দরোজা জানালা দিয়ে শয়তানের মতো পালিয়ে যেতো...।
আরবি পড়ার শেষে ছুটি হলে, আমাদের মধ্যে যারা বড় আর সাঁতার জানে তারা পুকুরে আর যারা ছোট আর সাঁতার জানেনা তারা চাপকলের পানিতে গোছল করতো। গোছল করা আর স্কুলের জন্য তৈরি হওয়ার কাজে আমাদের একজন গ্রাম্য পুরুষ (নুরু মিয়া) আর একজন গ্রাম্য মহিলা (নাম ভুলে গেছি) সাহায্য করতো।
সকালের নাস্তা ছিল খুবই সাধারণ। ডাইনিং রুমে কথা বলার কোন নিয়ম ছিল না। হাতের আঙুলের মাধ্যমে বোঝাতে হতো আমাদের কার কি লাগবে। যেমন বাম হাতে উচু করে এক আঙুল প্রদর্শন মানে “ভাত” লাগবে, দুই আঙুল প্রদর্শন মানে “পানি”, দুই আঙুল প্রদর্শন মানে “লবণ” ইত্যাদি। সকালের নাস্তায় কোনদিন পাতলা খিচুড়ি, কোনদিন ডাল-ভাত, কোনদিন আলুভর্তা ভাত দেয়া হতো।
আমাদের প্রাইমারী স্কুলের হেড মিস্ট্রেস ছিলেন আবেদা খানম তিনি আমাদের ইংরেজি পড়াতেন। দেখতে শাদা ধব ধবে মানে দুধে আলতা গাঁয়ের রঙ কিন্তু মেজাজ ছিল ঠিক জমের মতোই। তার পান খাওয়া লাল ঠোঁটের বাঁকানো তিরস্কার আর চোখের ভ্রু উচিয়ে নাক সিটকানো রাগ ছিল যেমনি কড়া তেমনি তীব্র যন্ত্রনার। তার মুখের কথা শুনেই আমাদের মনে হতো, এইতো কানের পর্দা বুঝি ফেটে যাবে।
গরমের দিনে আম গাছের ছায়ার আর শীতের দিনে টিনের দো’চালা ঘরে আমাদের ক্লাস হতো। আমরা ক্লাস শুরুর আগে স্কুলের আঙিনায় দাড়িয়ে থাকা বকুল আর ছফেদা গাছের ডাল থেকে বকুল ফল আর ছফেদা ফল পেড়ে খেতাম।
স্কুলের কিছু শিক্ষক আমাদের বোর্ডিং এ আবাসিক থাকতেন, যেমন হযরত আলী হুজুর, কুতুব উদ্দিন স্যার আর সঙ্গীত স্যার। অন্যদিকে ডাক্তার স্যার আর সাবেত্রি ম্যাডাম বোর্ডিং স্কুলের পাশেই ভাড়া থাকতেন। অন্যদিকে আবেদা খানম, শিরীন ম্যাডাম আর অন্যরা টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রতিদিন ক্লাস নিতে আসতেন।
আমাদের স্কুলে বোর্ডিং মানে আবাসিক ছাত্ররা ছাড়াও এলাকার স্থানীয় ছেলেমেয়েরা পড়তে আসতো। প্রাইমারী স্কুলের পাশে ছিল গার্লস হাই স্কুলের মেয়েদের আবাসিক হল। ছেলেমেয়েরা একত্রে পঞ্চম শ্রেণী শেষ করার পড় ষষ্ঠ শ্রেণীতে গিয়ে মেয়েরা গার্লস স্কুলে আর ছেলেরা বয়েস হাই স্কুলে বিভক্ত হয়ে যেতো।
প্রাইমারী স্কুল আর গার্লস হাই স্কুলের মাঠ আর পুকুর মানে স্কুলের সীমানা ছিল একটাই। অন্যদিকে বয়েস হাই স্কুলটা একটু দূরে ছিল। তাই এই স্কুলে কোন ছেলে পঞ্চম শ্রেণী শেষ করে আর স্কুলের সীমানায় ঢুকতেই পারতো না। হা হা হা।
দুপুরে আমরা প্রাইমারী স্কুল বা গার্লস হাই স্কুল যাই বলি না কেন, সেটার মেইন গেট দিয়ে বেড়িয়ে হেঁটে হেঁটে বয়েস হাই স্কুলের চোরকাটা ভর্তি মাঠ পেড়িয়ে বোর্ডিংএ যেতাম। গিয়ে দুপুরে লাঞ্চ করে, জোহরের নামাজ পরে আবার ফিরে আসতাম স্কুলে। দুপুরের লাঞ্চ বলতে যা ছিল, তাও খুবই সামান্য আয়োজন; যেমনঃ এক বাটি সবজি, একটা বাটি তরকারী আর ইচ্ছে মতো ভাত ও ডাল।
স্কুলে আমাদের টিনের ঘরটা ছিল পূর্ব-পশ্চিম দিকে লম্বা, ঘরের মেঝে ছিল পাকা। আমি উত্তর দিকের একটা জানালা হাতের বাম পাশে রেখে ক্লাস শুরু করতাম। ক্লাসে মন না বসলে তাকিয়ে দেখতাম দূরে মাঠের মধ্যে রাখাল বালকেরা গরু আর মহিষ নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। আমার গ্রামের বাড়ী ছিল উত্তর দিকে তাই আমার মনে হতো আমার চোখের সামনে থাকা গ্রাম আর মাঠটাই আমার দাদার বাড়ীর সীমানা...।
আমরা পড়া না পাড়লে স্যারের বলতো, উত্তরের দিকে তাকিয়ে দেখো রাখাল বালকেরা হাল-চাষ করছে, তোমরা কি গরু নিয়ে থাকতে চাও? জীবণটা গরু ছাগলের সাথে কাটাতে চাও? আমরা মাথা ডানে-বায়ে নাড়ীয়ে “না” সুচক উত্তর দিতাম। যদিও মনে মনে সবাই চাইতাম মাথা উপর-নিচ করতে!?
আছরের নামাযের আগেই আমাদের স্কুল ছুটি হতো। সেই স্কুল ছুটির মধ্যে কোন উৎসাহ থাকতো না। আমরা বোর্ডিং এ গিয়ে নামাজ পরে কেউ কেউ গল্প করতাম, আর শরীর ক্লান্ত লাগলে লম্বা ঘুম দিতাম। আমাদের মেইন গেট খুলে দেয়া হতো মাঠে খেলাধুলা করার জন্য। আমরা সেই সময়েই একটু মেইন রাস্তায় যাবার জন্য স্যারদের পারমিশন নিতাম। প্রায়ই আমরা সন্তোষ ডাকঘরে গিয়ে নিজের চিঠি নিজেই পোস্ট বক্সে ফেলে আসতাম আর শুকটা খাবার মানে চিঁড়া, মুড়ি, বিস্কিট, গুড়ো দুধ কিনে নিয়ে আসতাম।
বন্ধুদের মধ্যে যার ট্র্যাঙ্কে বেশী বেশী খাবার দাবার থাকতো তার কদর সবার কাছেই বেশী বেশী থাকতো। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মানে মাগরিবের নামাযের সাথে সাথে বোর্ডিং এর মেইনগেট বন্ধ করা হতো। আমরা অজু করে নামাজ পরে রাতের খাবার খেতাম। রাতের ডিনার বলতে যা ছিল, তা খুবই সাদামাটা; যেমনঃ এক বাটি সবজি, একটা বাটি তরকারী আর ইচ্ছে মতো ভাত ও ডাল। তবে সপ্তাহে একদিন আমাদের এক গ্লাস করে গরুর দুধ দেয়া হতো রাতের খাবারের পরে।
রাতের পড়াশুনা শেষ করতে হতো ঠিক ১০টায় কেননা তারপর আমাদের বোর্ডিং এর কোন রুমে বাল্ব জ্বালানো নিষেধ ছিল।
আমাদের আবাসিক স্যারদের মধ্যে কুতুব উদ্দিন স্যার খুবই রসিক মানুষ ছিলেন, তিনি বিকেলে খেলাধুলার সময় হারমোনিয়াম বাজিয়ে উত্তম সুচিত্রা জুটির বিখ্যাত গানগুলো গাইতেন। আমরা গানের প্রশংসা করলেই কিছু কিছু সুবিধা পেতাম যেমন, বিকেলে পারমিশন নিয়ে মেইন রোডে যাওয়া। শরীর খারাপ বলে হুজুর স্যারের আরবি ক্লাস ফাঁকি দেয়া ইত্যাদি।
আমার রুমের বিছানার ডানে দেয়াল আর উত্তর দিকে দরোজা থাকায় বামে ছিলেন মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের মামা টুটুল ছিলেন তার বামে। মাসুম ভাই আর টুটুল মামা ছিলেন ঢাকার মিরপুর এলাকার। অন্যদিকে ইউসুফ ছিল পুরাণ ঢাকার। রবিন ছিল আগারগাওয়ের। মনির, আতিক ছিল টঙ্গীর চেরাগালি এলাকার। আজিজ ছিল টাংগাইলের কালিহাতি থানার বল্যা গ্রামের। শওকত ছিল টাংগাইলের কালিহাতি থানার এলেঙ্গার। নাসির ছিল টাংগাইল শহরের। ইয়াকুব ছিল কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারের। বাকিদের কথা মনে পড়ছে না!
আমাদের দিনরাত খুব কড়া শাসন আর পড়াশুনার চাপে চলছিল। আমরা শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সকালে গোছলের সময় নিজের কাপড় নিজে ধোয়ার কাজ করতাম, আমাদের রান্নার জন্য আনা খড়ি/লাকড়ি আমরা হাতে হাতে রান্না ঘরে পৌঁছে দিতাম, বোর্ডিং এর মাঠ, ঘাট আর আঙিনার সকল ময়লা, আগাছা নিজ হাতে পরিষ্কার করতাম।
ছুটির দিনে বিকেল হলেই বন্ধুদের গার্ডিয়ানরা আসতো, তারা বিভিন্ন খাবার দাবার নিয়ে আসতো। আমরা বন্ধুর গার্ডিয়ানের ভাল খাবারের আসায় পথ চেয়ে থাকতাম। সুযোগ পেলে একটু তাদের সাথে টাঙ্গাইল শহর ঘুরে আসার জন্যও চেষ্টা চালাতাম...।
যাই হোক, সেই ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শীতের দিনের এক বিকেলে আমরা বন্ধুরা মাঠে অনুষ্ঠিত হাই স্কুলের বড়ভাইদের ফুটবল খেলা দেখছিলাম আর বিশ্বসেরা ফুটবলার কালো মানিক মানে “পেলে” কে নিয়ে আলোচনা করছিলাম।
দেখতে দেখতে সেদিনও আমাদের সামনেই সূর্য ডুবে গিয়েছিলো আর একটা ঘার সন্ধা নেমে এসেছিলো...।
আমরা মেইনগেট দিয়ে বোর্ডিংএ গিয়ে রুমে যাবার সিঁড়ির নীচের চাপকল থেকে অজু করে, মাগরিবের নামাজ পরে, রাতের খাবার খেতে যাবো এমন সময় জানতে পারলাম, “আমাদের একজনকে নাকি পাওয়া যাচ্ছেনা?”
কিন্তু কাকে পাওয়া যাচ্ছে না!? আমরা অস্থির হয়ে গেলাম। প্রতি বৃহস্পতিবার স্কুল শেষে কেউ কেউ গার্ডিয়ানদের সাথে শুক্রবার ছুটির দিনটা কাটাতে টাঙ্গাইল শহরে চলে যেতো। তাই আমাদের হিসাব মেলাতে শনিবারের স্কুলের ক্লাস ছাড়া উপায় ছিল না।
যাই হোক, আমরা শুনলাম এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তি আর বোর্ডিং স্কুলের পরিচালনা কর্তৃপক্ষের লোকেরা আমাদের বোর্ডিং স্কুলের স্যারদের ধমক দিয়ে দিয়ে কথা বলছেন কিন্তু কেউ সেই মিসিং ছেলেটার নাম বলছে না।
আমাদের কাছে খবর পৌঁছে দিচ্ছিল নুরু মিয়া যে কিনা মেসেনজার পদে চাকরী করে আর আমাদের দেখাশুনার কাজ করে থাকে। রাত গভীর হলো আর আমাদের বোর্ডিংএ পুলিশ এলো। দমকল বাহিনীর লোকজনও এলো, সবাই বলাবলি করতে লাগলো এতো বড় পুকুর কিভাবে সার্চ করবে তারা?
তারপর দিন সকালে আযান হলো কিন্তু আমাদের রুটিন মতো নামাযের জন্য বড় মসজিদে নিয়ে যাবার জন্য কেউ এলো না। আমরা ঘুম ভেঙে একটা অজানা/অচেনা উত্তেজনা নিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে লাগলাম। তারপর আমরা উত্তরের জানালা খুলে দিলাম। দেখলাম অশ্বত্থ গাছের ডালে আর পাতায় নতুন সূর্যের আলো নেমে এসেছে। পাতার ফাঁক দিয়ে দেখলাম ২০/৩০ জন মানুষের উপস্থিতিতে পুকুরে জাল ফেলে টেনে টেনে কি যেন একটা খোঁজা হচ্ছে!?
আমাদের স্যারেরা, পরিচালনা কমিটির লোকজনেরা, পুলিশ আর দমকল বাহিনীর লোকেরা জেলেদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছে আর এক অচেনা আতংকে কাঁপছে।
হ্যা, অবশেষে জানা গেলো...। একটা লাশ পাওয়া গেলো...। লাশটা একটা ১০ বছর বয়সী বালকের যে কিনা বোর্ডিং স্কুলে গত মাসেই ভর্তি হয়েছে। সে সাঁতার জানে না; কিন্তু সাঁতার শিখতেই গতকাল বিকেলে নেমে গিয়েছিল পুকুরে...।
ছেলেটা আমাদের সহপাঠী যাকে আমরা সবচাইতে ভদ্র আর অমায়িক বলে জানি, ছেলেটার নাম ফিরোজ। ঢাকার আগায়গাও ছিলো আমাদের বন্ধু ফিরোজের বাড়ী...।
-------
© খোরশেদ খোকন । ১৬/১০/২০১৫
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮
খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ;
গত পর্বের স্মৃতিকথা লেখাটা এতো মানুষ ভাল বলেছিল যে, এই পর্ব লেখাটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গিয়েছিলো।
যাক ধারাবাহিকতা রাখতে পেড়েছি।
হা, পানিতে সাঁতার দিতে গিয়ে মারা যাবার ঘটনা এদেশে অতীতে অনেক ছিল, খাল/বিল/পুকুর কমে যাওয়ার এখন হয়তো কমেছে তবুও গ্রামে ঠিকই আছে; ফিরোজের জন্য এখনও মনটা খারাপ লাগে।
ভাল থাকবেন।
২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫১
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: আপনার লেখা প্রথম পড়লাম
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭
খোরশেদ খোকন বলেছেন: যাক তাও তো পড়েছেন। ধন্যবাদ।
জানাবেন কেমন হয়েছে?
৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো স্মৃতিচারণ।
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮
খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ। হাসান মাহবুব ভাই
ভাল থাকবেন।
৪| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: বর্ণনা বাহুল্য পাঠকে বারংবার ব্যাহত করছিল, শেষ পর্যন্ত পড়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পুরোটা পড়ার ধৈর্য চ্যুত হল। ব্যাপারটা একটু খেয়াল রাখলে আশা করি পাঠক হিসেবে আমরা উপকৃত হব।
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৩
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
আজকেও আপনার হারানো দিনের স্মৃতি স্মৃতির জোনাকিরা... পড়ে খুব ভালো লাগল। তবে ফিরোজের কথা পড়ে মনটা বেদনায় ভরে গেলো। যে বয়সে সে পানিতে নেমেছে এই বয়সটা খুবই ঝুকি বহুল। আমিও ঐ বয়সে একবার পানিতে পরে গিয়াছিলাম, আব্বা গিয়া পানিথেকে টেনে তুলেছিল। আমার মামা বাড়ী ছিল বিল, বরষা কালে পানিতে থৈ থৈ করত। সেখানে বেড়াতে নানু সব সময় আমাকে চোখে চোখে রাখতো।