নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির জোনাকিরা (“দি ওল্ড ম্যান এন্ড দি সি” পড়া)

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২২

১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে আমার শরীরটা ভীষণ খারাপ ছিল। আমি টাঙ্গাইলের লায়ন নজরুল কলেজে পড়ছিলাম। টাইফয়েড জ্বর নিয়ে কলেজ হোস্টেল থেকে গ্রামের বাড়ী চলে এসেছিলাম।

গ্রামের বাড়ীতে সারাদিন শুয়ে থাকতে মোটেও ভাল লাগতো না। আমার গ্রামের বাড়ীতে একটা বড় পুকুর আছে। সেই পুকুরের সান-বাধানো ঘাটের কাছে একটা নিম গাছ ছিল (জানিনা এখনও আছে কিনা!?), সেই নিম গাছের নিচে একটা মাচা (বাঁশের তৈরি বিছানা) বানানো হয়েছিল। আমি সারাদিন সেই মাচায় শুয়ে শুয়ে চাচাতো ভাইয়ের সংগ্রহ করা বইগুলো একটার পর একটার পড়ছিলাম।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসে মনোযোগ দিতে না পেরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভালবাসা প্রেম নয়, রাঁধাকৃষ্ণ ইত্যাদি বই পড়েছিলাম আর একটা ঘোরের মধ্যে দিন-রাত্রি যাপন করছিলাম।

এমন সময় আমার হাতে আসে সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ বই “আরনেস্ট হেমিংওয়ের “ এর “দি ওল্ড ম্যান এন্ড দি সি”। সেই বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকেই আমি জানি, হেমিংওয়ে ভালবাসতেন মাছ শিকার করতে; এদিকে আমিও ছোটবেলা থেকেই পুকুর, ডোবা, বিল-ঝিল আর নদীতে মাছ শিকার ভালবাসি।

শৈশবে তিনি ডানপিটে ছিলেন, মুষ্টিযুদ্ধ শিখতে গিয়ে তার নাকের হাড় ভেঙে যায় আর চোখের আঘাতের জন্য দৃষ্টিশক্তিও কমে গিয়েছিল। এদিকে আমিও দুষ্টামির জন্য ছোটবেলা থেকেই ছিলাম পটু; আমগাছ থেকে পড়ে গিয়ে আমারও নাকের হাড় আর ডান হাতের দুইটা হাড় ভেঙেছিল।

কৈশোরে বাবা/মায়ের সাথে রাগ করে বাড়ী থেকে পালানো, একটা চরম রোমাঞ্চের বিষয়। তিনি নাকি কৈশোরে দুইবার বাড়ী থেকে পালিয়ে ছিলেন; পালিয়ে রাস্তায় রাস্তায় দিন-মজুরীও করেছেন। এদিকে আমিও বাড়ী থেকে পালিয়ে ছিলাম, পালিয়ে সারাদিন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে তারপর মামার/খালার বাড়ী দুইদিন পালিয়ে থেকে ধরা পরে নিজের বাড়ীতে ফিরেছিলাম।

সেই বইতেই আমি একটা আশ্চর্য কথা জানি, “"Man can be destroyed but not defeated.” মানে ““মানুষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে কিন্তু কখনও পরাজিত হয়না””। এই একটা লাইন আমাকে সেই দুঃসহ টাইফয়েড জ্বরের মধ্যেও ভীষণ ভাবিয়েছিল। আজও সেই আগের মতোই ভাবায়; যতই দিন যাচ্ছে ভাবনাও ততই বাড়ছে...!?

মনেপড়ে “দি ওল্ড ম্যান এন্ড দি সি” উপন্যাসটা ছিল “সান্তিয়াগো” নামের এক বুড়ো জেলে আর তার একটা বিশাল মারলিন মাছ শিকারের কাহিনী। আরনেস্ট হেমিংওয়ে উপন্যাসের জন্য ১৯৫২ সালে পুলিৎজার আর ১৯৫৪ সালে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন। তিনি নাকি নোবেলের পুরো টাকাই কোহিমার ধীবর/জেলেদের পল্লীতে ব্যায় করেছিলেন!?

উপন্যাসটা পড়তে পড়তেই আমি জানতে পারি; মানুষ তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে কতটা সংগ্রাম করে! সংগ্রাম করতে গিয়ে মানুষ প্রচলিত প্রথা/ রীতি-নীতি এমনকি প্রকৃতির বিপরীতেও কিভাবে চলে যেতে পারে? আসলে, কিছু মানুষ সহজেই হাল ছাড়ে না, চরম মাশুল দিয়ে নিজেকে নিজেই প্রতিষ্ঠা করে।

সেই সময় ইন্টারনেট ছিল না; তাই “আরনেস্ট হেমিংওয়ের” জীবনটা কেমন ছিল তা জানা সম্ভব ছিলনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে একদিন আমার মনেপড়ে গিয়েছিল সেই “দি ওল্ড ম্যান এন্ড দি সি” এর “সান্তিয়াগো” নামের বুড়ো জেলেটার কথা। আমি ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে জেনেছিলাম, আমাকে যিনি সব চাইতে ভাবিয়েছিলেন সেই আর্নেষ্ট হেমিংওয়ের সুইসাইডের প্রতি আটট্রাকশন ছিল ফ্যামিলিগত!?

তিনি নাকি ২ জুলাই ১৯৬১ইং ভোরবেলায় ডাবল ব্যারেল শটগানের গুলিতে আত্মহত্যা করেন!? মৃত্যুর ক'দিন আগে থেকেই নাকি তিনি হতাশা ও বিষণ্নতায় ভুগছিলেন!

তারপর আরও জেনেছিলাম, প্রতিভাবানদের মধ্যে ‘বাইপোলার ডিসঅর্ডার’ বা স্থায়ী বিষাদগ্রস্ততা বা ‘ম্যানিক ডিপ্রেশন’ এর নজির দেখা যায়। ‘মুড’ বা ভাবের পরিবর্তনে ম্যানিয়া বা ‘ইলেশন’ থেকে ‘ডিপ্রেশন’-এ চলে যেতে চান তারা!

এদিকে আমার লিস্ট আরও লম্বা হতে থাকে; আমি জানতে পারি আত্মহত্যাকারী শিল্পী ও সাহিত্যিকের তালিকাটি আসলে অনেক বিশাল! এই তালিকায় আছেন; ভিনসেন্ট ভ্যানগগ, ভার্জিনিয়া উলফ, সিলভিয়া প্লাথ, রবার্ট ক্রেন, ডন কার্পেন্টার, ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, ইয়াজুনারি কাওয়াবাতা, জন বেরিম্যান, তাদেউশ বরোস্কি, ইয়োকিউ মিশিমা, হ্যারি মার্টিনসন, মেরিনা তসভেতেইভা, স্টিফেন জোয়েগ আরও অনেকেই!

আমার মাথার ভেতর একটা ভোতা যন্ত্রণা হতে থাকে; আমি ভিনসেন্ট ভ্যানগগ, ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি, সিগমুন্ড ফ্রয়েড আর আর্নেষ্ট হেমিংওয়ের কথা ভাবতে ভাবতে শূন্যতায় হারিয়ে যাই...।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: বইটা অসম্ভব ভালই ছিল। আর সেবার অনুবাদে এটার আলাদা একটা মাত্রা তৈরি হয়েছিল।
ভাল লাগলো।

কিন্তু ১৯ বছর আগে কোন মাসে অসুস্থ ছিলেন সেটা মনে রাখলেন কী করে? অসম্ভব প্রখর স্মৃতিশক্তি আপনার।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৩

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ভাই
এই ফেইসবুক আর ব্লগের যুগের আগে থেকেই আমার ডায়েরি লেখার অভ্যাস;
আমি ১৯৯৫ সাল থেকে ডায়রি লিখছি।
ধন্যবাদ

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মাঝেমাঝে মনে হয়, আমিও সুইসাইড করব| কারণ নিজেকে প্রতিভাবান প্রমাণ করতে হবে তো!
বইটা আমিও পড়েছি| খুব ভাল উপন্যাস| যখন পড়েছিলাম কাটখোট্টা লেগেছিল খুব| কারণ পর্যন্ত কোমল এই ভাষাটার কোমল রুপটাই শুধু দেখেছি

২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৭

খোরশেদ খোকন বলেছেন: পড়ার জন্য আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩

শায়মা বলেছেন: আমারও অনেক কষ্ট হচ্ছিলো ওল্ডম্যানের জন্য। তবে তার অপরাজেয় মনোভাব মনে রাখবার মত!

২২ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৭

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ, সায়মা আপা।

৪| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৪

আমি ০০০ বলেছেন: মানুষ ব্যতীত অন্য কোন প্রানীকি আত্মহত্যা করতে পারে?
জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৪

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ।
শুনেছি এক প্রকারের পাখী সঙ্গী হারা হলেই আত্মহত্যা করে। খুঁজে দেখতে পারেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.