নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির জোনাকিরা...(হায়দার মামার ঋণ)

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৬

আশির দশকে হায়দার মামা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়তেন আর সূর্যসেন হলে থাকতেন। আমার জানা মতে, তিনিই আমাদের গ্রামের প্রথম ছাত্র যিনি ঢাবি'তে পড়েছেন। তার কৃষক বাবার পক্ষে পড়াশুনার খরচ চালানো সম্ভব ছিলনা; তাই তিনি টিউশনি করে জীবন যাপন করতেন।
পড়াশুনা শেষে তিনি সরকারী চাকরী করতেন; যার পদবী ছিল “উপজেলা সমাজসেবা অফিসার”। সেটা ছিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন।
যাই হোক, তিনি একদিন তার পুরানো বইয়ের মাঝে একটি ছোট “বাকীর খাতা” খুঁজে পান। তিনি সূর্যসেন হলে থাকতে যে টং দোকানে সারা-মাস “বাকী” নিতেন আর মাস-শেষে টিউশনির টাকা দিয়ে “বাকী” পরিশোধ করতেন; সেই দোকানদার “নুরু মিয়ার” কথা মনেপড়ে যায়।
সেই দোকানদার “বাকী” লিখে রাখতেন না, মুখে মুখে হিসাব রাখতেন; তাই মামা নিজের বাকীর জন্য একটা খাতা তৈরি করেছিলেন; যাতে দোকানদারের সাথে ভবিষ্যতে টাকা-পয়সা সংক্রান্ত সমস্যা না হয়।
মামা বাকীর খাতায় দেখেন, দোকানদার ১০বছর আগের হিসেবে মামার কাছে ৭৮টাকা পায়। মামা সারারাত ঘুমাতে পারেন না; তিনি সকালে উঠে তার কর্মস্থল খাগড়াছড়ি থেকে সকালেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
সূর্যসেন হলে গিয়ে জানতে পারেন, “নুরু মিয়া” গত পাঁচ বছর যাবত দোকান ছেড়ে দিয়ে মিরপুর চলে গেছেন। তিনি একটি হোটেলে উঠেন আর পরদিন মিরপুর যান তার খোঁজ করতে। মিরপুর গিয়ে জানতে পারেন, নুরু মিয়া মিরপুর থেকে আগারগাও বিএনপি বস্তিতে দোকান করেন। মামা আগারগাও যান গিয়ে তৃতীয় দিন নুরু মিয়াকে খুঁজে পান। নুরু মিয়া মামাকে পেয়ে আবেগে জড়িয়ে ধরলে হায়দার মামা বলেন, নুরু মামা আমাকে আপনি মাফ করে দেন আমি আপনার ৭৮টাকা এখনও বাকি রেখেছি!? নুরু মিয়া মনে করতে পারেন না আসলেই তিনি মামার কাছে ৭৮টাকা পান কিনা? তারপর মামা কিছু উপহার নিয়ে নুরু মিয়ার বাসায় গিয়ে তার সাথে দুপুরের খাবার খান। মামা তার জীবনের একটি ঋণ পরিশোধ করে, সে রাতে আরামে একটা ঘুম দেন।
...
আজ আমার সেই মামা নেই প্রায় ৭/৮ বছর হবে। কিন্তু আমি মামার কথা ভাবি।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে পড়েছি আর সূর্যসেন হলে আবাসিক ছিলাম; মাঝে মাঝে সূর্যসেন হলে গিয়ে ভাবি আমার কি তেমন কোন ঋণ আছে? যদি ঋণ থাকতো তাহলে কি পারতাম মামার মতো ঋণ শোধ করতে!?
...
© খোরশেদ খোকন। ০৭/১২/২০১৫

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এমন মানুষ হয় নাকি?
তবে এখন ৭৮ টাকা খুব কম মনে হলেও তখন নিশ্চয়ই অনেক ছিল| তাই বিবেকের কথা ফেলতে পারেননি

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৮

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ভাই আসল ব্যপার হলো, ঋণ।
টাকার অংক কোন বিষয় না।
আর আশির দশকের ৭৮ টাকা কোন-ভাবেই এখনকার ৫০০ টাকার বেশী হবে না।
ধন্যবাদ

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:০৫

উল্টা দূরবীন বলেছেন: এখনকার দিনে এগুলো কল্পনা করাটাও বোকামি।

সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ এবং আমার ব্লগে আমন্ত্রণ।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০১

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ভাই, হ্যা আপনি ঠিকই বলেছেন। লেখাটা কিন্তু আমার স্মৃতি নিয়ে।
আমার মামা অসাধারণ ছিলেন, এটা আমার পরিবার, গ্রামবাসী আত্মীয়রা সবাই জানে। ধন্যবাদ

৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২২

হাসান মাহবুব বলেছেন: আলোকিত মানুষ। আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৭

খোরশেদ খোকন বলেছেন: আজ আমার সেই মামা নেই প্রায় ৭/৮ বছর হবে।
ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.