নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্পঃ দ্বৈত সমস্যা

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৮

২০০৫ সালের শীতের এক ঝাপসা সকাল পেড়িয়ে; ঘোলাটে আলোর দুপুরে মাকসুদ স্যারের সাথে গিয়েছিলাম এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের অফিসে টেন্ডার জমা দিতে।

আমাদের উদ্দেশ্য ছিল টেন্ডারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের শিকলবাহায় একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানির জন্য লাইসেন্স সংগ্রহ করা। একটানা তিনদিন বিদ্যুৎ প্রজেক্টের জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করে আমি ছিলাম ভীষণ ক্লান্ত। কিন্তু আমার চাইতেও চোখে মুখে বেশী ক্লান্ত ছিলেন মাকসুদ স্যার।

মাকসুদ স্যার আশির দশকে বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। রিটায়ার করার পরে প্রাইভেট ফার্মে কাজ করছেন।

টেন্ডার জমা হয়ে গেলে দুপুরে খেতে গিয়েছিলাম মতিঝিলের এক চায়েনিজ রেস্তোরায়। আমি স্যারকে ক্লান্ত লাগছে দেখে সাহস করে বললাম, স্যার আপনার কি শরীর খারাপ?
স্যার বললেন, না। মনটা ভীষণ খারাপ।
আমি বললাম, স্যার আমাকে কি বলা যায়?
স্যার বললেন, হ্যা বলা যায়। শোন, জীবনে আমি সৎ মানুষ হতে গিয়ে অনেক লোকের চাকরী হারানোর কারন হয়েছি। সরকারী আমলারা কেউ তেমন একটা আমাকে পছন্দ করেনি; তাই আমার পোস্টিং সব সময়ই ছিল অডিট বিভাগে। তারপরও অনেক লোকের চাকরী আমার কারনেই চলে গেছে কিংবা বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।
আমি বললাম, জী স্যার...
স্যার বললেন, মনটা খারাপ কারন গতকাল আমার একটা সিদ্ধান্তের কারনেই আজ এই ফার্মের দুইজন গার্ডের চাকরী চলে যাচ্ছে...।
আমি বললাম, জী স্যার...আমি জানি কিন্তু আপনার কারণে তা জানতাম না!
স্যার বললেন, জানো; আমি গাইবান্ধার এক সামান্য কৃষকের ছেলে। সে সময় আমি গ্রাম্য একটা কলেজে পড়তাম। আমার এক সহপাঠী ছিল রহিম; যে কিনা একমাস হোস্টেলের ভাড়া আর খাবারের বিল দিতে পারছিল না। কারন ছিল বন্যা আর খরায় তার বাবার কৃষি জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এক কথায় তার বাবার টাকা দেবার সাধ্য ছিলনা।
আমি বললাম, জী স্যার...তারপর...
স্যার বললেন, তখন হোস্টেল কর্তৃপক্ষ (শিক্ষকবৃন্দ) আর ছাত্ররা সবাই মিলে মিটিং করে আমার সেই সহপাঠী বন্ধুকে ভীষণ অপমান করে। এমন সময় আমাদের সব চাইতে দরিদ্র শিক্ষক তালেব স্যার সেই ছেলের দায়িত্ব নিয়েছিল। আমি আমার সেই বন্ধুর সাথে সেই রাতে চোখের জলে ভেসে গিয়েছিলাম...
আমি বললাম, স্যার...তারপর...
স্যার বললেন, আমি জীবনে তেমন একটা টাকা আয় করতে পারিনি কিন্তু সবচ্ছল জীবন যাপন করেছি। কিন্তু সেই স্যারের মতো কারো জন্য কিছুই করতে পারিনি, এটাই আমার একমাত্র দুঃখ। আজ এজন্যই খুব অসহায় লাগছে...
আমি চুপ করে রইলাম...
স্যার বললেন, আমি যখন কোন সিদ্ধান্ত নেই; তখন অপরাধকে অপরাধ হিসেবেই দেখি। অন্যদিকে যখন আমার সেই সিদ্ধান্ত মানুষের অশান্তির কারন হয়ে যায়, তখন ভীষণ কষ্ট পাই। আজ সেই দ্বৈত সমস্যায় পড়েছি, একদিকে অপরাধ অন্যদিকে দুজন মানুষের রুজি-রুটি...তুমি এখনও এসবের ভেতর দিয়ে যাওনি, তাই তুমি জানো না, আমার মানসিক অবস্থা কি...
আমি চুপ করে রইলাম...
...
© খোরশেদ খোকন। ০৮/১২/২০১৫

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩০

হাসান মাহবুব বলেছেন: জটিল মনস্তাত্ত্বিক সংকট।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১০

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ।
আসলেই তাই। একদিন গল্পটা গুছিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.