নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্পঃ বেডরুমের দরজা

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৬

গতকাল রাত বারোটার পর থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত একটানা ঝিরি-ঝিরি বৃষ্টি হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের এই বৃষ্টিটাই শহরের আনাচে কানাচে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিষ্কার একটি সকালে ঘুম থেকে উঠার পরেও মাসুদ সাহেবের মন ভাল নেই। গতরাতে একমাত্র মেয়ে মৌরির সাথে কথা কাটাকাটির রেশ এখনো মনের কোণে রয়ে গেছে...।

সেদিন, সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাড়ী ফেরার পথে শফিক ফোন দিয়ে মাসুদ সাহেবকে জানায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রিয়বন্ধু শিবলী এখন ঢাকায়, সে পানসী রেস্তরাঁয় এলেই আড্ডা জমানো যায়। মাসুদ, শফিক আর শিবলী তিনজনে মিলে দুইবছর পরে একত্রে তুমুল আড্ডা হয়; তারপর হই-হুল্লোড় করে রাতের ডিনার...।

মাসুদ সাহেব বাসায় ফিরবেন এমন সময় তিনি দেখেন তার একমাত্র মেয়ে মৌরি একটি ছেলের হাত ধরে রেস্তরাঁর নির্জনে এক কোণে বসে আছে। ঘটনাটা তার বিশ্বাস হচ্ছিল না; তাই প্রথমে সে তার স্ত্রীকে ফোন করে জানতে চায়, মৌরি বাসায় কিনা? তার স্ত্রী তাকে জানায়, মেয়ে তার এক বান্ধবীর বিয়েতে বেড়াতে গিয়েছে, রাত এগারটার দিকে ফিরবে।

তারপর সে ফোন দেয় তার মেয়েকে, মেয়ে তার দৃষ্টি সীমানায় বসেই ফোন ধরে আর তাকে জানায় সে বান্ধবীর বিয়ে বাড়ীতে আছে; রাতে তার বান্ধবী সামান্তা তাকে বাড়ী পৌঁছে দিয়ে আসবে। প্রায় বিশ ফিটের মতো দূরত্ব থেকে মেয়ের ফোন রিসিফ করা আর সুনিপুণ অভিনয় করা দেখে মাসুদ সাহেবের নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল...!

তিনবন্ধু একত্রে রেস্তরা থেকে বেড়িয়ে বাড়ী ফিরে গিয়েছিল। বাড়ী গিয়ে মাসুদ সাহেব তার স্ত্রী লায়লাকে মৌরি’র বিষয়টা খুলে বলে কিন্তু লায়লা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করেনি...!

এদিকে লায়লা ভাবছে, স্বামী নাকি মেয়ে কাকে ঠিক কিভাবে স্বাভাবিক পরিবেশে আলোচনার জন্য একত্রে পাবে। আর এরকম একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করবে ঠিক কিভাবে!?

তিনদিন পরে রাতের খাবার শেষে লায়লা আর মাসুদ সাহেব দুজনে কথা বলছিল, একমাত্র মেয়ে মৌরি’র অভিনয় দক্ষতা নিয়ে। এমন সময়, তাদের মেয়ে বেড়রুমে এসে হাজির...
লায়লা মেয়েকে বলল, আচ্ছা তোমার কি কোন ছেলেবন্ধু আছে?
মৌরি বলল, না তেমন কেউ নেই। কেন কেউ কিছু বলেছে?
মাসুদ সাহেব বলল, আমি সেদিন তোমাকে দেখেছি...
মৌরি বলল, কোথায়?
লায়লা মেয়েকে বলল, তুমি কি একটি ছেলের সাথে পানসী রেস্তরাঁয় গিয়েছিলে?
মৌরি বলল, দেখেছো যখন তখন আর মিথ্যে বলবো না, হ্যা গিয়েছি তবে...
মাসুদ সাহেব বলল, তবে কি?
মৌরি বলল, দেখ বাবা - তবে বলছি এইজন্য যে, আমি সেদিন বলেছিলাম বিয়ে বাড়ী গিয়েছি সেটাও মিথ্যে না।
লায়লা মেয়েকে বলল, বিষয়টা তুমি খুলে বল...
মৌরি বলল, দেখো আমি গিয়েছিলাম আফরোজের বিয়েতে, সেখানে শোভন আর সোহেলী নামের আমার দুই সহপাঠী এসেছিল। তাদের মধ্যে ব্রেক-আপ চলছিল। আমি আর সামান্তা টস করেছিলাম যে, কে কাকে বোঝাবো। তো আমার ভাগ্যে পড়েছিল শোভন আর সামান্তা’র ভাগ্যে পড়েছিল সোহেলী... আমার ভাগ্যে সোহেলী পরলে নিশ্চয়ই তোমরা আজ আমাকে এভাবে উকিলের মতো কাঠগড়ায় দাড় করাতে না...!
লায়লা মেয়েকে বলল, তুমি কিন্তু বিষয়টাকে আরও জটিল করে তুলছো...
মৌরি বলল, মা শোন - আমি যেভাবে কথা বলছি সেটা স্বাভাবিক কণ্ঠে কথা বলা... গল্প বানাতে হলে আমাকে চিন্তা ভাবনা করে তারপর আস্তে আস্তে গুছিয়ে কথা বলতে হতো... এই বিষয়টা নিশ্চয়ই হিসেবে নেবে।
মাসুদ সাহেব বলল, দেখো আমাদের আর তোমার গল্প শুনতে ইচ্ছে করতে না। তুমি এবার আসতে পারো...

মৌরি চলে গেলো আর দরজায় ধাম করে একটা বিকট আওয়াজ হল...!? মানুষ কারো সাথে কথায় না পারলে বা বিরক্তি প্রকাশ করে কোন জড়-বস্তুর উপর যেভাবে আঘাত করে ঠিক সেই রকম আঘাতের মতো মনে হল বিকট শব্দটিকে...।

লায়লা আর মাসুদ সাহেব, প্রথমতঃ মেয়ের মিথ্যে বলে বাড়ীর বাইরে যাওয়া, দ্বিতীয়তঃ রেস্তরাঁয় রাতে অচেনা ছেলের সাথে লুকিয়ে কথা বলা, তৃতীয়তঃ সেই ছেলেকে লুকাতে মিথ্যে গল্প বানানো আর সর্বশেষঃ দরজার বিকট আঘাত করে তাদের এই পরিবারকে উপহাস করা... নিয়ে ভাবনায় পরে গেলো...!

সকালে পরিষ্কার আকাশের মধ্যে দিয়ে যে দিনটা শুরু হয়েছিল; সে দিনটাই আলতো হয়ে নেমে আসা ধূসর সোডিয়াম আলোর মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে...। মাসুদ সাহেব মতিঝিলের সিটি সেন্টারের উনিশ তলার অফিসে বসে নীচের রাস্তায় বাড়ী ফেরায় ব্যস্ত পিঁপড়ের মতো মানুষের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, বাসায় গিয়ে মৌরির সাথে আরও কিছু কথা বলা যায় কিনা?

রাত দশটায়, মাসুদ সাহেব তার শোবার ঘর থেকে তাড়াহুড়ো করে ড্রয়িং রুমের দিকে যাচ্ছিল একটি দৈনিক পত্রিকার খোঁজে; এমন সময় লক্ষ্য করল স্বাভাবিকের চাইতে একটু বেশি জোরে তার বেডরুমের দরজায় থাক্কা দিয়ে লাগাতে গিয়ে ধাম করে একটা বিকট আওয়াজ হল...!? তার মানে বেডরুমের দরজায় সমস্যা আছে...। তাদের মেয়ের হাতে বা মাথায় কোন সমস্যা নেই! ভাবলো, আগামীকাল বেডরুমের দরজাটা ঠিক করতে হবে...।

রাত বারোটায় মাসুদ সাহেব আর লায়লা তাদের বারান্দায় বসে; একজন ভাবছে, “সেদিন তাদের একমাত্র মেয়েটার সাথে এতোটা দুর্ব্যবহার করা ঠিক হয়নি...।” অন্যজন ভাবছে, “তাদের মেয়ে এখন বড় হয়েছে, তাই তার কথাগুলোকে সত্যিকারভাবে ভেবে দেখা উচিৎ...।”
......
© খোরশেদ খোকন। ২০/১২/২০১৫

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৪

সুমন কর বলেছেন: আপনি আগের পোস্টে করা বিভিন্ন ব্লগারের প্রতি উত্তর দিচ্ছেন না !! কিন্তু ঠিকই পোস্ট দিচ্ছেন !! একটু ভেবে দেখবেন।

ব্লগে আসলে, প্রথমেই উচিত প্রতি উত্তর দেয়া। বাকিটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছে।

শুভ দুপুর।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৬

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেবার জন্য।
দুঃখিত যে গতকাল যারা মন্তব্য করেছেন তাদের উত্তর দিতে পারি নাই।
আজ মন্তব্যের জবাব দিতে পেরে ভাল লাগছে।
আর আমি রাত ৯-১১টা ছাড়া নেট ব্যবহার করতে পারি না। এজন্য একটু পিছিয়েই থাকি।
ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: মাসুদ সাহেব দু-এক জায়গায় হাসান হয়ে গেছে। ঠিক করে নিয়েন। শুভেচ্ছা।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৫

খোরশেদ খোকন বলেছেন: হ্যা ঠিক করে দিলাম। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.