নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্পঃ দূরত্ব

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৮

বৃষ্টি শেষে স্বচ্ছ নীল পরিষ্কার আকাশ, নরম আলো ছড়িয়ে পড়ছে গাছের সবুজ পাতায়। দুইবন্ধু পাশাপাশি বসে আছে, আর তাদের মধ্যে দূরত্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে পনেরটি বছর। রমনা পার্কের এই ঝিমিয়ে যাওয়া নাগরিক বনের আড়ালে চাঁপা পরে যাচ্ছে কষ্টের কালো কালো দাগ...।

১৯৯৮ সালের প্রথম প্রহর ফিরে ফিরে আসছে; যখন শামীম আর হাসান দুইবন্ধু সূর্যসেন হলের ৫৫৫ রুমে থাকতো। পনের বছর আগের দিনগুলি উকি দিচ্ছে হাসানের মনের কোণে আর এদিকে সবুজ পাতার ফাঁকে জমে থাকা পানির ফোঁটা খুব নীরবে টপ টপ করে ঝরে পরছে একবুক ক্লান্তি নিয়ে।

তিন মাস আগে সুবর্না মানে শামীমের স্ত্রী হাসানকে ফোন করে জানায়, সোহরাওয়ারদি উদ্যানের পশ্চিম পাশে টিএসসি’র বিপরীত দিকে শামীমকে খুঁজে পাওয়া গেছে...! ফোনের কণ্ঠ বোবা কান্না হয়ে ঝরছিল আর এপাশে হাহাকার নিয়ে একা অফিসের বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিজের মাথার চুল খামচে ধরছিল হাসান।

হ্যা, শামীম আর হাসান দুইবন্ধু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের বারান্দায় দুজনের পরিচয়। ওরা দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম পূরন করছিল, শামীম হাসানকে জিগ্যেস করেছিল, আপনি কোন বিভাগে ভর্তি হচ্ছেন? হাসান বলেছিল, আমি পাবলিক এডমিনে; আপনি? শামীম উত্তরে বলেছিল, আরে ভাই আমিও তো পাবলিক এডমিনে! তারপর একত্রে টিএসসি’র জনতা ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া, রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে কাগজপত্র জমা দেয়া, সূর্যসেন হলের টং দোকানে একত্রে চা পান করা...।

একই সাথে ওরা সূর্যসেন হলে উঠেছিল; তারপর অন্যদের সাথে রুম বদল করে একই রুমে বসবাস করেছে পাঁচটি বছর। মাঝে মধ্যেই কলা ভবনের বারান্দায় সুবর্নার সাথে হাসানের কথা হতো। সুবর্না ইংরেজি সাহিত্য পড়তো, হাসানের বাড়ী জামালপুর জেলায় হওয়াতে সে জামালপুর জেলা সমিতির এক মিটিংএ সুবর্নার সাথে পরিচিত হয়েছিল। তারপর তারা ভাল বন্ধুও হয়ে যায়। একদিন শামীম মুখ ফুটে হাসানকে বলেছিল, বন্ধু তোর কাছে আমি একটা জিনিস চাই, দিবি? হাসান বলেছিল, তুই আমার কাছে যা ইচ্ছা চাইতে পারিস; আমি কথা দিচ্ছি আমি সত্যিই দেবো।

একটা সময় হাসান মনে মনে ঠিক করেছিল যে, সে যে সুবর্নাকে ভালবাসে তা তাকে বলেই দিবে, কিন্তু সাহস সঞ্চয় করতে দেরি হচ্ছিল। হাসান ভার্সিটির ছুটি হলে সুবর্নাকে নিয়ে একসাথে ট্রেনে জামালপুর যেতো। একদিন সুবর্নাদের বাড়ীতেও গিয়েছিল ঈদের ছুটিতে।
সেদিন শামীম মুখ ফুটে হাসানকে একটা অসম্ভব কথা বলেছিল, সেই কথাটি ছিল সে সুবর্নার সাথে প্রেম করতে চায়, এতে হাসানের কোন আপত্তি আছে কিনা? হাসান বলেছিল, তোর দেশের বাড়ী চট্টগ্রাম; এতো দূরে সুবর্নার বাবা-মা তাদের মেয়েকে বিয়ে দেবে কিনা, আমি জানিনা! এদিকে সুবর্নার যদি কোন আপত্তি না থাকে, তাহলে আমার আপত্তির কোন কারণ নেই। আমি চাই, আমার প্রিয় বন্ধুটি আমার পরিচিত একটা ভাল মেয়েকে ভালবাসুক আর বিয়ে করে সুখি হোক।

যাই হোক, হাসান মুখ ফুটে সুবর্নাকে ভালবাসার কথা না বলাতে; সুবর্নার বুঝেনি যে হাসান তাকেই ভালবাসে। একদিন শামীম যখন সুবর্নাকে বলে যে, সে তাকে ভালবাসে। তখন সে সময় নিয়েছিল। সুবর্না চাইছিল হাসান একটু আপত্তি করুক। হাসান তিন মাস ধরে বিষয়টা জানার পরেও আপত্তি করেনি বরং মৌন সম্মতি দিয়ে গেছে। সবশেষে সুবর্না শামীমকেই বেঁছে নিয়েছে।

২০০৫ সালের বিসিএসে চাকরীর নিয়ে সূর্যসেন হল ছেড়ে শামীম চলে যায় পুলিশ বিভাগে আর হাসান চলে যায় প্রশাসন বিভাগে। তারপর ২০০৬ সালে সুবর্নার সাথে শামীমের বিয়ে হয় ঢাকায়। বিয়ের দিন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুরা মিলে অফিসারস ক্লাবে তুমুল আড্ডা দিয়েছিল; তারপর রাত ফুঁড়িয়ে দিনের আলোয় চলে গিয়েছিল যে যার গন্তব্যে...।
সুবর্না আর শামীমের পিড়াপিড়িতে অবশেষে হাসানও বিয়ে করে ২০০৭ সালে। তারপড় শামীম থেকে যায় ঢাকায়, আর হাসান চলে যায় রাজশাহী।

একদিন সুবর্না ফোনে হাসানকে জানায় যে, শামীমকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
পুলিশ অফিসারকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়...। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারেনা; একদিন অফিসে গিয়ে আর কেন শামীম বাড়ী ফিরে আসেনি। একটা আতংক রাত দিন সবার মধ্যে চলতেই থাকে। এক সময় মন থেকে আতংক কেটে গিয়ে বিষাদ ভর করে।

তারপর দিনরাত, সুবর্না আর হাসান তাদের সেই পুরানো বন্ধুকে খুঁজতে থাকে... কি এমন বেদনা কিংবা হাহাকার জমা হলে, মানুষ এমন ভাবে দূরে চলে যেতে পারে সেটা তারা আবিষ্কার করতে পারে না!

তিন মাস আগে শামীমকে পাওয়া গেছে সোহরাওয়ারদী উদ্যানে, সেখানে সে নোংরা ছেড়া কাপড় গাঁয়ে, খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটছিল। তার চুল, দাড়ি, গোঁফ দিয়ে মুখটা ঢেকে গেছে। হাতে পায়ের নখ বড় বড় আর সেখানে কালো কালো ময়লা লেগে আছে। চোখের নীচে কালো দাগ আর একরাশ আতংক। ঠোঁটের কোণে আর মুখে ঘা হয়েছে। হাতের কনুই, কবজি আর পায়ের নখে ঘা দ্গ দ্গ করছে।
শামীম পথচারী একলোকের হাত থেকে খাবার থাবা দিয়ে নিচ্ছিল; এমন সময় সেই পথচারী লোকটি পাগলের হাত থেকে রক্ষা পেতে পুলিশের সহায়তা চায়। পুলিশ লোকটির সাহায্যে এগিয়ে এসে দেখে, পাগল লোকটি আসলে পুলিশের এএসপি শামীম সাহেব। তারপর তারা শামীমকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় আর ফোনে সুবর্নাকে খবরটি জানায়।

সুবর্নার ফোন পেয়ে হাসান রাতের ট্রেনেই রাজশাহী থেকে ঢাকায় রওনা হয়ে যায়। সকালে ঢাকায় পৌঁছে হাসান সুবর্নার সাথে দেখা করে তারপর দুপুরেই শামীমকে নিয়ে যায় ডাক্তারের চেম্বারে। সন্ধ্যায় ডাক্তার পরীক্ষার ফলাফল দেখে পরামর্শ দেয় শামীমকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়ার।

ডাক্তার জানিয়েছে, শামীমের স্মৃতি নষ্ট হয়ে গেছে - হয়তো সে বড় কোন শারীরিক বা মানসিক আঘাত পেয়ে থাকতে পারে!
শামীমকে খুঁজে পাওয়ার আজ তিন মাস চলছে। আর আজকের দিনেই মানে জুলাই মাসের ১ তারিখ ছিল শামীম আর হাসানের দেখার হবার প্রথম দিন। দিনটাকে মনে করে হাসান সারাদিন শামীমকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটা ঘুরে বেড়িয়েছে।

ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়িয়ে তারা রমনায় মলিন একটি বিকেল কাটাতে এসেছে...। বৃষ্টি শেষে আকাশ পরিস্কার, সবুজ ঘাস, গাছের সবুজ পাতার ঝক ঝক করছে। দূরে ছুটে যাচ্ছে একটি কাঠবিড়ালী – দিনগুলি আগের মতোই আছে; শুধু হাসানের পাশে বসে থাকা শামীম, কিছুতেই কিছু বুঝতে পারছে না...।

শামীম, খুব মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে... জেনো কত দিনের চেনা আকাশ... তার ভাবনারা সব আকাশের ঠিকানায় হারিয়ে গেছে...।
...
© খোরশেদ খোকন। ২২/১২/২০১৫

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: +

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২২

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.