![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।
বিকেল পাঁচটা, শীতের বিকেল তাই একটু বিবর্ণ লাগছে চারপাশ, শেজানের গাড়িটা দোয়েল চত্তর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে এসে এখন চারুকলা অনুষদের সামনে। শেজান চারুকলার দিকে তাকিয়ে দেখল, পড়ন্ত বিকেলের নির্জনতা বুকে নিয়ে একটি বড় বিজ্ঞাপন দাড়িয়ে আছে, তাতে লেখা, “ঝরাপাতার দিন” – সোহানা’র একক চিত্র প্রদর্শনী।
গাড়ীতে ব্রেক কষে চারুকলার দ্বিতীয় গেইট দিয়ে ঢুকে গাড়ী পার্ক করল সে, তারপর হেঁটে হেঁটে এগিয়ে গেলো জয়নুল গ্যালারীর দিকে, দেখা হয়ে গেলো...পনেরো বছর পরে, সেজান আর সোহানার...
শেজান- এই তুমি দেশে এসেছ আমাকে তো জানালে না...
সোহানা- আমি গতকালই ঢাকায় এসেছি। এসে হোটেলে উঠেছি। যারা আমার প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে তাদের সাথে কাজগুলো গোছাতেই একটু সময় লেগে গেলো...
শেজান- তার মানে তুমি প্যারিস থেকে এসেছ গতকাল...
সোহানা- হ্যা। আমার পরিকল্পনা ছিল আজ রাতে তোমাকে জানাবো...
শেজান- চলো একটু কুয়াতলার গিয়ে বসি...
সোহানা- চলো... মানুষ তোমার সম্পর্কে বলে, তুমি নাকি দাম্ভিক আর খুব মেজাজি...
শেজান- মানুষ যা বলে তাই বিশ্বাস করতে চাও, নাকি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেও দেখেছ?
সোহানা- মানুষ যা বলে সবটা না হলেও, তুমি তো তোমার মতোই, নাকি?
শেজান- হ্যা, আমার মতোই আমি। কারো সাথে কাজ ছাড়া দেখা করিনা, তাই দাম্ভিক। আর কাজের কথা ছাড়া কথা বলি না, তাই মেজাজি...
সোহানা- তবুও আমার মনে হয়, তুমি দেখতে যা। আসলে সেটা না; তবে হলে খুশি হতাম...
শেজান- যে আমার চেয়ে কোমল স্বভাবের সে আমাকে ভাবে কঠোর মানুষ। এখানে দেখার সমস্যা না, বোঝার সমস্যা...
সোহানা- মানুষ যা বলে, সেটা তুমি? নাকি মানুষ যা বলে, তুমি সেটাই হতে চাও?
শেজান- তুমি বলতে কি চাও?
সোহানা- তুমি শুনতে কি চাও? যদি তুমি যা শুনতে চাও, সেটা বলি; তাহলে সে কথা আমি বলে লাভ কি? সেটা তো তোমারই কথা, তাই না!
শেজান- মানে?
সোহানা- শোন তুমি যা শুনতে চাও না; সেটা বললে ভাল লাগবে না। কেননা সবাই নিজের বিরুদ্ধে কথা নিতে পারেনা, কেউ কেউ নেয় কিন্তু তারা আবার মানতে পারে না। তুমিতো আবার এক ড্রিগ্রি উপরে, কথা মনে নাও কিন্তু মেনে নাও না! আসলে, একজনের স্বাধীনতা কিন্তু অন্যজনের জন্য স্পর্ধার বিষয়।
শেজান- তুমি তোমার কথার পাশে - একটা নিজস্ব যুক্তি তৈরিই রাখো, তাই না?
সোহানা- ভেবে দেখো, তোমাকে নিয়ে অন্যদের ভাবনা কিংবা অন্যদের নিয়ে তোমার ভাবনা, দেখবে মিলে গেছে...
শেজান- এভাবে কথা বলতে ভাল লাগছে না, একটু সহজ করে কথা বল...
সোহানা - একটু সময় নাও, দেখবে... কথা বলার জন্য অনেক কথা জমা আছে। কথা আগে নিজের সাথে বলতে হয় তারপর সেটা অন্যের জন্য নির্বাচন করতে হয়। মুখের কথা কানের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা খুব সহজ কাজ নিশ্চয়ই না, কি বলো?
শেজান- হ্যা, হয়তো। তবে তুমি চাইলে আমরা নতুন একটা শহরে চলে যেতে পারতাম!
সোহানা– সেই দিনগুলো কতটা সহজ সরল ছিল... ভাবতে খুবই ভাল লাগে...
শেজান- হ্যা, আমারও ভাল লাগে।
সোহানা– কেন বলছ নতুন একটা শহরের কথা? আমি কি নতুন একটা শহরে চলে যাই নি?
শেজান- হ্যা, নতুন একটা শহরে, নতুন সংসারে তুমি চলে গেছো। তবুও আমিতো সেই সময় তোমাকে বলেছি, আমি কতটা পাগল ছিলাম...
সোহানা- তুমি বলোনি।
শেজান- আমি বলেছি, তুমি বোঝনি।
সোহানা- দেখো, তুমি যদি বল, তুমি হাত ধরে ছিলে, চোখে-চোখ রেখেছিলে, একই রিক্সায় ঘুড়েছ, একই ঠোঙ্গায় বাতাম খেয়েছ... এতে কিন্তু কিছুই বুঝায় না!
শেজান- তাহলে কি করে? কি করলে এতো সব বোঝায়?
সোহানা- তুমি জানো বোধ হয়, তবুও বলি; তুমি যেটা করেছে সেটা মেয়েরা করবে...। মানে ইশারায় কথা বলবে। কিন্তু একটা মেয়ে সব-সময়ই চাইবে ছেলেটা তার জন্য ভাংচুর একটা কিছু করুক। মুখ ফুটে বলুন, ভালবাসি...
শেজান- হ্যা, সেই বলাটা হয়তো আমি বলতে পারিনি। এটা একটা সত্যি...
সোহানা- কথা লুকাচ্ছ?
শেজান- কি লুকাবো? আর কার কাছে নিজেকে লুকাবো, বলো? লুকিয়ে থেকে নিজেকে নিজে কি কম শাস্তি দিয়েছি!
সোহানা- সত্য মিথ্যা জানিনা, তুমি আসলে পারো নাই...!
শেজান- কি পারি নাই?
সোহানা- একটা ঝড় কিংবা সাইক্লোন যেমন সবকিছু চুরমার করে দেয়, তেমনি একটা মেয়ে চায় তার ভালবাসার মানুষটি একদিন ঝড় হয়ে আসুক, আর নতুন একটা দিন উপহার দিক...সেটা পার নাই...
শেজান- আমি কি একটি দিনের জন্যও তোমার ভাবনার বিষয় ছিলাম না?
সোহানা- হ্যা ছিলে...সে থাকাটা বাস্তব ছিল, কিন্তু তুমি স্বপ্ন ভালবাস... তাই নিজেকে নিজেই হারিয়ে ফেলেছ!
শেজান– আমি আসলে আমাকেই হারিয়ে ফেলেছি, একমাত্র মানুষই পারে নিজেকে হারিয়ে আবার খোঁজ করার চেষ্টা করতে, তাইনা?
সোহানা- হ্যা, বিষয়টা ধরতে পেড়েছ। আগেতো কবিতা লিখতে; ইদানীং শুনেছি গল্পও লিখছ...?
শেজান- হ্যা, চেষ্টা করছি...
সোহানা- তোমার গল্পগুলো পড়তে চাই, প্যারিসে তো পাবো না। একদিন আজিজ মার্কেটে খোঁজ নিবো। তোমার নাম বললে চিনতে পাড়বে?
শেজান- কেন পাড়বে না?
সোহানা- গল্প পড়ে পড়ে তোমাকে আর আমাকে খুঁজে দেখতে ইচ্ছা করছে, তুমি আমার সম্পর্কে কিছু কি লিখেছ?
শেজান- তোমাকে পাওয়া অসম্ভব না। তবে আমাকে কিভাবে পাবে? গল্পে তো আমি নেই, আমি লিখছি...
সোহানা- গল্পে তুমি যাই লেখো, সেখানে কথাটাতো তুমিই বলছো, তাই তোমাকে পাবো। চাইলে মিথ্যে বলতে পারো, কিন্তু যা লিখছ তা কিন্তু গল্প হলেও তোমার সত্য অনুভূতি; অন্তত আমার কাছে কল্পনা কিংবা স্বপ্ন না...।
শেজান- আমি অবশ্য এভাবে ভেবে দেখিনি।
সোহানা- তুমি কি আমার সাথে আজ রাতে ডিনার করবে? রাত ১০.০০ টায় রেডিসনে চলে আসতে পারো।
শেজান- না, আমি আজ রাতে তোমার ডিনারে আসবো না। এখন ৬.০০টা বাজে, চলো তোমার ছবিগুলো দেখবো... ডিনার হবে অন্যদিন...
সোহানা- আচ্ছা চলো...অন্যদিনই ভালো। তুমি সময় বের করতে থাকো এদিকে আমি ঢাকা শহরকে একটু নতুন করে দেখে নেই...
...শেজান আর সোহানা চলে গেলো জয়নুল গ্যালারীর ভেতরে; যেখানে সাদা-ক্যানভাসে রঙ-তুলির আঁচড়ে হাসছে “ঝরাপাতার দিন” – একটি ছবিতে চারুকলার কুয়াতলার নির্জন বিকেলে দুইবন্ধু পাশাপাশি বসে আছে; কি এমন কথা বলছে ছেলেটা? আর মেয়েটা এতোটা মনোযোগ দিয়ে শুনছে...!
...শেজান আর সোহানা কি এই ছবিটাতেই বন্ধি হয়ে আছে আর তাদের দিনগুলি পাতার মতোই ঝরে গেছে...!?
...
© খোরশেদ খোকন। ২৫/১২/২০১৫
©somewhere in net ltd.