নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্পঃ সালিস

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১০

ধানের খড়, পাটের খড়ি আর গাছের মরা ডাল জ্বালিয়ে আগুনের উত্তাপ হাতে-পায়ে মেখে শুকনো মুড়ি আর খেজুরের গুড় আয়েশ করে খাচ্ছিল নাফিস; এমন সময় পাশের গ্রামের রসুল চাচা তার বাড়ীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিল ক্ষেতে নিড়ানী দিতে। তাকে দেখে দাড়ালো তারপর বলল, কি বাবাজি কেমুন আছো?
.
নাফিস বলল, জি চাচা; আস-সালামুওয়ালাইকুম...। ভাল আছি।
রসুল চাচাঃ তা, বাবাজী তোমার বাবায় কেমুন আছে?
নাফিস বলল, জি চাচা, বাবা ভালই আছে। আপনে?
রসুল চাচাঃ আমি ভালাই আছি। তা, খবর কিছু শুনছো! বিকালে গেরামে নাকি একটা সালিশ হইবো?
নাফিস বলল, জি না, চাচা। আমি কিছু শুনি নাই।
তারপর রসুল চাচার সালিশের গল্প এগিয়ে চলল...গল্পটি এমন...
.
দুই মাসে আগে এই পাড়ার হারিস মিয়ার ছেলে সামসু মিয়া মধুপুর থেকে লাবনী নামের মেয়েটিকে বিয়ে করে আনে। বিয়ের পর সামসু মিয়ার ইচ্ছা ছিল ঢাকায় গিয়ে সংসার করবে কিন্তু বাঁধা হয়ে দাড়ালো বয়স্ক মা আমেনা বেগম আর বাবা হারিস মিয়া। তারা কিছুতেই শহরে গিয়ে থাকতে পারবে না। এদিকে সামসু মিয়া ঢাকায় বেবি-ট্যাক্সি চালিয়ে যা আয়-রোজগার করে তাতে দুইটা সংসার চালানো কঠিন। এমন অবস্থায় সামসু মিয়া সপ্তাহে পাঁচদিন ঢাকা আর দুইদিন গ্রামে অবস্থান করে সংসার ধর্ম পালন করছিল।
.
এক বিকেলে বদর মণ্ডলের বড়ছেলে সুমন মণ্ডল কলেজ থেকে বাড়ী ফিরছিল সাইকেল চালিয়ে। পথের পাশেই হাজীবাড়ীর বড়পুকুরে সেই সময় স্নান করছিল সামসু মিয়ার নতুন বউ লাবনী। কামরাঙা গাছের আড়ালে দাড়িয়ে উঠতি বয়সী সুমন মণ্ডল লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিল রক্তজবার পাতার আড়ালে লাবনীর লাবন্য আর তার শরীরের ঢেউ।
.
নিজেকে সামলে নিয়েছিল সুমন মণ্ডল; কিন্তু সেদিনের সেই দৃশ্য তার রাতের ঘুম আর পড়ার মনোযোগ কেড়ে নেয়। সে আস্তে আস্তে তার লোভের জিহ্বার কাছে পরাজিত হতে থাকে। পরাজয়ের শেষ সীমানায় এসে সামসু মিয়ার ঢাকায় থাকার সুযোগে সুমন প্রেম নিবেদন করে লাবনীকে।
.
লাবনী প্রথমে সুমন মণ্ডলের প্রস্তাবে আতংকিত বোধ করে, তারপর নাছোঁরবান্দা সুমনের উপহার, নরম কণ্ঠের কথা আর নতুন স্বপ্নের প্রতিশ্রুতির ফাঁদে নিজেকে নিজেই হারিয়ে ফেলে। ঘটনা এগিয়ে যায়; এগিয়ে যেতে যেতে একদিন রাতের আঁধারে সুমন গিয়ে কড়া নাড়ে লাবনীর ঘরে...।
.
টিনের ঘরের একরুমে লাবনী আর অন্যরুমে ছিল শশুর-শাশুড়ি। রাতে লাবনী আর সুমনের প্রেমলীলা ভালই চলছিল কিন্তু মাঝরাতে কাজের মাঝখানে ব্যঘাত ঘটায় সিঁদকাটা চোর। চোরের আওয়াজে ঘুম ভেঙে লাবনীর শশুর হারিস মিয়া চিৎকার করে উঠে...কে? কে?।
.
এদিকে সেই চিৎকারে সুমনের চোরের-পুলিশ-পুলিশ-মনটা ভাবে তাকে উদ্দেশ্য করেই কেউ চিৎকার দিয়ে বলছে, কে? কে? সুমন তার পড়নের নীল সার্ট, সাদা লুঙ্গি আর বাটার স্যান্ডেল জোড়া রেখেই প্রাণ বাঁচাতে উলঙ্গ হয়েই দেয় দৌড়...।
.
তারপর রাত ভোর হতেই মানুষের চোখে-মুখে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। তারা বুঝে যায়, এ বাড়ীর নতুন বউয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক আছে এমন কেউ এসেছিল গতরাতে। তারা নীল রঙের সার্ট, সাদা রঙের লুঙ্গি আর বাটার স্যান্ডেল জোড়া মনোযোগ দিয়ে দেখে; তারপর নিশ্চিত হয়, যে লোকটা গতরাতে এসেছিল সে অবশ্যই মণ্ডল বাড়ীর কেউ হবে...।
.
সবাই বুঝতে পারে, নীল রঙের সার্টটা হচ্ছে কলেজ পড়ুয়া সুমন মণ্ডলের, সাদা রঙের লুঙ্গিটা হচ্ছে বদর মণ্ডলের আর বাটার স্যান্ডেল জোড়া হচ্ছে বদর মণ্ডলের ঘরজামাই মানে সিদ্দিক মণ্ডলের...।
.
এবার গ্রামের দুর্বল মনের মানুষেরা শক্ত চিন্তায় পড়ে যায়; আগামীতে যে বিচার হতে যাচ্ছে, যেখানে বিচারকের নিজের পড়নের সাদা লুঙ্গি, তার ছেলের নীল সার্ট আর ঘর-জামাইয়ের বাটার স্যান্ডেল তাদের চিন্তার নিউরনে উপহাসের অনুরণন ঘটাতে থাকে...।
.
ন্যায় বিচার প্রত্যাশী হারিস মিয়া; একবার লাবনীর দিকে; একবার সাদা লুঙ্গির দিকে, একবার নীল সার্টের দিকে আর একবার বাটার স্যান্ডেলের দিকে চক্রাকারে তাকাতে থাকে; সে এখন ভেবেই পাচ্ছে না, কার বিচার চায় সে? কেন বিচার চায় সে?
...
© খোরশেদ খোকন। ০৭/০১/২০১৬

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৬

অপ্রকাশিত কাব্য বলেছেন: রহস্যময়,শেষটা দেখার আগ্রহ বাড়িয়ে দিলো বহুগন

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ
এই অনুগল্পটা কিংবা ছোটগল্পটা এখানেই শেষ।
ভাল থাকবেন।

২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৩

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: শেষটা বুঝলাম না। রহস্য রেখেছেন কিন্তু কেমনতর রহস্য যেখানে পাঠকের কাছে সত্যটা উন্মুক্ত।

আর গল্পের শেষে হারিস মিয়ার দ্বৈতভাবনার মধ্যে শেষেরটার কারণ কি?
কেন বিচার চায় সে?
যেখানে স্পষ্টত লাবণ্য আর সুমন মন্ডলের/মন্ডল পরিবারের কোন সদস্যের অনৈতিক সম্পর্ক প্রমাণিত সেখানে এহেন চিন্তার কারণ বুঝলাম না।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৮

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ।
দেখুন এটাতো গল্প।
তাই ভাবনাটা আমি ঠিক যেভাবে ভেবেছি, পাঠকও যে সেভাবে ভাববে সেটা আশা করি না।
"কার বিচার চায় সে?"
এখানে বিচার করলে চারজন মানুষের করা যায়; যদিও প্রত্যক্ষ অপরাধ দুজনের (সালিসে প্রমান সাপেক্ষ্য)।
কেন বিচার চায় সে?
যে বিচার সমস্যাকে আরও প্রকট করবে, জীবনকে আরও অনিশ্চয়তা দিকে নিয়ে; সে বিচার সে কেন চাচ্ছে সেটাই ভাবছে।
মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন, মন্তব্য করেছেন; অনেক খুশি হয়েছি। ভাল থাকবেন। শুভেচ্ছা।

৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এই চক্রের শেষ নেই! রুপান্তর আছে মাত্র ;)

+++

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ
হ্যা, ঘটনা আমাদের আশেপাশেই থাকে আর আমরাও চক্রের মধ্যেই থাকি। যদি আমরা দুর্বল থাকি তাহলে চক্রকে দেখা যায় আর সবল হলেই চক্রকে দেখা যায় না। ভাল থাকবেন।

৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বিচারের কোন সুযোগ নেই যেখানে, সেখানে বিচার চাওয়া অপরাধ!

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৬

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ
আপনি ব্যাপারটা এক লাইনেই ধরতে পেড়েছেন।
এজন্যই আপনি ভাল লেখক।
ভাল থাকবেন।

৫| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: বেশ জটিল একটা পরিস্থিতি। ভালো লাগলো।

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৯

খোরশেদ খোকন বলেছেন: হাসান মাহবুব ভাই
এখনো গ্রামের পরিস্থিতি বেশ জটিল।
আরও লেখার ইচ্ছা আছে। ধন্যবাদ

৬| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৬

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: রবী ঠাকুরের ছোট গল্পের সংজ্ঞাটা অনেকেই ভুলে গেছে তাই সকলের জন্য আবারও উদৃত করলাম:

"ছোট প্রাণ ছোট ব্যাথা,
ছোট ছোট দুঃখ কথা,
নিতান্তই সহজ সরল।
সহস্র বিস্রিত রাশি,
প্রত্যহ যেতেছে ভাসি,
তার-ই দু-চারটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ণনার ছটা,
ঘটনার ঘনঘটা,
নাতি তত্ব, নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে,
সাঙ্গকরি মনে হবে,
শেষ হইয়াও হইল-না শেষ।।"


আপনার গল্পটি রবী ঠাকুরের ছোট গল্পের সংজ্ঞার পরিপূর্ন উদাহারন। গল্পটি দারুন হয়েছে। সকলে জানতে চাচ্ছে শালিশের রায় কি হলো? এখানেও লেখকের স্বার্থকতা। আমি মনে করি লেখাক হিসাবে আপনি পুরোপুরি স্বার্থক। অন্তত এই গল্পটির ক্ষেত্রে।

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৯

খোরশেদ খোকন বলেছেন: মোস্তফা কামাল পলাশ
ভাই, আমার গল্প লেখার বয়স খুবই কম।
আশেপাশের চেনা দৃশ্যকে নিয়ে এক সময় কবিতা লিখেছি; তারপর দেখলাম মানুষ কবিতা পড়ে না (কারন বুঝে না!?);
ভাবলাম স্মৃতিকথা লিখি (স্মৃতির জোনাকিরা... লিখলাম) দেখলাম, মানুষ মজা পায় পড়ে!

এবার ভাবলাম, না স্মৃতি কথা দিয়ে তো বেশিদূর এগোনো যাবে না;
এবার একটু কল্পনা আর স্বপ্ন দিয়ে ঘটনাকে বর্ণনা করতে চাইলাম; হয়ে গেলো গল্প।

দেখা যাক আগামীতে পারি কিনা, যদি পারি ভাববো আসলেই একটা কিছু হচ্ছে।
লেখাটা হঠাৎ হয়ে যাওয়া কিছু না, এটা একটা চর্চা যাকে বহুদিন করার পর একটা কিছু হতে পারে।
অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

৭| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫১

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: বেশ লাগলো গল্পটা।সাধারন প্লটে ভিন্নতা এসেছে পরিচয় বিভ্রমের কারণে। শেষটাও মোক্ষম হয়েছে।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০০

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ভাই
"পরিচয় বিভ্রম" এটাতো বুঝলাম না?
আমার গল্প মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন, এটা জেনে ভাল লাগছে।
ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.