![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।
সে সময় দিনের কাজ দিনের আলোতেই শেষ করতে হতো...। তারপর সুদীর্ঘ একটি রাত তারা কাটিয়ে দিতো, জোনাকির আলো, জ্যোৎস্নার আলো কিংবা মনের আলোর কল্পনায় ...।
.
বাবা বলেছেন, সে সময় রাতে কেরোসিন কুপির বাতি জ্বালানোটা তাদের পরিবারের জন্য ছিল বিলাসিতা। দাদা ছিলেন অশিক্ষিত বর্গা কৃষক। দরিদ্র কৃষক হয়ে চারছেলে আর দুইমেয়ে নিয়ে আটজনের সংসার তিনি কি করে চালাতেন... সেটা এখন শুধুই রূপকথা...!
.
সবার বড় ছিলেন, বড়ফুপু। তিনি দাদীর পাশাপাশি মায়ের মতোই ছোট ভাইবোনদের লালন পালন করেছেন। তারপর একদিন লাল চান ফুপার সাথে বিয়ে হয়ে গেলে; বাড়ীর পাশের বংশাই নদীর ওপারে চলে গেলেও, আজীবন ছিলেন হৃদয়ের আঙিনায়...।
.
আমাদের গ্রামটার নাম “কদিম হামজানি”, গ্রামটা ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল হয়ে যমুনা সেতুর দিকে গেলে সর্বশেষে যে বাসস্ট্যান্ড পরে; সেখান থেকে পায়ে হেঁটে দক্ষিণ দিকে গেলে পড়বে “বংশাই নদী”। সে নদীটা পার হলেই আমার শৈশব-কৈশোরের সবুজ শ্যামল গ্রাম...।
.
১৯৬৯ সালের এক সকালে স্কুল পড়ুয়া আমার বাবা দারিদ্র জয় করতে দাদার বাড়ী থেকে এক প্রকার রাগ করেই পালিয়ে যান। ময়মনসিংহ শহরে গিয়ে চাকরী খুঁজেন। সপ্তাহ খানেক ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের একটা সস্তা বোর্ডিংএ দিনে দু’বেলা ডাল-ভাত খেয়ে একদিন সত্যি সত্যিই একটা সরকারী চাকরী পেয়ে যান। সেই চাকরী চলাকালীন তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন, তারপর আর পড়াশুনা হয়নি...।
.
আমার শৈশব-কৈশোরে গ্রীষ্ম, শীত আর ঈদের ছুটি মানেই ছিল দাদার বাড়ী। আমার বড়বোন আর আমার সৌভাগ্য যে; আমরা দাদা-দাদী, নানা-নানীকে খুব কাছ থেকে পেয়েছিলাম। সে সময়, আমরা নৌকায় দাদার বাড়ি যেতাম। বাড়ীর ঘাটে নৌকা ভেড়ানো হলে আমার ফুপু আর চাচারা এসে আমাদের কোলে তুলে বাড়িতে নিয়ে যেতো...।
.
দেখতাম সারাদিন নদীর এপাড়ের মানুষ ওপারে যাচ্ছে; বিকেল হলে আমরাও নদীর ওপারে বেড়াতে যেতাম বড়ফুপুর বাড়ীতে। বড়ফুপু আর বড়ফুপা তাদের নিজের গাছের আম-জাম-কলা-কাঁঠাল-বড়ই নিজ হাতে পেড়ে খাওয়াত আমাদের। আমার ভীষণ ভাললাগতো শীতের দিনে খেজুরের রস আর ধোয়া ওঠা ভাপা পিঠা...।
.
দাদার বাড়ীর পুকুরপাড়ে রক্তজবা ফুলের গাছ ছিল; গাছের লাল-লাল আর লাল-সাদা রক্তজবা ফুল ফুটে ফুটে ঝুলে পরতো শান্ত জলের উপর...। একদিন দাদা চলে গেলো না ফেরার দেশে; তার দুই বছর পড়ে দাদীও চলে গেলো...।
গত দুই বছর আগে আমার বড়ফুপু চলে গেলো। আমার রুপকথার জগত, তখন যেমন ছিল এখনো তেমনি আছে; শুধু তারা চলে গেছে দূরে...।
.
বড়ফুপু'র ছিল জমজ দুইছেলে নাম "রশিদ" আর "হামিদ"। গ্রামের কেউই তাদের আলাদা করে চিনতে পারতো না! আমি ঠিকই চিনতে পারতাম, তাই আমার একটু বড়াই ছিল মনে মনে...।
.
আমার দেখা গ্রামের মেঠোপথ, বাশ-বাগান, নদীর-ঘাট, গ্রাম্য হাট-বাজার, নতুন সাইকেল, ফেরীওয়ালার পেছনে দূর গাঁয়ে যাবার যে অনাবিল অতীত সেখানেই মিলেমিশে আছ "রশিদ" আর "হামিদ"।
.
গত তিন বছর আগে “হামিদ ভাই” স্ট্রোক করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে...! আমি নির্বাক হয়ে শৈশবের সেই দাদাবাড়ীর স্বচ্ছ পুকুরে রক্তজবা ফুলের গাছটাকে ঝুলে পরে থাকার দৃশ্যটা ভাবতে লাগলাম...।
.
আজ বিকেলে “রশিদ ভাই” কাউকে কিছুই না বলে..., না ফেরার দেশে চলে গেলেন ...! আমি নির্বাক হয়ে বসেই আছি...! ভাবছি, স্বচ্ছ পুকুর পাড়ে ঝুলে থাকা রক্তজবা ফুলের গাছটাকে...।
.
...শৈশবের সেই রক্তজবা গাছটা বুকের গহীনে কান্না হয়ে ঝুলে আছে; দুলছে...দুলছে...এখনো।
(হে পরম করুণাময়; তুমি আমার ভাইয়ের আত্মাকে শান্তি দিও...)
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৭
খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ
আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।
আল্লাহ্ আমার ভাইয়ের প্রতি সদয় হউক।
২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৩৭
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
এখানে পাঠক-পাঠীকা সহ সকলের অবগতির জানিয়ে রাখিঃ
উচ্চ রক্তচাব ও স্ট্রোক নিরব ঘাতক। কার যে কখন এ অসুখ হয়ে কেঊ জানেও না। বয়স ২৫ হওয়ার সাথে সাথে নিয়মিত প্রতি মাসে এক বার রক্তচাব মেপে দেখা দরকার। স্বাভাবিক ১২০/৮০ (সিস্টলিক/ ডায়াস্টলিক) -এর বেশি হলেই বিপদ-এর দিকে চলা আরম্ভ হল ধরে নিতে হবে এবং ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হয়ে উপযুক্ত ঔষধ গ্রহন করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
আর আর বেখালি হয়ে অবজ্ঞা করলেই সমূহ বিপদ (অকালে অক্কা)।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৩
খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
ভাল থাকবেন।
৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২০
হাসান মাহবুব বলেছেন: মৃতদের আত্মা শান্তি পাক।
১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৪
খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ
হাসান ভাই
ভাল থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৪
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
আমিও কামনা করি পরপারে রশির ও হামিদ ভাইদের আত্মা যেন শান্তিতে থাকে।