নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির জোনাকিরা... (ধ্রুবতারা)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১০

সে সময়টা ছিল বসন্তকাল। আমি পুকুরঘাটে বসে রাতের আকাশে একমনে তাকিয়ে ছিলাম। পুকুর পেড়িয়ে চারপাশে ধানক্ষেত, সরু মেঠোপথ চলে গেছে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে, একটা কালভারটের উপর গ্রাম্য রাখালেরা বসে করুন সুরে গান ধরেছে -
.
সোনা দিয়া বান্ধায়াছি ঘর
ও মন রে ঘুণে করল জর জর...
.
এমন সময় আমার কাঁধে হাত রাখলেন বড়চাচা; বললেন কি দেখিস?
আমি আকাশের দিকে আঙ্গুল উচিয়ে দেখাই, রাতের আকাশের জ্বলতে থাকা একটি উজ্জ্বল তারা।
চাচা আমাকে বলেন, আয় আমরা দুজনে মিলে রাতের তারা দেখি...!
.
উত্তরাধিকার সুত্রে আমরা হচ্ছি কৃষিজীবী মানুষ। দাদা ছিলেন অশিক্ষিত বর্গা কৃষক। দরিদ্র কৃষক হয়েও চারছেলে আর দুইমেয়ে নিয়ে আটজনের একটা বড় সংসার ছিল তার; আমার বাবার মতে সেটা ছিল তাদের রূপকথার জগত...!
.
আমার দাদা মরহুম ঈমান আলী (মৃত্যুঃ ০৫-১০-১৯৮২) এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার অনেক আগেই আমার বাবা পড়াশুনা করে সরকারি চাকরিজীবি হয়েছেন। অন্য চাচারাও দাদার মৃত্যুর পরে চাকরিজীবী হয়েছেন। একমাত্র বড়চাচা সেই যে দাদার সাথে কৃষিকাজ শুরু করেছিলেন; সেটাকেই পেশা হিসেবে নিয়ে সারাজীবনই কৃষি কাজ করে গেছেন।
.
বড়চাচা ছিলেন আমাদের বংশের সর্বশেষ কৃষিজীবী উত্তরাধিকার। তিনি কৃষিজীবী হলেও ছিলেন শিক্ষিত মানুষ; ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগেই সংসার সামলাতে পড়াশুনায় ইতি টেনেছিলেন তিনি।
.
তিনি বললেন, ঐ যে সবচাইতে উজ্জ্বল তারাটি দেখা যাচ্ছে ঐটার নাম ধ্রুবতারা। শুনেছি প্রাচীনকাল থেকেই মানে দিক নির্ণয় যন্ত্র আবিস্কারের পূর্বে সমূদ্রে জাহাজ চালানোর সময় নাবিকরা ঐ তারার অবস্থান দেখে অন্যান্য দিক নির্ণয় করতো। মনে রাখবি, ধ্রুবতারা হচ্ছে আকাশের একমাত্র তারা, যাকে এইদেশ থেকে বছরের যে কোন সময়েই ঠিক এক জায়গায় দেখা যায়।
.
চাচা বললেন, তুই কি সপ্তর্ষী মন্ডল কাকে বলে জানিস?
আমি বললাম, নাম শুনেছি কিন্তু নিজের মতো করে হিসাবটা মিলাতে পারি না।
তিনি বললেন, সপ্তর্ষী মন্ডল এর প্রথম দুটি তারা যাদের নাম পুলহ এবং ক্রুতু এই দুইটাকে সরলরেখায় বাড়ালে ধ্রুবতারা কে দেখা যায়। এবার ভাল করে তাকিয়ে দেখ, ঐটা হচ্ছে ধ্রুবতারা...
.
আমি বললাম, তুমি আমাকে সপ্তর্ষী মন্ডল নিয়ে আরও বল, আমি তারাদের দেশটা কেমন জানতে চাই।
তিনি বললেন, সপ্তর্ষী মন্ডল বিষয়টা রুপকথার মতোই, উওর-পূর্ব আকাশের দিকে খুব মনোযোগ দিয়ে তাকালে দেখতে পাবি বিরাট একটা প্রশ্নবোধক চিন্হ, এই উজ্জল জ্বল জ্বল করতে থাকা চিন্হটাই হচ্ছে সপ্তর্ষী মন্ডল। প্রাচীন আরবী পণ্ডিতদের মতে এটি দেখতে বড় একটা ভাল্লুকের মতো। আর প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিতদের মতে এটা দেখতে একটি ময়ূরের আকৃতি। মনে রাখবি, সপ্তর্ষী হচ্ছে তৃতীয় বৃহত্তম তারামন্ডল। পশ্চিমের চারটি তারা দিয়ে ভাল্লুকের শরীর এবং পূবের তিনটি তারা দিয়ে ভাল্লুকের লেজ কল্পনা করা হয়...।
.
চাচা বললেন, ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র মতে সপ্তর্ষী মন্ডলের সাতটি তারার নাম দেয়া হয়েছে সাতজন মূনীর নামে; তারা হলেন ক্রতু, পুলহ, পুলস্ত্য, অত্রি, অন্গিরা, বশিস্ঠ, অরুন্ধতী আর মরীচি। নামগুলোর মর্মকথা অন্য একদিন বলবো, ঠিক আছে...
.
মনে রাখবি, সপ্তর্ষিমন্ডল সারা বছর ধ্রুবতারার চারদিকে ঘোরে। সপ্তর্ষিমন্ডলের প্রথম দু’টি তারাকে (পুলহ, ক্রতু) যোগ করে সরলরেখা কল্পনা করলে ঐ সরল রেখা সব সময়ই ধ্রুবতারার দিকে নির্দেশ করে, আয় আমরা একমনে ধ্রুবতারা দেখি...।
---
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬; দুপুরে আমার সেই বড়চাচা মারা গেলেন। বাবা মা আর আমি তিনজনে টাঙাইল রওনা হলাম। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল; ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের পথে রাস্তা আর ফুরাতে চাইল না!
.
আত্মীয়স্বজন বার বার ফোনে জানতে চাইল আমরা কতদূর এগিয়ে আসতে পেরেছি; অবশেষে আমরা গ্রামের বাড়ী পৌছালাম রাত্রি পনে আঁটটায়।
জানাজা পেলাম না; দাফনের সুযোগটা পেলাম। নিজের দুই হাতে মুঠো ভর্তি মাটি নিয়ে আমি বড়চাচার কবরে দিলাম...।
অচেনা কবরে চিরদিনের জন্য রেখে এলাম, আমি আমার বড়চাচাকে...।
.
প্রকৃতির কি আজব খেলা;
এখন সময়টা চলছে সেদিনের মতোই বসন্তকাল...!
আমি পুকুর ঘাটে বসে রাতের আকাশে একমনে তাকিয়ে আছি।
পুকুর পেড়িয়ে চারপাশে ধানক্ষেত, সরু মেঠোপথ চলে গেছে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে, আমি একা বসে আছি...আজ আর আমার সেই বড়চাচা নেই...
আমার বুকফাটা কান্নার দিকে ধ্রুবতারা...অবাক চেয়ে আছে...!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০৮

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
আপনার বাব-চাচারা মনে হয় আমার বয়সী। আমি ১৯৭৭ সালে মহকুমা (মাদারীপুর) কলেজে ১১ ক্লাশে পড়তাম।আমিও বসন্তকালে জ্যোৎস্না রাতে আমাদের গ্রামের মায়া ভরা মেঠো পথে ও আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীর পাড় দিয়ে একা একা হাটতাম। আর প্রকৃতির নিরমল সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করেছি তা এখন শুধুই স্মৃতি। আমি আজ ৩৩ বছর প্রবাসী (অ্যামেরিকা) এর মধ্যে ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রায় প্রত্যেক বছর দেশে গিয়েছি সেই স্মৃতিকে স্মরন করে কিন্তু পরিবেশ আর পাইনি।

আপনার সরল মনের আন্তরীক স্মৃতি চারন আমার পড়তে খুব ভালোলাগে। আপনার মনের এই সরলতা, আন্তরিকতা ও সততা আটুট থাকুক কামনা করি। আপনার বড় চাচার জন্য আমার প্রারথনা রইল- তার আত্মা যেন পরকালে শ্নতিতে থাকে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৫

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ
আমার জন্ম ১৯৭৭ সালের পরে।
বাবা ১৯৭৩ সালে বিয়ে করেছিলেন। চাচা ৭০ বছর বয়সে মারা গেলেন। বাবা বড়চাচার চেয়ে ১৪ বছরের ছোট। আমার বাবা আপনার বয়সে বড় হবেন মনে হয়। যাই হোক, আপনার মন্তব্যে আমি খুব খুশি হয়েছি, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। ভাল থাকবেন।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সপ্তর্ষি মণ্ডল অনেক চেষ্টা করেও চিনতে পারিনি। আপনার চাচার দেখানো রাস্তায় একবার দেখব। প্রশ্নবোধক চিহ্নের খোঁজ করবো।
তিনি যেখানেই থাক, সুখে থাক, এই প্রত্যাশা করছি

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১১

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ
আরণ্যক ভাই। ভাল থাকবেন।

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: তারাদ্রষ্টা মানুষটি ভালো থাকুন তারাদের দেশে।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৫

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ
হাসান মাহবুব ভাই। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.