নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতির জোনাকিরা: (ইসলামপুর)

১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২২

দেওয়ানগঞ্জ রেলষ্টেশন থেকে সেদিন বিকেলের লোকাল ট্রেনটা একটা লম্বা দমের হুইসেল দিয়েছিল; আমার বড়বোন রোজী আর আমি জানালার কাঁচে মুখ রেখে দেখছিলাম কিভাবে দূরে চলে যাচ্ছে - প্ল্যাটফর্ম ঘিরে থাকা মানুষের কোলাহল।
-
দেখতে দেখতেই শুরু হয়েছিল গ্রাম। নিবিড় ঘন-সবুজ গ্রামের আম, জাম, কাঁঠাল আর কলাগাছ চলে যাচ্ছিল পেছনের দিকে আর আমরা দু'জন এগিয়ে যাচ্ছিলাম সামনের দিকে; সেটা ছিল একটা ভীষণ উচ্ছ্বাস আর আনন্দের দিন।
-
কু-ঝিক ঝিক করে এগিয়ে যাওয়া ট্রেনটা; ছোট্ট একটা রেল-সেতুর উপর এসে আরও ধীরে চলেছিলো। খালের ঘোলা পানিতে আমরা দেখছিলাম গ্রামের ছেলেমেয়েরা মনের সুখে সাঁতার দিয়েছে। কাচা রাস্তার দিয়ে এগিয়ে চলেছে আখের বোঝা নিয়ে সারি সারি মহিষের গাড়ী।
-
সামনে পরেছিলো একটা মাঠ আর তারপাশে নারকেল, সুপারির, তালগাছ আর খেজুরের বিশাল বন। বাবা মায়ের সাথে বসে শবরী-কলা আর বন-রুটি খেতে খেতে আমরা আরো দূরে এগিয়ে গিয়েছিলাম। যেন এগিয়ে যাওয়া মানেই নতুন দেশ, রাত ভোর হলেই রুপকথার রাজ্য!
-
এক সময় দেখি, ট্রেনের কামরায় বাতি জ্বলে উঠেছে; আর বাইরে তাকিয়ে দেখি – একটা লাল রঙের সূর্য পশ্চিমে ডুবে যাচ্ছে; দূরে ঐ গ্রামের মাথার উপরে নেমে আসছে রাত। দেখতে দেখতেই একটা ঘনকালো আঁধার এগিয়ে এসে গ্রামের অস্তিত্বকে গ্রাস করে নিলো। তারপর, আমার আর কিছুই মনে নেই...।
-
সেই সময়টা ছিল আশির দশকের মাঝামাঝি আর শীতের শুরু, একটা ঝাপসা কুয়াশার মতো পরিবেশে আমরা নেমেছিলাম ইসলামপুর রেলষ্টেশনে। তারপর শীতের হাওয়া গায়ে মেখে রিক্সায় এগিয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের নতুন বাসাটার দিকে।
-
আমার বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা; দুই বছর পর পরই আমাদের বাসা পরিবর্তন করতে হতো। পুরাতন বাসা ফেলে, পুরাতন বন্ধুদের ফেলে, গাছপালা আর পাখীদের ফেলে যেতেই হতো নতুন ঠিকানায়।
-
পুরাতন কে ফেলে যেতে যেমন মন খারাপ হতো, তেমনি রোমাঞ্চকর ছিল নতুন গন্তব্যের দিকে যাত্রা। স্বপ্নের মতো একটা ঘোর লেগে থাকতো আমাদের চোখে; নতুন বাসা আর তার পরিবেশটা কেমন হবে! সেটা জানার বিষয়ে আমাদের আগ্রহ ছিল অসীম।
-
ইসলামপুর থানা জামালপুর জেলার একটি ভাটি অঞ্চল। আর ভাটি অঞ্চলে শীতের শুরু মানেই অবস্তাপন্ন কৃষকের ফসল ঘরে তুলে পিঠা-পায়েস রান্নার ধুম।
-
রাতের আঁধারে মফস্বল শহরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে দেখেছিলাম, একটা বিশাল মাঠের মধ্যে সার্কাস আর যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়েছে। বড় একটা আলোর টাওয়ার/মিনার বানানো হয়েছে, ঝিলমিল করে বাতি জলছে আর নিভছে।
-
মাইকে উচ্চ স্বরে বার-বার হাউজি নামের একটা খেলা, সার্কাসের হাতির কসরদ, আর যাত্রাপালার নায়ক/নায়িকাদের রুপের কথা বলা হচ্ছিল। একটা যাত্রাপালার নাম এখনো মনে আছে, "রূপবান"; সেই সময় মানুষের মুখে মুখে রহিম-রূপবান-তাজেল এই তিনটা চরিত্র আর পালাগানের খই ফুটতো।
-
যে স্কুলের মাঠে যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়েছিল; সেই স্কুলেই আমরা দুই ভাইবোন ভর্তি হয়েছিলাম। স্কুলটা আমাদের বাসার পাশেই যে রাস্তাটা ছিল; তার বিপরীত দিকেই ছিল। সেই স্কুলের একছাত্র কি কারনে যেন আমাকে থাপ্পড় মেরেছিল। সেদিন, আমাকে কাঁদতে দেখে; আমার বড়বোন বলেছিল, আগামীকাল আমাকে দেখিয়ে দিবি; কে তোকে মেরেছে?
-
তারপরের দিন আমি আর বড়বোন দু’জনে মিলে রাস্তায় সেই ছেলেটিকে পেয়েছিলাম, তারপর তাকে ধরে আচ্ছা মতো ধোলাই দিয়ে টাইট করেছিলাম...!
-
বাসার পাশেই ছিল পুকুর, আমরা সেখানেই শৈশবে সাঁতার শিখেছিলাম। বাসার সামনের খোলা মাঠে দন-কলস নামের এক প্রকার ফুল ফুটে থাকতো সকালে, আমরা শাদা শাদা সেই ফুলের গায়ে উড়তে থাকা প্রজাপতি ধরতাম।
-
বাসার পাশেই ছিল লম্বা লম্বা তাল গাছ; রাতের বেলা ধপ করে পাকা-তাল গাছ থেকে পড়তো; আমরা ভঁয় পেতাম এই ভেবে যে, হয়তো গাছে ভুতেরা মারামারি শুরু করছে।
-
সেই ২০০০ সালে বড়বোনের বিয়ে হয়েছে; এখন সে টাঙ্গাইলে থাকে সারাদিন দুইমেয়ে আর একছেলে নিয়ে ভীষণ ব্যস্ততা তার। এদিকে আমি বিয়ে করেছি ২০০৭ সালে একমেয়ে আর একছেলে নিয়ে আমার ব্যস্ততাও কম না।
-
তবুও আমি যখন আমার ছেলেমেয়েকে কিংবা বড়বোনের ছেলেমেয়েকে একসাথে গল্প করতে আর হাসাহাসি করতে দেখি; আমার আর বড়বোনের সেই আশি আর নব্বইয়ের দশকের ছেলেবেলাটা চোখের সামনে ভেসে উঠে...!
-
ইচ্ছে করে বলি; এক-সময় এরকমই ছেলেমানুষ ছিলাম আমরা; তাই না?
--
১৩-০৩-২০১৬

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৫

আমিই মিসির আলী বলেছেন: বাহ্!
চমৎকার লিখেন তো।
অনেক ভালো লাগলো।। :)

১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫৩

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ মিসির আলী ভাই
আপনি আমার লেখা প্রথম পড়লেন!
যাই হোক; পড়েছেন আবার ভালও লেগেছে; এসব জেনে খুবই খুশি হয়েছি।
ভাল থাকবেন।

২| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:২৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: মুগ্ধ করার মত বর্ণনা!

১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:১২

খোরশেদ খোকন বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই
চেষ্টা করছি দেখি অতীতটা লিখতে পারি কিনা। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.