নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাংবাদকি ও কলামিস্ট খোরশেদ মাহমুদ , জন্ম:- রাজধানী ঢাকা উপকন্ঠে কেরানীগঞ্জে। বড় হয়েছি ঢাকায় । পড়াশোনা করেছি ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , গান, উপসম্পাদকীয় লিখতে পড়তে অজানাকে জানতে । আমি এখানে www.kalerrakhal.com

খোরশেদ মাহমুদ

আমার ভেতরে প্রবেশ করার জন্য ধন্যবাদ যদিও দেখার মত কিছু নেই

খোরশেদ মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুপেয় পানির সমস্যা নিরসনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ জরুরি

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯


খোরশেদ মাহমুদ


বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকারের তালিকায় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুপেয় পানি। ক্রমান্বয়ে সুপেয় পানির তিব্র সঙ্কট বেড়েই চলেছে। যা মানবজাতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কাটি অনেক দিনের। বর্তমানে বিশ্বের বেশ কিছু দেশকে বিশুদ্ধ পানীয় জল আমদানি করে সামর্থ্যবান ভোক্তাদের সরবরাহ করতে হয়। একইভাবে চীনকে আমদানি করতে হচ্ছে সামপ্রতিক দিনগুলোতে কানাডা থেকে বিশুদ্ধ বায়ু। তাই আমাদের চাই পানি ও বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার, সর্তকতা ও সচেতনতা।

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পানি ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে কিছু কিছু এলাকায় পানি সঙ্কটের কথা শোনা যায় মাঝে মধ্যে। মানুষের ব্যবহাররে জন্য দরকার বিশুদ্ধ পানি যা আজ অনেক দেশেই সহজলভ্য নয়। বিশ্বের তিনভাগ জল আর মাত্র একভাগ স্থলভূমি হলেও সেই বিপুল জলরাশি প্রাণকূলের পান উপযোগী নয়। বেশিরভাগই লবণাক্ত। সুমিষ্ট যে পানি স্থলভাগের বিভিন্ন আধারে সঞ্চিত রয়েছে তার প্রাপ্যতা ক্রমশ হয়ে উঠেছে দুর্লভ। দিন-দিন স্থলভাগের সুপেয় জল ফুরিয়ে আসেছ। উৎসগুলো একে একে লোপ পেতে চলেছে জীবনযাত্রা পরিচালনার ক্ষেত্রে মানুষের নানারূপ চাহিদা মিটাতে গিয়ে বিভিন্নভাবে দূষণের শিকার হয়ে পড়েছে সুমিষ্ট জলের উৎসগুলো। ফলে জনস্বাস্থ্য নানাবিধ রোগ-বালাইয়ের হুমকির মুখে। প্রচলিত আন্তর্জাতিক রীতিনীতিকে তোয়াক্কা না করে। পানীয় জলের অভাব ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠায় দেশে দেশে অভিন্ন নদ-নদীসমূহের পানি নিয়ে ইতিমধ্যেই হস্তক্ষেপ ও ভাগ-বাটোয়ারা শুরু হয়ে গেছে। কোনো কোনো দেশে উৎসে বাঁধ দিয়ে নদী অববাহিকার অন্যান্য দেশগুলোকে বঞ্চিত করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে চলেছে। এর প্রভাব বাংরাদেশেও পড়েছে অনেকটা। কারণ, বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর পানির উৎস ভারত থেকে বয়ে আসা অভিন্ন নদীগুলোর পানি। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ এবং পানি প্রাপ্যতা ভয়াবহভাবে কমেছে। মানুষের পানি প্রাপ্যতা এবং অপ্রাপ্যতাও ঋতুভেদে ওঠানামা করে। বর্ষায় পানির ঢল থাকলেও গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা কমে যায়। এর প্রধান কারণ, বাংলাদেশের কোনো নদীই বর্ষার সব পানি ধরে রাখতে পারে না। গ্রীষ্মে পানিপ্রবাহ কমে আসায় সমুদ্রের পানি উঠে আসছে উজানে। বৃদ্ধি পাচ্ছে জমিতে লবণাক্ততা।

নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন এখন জাতিসংঘ স্বীকৃত মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়লেও সুপেয় পানীয় সঙ্কটটা ক্রমে ঘনীভূত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৯০ কোটির বেশি মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পানীয় জল সংগ্রহের জন্য মানুষকে বহু দূর-দূরান্ত এলাকা পরিভ্রমণ করতে হয়। দিনের অনেক খানি সময় ব্যয় করতে হয়। অন্যদিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় রাজধানী ঢাকায় দৈনিক পানির দরকার হয় ২২০ থেকে ২৩০ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসা (ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড সুয়্যারেজ অথরিটি) চাহিদার পুরোটাই সরবরাহও করে। তবে এ নিয়ে অভিযোগের সীমা নেই বাসিন্দাদের, ওয়াসার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত দুর্গন্ধ ও ময়লা থাকে। দীর্ঘসময় ধরে ফোটানো হলেও কিছু এলাকায় সরবরাহকৃত পানি থেকে দুর্গন্ধ যাচ্ছে না, তা পানযোগ্যও করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহকৃত পানির ১৫ শতাংশ আসে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে। শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা থেকে পানি এনে এখানে শোধন করা হয়। কিন্তু নদী দুটির পানি এতোটাই দূষিত যে তা শোধন করেও পানযোগ্য করা যাচ্ছে না। ঐ পানি মূল শোধনাগারে নেয়ার আগে প্রাক-শোধনাগারে নিয়ে একবার শোধন করতে হয়। বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যক্তিরা করছে রমরমা বাণিজ্য। বোতলজাত পানি অথবা জেরি-ক্যান বিক্রি এখন ব্যাপক হারে বেড়েছে। কিন্তু রাজধানীসহ সারাদেশে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিরা জেরি-ক্যানে করে যে পানি বিক্রি করে তার বেশির ভাগই বিশুদ্ধ নয়।

আমাদের দেশে বিশেষত পার্বত্য এলাকার মানুষকে শুষ্ক মৌসুমে খাবার পানি সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ফুট পথ পাড়ি দিতে হয়। আর এদেশের খরাপ্রবণ এলাকায় প্রায় পাঁচ মাস অধিকাংশ নলকূপ থেকে পানি না ওঠার কারণে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। পুকুর-নদীর পানি ব্যবহার করে রোগাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে এ দেশের ২০ থেকে ৭০ শতাংশ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যায়। ব্যবহারযোগ্য সুপেয় পানির সঙ্কট তখন প্রকট আকার ধারণ করে। অন্যদিকে, লবনাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচলিত পানি সঙ্কট তখন প্রকট আকার ধারণ করে। বিশুদ্ধকরণ প্রযুক্তিগুলোও টেকসই হতে পারে না। অর্থাৎ বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্তি এদেশের জনগণের জন্য ক্রমান্বয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সরকারের জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান হলো, তারা চেষ্টা করছে জনগণকে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে। গ্রামগঞ্জের ৮৮ শতাংশ এলাকাকে তারা নিরাপদ পানির আওতায় আনার দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে বাস্তব অবস্থাটা ততোটা সুখকর নয়। এ দেশের গ্রামের সব নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়নি। পরীক্ষায় যে ১৪ লাখ নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ধরা পড়েছে, এর বিপরীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের উল্লেখযোগ্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা তেমন গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে এ কথাটা বলা যায় যে, কি শহর কি গ্রাম সর্বত্রই বিশুদ্ধ পানীয় জল মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অধরাই থেকে যাচ্ছে।

ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দিয়ে পানি সঠিক মাত্রায় নিরাপদ করা যাচ্ছে না, নদ-নদীর পানি দূষণের কবলে পড়ার কারণে। শহরাঞ্চলে ভূগর্ভের পানি আহরণ করা হয় গভীর নলকূপের মাধ্যমে। এখানেও পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে বিশেষজ্ঞগণ অভিমত প্রকাশ করেছেন। ব্যাপক নগরায়নের ফলে যে পরমিাণ পানি ভূগর্ভ থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে তা আর পূরণ হচ্ছে না আমাদের চারপাশের খালবিল ও প্রাকৃতিক জলাধারগুলোকে ক্রমান্বয়ে ভরাট করে ফেলায়। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ঢাকার ভূ-গর্ভস্থ জলাধারের কোনো কোনো জায়গায় প্রতিবছর দুই থেকে তিন মিটার পানি নেমে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ায় যেমন পরিবেশ ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে তেমনি বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার অন্যান্য নদীর দূষিত পানি এই পানির স্তরে প্রবেশ করছে। এতে ঢাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর তিন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এক. পানি নিচে নেমে যাওয়ায় যেমন জলের স্বল্পতা, দুই. ভূ-গর্ভের পানি দূষিত হয়ে তা এই পানির ব্যবহারকারীদের মাঝে রোগ ছড়ানো, তিন. পরিবেশ বিপর্যয় ও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা। বিশুদ্ধ পানির অভাব, বায়ুদূষণ এবং উপযুক্ত স্যানিটেশনের অনুপস্থিতিতে প্রতি বছর বিশ্বের ৫ বছরের কম ১৫ লাখ শিশু মারা যায়

আমাদের দেশেও এমন অসংখ্য মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলছে। নিরাপদ পানির অভাবে, উপযুক্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার স্বল্পতায় এবং পরিবেশ দূষণের বিপন্নতায় দেশের মানুষের সামনে ঘনিয়ে আসছে মহাসঙ্কট। দূষিত পানি পান করার ফলে সমপ্রতি ভয়াবহ হারে বেড়েছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিসের মতো মারাত্মক ব্যাধির উৎস দূষিত পানি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের অভিমত, দূষিত পানি দীর্ঘদিন পান করতে থাকলে আরো জটিল রোগ, এমনকি মরণব্যাধী ক্যান্সারও হতে পারে। কিডনি রোগ, আলসার, রক্তচাপ, অ্যাজমা, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। নদী-নালা-খাল-বিলে সমাকীর্ণ এদেশে সুপয়ে পানির সঙ্কট হতে পারে এটা ভাবাই যায় না। কিন্তু মেনে নিতে হবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই সত্য। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস সিইজিআইজিএস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ছোট ছোট আরো শত শত নদীর হিসাব না পাওয়া গেলেও গত ৪০ বছরে শুধুমাত্র তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনাতেই বিলীন হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমি। আর তার বিপরীতে নতুন ভূমি জেগেছে মাত্র ৩০ হাজার হেক্টর। প্রতি বছর কোনো না কোনো নদীর শাখা ধীরে ধীরে পলি পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে আরো দ্রুতহারে নদী বিলুপ্ত হতে থাকবে। পানি সঙ্কট আরো ভয়াবহ হবে। আমরা একে পাল্টাবার উদ্যোগ নিতে পারি পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে এবং বিশেষভাবে সচেষ্ট হয়ে। আমরা চাই এদেশে সকল প্রকার দূষণরোধে সচেতনতার প্রকাশ ঘটুক।

খোরশেদ মাহমুদ
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
স্টাফ রিপোর্টার দৈনিক আমার সময়

* বিঃদ্রঃ লেখাটি ২৩/০৯/১৬ আজকে ঢাক থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক জনতা;য় প্রকাশিত হয়েছে নিচে লিঙ্ক দেওয়া হলঃ-

Click This Link

*লেখাটি ১৭/০৯/১৬ তারিখে ঢাক থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ; প্রকাশিত হয়েছে নিচে লিঙ্ক দেওয়া হলঃ-

Click This Link

*লেখাটি ১৫/০৯/১৬ আজকে ঢাক থেকে প্রকাশিত জাতীয় অনলাইন৭১টাইমস ডট কম -এ প্রকাশিত হয়েছে নিচে লিঙ্ক দেওয়া হলঃ- Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.