নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Kintsukoroi: (n.) (v. phr) “to repair with gold”; the art of repairing pottery with gold or silver lacquer with the understanding that the piece is more beautiful for having been broken

kintsukoroi

Enlighten what’s dark in me/ Strengthen what’s weak in me/ Mend what’s broken in me/ Bind what’s bruised in me/ Heal what’s sick in me/ Revive whatever peace and love has died in me.

kintsukoroi › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাচ্চার মোরালিটির শিক্ষাঃ সেক্যুলার না ইসলামিক?

০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:১৯

বাচ্চারে মোরালিটি শেখানো যায় কেম্নে? ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, নাকি সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে? নাকি দুইটার কোন ব্লেন্ডেড ভার্সন? পশ্চিম থেকে কি কিছু শিখার আছে, নাকি আমাদের ইসলামি সোর্সই যথেষ্ট? আমাদের উপমহাদেশ সোর্স হিসেবে তৃতীয় শ্রেণীর থেকেও নিচে, এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য থাকার কথা না। বুক ফেটে যায় বলতে, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য, আরব বিশ্ব বা অন্য কোন মুসলিম দেশ ও আলোকবর্তিকা হাতে পথ দেখাচ্ছে না।



নিজে সৌদি আরব বড় হয়েছি, অনেক আত্মীয় স্বজন এখনো থাকেন, ওদের সমাজটার ভিতরের অনেক খবর আমার জানা আছে। লোম খাঁড়া হওয়ার মত ঘটনা যা মিডিয়ায় আসে না তা আমি কিছু কিছু শুনেছি। আমার একজন টীচার (যিনি মদীনা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন) একবার বলেছিলেন যে তিনি তার ৭ বছরের মেয়েকে যখন সৌদি আরব নিয়ে যান, তখন ফুল নিকাব পরান। এক কথায় কারণ বলেছিলেনঃ they are just animals!

মিসরের ঈভ টীজিং/ হ্যারাসমেন্ট এর ঘটনার কুখ্যাতি অনেকদিনের। ইন্টারনেটে একটা ভিডিও দেখেছিলাম, এক ভদ্রমহিলার কায়রোর একটা কুখ্যাত স্পট দিয়ে হেঁটে যাওয়ার ভিডিও। এই পথ (একটা ব্রীজ) উনাদের পাড়ি দিতে হয় ইজ্জত হাতে নিয়ে। এই ভিডিও যেদিন করা হয়, সেদিন তিনি একটা হিডেন ক্যামেরা নিয়ে যাচ্ছিলেন। উনাকে কী এক্সপেরিয়েন্স করতে হয়েছিল একটু দেখে নিতে পারেন। ইউটিউবে পাবেন। উত্তাল মুবারাক বিরোধী আন্দোলনের সময় বা পরবর্তীতে মুরসী বিরোধী 'বিপ্লবের' সময় ও কিন্তু শ্লীলতাহানির বিস্তর অভিযোগ এসেছে। মোনা আল তাহাওয়ীকে পছন্দ না করতে পারি, যা তার সাথে হয়েছে, তা সমর্থন করব কেম্নে?

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের এই অবস্থা হওয়ার ছিল? কেন হল?

..كلّ مولود يولد على الفترة

সব শিশুই বিশুদ্ধ/ খাঁটি/ পবিত্র অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের একটা অংশ। পরের অংশ আজকের টপিকের সাথে সরাসরি না গেলেও self assessment আর direction পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পরের অংশে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন যে শিশুর বাবা মা পরবর্তীতে তাকে ইহুদী বা খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলে। তাহলে আমাদের আলোচ্য বিষয়ে কি এইটা বলা যায় যে আমাদের বাবা-মায়ের কারণে আমরা পিউরিটি ল্যুজ করি? আমাদের ব্যর্থতায় আমাদের বাচ্চারা?

বিষয়টা নিয়ে আমি আর আমার বউ কিছুদিন থেকেই ভাবছি, বিতর্ক করছি। কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না। কেউ কাউকে কনভার্টও করতে পারছি না। আবার ছেলে বড় হচ্ছে। সঠিক শিক্ষা তার দরকার। কোনটা মোরাল আর কোনটা ইম্মোরাল সেইটা জানা শুধু না, কেন মোরাল বা ইম্মোরাল সেটা তার জানতে হবে। নিজে সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নাইলে সারাজীবন সিদ্ধান্তহীনতার dilemma-য় ভুগবে, পথ হারানোর আশঙ্কা থাকবে। কিন্তু কীভাবে শিখাবো? ধর্ম? পাপ পুণ্য? নাকি মনুষ্যত্বের মন্ত্রঃ সবার উপর মানুষ সত্য? নাকি দুটো একসাথে?

আমরা এখন ছুটি কাটাচ্ছি কক্সবাজারে। ইনানীতে ছিলাম বেশ কিছু সময়। রিসোর্টের চারপাশে গ্রাম। বাড়িগুলো বড় শান্তি শান্তি। পুকুর আছে বাড়িতে, সুপারি বাগান আছে পুকুর পারে। মূল কক্সবাজারের মত প্রাণহীন না এই এলাকা। রেগুলার ফিজিক্যাল এক্টিভিটিতে অভ্যস্ত আমরা দুইজনই। তাই নিয়ম করে সকাল- বিকাল হাঁটছি, সাগরে ঝাপাচ্ছি আর সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছি। গতকাল বিকালে মেরিন ড্রাইভ ধরে হাঁটছিলাম। পর পর দু'টা স্থানীয় বাচ্চাদের দলের সাথে দেখা। প্রথমে দেখা একদল মেয়ের সাথে; এরা সবাই পাশের স্কুলে সিক্সে পড়ে। কী যে নিরীহ কৌতূহল বাচ্চাগুলার চোখে মুখে। হা করে দেখছে আমাদেরকে, বিশেষ করে আমার বউকে। আমার বউও পারে বটে! ওদের সাথে গল্প জুড়ে দিল। ডিটেইলে আর না গেলাম, মোদ্দাকথা বড় ভাল্লাগলো ওদেরকে, ওদের শিশুর সরলতাকে। এরপর ছেলেদের একটা ছোট দল আমাদের ক্রস করল। বেশি না, ৩ কী ৪ জন হবে। একই বয়েসি। এদেরও অনেক কৌতূহল। তবে মোটেও সরল বা নিরীহ না। ওদের চোখ মাপছে আমার বউকে! দুটি একই বয়েসি ছেলে মেয়ের দলে যেন আকাশ- পাতাল তফাৎ। একই এলাকায় বসবাসকারী, একই আর্থ -সামাজিক প্রেক্ষাপটে বড় হওয়া, (হয়তো) একই স্কুলে পড়ুয়া, (হয়তো) একই মক্তবে কুরআন শিখতে যাওয়া দুইদলের মধ্যে কীভাবে এতো পার্থক্য হয়ে গেলো? কেন মেয়েরা তাদের সারল্য (ফিতরাতের অংশ?) ধরে রাখলো আর ছেলেরা সারল্য হারিয়ে ফেললো, ফিতরাতকে করাপ্ট করে ফেললো?



এইটা কি বয়েসের দোষ? নাকি boys will be boys? নাকি আকাশ সংস্কৃতির কুফল? নাকি আল্লাহর যথাযথ ভয় কাজ না করা, বা অসম্পূর্ণ ইসলামী শিক্ষা? কেন জানি আমাদের 'ইসলামিক সার্কেলে' এইসব আলোচনা হলে এই কিছু কারণের মধ্যেই আমরা ঘুরপাক খাই। আকাশ সংস্কৃতির পিন্ডি চটকানো হয় সবচেয়ে বেশি। যেন স্যাটেলাইট টিভি আসার আগে আমরা খুব ধোঁয়া তুলসি পাতা ছিলাম। সাথে চলে আসে কন্সপিরেসি থিওরিঃ সবই মুসলমানদের ঈমান আকিদা নষ্টের বিধর্মীয় মাস্টার প্ল্যান!

বয়সের দোষ যদি হবেই বা, তাহলে মেয়েদের হয় নাই কেন? Boys will be boys হলে আল্লাহ কেন দৃষ্টি সংযত রাখতে বললেন? পারবেনা জেনেও বললেন? নাকি পারবে বলে বললেন? অসম্পূর্ণ ইসলামি শিক্ষা বা আল্লাহকে ভয় না পাওয়ার ব্যাপারটাও মানতে পারি না, যখন দেখি ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেগুলা পহেলা বৈশাখে রক্ত দিয়ে মা- বোনের সম্ভ্রমহানির প্রতিবাদ করে, আর আজন্ম 'ইসলামি পরিবেশে' বড় হওয়া, ছোটকাল থেকে হালাল হারাম শিখা আমিও বারবার হোঁচট খাই (আল্লাহু মুস্তা'আন)। আকাশ সংস্কৃতি? এইটা কোন যুক্তিই না। গেল শতকের সত্তরের দশকে আমার মা স্কুলে যেতেন গ্রাম থেকে জেলা শহরে। উঁচু ক্লাসে উঠতে উঠতে উনার সাথের সব মেয়েই পড়া ছেড়ে দেয়। আমার মা দেন নি। তিনি দুই/ আড়াই কি মি রাস্তা একা হেঁটে স্কুলে যাওয়া চালু রাখলেন। বোরকা পরতেন আমার মা। তা সত্তেও উনাকে অকথ্য 'ইভ টীজিং' সহ্য করতে হত। একটা ৪ লাইনের ছড়া আম্মার কাছে শুনে আমারও মুখস্ত হয়ে গেসে। আমি চ্যলেঞ্জ করতে পারি যে আপনি কল্পনার লাগাম ছেড়ে দিয়েও এরকম অশ্লীল ছড়া বানাতে পারবেন না। তখন আমরা কোন আকাশ সংস্কৃতির কবলে ছিলাম?



এইসব খেলো কথা বার্তা বলে যতদিন আমরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকবো, ততদিন কোন সমাধান হবে না। এখনো কি সময় হয়নি সিরিয়াস আত্মপর্যালোচনার, কঠিন প্রশ্ন করার? শুরু না করলে, সমস্যার স্বীকৃতি না দিলে সমাধান আসবে কোত্থেকে? উম্মাহর শুদ্ধি/ ইসলাহ বড়, নাকি বড় সালাফি-মাযহাবী গন্ডগোল?

আমার বেড়ে উঠার এক্সপেরিয়েন্স বলি। হালাল হারাম বা জায়েয নাজায়েয এর সাথে আমার পরিচয় একদম ছোটবেলা থেকে। এইটা করা যাবে না, নাজায়েজ। ওইটা করলে আল্লাহ খুশি হবেন। পর্দা করা ফরয। চোখেরও পর্দা আছে। চোখেরও যিনা আছে। মেয়েদের সাথে কথা না বলাই ভাল, বললে যদি সীমালঙ্ঘন হয়ে যায়!

এর কোনটাই স্ট্রিক্টলি রিলিজিয়াস দৃষ্টিকোণ থেকে ভুল কথা না। কিন্তু এই শিক্ষা দেয়ার কি এর থেকে ভাল উপায় নাই? আমি শিউর, আপনাদের যাদের রিলিজিয়াস পারিবারিক ব্যকগ্রাউন্ড আছে, আপনারাও এগুলো না হলেও এর কাছাকাছি জিনিস পরিবার থেকে অথবা হুজুর থেকে শুনেছেন। আন্দাজ করতে পারি ইনানীর সেই ছেলেগুলোও শুনেছে। কিন্তু যে কারণে বলা, সেই উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হল? আমার নিজেরে দিয়ে বলতে পারি, এই লাইনের শিক্ষা কাঙ্খিত লক্ষ অর্জনে অক্ষম। এই শিক্ষা কি করতে হবে আর কি করতে হবে না সেই কথা বলে, বলে না যেটা করতে হবে সেটা কেন করতে হবে। অন্যভাবে বললে এই শিক্ষা অনেকটা মুখস্ত পড়ার মত। কী পড়লাম না বুঝেই পড়লাম, পরীক্ষার হলে লিখতে পারলেই হল। চিন্তার উদ্রেক এই শিক্ষা করে না। আর করতে পারে না বলেই আমার মত বেড়ে উঠারাও হোঁচট খায়।

আমাদের দেশে আরো অনেক বিভাজনের মত ধর্মীয় শিক্ষা নিয়েও একটা বিভাজন আছে এবং দিন দিন প্রকট থেকে প্রকট হচ্ছে। এক দিকে ধর্ম শিক্ষা ছাড়া মানুষ হবে না এক্সট্রিম, অন্যদিকে ধর্ম শিক্ষার দরকার নাই এক্সট্রিম। সবসময় যেমন হয়, সত্য আসলে আছে মাঝামাঝি কোথাও। এই মাঝামাঝি জায়গাটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

মাঝখানের জায়গার সন্ধানে:

فَخِيَارُكُمْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ خِيَارُكُمْ فِي الْإِسْلَامِ إِذَا فَقُهُوا

যারা জাহিলিয়্যাতে বেস্ট ছিল, তারা ইসলামেও বেস্ট, যদি সে ধর্মীয় বুঝ-সমঝ অর্জন করতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আর ইমাম বুখারী তার সহিহ বইয়ে স্থান দিয়েছেন।

এই হাদীসের সপক্ষে প্রমণ রাসুলুল্লাহর জীবনেই আছে। জাহেলী মক্কার ভালো লোক যারাই ছিল, প্রায় সবাইকেই আল্লাহ পথ দেখিয়েছিলেন। আবু বকর, উমার, উসমান, তালহা, যুবায়ের সহ আরো যারা প্রথম দিকে ঈমান এনেছিলেন, সবার পূর্ববর্তী রেকর্ড দেখেন। ইনাদের সবার ভালো মানুষ হিসেবে সুখ্যাতি ছিল। এর সাথে যখন ধর্মের বুঝ তাদের আসল, সবাই একেকজন তারকায় পরিণত হলেন।

এইখান থেকে তাহলে একটা জিনিস ডিডাক্ট করা যায়। সেটা হল যে মানুষের কিছু মৌলিক গুনাবলী আছে, যা ধর্ম সাপেক্ষ নয়। এই মৌলিক জায়গাটা যাদের আছে, তারা যখন ধর্মীয় জ্ঞান না ঠিক, ধর্মীয় understanding লাভ করে, তখন তারা অন্য লেভেলে পৌঁছে যায়। এটাই হচ্ছে মু'মিনের desired level. আমার মনে হয় এইখান থেকেই বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়ার মূলনীতি (pedagogy) পাওয়া যেতে পারে। প্রথমে মনুষ্যত্বের মৌলিক পাঠের গাঁথুনি, এর উপর রিলিজিয়াস শিক্ষার পত্তন!

আমি যে খুব বেশী র‍্যডিকাল কিছু বলছি না, তার পক্ষে আমার কাছে প্রমাণ আছে। একদম প্রথম হিজরি শতকে মাদীনা মুনাওয়ারার একজন মা, 'আলিয়া বিন্ত শারিক, তার বছর সাতেকের ছেলেকে শিক্ষকের কাছে পাঠানোর সময় কী বলছেন শুনেনঃ

تعلم العلم، اذهب الي ربيع فتعلم من ادبه قبل علمه

জ্ঞান অর্জন কর। রাবী'আর কাছে যাও, এবং তার জ্ঞান থেকে শিখার আগে তার আদাব থেকে শিখ।

রাবী'আ (ইবনু আব্দুর রাহমান) ছিলেন তখনকার মাদীনার সবথেকে বড় আলেমদের একজন। তিনি তাবে'য়ী ছিলেন। আর বাচ্চাটা? ইমাম মালিক ইবনে আনাস রাহিমাহুল্লাহ, মাদীনার ইমাম! দুই বছর তিনি আদাব শিখলেন রাবী'আর কাছে!

আরেকটা ঘটনা শুনুন। এটা আরো পরের ঘটনা। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ মক্কা থেকে মাদীনা চলে এসেছেন, সাথে তার মা। উদ্দেশ্য? ইমাম মালিকের কাছে পড়া। একদিন মালিকের কাছে পড়া শেষে শাফেয়ী বাড়ি ফিরেছেন। ঘরে ঢুকার আগে মা জিজ্ঞেস করলেনঃ কী নিয়ে ফিরেছ (মানে মালিকের সাথে এতো সময় কাটায়ে কী শিখলা)? শাফেয়ী উত্তর দিলেনঃ জ্ঞান এবং আদাব। মা বললেন ফিরে যাও, তুমি কিছুই নিয়ে আসোনি! শাফেয়ী দুঃখ ভরা মন নিয়ে মালিকের কাছে ফিরে ঘটনা বললেন। মালিক তাকে শিখায়ে দিলেনঃ আবার যাও। এইবার মা যখন জিজ্ঞেস করবেন তখন আদাব আগে বলবা, জ্ঞান পরে। বলবা আমি আদাব আর জ্ঞান নিয়ে ফিরেছি। মালিক নিশ্চয়ই তার নিজের ছোটবেলার কথা মনে রেখেই এই সাজেশন দিয়েছিলেন। এইবারের উত্তরে মা সন্তুষ্ট হয়ে দরজা খুলে ছেলেকে বুকে টেনে নিলেন!

তাহলে দেখতে পাচ্ছি ইসলামের প্রথম যুগে মানুষের প্রায়োরিটি জ্ঞান খুবই টনটনে ছিল, আমাদের মত স্ক্র্যম্বল্ড ছিল না। বাচ্চাদের পড়ালেখা কুরআন বা হাদীস দিয়ে শুরু হতো না, হত আদাব দিয়ে। এই আদাবকে আমি নীতিশাস্ত্র বলতে চাই। আমার কোন ধারণা নাই আদাবের কন্টেন্ট কি ছিল। তবে ধারণা করতে পারি এইখানে মনুষ্যত্বের শিক্ষা দেয়া হত, আচার ব্যবহার শিখানো হত, বিনয় শিখানো হত, সৌজন্য শিখানো হত, মানুষের মর্যাদা শিখানো হত, বাবা মায়ের হক শিখানো হত, প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য শিখানো হত, নরম ভদ্র আচরণ শিখানো হত, নিচু গলায় কথা বলা শিখানো হত, শ্রমিকের অধিকার শিখানো হত, সালাম বিনিময় শিখানো হত, রোগীর সেবা বা মেহমানের আপ্যায়ন ইত্যাদি মহৎ গুণের শিক্ষা দেয়া হত। সাথে জেন্ডার রিলেশন্স শিখানো হত কি না আমার জানা নাই, তবে যদি শিখানো হত, অবাক হওয়ার কিছু নাই। কারণ উনারা আমাদের মত ডাম্ব ছিলেন না, ছিলেন তাদের যুগের স্মার্টেস্ট। আর যদি শিখানো নাও হয়, আমরা যুগের উপযোগী নতুন কারিকুলাম বানাচ্ছি না কেন? কিসে আটকানো আমরা? কোথায় আমাদের হাত পা বাঁধা?

ইমাম মালিকের অনেক মহিলা শিক্ষক আর মেয়ে ছাত্রী ছিল। ইমাম বুখারীর অনেক মহিলা শিক্ষক ছিলেন, যাদের মধ্যে কেবল বসরাতেই ছিলেন ৭০ জন! শাইখ আকরাম নাদওয়ী হাফিযাহুল্লাহ ৪০ খন্ডে মহিলা হাদীস স্কলারদের জীবনী সংগ্রহ করেছে। একটা হেলথি পুরুষ- মহিলা সম্পর্ক না থাকলে ফিমেইল স্কলারশিপ ফ্লারিশ করত বলে আমার মনে হয় না।

আমার বিদ্যার দৌড় এইটুকুনই। আমার কাছে সমাধান আছে সেই দাবী আমি করি না। আমি শুধু কিছু প্রশ্ন তুলেছি মাত্র। আর সমাধানের ইঙ্গিত দিয়েছি। ইসলামের pedagogy নিয়ে আমাদের দেশের স্কলারদের ভাবার প্রয়োজন। আপাদমস্তক বদলানোর সময় এসেছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির। আর শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙ্গেচুড়ে নতুন করে শুরু না করলে এই আপাদমস্তক বদলানোর কাজটা সম্ভব হবে না।

মাননীয় আলিম উলামাদেরই এই কাজ করতে হবে। নাহলে আশানুরূপ ফল আসবে না, ধর্মেরও ফায়দা হবে না। মাঝখান থেকে কিছু লোক শুধু পানিই ঘোলা করবে।

যা বলেছিলাম, আমি মোটামুটি আমার বউ এর সাথে এখন একমতঃ ছেলে আগে মনুষ্যত্বের মৌলিক জিনিস শিখবে, পরে তার রিলিজিয়াস এডুকেশন শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ!

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫১

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: জটিল সমস্যা। আপনারা যত চেষ্টাই করেন, স্কুলে গিয়ে তো সেই বাজে পরিবেশেই বড় হবে। ধর্ম ও মনুষ্যত্ব দুইটাই দরকার। বাবা মা যেন অনুকরণীয় হতে পারে সেটারও চেষ্টা করতে হবে। আর আল্লাহর কাছে তো সাহায্য চাইতেই হবে...

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:০৭

kintsukoroi বলেছেন: আমি একমত আপনার সাথে। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া হবে না। বাবা মাকেও অনুকরণীয় হতে হবে। স্কুলের পরিবেশও যাকে বলে আনকন্ট্রোলেবল ভেরিয়েবল। কিন্তু পরিবর্তন দরকার। আর পরিবর্তন আসার আগে প্রশ্নটাতো তুলতে হবে। ভিতরের লোক প্রশ্ন তোলা ভালো, বাইরের লোকেরতো ইন্টেনশনের ঠিক নাই।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার নিজের সমস্যা সমাধান করেন; বাচ্ছা ছেলেগুলো আপনার ব্উ'এর দিকে তাকায়েছে, এতে আপনার মনে অপ্রয়োজনীয় ভাবনা আসছে; আপনার মুল সমস্যা আছে, আপনি হয়তো লতার মতো, নিজেই দাঁড়াতে পারেন না।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:০৯

kintsukoroi বলেছেন: বাহ! আপনার মাশাআল্লাহ অনেক বুদ্ধি দেখছি। আপনার মতো জ্ঞানী লোকজনের সাথে ঝগড়া দিতে আমি আসি নাই। আমি 'বুদ্ধিমানদের' থেকে দূরে থাকি।

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪২

বিবেক ও সত্য বলেছেন: http://www.somewhereinblog.net/blog/wise/30139181

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:১২

kintsukoroi বলেছেন: আপনি যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, তার মনে হয় বেশিরভাগই ভ্যলিড। শিউর না, কারণ আমি আপনার লিখা পড়ি নাই, চোখ বুলিয়েছি মাত্র। তবে আপনার উপসংহারের সাথে আমি একমত না। সম্পূর্ণ ভিন্ন মত আমার। তাও চিন্তাটুকু ধরে রাখবেন। হয়তো ভালো কিছু হবে একদিন।

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:





আপনি পাথরের যুগের লোকদের নাম এনেছেন আপনার পোস্টে, আপনিও পাথরের যুগে আছেন।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৫২

kintsukoroi বলেছেন: ভাই, আমি যদি উনাদের যুগের হইতাম, খুশিই হইতাম! সিরিয়াসলি।

৫| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:১৫

অগ্নিবেশ বলেছেন: চাঁদজী আপনি পোস্ট ভালোভাবে পড়েন নাই।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩

kintsukoroi বলেছেন: আমারও তাই ধারণা।

৬| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০৬

দি রিফর্মার বলেছেন: বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৌলিক শিক্ষাই হওয়া উচিত শিষ্টাচার বা আদব। যারা আদব শব্দটি অপছন্দ করেন তাদের আদব না শিখলেও চলবে। সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪

kintsukoroi বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

৭| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:০৭

নতুন বলেছেন: যা বলেছিলাম, আমি মোটামুটি আমার বউ এর সাথে এখন একমতঃ ছেলে আগে মনুষ্যত্বের মৌলিক জিনিস শিখবে, পরে তার রিলিজিয়াস এডুকেশন শুরু হবে।

+++

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫

kintsukoroi বলেছেন: :)

৮| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার লেখাটা দূর্দান্ত মনে হল । আপনি যে প্রশ্ন গুলো তুলেছেন সেগুলো খুবই যৌক্তিক আর প্রাসঙ্গিক । আমাদের ধর্মীয় ইতিহাস থেকে আপনি যে উদাহরণ গুলো দিয়েছেন সেগুলোও আমার খুবই পছন্দ হয়েছে ।

রবীন্দ্রনাথের সেজদাদার (হেমেন্দ্রনাথ) বলা "আগে চাই বাংলা ভাষার গাথুনি, পরে ইংরেজি শিক্ষার পত্তন" আপনি যখন এভাবে ব্যবহার করলেন "প্রথমে মনুষ্যত্বের মৌলিক পাঠের গাঁথুনি, এর উপর রিলিজিয়াস শিক্ষার পত্তন" তখন একটু দ্বিধা থাকলেও আপনার এই সিদ্ধান্তটা " সত্য আসলে আছে মাঝামাঝি কোথাও। এই মাঝামাঝি জায়গাটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।", অতি সত্য বলে মনে হলো ।

"মনুষ্যত্বের মৌলিক পাঠ" আসলে ধর্মগুলো তেই পাওয়া যায় - তবে সেটার পাঠ শুধু সার্বজনীন হওয়া চাই ।
আর হ্যা, জানিনা জাল কিনা হাদিসের এই অংশটা ভাল লাগলো না " শিশুর বাবা মা পরবর্তীতে তাকে ইহুদী বা খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলে।" । এভারেজ মুসলমানের চাইতে এভারেজ ইহুদী বা খ্রিস্টানরা অনেকগুন ভাল । আর শিশুদের জন্যও মাদ্রাসা মক্তব থেকে মিশনারি স্কুল হাজারগুনে ভাল ।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:২৬

kintsukoroi বলেছেন: হাদীসটা জাল নয় ভাই। একটু চিন্তা করে দেখবেনঃ বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু জন্মসূত্রে ধর্ম প্রাপ্ত হয়। হিন্দুর ছেলে হিন্দু, মুসলমানের ছেলে মুসলমান ইত্যাদি ইত্যাদি। যদি না কেউ জেনে বুঝে বা অন্য কোন কারণে কনভার্ট হয়। হাদীসের বক্তব্য হল যে সকল শিশুর ভিতরেই আল্লাহর পরিচয় ইন বিল্ট থাকে। পরে বাবা-মা (প্রাইমারিলি) সেই ইন বিল্ট ন্যাচারকে চেইঞ্জ করে ফেলে। এইটাই কি ঘটে না? পড়া ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

৯| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:২৭

ছায়াপথের যাত্রী বলেছেন: লেখাটি ভালো লেগেছে বিশেষ করে উপসংহার ...
" ছেলে আগে মনুষ্যত্বের মৌলিক জিনিস শিখবে, পরে তার রিলিজিয়াস এডুকেশন শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ! "

শ্রাবণধারার কথায় একেবারে দ্বিমত পোষণ করছি না।
এটা হয়তো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা যায় , যেহেতু minorities are supposed to be good,
its a survival technique u can say !!!
যে ভালো তাকে ধর্ম দিয়ে ডিফারেনশিয়েট না করে ব্যক্তি হিসেবে ট্যাগ করাটাই শ্রেয় ।

তারপরেও বলছি, ইহুদী বা খ্রিস্টান ধর্ম আমাদের চেয়েও অনেক পুরনো ধর্ম ।
ইন ফ্যাক্ট এই ধর্ম গুলো বেশ কয়েকবার ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ড পার করেছে ।
আজকে যে এদের মাঝে লিবারেলিজম, ধর্মের আগে মানবিকতা, প্র্যাক্টিক্যাল এটিকেটস কাজ করছে তা একদিনে আসেনি।
শত বছরের পরিক্রমায় মুল্যবোধ গুলো গ্রো করেছে।

আমরা জানি খ্রিষ্টান ধর্মে এক সময় ধর্মীয় গুরুদের রাস্ট্র ও সমাজে বেশ প্রভাব ছিল ।
শুধু প্রভাব বললে ভুল হবে, বলা যায় চার্চ গুলোই পিছন থেকে সমাজ ও রাস্ট্র পরিচালনা করতো।
ইতিহাস ঘাটলে দেখবেন ধর্মকে হাতিয়ার করে শতাব্দি ব্যাপী মারামারি, কাটাকাটির করুন ইতিহাস।

বাস্তবতা কি জানেন ??? Sometimes history repeats itself ...
শঙ্কা হচ্ছে আমরা মুসলমানরা বুঝে বা না বুঝে সে দিকেই এগুচ্ছি কিনা !!
তবে বিশ্বাস রাখুন আমরাও এক সময় এই ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ড অতিক্রম করবো sooner or later ।

আর শিশুদের জন্যও মাদ্রাসা মক্তব থেকে মিশনারি স্কুল হাজারগুনে ভাল ... বর্তমান প্রেক্ষাপটে লজিক আছে বৈকি !!!

০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৪১

kintsukoroi বলেছেন: ট্রাঞ্জিশনের কথাটা আপনি একদম ঠিক বলেছেন। আপনার শঙ্কাও সত্য, আমরা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করছি। মজার কথা হল আমাদের প্রফেট (সা) আমাদের বলে গিয়েছেন যে জিউ এবং খ্রিস্টানরা যে পথে হেঁটেছে আমরা হুবহু একই পথে হাঁটবো। সো মাচ সো, যে ওরা যদি গিরগিটির গর্তে ঢুকে, আমরাও পিছন পিছন ঢুকব। আমাদের চোখের সামনে সেই প্রফেসিই বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রতিদিন। আর ট্রাঞ্জিশন ইনশাআল্লাহ শুরু হয়ে গেছে। আমরা তার মধ্যিখানে আছি, বুঝে না বুঝে। রেজা আসলান তার নো গড বাট গড বইতে খুব সুন্দর করে জিনিসটা দেখিয়েছেন। তিনি প্রটেস্টান্ট রিফরমেশনের সাথে তুলনা করে বলেছেন এই যে রক্তপাত, আই এস, আল কায়েদা, ইত্যাদি সবই আসলে ওই প্রসেসেরই অংশ। প্রটেস্টান্ট রিফরমেশনের ইতিহাসও রক্তাক্ত। আমদের এই রক্তাক্ত রিফিরমেশন প্রক্রিয়ার শেষে ইনশাআল্লাহ্‌ মডারেশনেরই জয় হবে। কারণ আমরাতো মডারেট নেশন, উম্মাতুন ওয়াসাত।

পড়া ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.