নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহান আল্লাহপাক উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য যে কয়েকটি মর্যাদা পূর্ণ দিন ও মহিমান্বিত রাত দান করেছেন। সে সব মর্যাদা পূর্ণ ও মহিমান্বিত রাতগুলোর মধ্যে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ সুমহান রাত্রি। শবে কদর হচ্ছে, এই মহিমান্বিত রাত যাহা রামাদ্বানুল মোবারকের শেষ দশকের বেজোর সংখ্যাক রাত্রিতে হয়ে থাকে বলে হাদিস শরীফে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনায় এসেছে।
শবে কদর ( আরবি ভাষায়: لیلة القدر) আরবিতে লাইলাতুল কদর। এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুন’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। এ রাতে মুহাম্মদের অনুসারীদের সন্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত হিসেবে পরিগণিত। ইসলাম মতে, আল্লাহ তাআলা এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত-বন্দেগিতে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এই রাত সর্ম্পকে হাদিস শরীফে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। এমনকি মুসলমানদের প্রধান ধর্মী গ্রন্থ আল কোরআনে সূরা ক্বদর নামে স্বতন্ত্র একটি পূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে। এই সুরায় শবে কদরের রাত্রিকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৬১০ হিজরীতে শবে কদরের রাতে মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মুহাম্মদের নিকট সর্বপ্রথম কোরআন নাজিল হয়। কোন কোন মুসলমানের ধারনা তার নিকট প্রথম সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অনেকের মতে এ রাতে ফেরেশতা জীবরাইল এর নিকট সম্পূর্ন কোরআন অবতীর্ন হয় যা পরবর্তিতে ২৩ বছর ধরে ইসলামের নবী মুহাম্মদের নিকট তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে নাজিল করা হয়। ইসলাম ধর্ম মতে, মুহাম্মদ এর পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করার কারনে বহু বছর আল্লাহর ইবাদাত করার সুযোগ পেতেন। কোরান ও হাদীসের বর্ননায় জানা যায়, ইসলামের চার জন নবী যথা আইয়ুব, জাকরিয়া , হিযকীল ও ইউশা ইবনে নূন প্রত্যেকেই আশি বছর স্রষ্টার উপাসনা করেন এবং তারা তাদের জীবনে কোন প্রকার পাপ কাজ করেননি।কিন্তু মুহাম্মদ থেকে শুরু করে তার পরবর্তী অনুসারীগণের আয়ু অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে স্রষ্টার আরাধনা করে পূর্ববর্তীতের সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভপর নয় বলে তাদের মাঝে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়। তাদের এই আক্ষেপের প্রেক্ষিতে তাদের চিন্তা দুর করার জন্য সুরা ক্বদর নাজিল করা হয় বলে হাদিসের বর্ননায় জানা যায়।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) মহানবী (সা.)-এর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন_'তোমরা শবে কদরকে রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে সন্ধান করো।' এই হিসাব অনুযায়ী শবে কদর ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের রাতগুলোতে অনুসন্ধান করা উচিত।
হজরত আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি আরো বলেছেন, হুজুর (সা.)-এর নিকট আরজ করলাম, 'শবে কদর নবীযুগের সঙ্গে নির্দিষ্ট, নাকি পরেও হবে?' উত্তরে মহানবী (সা.) ইরশাদ করলেন, 'এটি কিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে।' আমি আরজ করলাম, 'এটি রমজানের কোন অংশে হয়ে থাকে?' তিনি বললেন, 'শেষ ১০ দিনে অনুসন্ধান করো।' অতঃপর হুজুর (সা.) অন্য কথাবার্তায় নিমগ্ন হলে আবার সুযোগ পেয়ে আমি আরজ করলাম, 'এটা বলে দিন যে ১০ দিনের কোন অংশে হয়ে থাকে?' এটা শুনে মহানবী (সা.) এত বেশি অসন্তুষ্ট হলেন যে তিনি এর আগে এবং পরে আমার ওপর কখনো এরূপ রাগান্বিত হননি। এমতাবস্থায় বললেন, 'এরূপ উদ্দেশ্য হলে আল্লাহ তাআলা কি বলে দিতে পারতেন না?' শেষ দশকের রাতগুলোতে এটি অনুসন্ধান করো। এরপর আর কোনো কিছু এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো না।
এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর অভিমত হলো, রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে এটি চক্কর দিয়ে থাকে। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)-এর মতে, এটি রমজান মাসের কোনো একটি রাতে হয়ে থাকে, যা নির্দিষ্ট রয়েছে; তবে আমরা অবহিত নই। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এবং তাঁর অনুসারীদের মতে, একুশের রাতে হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ইমাম মালিক (রহ.) ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর অভিমত, রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে এটি চক্কর দিয়ে থাকে। এ কারণে কোনো বছর এ রাতে, আবার কোনো বছর অন্য রাতে হয়ে থাকে। অধিকাংশ আলেমের অভিমত হচ্ছে, এটি ২৭ রমজানের রাতে হওয়ার ব্যাপারে প্রবল আশা রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেককেই নিজের সাহস ও সুযোগ মোতাবেক পুরা রমজান মাসেই এ রাতকে অনুসন্ধান করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে রমজান মাসের শেষ ১০ দিনকে গনিমত বুঝে নেওয়া উচিত। এটুকুও সম্ভব না হলে শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোকে হাতছাড়া করা যাবে না। যদি এতটুকুও সম্ভব না হয়, তাহলে ২৭ তারিখের রাতকে গনিমতরূপে মনে করতে হবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, 'আমি শবে কদরের সন্ধান লাভের জন্য বেজোড় সংখ্যাগুলোর ওপর চিন্তা করে বুঝতে পারলাম ৭ সংখ্যা যুক্ত ২৭ তারিখটাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।'
অতঃপর হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এ সংখ্যাতত্ত্বের দ্বারা এটাই অনুমিত হয় যে অধিকাংশ বস্তুই আল্লাহ তায়ালা সাতের হিসাব মোতাবেক সৃষ্টি করেছেন। তাই শবে কদর যদি রমজানুল মুবারকের শেষ ১০ রাতের মধ্যে হয়, তাহলে বর্ণিত বিবরণ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে শবে কদর ২৭ তারিখের রাতেই হবে। পবিত্র কোরআনের সুরা কদরের আয়াত 'সালামুন হিয়া'র পরবর্তী 'হিয়া' শব্দটি ২৭ অক্ষরের পরে এসেছে।
শবে কদরের ব্যাপারেও ইমাম আবু হানিফা থেকে একটি তাত্তি্বক বিষয় বর্ণিত হয়েছে যে সুরা কদরের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা এই রাতকে 'লাইলাতুল কদর' বলেছেন, যার মধ্যে হরফ সংখ্যা ৯টি; এবং এই শব্দ দুটি আল্লাহ তায়ালা এই সুরায় মোট তিনবার উল্লেখ করেছেন। তাই মোট হরফের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ = ২৭। এর জন্য ২৭ তারিখের রাতেই লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
শায়খ আবুল হাসান (রহ.) সারা জীবনের এ-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা মৃত্যুর সময় এভাবে বর্ণনা করেছেন যে রমজান মাসের প্রথম তারিখ রবি ও বুধবার হলে লাইলাতুল কদর ২৯ তারিখ, সোমবার হলে ২১ তারিখ, মঙ্গল ও শুক্রবার হলে ২৭ তারিখ, বৃহস্পতিবার হলে ২৫ তারিখ এবং শনিবার হলে ২৩ তারিখে হয়ে থাকে। তবে সার্বিক বিবেচনায় রমজান মাসের ২৭ তারিখে অধিকাংশ বছর শবে কদর হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় গোটা মুসলিম বিশ্বে সাধারণত এই রাতেই লাইলাতুল কদর হিসেবে ইবাদত-বন্দেগি করা হয়ে থাকে। অনেকেই লাইলাতুল কদর পাওয়ার আশায় সারা রমজান মাস ইতিকাফে লিপ্ত থাকেন। আল্লাহ পাক আমাদের এই পবিত্র রজনী পাওয়ার তাওফিক দান করুন।
০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮
কোবিদ বলেছেন:
চমৎকার ভাবে শবে কদর রাতের মহিমা বর্ননা করেছেন
আপনাকে ধন্যবাদ, মহান আল্লাহ আপনাকে পুরস্কত করুন।
আমিন-
২| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৪
বোকামন বলেছেন:
আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে লাইলাতুল কদর নসিব করুন। আমিন।
আস সালামু আলাইকুম।।
০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০৯
কোবিদ বলেছেন:
ওযালাইকুম আস সালাম।
আপনার উপরেও শান্তি বর্ষিত হোক।
আমাদের সবার ভাগ্যে লাইলাতুল কদর নসিব করুন। আমিন-
৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৫০
মদন বলেছেন: নির্দিষ্ট করে আজ নয়।
রমজানের শেষ দশের বেজোড় রাতগুলো।
০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১১
কোবিদ বলেছেন:
শায়খ আবুল হাসান (রহ.) সারা জীবনের এ-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা মৃত্যুর সময় এভাবে বর্ণনা করেছেন যে রমজান মাসের প্রথম তারিখ রবি ও বুধবার হলে লাইলাতুল কদর ২৯ তারিখ, সোমবার হলে ২১ তারিখ, মঙ্গল ও শুক্রবার হলে ২৭ তারিখ, বৃহস্পতিবার হলে ২৫ তারিখ এবং শনিবার হলে ২৩ তারিখে হয়ে থাকে।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, 'আমি শবে কদরের সন্ধান লাভের জন্য বেজোড় সংখ্যাগুলোর ওপর চিন্তা করে বুঝতে পারলাম ৭ সংখ্যা যুক্ত ২৭ তারিখটাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।'
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য
৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০৯
মহিসন খান বলেছেন: কেউ কি শবে কদর এর নামাজের নিয়ম নিয়ে একটু আলোচনা করবেন?
০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:০১
কোবিদ বলেছেন:
দুঃখিত মহিসন আমি অফ লাইনে ছিলাম তাই আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে পারিনাই। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন।
শবে কদর নামাজের কোন বিশেষ নিয়ম নাই। অন্যান্য সময়ের নফল নামাজের মতোই শবে কদরের নামাজ। দুই রাকাত করে নফল নামাজের নিয়ত করে যত খুশি তত রাকাত নামাজ পড়া যায়। এছাড়া ইস্তেগফার, তেলাওয়াত, জিকির আজগার, তাহাজ্জুদ নামজ, সালাতুস তাসবিহ সবই শবে কদর নামাজের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং এর জন্য কোন আলাদা নিয়ম কিংবা নির্দিষ্ট সুরা পড়ার আবশ্যকতা নাই। ধন্যবাদ আপনাকে আবারো।
৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫৪
আশরাফ মাহমুদ মুন্না বলেছেন: .
আপনার সেকেন্ড ও থার্ড লাষ্ট লাইনঃ
অনেকেই লাইলাতুল কদর পাওয়ার আশায় সারা রমজান মাস ইতিকাফে লিপ্ত থাকেন।
সারা রমজান মাস কি?
না-কি রমজানের শেষ দশ দিন?
এতেক্বাফ নেয়া হয় রমজানের শেষ দশ দিনে। আর ঐ শেষ দশ দিনের ভিতরই (বেজোড় তারিখে) শবে ক্বদর। (হাদীছ)
+++
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৪২
মেলবোর্ন বলেছেন: শবে কদর নিয়ে আমার এই লিখাটা আশাকরি সহায়ক হবে:
লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত শ্রেষ্ঠ রাত, ঐশ্বর্যময় রাত, কোরআনের রাত কেন? জানেন কি?
Click This Link