নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বদেশ ও মানবপ্রেমী কবি ও সাংবাদিক কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের ১০৭তম মৃত্যুদিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০৩



(কবি ও সাংবাদিক কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার)

-ঃবুঝিবে সে কিসেঃ-

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার



চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন

ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।

কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে

কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে।



যতদিন ভবে, না হবে না হবে,

তোমার অবস্থা আমার সম।

ঈষৎ হাসিবে, শুনে না শুনিবে

বুঝে না বুঝিবে, যাতনা মম।




এই জনপ্রিয় কবিতার কবি ও সাংবাদিক কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ছিলেন একজন নিভৃতচারী মানুষ। তাঁর লেখনির প্রধান বিষয়বস্তু ছিল দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম। তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ "সদ্ভাবশতক" ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ১৮৬১ সালে | বইটির অধিকাংশ কবিতা নীতিমূলক। নীতি ও উপদেশমুলক এ কাব্যগ্রন্থ পারস্য কবি হাফিজ ও শেখ সাদীর কবিতার কাব্যাদর্শে রচিত। নীতি কাব্যের কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের আজ ১০৭তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। ১৯০৭ সালের আজকের দিনে মস্তিষ্ক বিকৃত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।



স্বনামধন্য বাঙালি কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ১৮৩৪ সালের ১০ জুন খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাণিক্যচন্দ্র। ছয় মাস বয়সে পিতৃহীন হন তিনি। মাতামহ ছিলেন বরিশালের কীর্তিপাশার জমিদার। কিছুদিন ফার্সি শিখে পালিয়ে যান কলকাতায়। ১৮৫৭ সালে বিয়ে করেন এবং জীবিকার তাগিদে ফেরেন ঢাকায়। ১৫ টাকা বেতনে ঢাকা নর্মাল স্কুলের অধীন মডেল স্কুলে পণ্ডিতের চাকরি নেন। স্কুল ছেড়ে ২৫ টাকা বেতনে চাকরি নেন 'ঢাকা প্রকাশে'। পরে 'বিজ্ঞাপনী'তে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন ৫০ টাকায়।



১৮৬০ সালে ঢাকায় ‘বাঙ্গলা যন্ত্র’ ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হলে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সম্পাদনায় মাসিক ‘মনোরঞ্জিকা’ ও ‘কবিতা কুসুমাবলী’ প্রকাশিত হয়৷ ১৮৬১ সালে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সম্পাদনায় ঢাকা থেকে ঢাকার প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক ‘ঢাকা প্রকাশ’ প্রকাশিত হয়৷ পত্রিকাটি প্রতি বৃহস্পতিবার বাবুবাজারের ‘বাঙ্গলা যন্ত্র’ থেকে আট পৃষ্টার ২৫০ কপি প্রকাশিত হতো৷ ১৮৬৫ সালে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ‘ঢাকা প্রকাশ’ ছেড়ে ‘বিজ্ঞাপনী’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় যোগ দেন৷ দেড় বছর তিনি পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর পুনরায় ‘ঢাকা প্রকাশ’ সম্পাদনায় ফিরে আসেন৷ ১৯৫৯ সালের ১২ এপ্রিলের সংখ্যাটি ছিল ‘ঢাকা প্রকাশ’-এর শেষ সংখ্যা; যেটি সম্পাদনা করেছিলেন আবদুর রশিদ খান৷ শেষ সংখ্যাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে৷ ষাটের দশকে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘ঢাকা প্রকাশ’-এর পুরাতন সংখ্যাগুলোকে সমকালীন জীবন ও জনগণের অসামান্য দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ যা শুধু বর্তমানের নয় ভবিষ্যতের গবেষক ও পাঠকদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হতে বাধ্য৷



(কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ও দীননাথ সেন)

১৮৭০ সালে আবারও ব্রাহ্ম সমাজের 'ব্রাহ্ম স্কুলে' চাকরি নেন কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারে। এসময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এক পর্যায়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে বাধ্য হন৷ ১৮৭৪ সালে সুস্থ হয়ে পুনরায় তিনি যশোর জেলা স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন৷ ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই স্কুলে চাকরি করেন৷ সেখান থেকে ১৮৮৬ সালে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় মাসিক ‘বৈভাষিকী’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। এজন্য তিনি একজন বিশিষ্ট কবি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন৷ কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫টি। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সদ্ভাবশতক ‘মোহভোগ’, ‘কৈবল্যতত্ত্ব’ উল্লেখযোগ্য। তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘সদ্ভাবশতক’ ও ‘মোহভোগ’(১৮৭১) একসময় ছাত্রদের নীতিশিক্ষা দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হত। তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় নাটক ‘রাবণবধ’।



বইয়ের তাক থেকে কেন যেন প্রিয় কবিতার বইগুলোই হারিয়ে যায় বারবার ! পাঠকদের জন্য তাই স্মরণে থাকা প্রিয় কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জনপ্রিয় আরো দু'টি কবিতাঃ

-ঃদুখের তুলনাঃ-

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার



একদা ছিল না ‘জুতো’ চরণ-যুগলে

দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।

ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে,

গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে !

দেখি তথা এক জন, পদ নাহি তার,

অমনি ‘জুতো’র খেদ ঘুচিল আমার,

পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন

নিজের অভাব ক্ষোভ রহে কতক্ষণ ?




এবং

-ঃঅপব্যয়ের ফলঃ-

কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার



যে জন দিবসে মনের হরষে

জ্বালায় মোমের বাতি,

আশু গৃহে তার দখিবে না আর

নিশীথে প্রদীপ ভাতি।




১৯০৭ সালের ১৩ জানুয়ারি মস্তিষ্ক বিকৃত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন কবি ও সাংবাদিক কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। আজ তার ১০৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকীতে নীতি কাব্যের কবির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪২

প্রান্তিক জন বলেছেন: তাহলে বুঝেন, আমাদের শিল্প-সাহিত্য কোন পঙ্কে এসে স্থান দাড়িয়েছে। পোস্টে উদ্ধৃত কবিতা দু'টিতে শিল্প পেলাম, রস পেলাম এবং বোধ হিসেবে যা পেলাম, জীবনে কাজে বৈ অকাজে লাগবে না। অবশ্য এমন কবির যেমন অভাব, অভাব এদের নিয়ে কাজ করার মানুষেরও। তবে আশার কথা, এমন মানুষ আছে পৃথবীতে আজো। আপনার কষ্ট কবুল হোক মহাকালের কাছে।

২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
নাইস পোস্ট।

৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯

ইখতামিন বলেছেন:
সুন্দর

৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮

আমার কোন প্রশ্ন নাই বলেছেন: চমৎকার।

৫| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫২

এম মশিউর বলেছেন: দারুণ পোস্ট।

৬| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:১৭

এবি মিনহাজ বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি.........." চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন
ব্যথিতবেদন বুঝিতে পারে।
কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে
কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে। জীবন সম্পর্কে কি চমৎকার পর্যবেক্ষণ।

৭| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৭

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: সুন্দর পোস্ট এর জন্য ধ্যনবাদ ।

৮| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:২৪

বেলা শেষে বলেছেন: কবির মৃত্যুদিবসে শ্রদ্ধান্জলি।

৯| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৪:৫৪

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: এ কবির কবিতা খুব ছোট্টকাল থেকেই পড়ে আসছি কিন্তু নাম জানি নি। তবে তার কবিতা থেকে জ্ঞানার্জন করেছি, জীবন বোধ শিখেছি। দুঃখ লাগে আমাদের শিক্ষকরাও নাম জানে নাই এবং আমাদের জানায় নাই। এখনও তার কবিতা আমার মুখস্ত আছে। আজকে এ পোষ্টটি পড়ে জানলাম এ মরমী কবির নাম। এ সমস্ত মানব প্রেমী কবিদের শুধু ভালোবাস ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করা যায়।

পোষ্ট দাতাকে অভিন্দন এ কবির সমন্ধে আলোকপাত করার জন্য।

১০| ১০ ই জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:২৮

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: ভাল লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.