নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রম্যরচয়িতা বাঙালি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০৪



আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পন্ডিত, বাঙালি সাহিত্যিক, রম্যরচয়িতা ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলী। সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবন বিচিত্র অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। জীবন নামক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন, সেগুলোকেই তিনি সাহিত্যে রূপদান করেন। একাধারে তিনি ভ্রমণ-সাহিত্য রচয়িতা, ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও প্রবন্ধকার। তাঁর বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমনকাহিনী। এছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। সাহিত্যকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৪৯ সালে নরসিং দাস পুরস্কার, লাভ ১৯৬১ সালে আনন্দ পুরস্কার এবং ২০০৫ সালে মরনোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৭৪ সালের আজকের দিনে সৈয়দ মুজতবা আলী ঢাকায় মৃত্যুবরন করেন। আজ এই মহান লেখকের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।



সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সিলেট জেলার অন্তর্গত (বর্তমানে ভারতের আসামে) করিমগঞ্জ শহরে সৈয়দ মুজতবা আলী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ সিকান্দার আলী। পিতার বদলীর চাকরি হওয়ায় মুজতবা আলীর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী, চঞ্চল ও পড়ুয়া। ১৯১৯ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেট সফরে এলে সৈয়দ মুজতবা আলী কবির বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেন এবং তার ভক্ত হয়ে যান। তিনি শান্তিনিকেতনে পড়ালেখায় আগ্রহী ছিলেন এবং এ জন্য তিনি ১৯২১ সালে বিশ্বভারতীতে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথম দিকের ছাত্র। এখানে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজী, আরবী, ফার্সি, হিন্দী, গুজরাটি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান ও ইটালিয়ান ভাষাশিক্ষা লাভ করেন। শান্তিনিকেতনে পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর ১৯২৬ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। আলীগড়ে অধ্যয়নকালে তিনি আফগানিস্তানের শিক্ষা বিভাগে চাকরি নিয়ে কাবুল গমন করেন। পরে ১৯২৯ সালে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য জার্মানিতে যান।



কর্ম জীবনে সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৩৫ সালে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে তিনি বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৪-৪৫ সালে সৈয়দ মুজতবা আলী আনন্দবাজার পত্রিকায় কিছু দিন সাংবাদিকতা করেছেন এবং সত্যপীর, ওমর খৈয়াম, টেকচাঁদ, প্রিয়দর্শী ছদ্মনামে আনন্দবাজার, দেশ, সত্যযুগ, শনিবারের চিঠি, বসুমতী, প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখতেন। ১৯৪৮ সালে সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আলোচনা সভায় পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি উর্দু ভাষার সপক্ষ শক্তির হাতে নাজেহাল হয়েছিলেন। ১৯৪৯ সালে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদান করেন সৈয়দ মুজতবা আলী। প্রিন্সিপালের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি ভারতে চলে যান এবং কিছু দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মালানা আবুল কালাম আজাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইন্ডিয়ান ‘কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স’-এর সচিব পদে নিযুক্ত হন। অত:পর তিনি ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’-এর স্টেশন ডাইরেক্টর পদে কিছু দিন চাকরি করেন এবং সেই চাকরিতেও ইস্তফা দেন ১৯৫৬ সালে। ১৯৬১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ফিরে যান। অতঃপর তিনি বিশ্বভারতীতে কয়েক বছর অধ্যাপনা করেন।



সৈয়দ মুজতবা আলী বিচিত্র রসের নানান গল্প লিখেছেন। কখনো হাস্যরসের গল্প, কখনো করুণ রসের গল্প, কখনো মধুর রসের মিষ্টি প্রেমের গল্প, আবার কখনো বা ভয়ঙ্কর রসের গল্প তিনি লিখেছেন। সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন লঘু নিবন্ধকার তথা রম্যপ্রবন্ধ রচনায় ছিলেন বিশেষভাবে পারদর্শী। তিনি ভ্রমণ-সাহিত্য রচয়িতা এবং রম্যরসিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। সামগ্রিকভাবে তিনি উভয় বঙ্গে সমান জনপ্রিয় ও সমাদৃত লেখক ছিলেন। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মঃ



ভ্রমনকাহিনীঃ ১। দেশে বিদেশে (১৯৪৯), ২। জলে ডাঙ্গায় (১৯৬০)

উপন্যাসঃ ১। অবিশ্বাস্য (১৯৫৪), ২। শবনম (১৯৬০), ৩। শহরইয়ার (১৯৬৯)

ছোটগল্পঃ ১। চাচা কাহিনী (১৯৫২), ২। টুনি মেম (১৯৬৪)

রম্যরচনাঃ পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২), ২। ময়ূরকন্ঠী (১৯৫২)



গল্প মালাঃ ১। রাজা উজির, ২। ধূপছায়া, ৩। বেচে থাক সর্দি-কাশি, ৩। পুনশ্চ, ৪। পাদটীকা, ৫। তীর্থহীনা, ৬। কর্ণেল, ৭। রাক্ষসী, ৮। বিধবা বিবাহ, ৯। ক্যাফে-দে-জেনি, ১০। মা জননী, ১১। বেল তুলে দু-দু'বার, ১২। স্বয়ংবরা এবং ইংরেজীঃ দ্য অরিজিন অব খোজাস এ্যান্ড দেয়ার রিলিজিয়াস’ ও রস-গোল্লা (ইংরেজি) ইত্যাদি।



সৈয়দ মুজতবা আলী সম্পর্কে একটি মজার তথ্য। বিশ্বভারতীতে পড়াশুনা করার সময় একবার রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা নকল করে ভুয়া নোটিশ দিলেন, “আজ ক্লাশ ছুটি” .. ব্যাস যায় কোথায় সবাই মনে করল রবীন্দ্রনাথ ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। “সব কিছু যে পণ্ড করে সে পণ্ডিত” এটা অবশ্য সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষ্য। ১৮টি ভাষা যার দখলে, যে ভাষায় তিনি কথা থেকে শুরু করে লিখতে পর্যন্ত পারেন, রাশিয়ান ভাষায় “প্রেম” উপন্যাস এর বাংলা অনুবাদ, জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট, বিশ্বভারতী থেকে স্নাকত, আল-আজহারে পড়াশুনা, তুলনাত্নক ধর্মচর্চা যার নখদর্পনে, গীতা যার সম্পূর্ণ মুখস্ত আর রবীন্দ্রনাথের গীতিবিতান টপ টু বটম ঠোঠস্ত তাকে যদি পণ্ডিত বলা হয় তাহলে কি আপত্তির থাকতে পারে?



অসাধারণ প্রতিভাধর রম্য রচয়িতা এবং পণ্ডিত সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ৩৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩

রমিত বলেছেন: সৈয়দ মুজতবা আলীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আপনাকে ধন্যবাদ

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬

কোবিদ বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা
ভালো থাকবেন

২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: প্রিয় লেখক এবং মানুষটির জন্য শ্রদ্ধা।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৭

কোবিদ বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ অন্যমনস্ক শরৎ
শুভেচ্ছা সতত আপনার জন্য

৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯

মোঃ মোশাররফ হোসাইন বলেছেন: এমন জ্ঞানী এবং আধুনিক মানসিকতার লেখক আর নেই বল্লেই চলে। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন সৈযদ সাহেব । আবদুর রহমান এর মতো আমিও আপনাকে খুদা তায়ালার হাতে সঁপে দিলাম

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮

কোবিদ বলেছেন:
মহান আল্লাহর কাছে
আর আত্মার মাগফেরাত
কামনা করছি। আমিন-

৪| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৩২

আমি রেদওয়ান বলেছেন: সৈয়দ মুজতবা আলীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।এইরকম একটি তথ্যবহুল পোষ্টের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৯

কোবিদ বলেছেন:
আপনাকেও ধন্যবাদ রেদওয়ান,
শুভেচ্ছা স্বাগতম আমার ব্লগে
আসবার জন্য

৫| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩৭

ক্লান্ত তীর্থ বলেছেন: স্যাটায়ার সম্রাট সৈয়দ মুজতবা আলী আমার খুব প্রিয় লেখকদের একজন!

তাঁর মৃত্যুদিবসে রইলো শ্রদ্ধা,শ্রদ্ধা আর শ্রদ্ধা!

ধন্যবাদ কোবিদ ভাই!

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৯

কোবিদ বলেছেন:
আপনাকেও ধন্যবাদ ক্লান্ত তীর্থ
মন্তব্য করার জন্য

৬| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৫০

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: মুজতবা আলী এতটা প্রতিভাধর একজন ব্যক্তিত্ব আগে জানতাম না!!!!!! ওনার জন্য সম্মান কয়েকগুণ বেড়ে গেল। :)

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫০

কোবিদ বলেছেন:

জানার কোন শেষ নাই,
আমরা প্রতিনিয়ত কিছুনা
কিছু শিখছি। ভালো থাকবেন।

৭| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:০৯

মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন: সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই পড়া’ নামক একটি গল্প পড়েছিলাম এতো সুন্দর আর শিক্ষনিয় গল্প খুব কম পড়েছি বলে মনে হয়।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫১

কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ কামাল হোসেন
মুজতবা আলীর সকল লেখাই
শিক্ষামূলক ও উপদেশবানী সমৃদ্ধ।

৮| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৮

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পন্ডিত, বাঙালি সাহিত্যিক, রম্যরচয়িতা ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলীকে।


যার লেখনী বাংলা সাহিত্যকে মজবুত ভিত্তিতে নিয়েছে দিয়েছে অনবদ্য বৈশিষ্ট্য।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫২

কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ দেশ প্রেমিক বাঙালী
মন্তব্য প্রদানের জন্য।

৯| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৮

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: চমৎকার মজাদার লেখা উপহার দিয়েছেন তিনি। তার হিউমার অসাধারণ। তার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী থাকলো।


আর ফাল্গুণের ১ তারিখে ফরীদির মৃত্যু দিবস ফেব্রুয়ারীর ১৩ তারিখ।তাকে নিয়ে তথ্যবহুল পোস্ট চাই অনেক প্রিয় কোবিদ :)

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩

কোবিদ বলেছেন:
সাথে থাকুন,
অবশ্যই আপনার আশা পুরণ হবে।
ধন্যবাদ।

১০| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৩

ড. জেকিল বলেছেন: মুজতবা আলীর প্রত্যেক কথার মধ্যেই রস আছে। সত্যিকারের একজন প্রতিভাধর মানুষ।
দেশে-বিদেশের কি কোন লিংক আছে ?

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫২

কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে

"সৈয়দ মুজতবা আলী" র "দেশে বিদেশে" মূলত একটি ভ্রমন কাহিনী নির্ভর রচনা। সৈয়দ মুজতবা আলী বরাবরের মতই এ বইটিতেও রসাত্মক ভাষায় লিখেছেন।
তবে এতে অনেক নতুন বিষয় জানা যাবে অন্য দেশ সম্পর্কে।

মুজতবা আলীর দেশ বিদেশে, শবনম, রাজা উজির, জলে ডাঙ্গায়, ধুপ ছায়া, চাচা কাহিনী
রেজিউম সাপোর্টসহ ডিরেক্ট ডাউনলোড করতে পারেনঃ
মুজতবা আলীর দেশ বিদেশে, শবনম, রাজা উজির, জলে ডাঙ্গায়, ধুপ ছায়া, চাচা কাহিনী

১১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১১

একজন ঘূণপোকা বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩

কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ ঘূনেপোকা

১২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২১

অলওয়েজ এ্যান্টি গর্ভণমেন্ট বলেছেন: বস্ এবার আরেক বসের ঠিকুজি দিলেন। শুকরিয়া।
ও আমার নয়নের তারা (মুজতবা ষ্টাইল)

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৪

কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে
তবে সব সময় গর্ভমেণ্টের বিপক্ষে থাকা কী ভালো?
বি পজেটিভ!!

১৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৩

টয়ম্যান বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫

কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ টয়ম্যান
শুভেচ্ছা রইলো

১৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১৩

রূপা কর বলেছেন: একজন প্রতিভাধর মানুষ মুজতবা আলী ।
শ্রদ্ধা

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫

কোবিদ বলেছেন:

রূপা কর অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকবেন।

১৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭

ড. জেকিল বলেছেন: থ্যাঙ্কু ভাই :)

সব যায়গায় দেশে বিদেশের আংশিক পিডিএফ পেতাম। অনেক ধন্যবাদ।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২৭

কোবিদ বলেছেন:
আপনাকেও ধন্যবাদ
আপনার চাহিদা পূরণে সাহায্য করতে পেরে।

১৬| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৩

মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন: প্রমথ চৌধুরীর ‘বই পড়া’ আর সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছিলাম, সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই পড়া’ নামক একটি গল্প পড়েছিলাম এতো সুন্দর আর শিক্ষনিয় গল্প খুব কম পড়েছি বলে মনে হয়।
প্রকৃত পক্ষে প্রবন্ধটির নাম হবে ‘বই কেনা’ অনাকাঙ্খিত ভুলের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
ঐ প্রবন্ধটি নিম্নরুপ-
বই কেনা
সৈয়দ মুজতবা আলী

মাছি-মারা-কেরানি নিয়ে যত ঠাট্টা-রসিকতাই করি না কেন, মাছি ধরা যে কত শক্ত সে কথা পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নিয়েছেন, মাছিকে যেদিক দিয়েই ধরতে যান না কেন, সে ঠিক সময়ে উড়ে যাবেই। কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে, দুটো চোখ নিয়েই মাছির কারবার নয়, তার সমস্ত মাথা জুড়ে নাকি গাদা গাদা চোখ বসানো আছে, আমরা দেখতে পাই শুধু সামনের দিক কিন্তু মাছির মাথার চর্তুদিকে চক্রাকারে চোখ বসানো আছে বলে সে একই সময়ে সমস্ত পৃথিবীটা দেখতে পায়।
তাই নিয়ে গুণী ও জ্ঞানী আনাতোল ফ্রাঁস দুঃখ করে বলেছেন, ‘হায়, আমার মাথার চর্তুদিকে যদি চোখ বসানো থাকত, তাহলে আচক্রবালবিস্তৃত এই সুন্দরী ধরণীর সম্পূর্ণ সৌন্দর্য একসঙ্গেই দেখতে পেতুম।’
কথাটা যে খাঁটি, সে কথা চোখ বন্ধ করে একটুখানি ভেবে নিলেই বোঝা যায় এবং বুঝে নিয়ে তখন এক আপসোস ছাড়া অন্য কিছু করবার থাকে না। কিন্তু এখানেই ফ্রাঁসের সঙ্গে সাধারণ লোকের তফাত। ফ্রাঁস সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ‘কিন্তু আমার মনের চোখ তো মাত্র একটি কিংবা দুটি নয়, মনের চোখ বাড়ানো-কমানো তো সম্পূর্ণ আমার হাতে, নানা জ্ঞানবিজ্ঞান যতই আমি আয়ত্ত করতে থাকি, ততই এক-একটা করে আমার মনের চোখ ফুটতে থাকে।’ পৃথিবীর আর সব সভ্য জাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য-উপন্যাসের এক-চোখা দৈত্যের মতো ঘোঁৎ ঘোঁৎ করি আর চোখ বাড়াবার কথা তুললেই চোখ রাঙাই।
চোখ বাড়াবার পন্থাটা কী? প্রথমত : বই পড়া এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।
মনের চোখ ফোটানোর আরও একটা প্রয়োজন আছে। বারট্রার্ন্ড রাসেল বলেছেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’
অর্থাৎ সাহিত্যে সান্ত্বনা না পেলে দর্শন, দর্শন কুলিয়ে উঠতে না পারলে ইতিহাস, ইতিহাস হার মানলে ভূগোল- আরো কত কী।
কিন্তু প্রশ্ন, এই অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করি কী প্রকারে? বই পড়ে, দেশ ভ্রমণ করে। কিন্তু দেশ ভ্রমণ করার মতো সামর্থ্য এবং স্বাস্থ্য সকলের থাকে না, কাজেই শেষ পর্যন্ত বাকি থাকে বই। তাই ভেবেই হয়তো ওমর খৈয়াম বলেছিলেন,
Here with a loaf of bread
beneath the bough
A flash of wine, a book of
verse and thou,
Beside me singing in the wilderness
And wilderness is paradise enow.
রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত- যৌবনা- যদি তেমন বই হয়। তাই বোধ করি খৈয়াম তাঁর বেহেশতের সরঞ্জামের ফিরিস্তি বানাতে গিয়ে কেতাবের কথা ভোলেন নি।
আর খৈয়াম তো ছিলেন মুসলমান। মুসলমানদের পয়লা কেতাব কোরানের সর্বপ্রথম যে বাণী মুহাম্মদ (সা.) শুনতে পেয়েছিলেন তাতে আছে ‘আল্লামা বিন ক্বলম’ অর্থাৎ আল্লাহ্ মানুষকে জ্ঞান দান করেছেন ‘কলমের মাধ্যমে’ আর কলমের আশ্রয় তো পুস্তকে।
বাইবেল শব্দের অর্থ বই- বই চধৎ বীপবষষবহপব, সর্বশ্রেষ্ঠ পুস্তক ঞযব ইড়ড়শ.
যে-দেবকে সর্ব মঙ্গলকর্মের প্রারম্ভে বিঘ্নহন্তারূপে স্মরণ করতে হয়, তিনিই তো আমাদের বিরাটতম গ্রন্থ স্বহস্তে লেখার গুরুভার আপন স্কন্ধে তুলে নিয়েছিলেন। গণপতি ‘গণ’ অর্থাৎ জনসাধারণের দেবতা, জনগণ যদি পুস্তকের সম্মান করতে না শেখে, তবে তারা দেবভ্রষ্ট হবে।
কিন্তু বাঙালি নাগর ধর্মের কাহিনী শোনে না। তার মুখে ওই এক কথা ‘অত কাঁচা পয়হা কোথায়, বাওয়া, যে বই কিনব?’
কথাটার মধ্যে একটুখানি সত্য কনিষ্ঠা পরিমাণ লুকানো রয়েছে, সেইটুকু এই যে, বই কিনতে পয়সা লাগে- ব্যস। এর বেশি আর কিছু নয়।
বইয়ের দাম যদি আরও কমানো যায়, তবে আরও অনেক বেশি বই বিক্রি হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাই যদি প্রকাশককে বলা হয়, ‘বইয়ের দাম কমাও’, তবে সে বলে, ‘বই যথেষ্ট পরিমাণে বিক্রি না হলে বইয়ের দাম কমাব কী করে?’
‘কেন মশাই, সংখ্যার দিক দিয়ে দেখতে গেলে বাংলা পৃথিবীর ছয় অথবা সাত নম্বরের ভাষা। এই ধরুন ফরাসি ভাষা। এ ভাষায় বাংলার তুলনায় ঢের কম লোক কথা কয়, অথচ যুদ্ধের পূর্বে বারো আনা, চৌদ্দ আনা, জোর পাঁচ সিকে দিয়ে যে-কোনো ভালো বই কেনা যেত। আপনারা পারেন না কেন?’
‘আজ্ঞে, ফরাসি প্রকাশক নির্ভয়ে যে-কোনো ভালো বই এক ঝটকায় বিশ হাজার ছাপাতে পারে, আমাদের নাভিশ্বাস ওঠে দুহাজার ছাপাতে গেলেই। বেশি ছাপিয়ে দেউলে হব নাকি?’
তাই এই অচ্ছেদ্য চক্র। বই সস্তা নয় বলে লোকে কেনে না, আর লোকে বই কেনে না বলে বই সস্তা করা যায় না।
এ চক্র ছিন্ন তো করতেই হবে। করবে কে? প্রকাশক না ক্রেতা? প্রকাশকের পক্ষে করা কঠিন, কারণ ওই দিয়ে সে পেটের ভাত যোগাড় করে, সে ঝুঁকিটা নিতে নারাজ। এক্সপেরিমেন্ট করতে নারাজ- দেউলে হওয়ার ভয়ে।
কিন্তু বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয়নি। বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিনগুণও বাড়িয়ে দেন, তবু তো আপনার দেউলে হবার সম্ভাবনা নেই। মাঝখান থেকে আপনি ফ্রাঁসের মাছির মতো অনেকগুলি চোখ পেয়ে যাবেন, রাসেলের মতো একগাদা নতুন ভুবন সৃষ্টি করে ফেলবেন।
ভেবেচিন্তে অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা করে বই কেনে সংসারী লোক, পাঁড় পাঠক বই কেনে প্রথমটায় দাঁতমুখ খিচিয়ে, তারপর চেখে চেখে সুখ করে করে এবং সর্বশেষে সে কেনে ক্ষ্যাপার মতো, এবং চুর হয়ে থাকে তার মধ্যিখানে।
এই একমাত্র ব্যসন, একমাত্র নেশা যার দরুন সকালবেলা চোখের সামনে সারে সার গোলাপি হাতি দেখতে হয় না, লিভার পচে পটল তুলতে হয় না।
আমি নিজে কী করি? আমি একধারে চৎড়ফঁপবৎ এবং ঈড়হংঁসবৎ তামাকের মিকশ্চার দিয়ে আমি নিজেই সিগারেট বানিয়ে চৎড়ফঁপবৎ এবং সেইটে খেয়ে নিজেই ঈড়হংঁসবৎ : আরও বুঝিয়ে বলতে হবে? আমি একখানা বই চৎড়ফঁপব করেছি, কেউ কেনে না বলে আমিই ঈড়হংঁসবৎ অর্থাৎ নিজেই মাঝে মাঝে কিনি।
মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরিখানা নাকি দেখবার মতো ছিল, মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বই, বই, শুধু বই। এমনকি কার্পেটের উপরও গাদাগাদা বই স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থাকত- পা ফেলা ভার। এক বন্ধু তাই মার্ক টুয়েনকে বললেন, ‘বইগুলো নষ্ট হচ্ছে : গোটাকয়েক শেলফ যোগাড় করছ না কেন?’
মার্ক টুয়েন খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে ঘাড় চুলকে বললেন, ‘ভাই, বলছ ঠিকই কিন্তু লাইব্রেরিটা যে কায়দায় গড়ে তুলেছি, শেলফ তো আর সে কায়দায় যোগাড় করতে পারি নে। শেলফ তো আর বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার চাওয়া যায় না।’
শুধু মার্ক টুয়েনই না, দুনিয়ার অধিকাংশ লোকই লাইব্রেরি গড়ে তোলে কিছু বই কিনে; আর কিছু বই বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার করে ফেরৎ না দিয়ে, যে মানুষ পরের জিনিস গলা কেটে ফেললেও ছোঁবে না সেই লোকই দেখা যায় বইয়ের বেলা সর্বপ্রকার বিবেক-বর্জিত। তার কারণটা কী?
এক আরব পন্ডিতের লেখাতে সমস্যাটার সমাধান পেলুম, পন্ডিত লিখেছেন, ‘ধনীরা বলে, পয়সা কামানো দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কর্ম। কিন্তু জ্ঞানীরা বলেন, না, জ্ঞানার্জন সবচেয়ে শক্ত কাজ। এখন প্রশ্ন, কার দাবিটা ঠিক ধনীর না জ্ঞানীর? আমি নিজে জ্ঞানের সন্ধানে ফিরি, কাজেই আমার পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া কঠিন। তবে একটা জিনিস আমি লক্ষ করেছি, সেইটে আমি বিচক্ষণ জনের চক্ষুগোচর করতে চাই। ধনীর মেহন্নতের ফল হল টাকা, সে ফল যদি কেউ জ্ঞানীর হাতে তুলে দেয়, তবে তিনিই সেটা পরমানন্দে কাজে লাগান, এবং শুধু তাই নয়, অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, জ্ঞানীরা পয়সা পেলে খরচ করতে পারেন ধনীদের চেয়ে অনেক ভালো পথে, ঢের উত্তম পদ্ধতিতে। পক্ষান্তরে জ্ঞানচর্চার ফল সঞ্চিত থাকে পুস্তকরাজিতে এবং সে ফল ধনীদের হাতে গায়ে পড়ে তুলে ধরলেও তারা তার ব্যবহার করতে জানে না- ‘বই পড়তে পারে না।’
আরব পন্ডিত তাই বক্তব্য শেষ করেছেন কিউ, ই.ডি দিয়ে ‘অতএব সপ্রমাণ হলো জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়ে মহত্তর।’
তাই প্রকৃত মানুষ জ্ঞানের বাহন পুস্তক যোগাড় করার জন্য অকাতরে অর্থব্যয় করে। একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া।
সেদিন তাই নিয়ে শোকপ্রকাশ করাতে আমার জনৈক বন্ধু একটি গল্প বললেন। এক ড্রইংরুম বিহারিণী গিয়েছেন বাজারে স্বামীর জন্মদিনের জন্য সওগাত (উপহার) কিনতে। দোকানদার এটা দেখায়, সেটা শোঁকায়, এটা নাড়ে, সেটা কাড়ে, কিন্তু গরবিনী ধনীর (উভয়ার্থে) কিছুই আর মনঃপুত হয় না, সব কিছুই তাঁর স্বামীর ভান্ডারে রয়েছে। শেষটায় দোকানদার নিরাশ হয়ে বললে, ‘তবে একখানা ভালো বই দিলে হয় না?’
গরবিনী নাসিকা কুঞ্চিত করে বললেন, ‘সেও তো ওঁর একখানা রয়েছে।’
যেমন স্ত্রী তেমনি স্বামী। একখানা বই-ই তাদের পক্ষে যথেষ্ট।
অথচ এই বই জিনিসটার প্রকৃত সম্মান করতে জানে ফ্রান্স। কাউকে মোক্ষম মারাত্মক অপমান করতে হলেও তারা ওই জিনিস দিয়েই করে। মনে করুন আপনার সবচেয়ে ভক্তি-ভালোবাসা দেশের জন্য। তাই যদি কেউ আপনাকে ডাহা বেইজ্জৎ করতে চায়, তবে সে অপমান করবে আপনার দেশকে। নিজের অপমান আপনি হয়তো মনে মনে পঞ্চাশ গুণে নিয়ে সয়ে যাবেন, কিন্তু দেশের অপমান আপনাকে দংশন করবে বহুদিন ধরে।
অাঁদ্রে জিদের মেলা বন্ধুবান্ধব ছিলেন- অধিকাংশই নামকরা লেখক। জিদ রুশিয়া থেকে ফিরে এসে সোভিয়েট রাজ্যের বিরুদ্ধে একখানা প্রাণঘাতী কেতাব ছাড়ালেন। প্যারিসের স্তালিনীয়ারা তখন লাগল জিদের পিছনে- গালিগালাজ কটুকাটব্য করে জিদের প্রাণ অতিষ্ঠ করে তুলল। কিন্তু আশ্চর্য, জিদের লেখক বন্ধুদের অধিকাংশই চুপ করে সব কিছু শুনে গেলেন, জিদের হয়ে লড়লেন না। জিদের হৃদয়ে জোর চোট লাগল- তিনি স্থির করলেন, এদের একটা শিক্ষা দিতে হবে।
কাগজে বিজ্ঞাপন বেরল। জিদ তাঁর লাইব্রেরিখানা নিলামে বেচে দেবেন বলে মনস্থির করেছেন, প্যারিস খবর শুনে প্রথমটায় মূর্ছা গেল, কিন্তু সম্বিতে ফেরা মাত্রই মুক্তকচ্ছ হয়ে ছুটল নিলামখানার দিকে।
সেখানে গিয়ে অবস্থা দেখে সকলেই চক্ষুস্থির। যেসব লেখক জিদের হয়ে লড়েন নি, তাঁদের যেসব বই তাঁরা জিদকে স্বাক্ষরসহ উপহার দিয়েছিলেন, জিদ মাত্র সেগুলোই নিলামে চড়িয়েছেন। জিদ শুধু জঞ্জালই বেচে ফেলছেন।
প্যারিসের লোক তখন যে অট্টহাস্য ছেড়েছিল, সেটা আমি ভূমধ্যসাগরের মধ্যিখানে জাহাজে বসে শুনতে পেয়েছিলাম কারণ খবরটার গুরুত্ব বিবেচনা করে রয়টার সেটা বেতারে ছড়িয়েছিলেন, জাহাজের টাইপ করা একশ’ লাইনে দৈনিক কাগজ সেটা সাড়ম্বরে প্রকাশ করেছিল।
অপমানিত লেখকরা ডবল তিন ডবল দামে আপন আপন বই লোক পাঠিয়ে তড়িঘড়ি কিনিয়ে নিয়েছিলেন- যত কম লোক কেনা-কাটার খবরটা জানতে পারে ততই মঙ্গল। (বাংলাদেশে নাকি একবার এরকম টিকি বিক্রি হয়েছিল!)
শুনতে পাই, এঁরা নাকি জিদকে কখনো ক্ষমা করেননি।
আর কত বলব? বাঙালির কি চেতনা হবে?
তাও বুঝতুম, যদি বাঙালির জ্ঞানতৃষ্ণা না থাকত, আমার বেদনাটা সেইখানে! বাঙালি যদি হটেনটট হত, তবে কোনো দুঃখ ছিল না। এরকম অদ্ভুত সংমিশ্রণ আমি ভূ-ভারতের কোথাও দেখি নি। জ্ঞানতৃষ্ণা তার প্রবর, কিন্তু বই কেনার বেলা সে অবলা। আবার কোনো কোনো বেশরম বলে, ‘বাঙালির পয়সার অভাব।’ বটে? কোথায় দাঁড়িয়ে বলছে লোকটা একথা? ফুটবল মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে, না সিনেমার টিকিট কাটার কিউ থেকে।
থাক থাক। আমাকে খামাখা চটাবেন না। বৃষ্টির দিন, খুশ গল্প লিখব বলে কলম ধরেছিলাম। তাই দিয়ে লেখাটা শেষ করি। গল্পটা সকলেই জানেন, কিন্তু তার গূড়ার্থ মাত্র কাল বুঝতে পেরেছি, আরব্যোপন্যাসের গল্প।
এক রাজা তাঁর হেকিমের একখানা বই কিছুতেই বাগাতে না পেরে তাঁকে খুন করেন। বই হস্তগত হল। রাজা বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে বইখানা পড়ছেন। কিন্তু পাতায় পাতায় এমনি জুড়ে গিয়েছে যে, রাজা বারবার আঙ্গুল দিয়ে মুখ থেকে থুথু নিয়ে জোড়া ছাড়িয়ে পাতা উল্টোছেন। এদিকে হেকিম আপন মৃত্যুর জন্য তৈরি ছিলেন বলে প্রতিশোধের ব্যবস্থাও করে গিয়েছিলেন। তিনি পাতায় পাতায় কোণের দিকে মাখিয়ে রেখেছিলেন মারাত্মক বিষ। রাজার আঙ্গুল সেই বিষ মেখে নিয়ে যাচ্ছে মুখে।
রাজাকে এই প্রতিহিংসার খবরটিও হেকিম রেখে গিয়েছিলেন কেতাবের শেষ পাতায়। সেইটে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজা বিষবাণের ঘায়ে ঢলে পড়লেন।
বাঙালির বই কেনার প্রতি বৈরাগ্য দেখে মনে হয়, সে যেন গল্পটা জানে, আর মরার ভয়ে বই কেনা, বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২১

কোবিদ বলেছেন:

ধন্যবাদ মোঃ কামাল হোসেন পুনরায়
ফিরে আসার জন্য।

১৭| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:২১

শোভন শামস বলেছেন: সৈয়দ মুজতবা আলীর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

মুজতবা আলীর প্রত্যেক কথার মধ্যেই রস আছে। সত্যিকারের একজন প্রতিভাধর মানুষ।

আপনাকে ধন্যবাদ

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২২

কোবিদ বলেছেন:

ধন্যবাদ শোভন শামস।
শুভেচ্ছা জানবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.