নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ২০২তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:০৪



উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। বাংলাসাহিত্যে আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয় উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে। এই যুগের প্রথম কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। যিনি "গুপ্ত কবি" নামে সমধিক পরিচিত। তাঁর ছদ্মনাম 'ভ্রমণকারী বন্ধু'। এছাড়া বহুবিধ পত্র-পত্রিকা সম্পাদনা করে কবি-সাহিত্যিকদের উৎসাহ প্রদানের জন্য সমসাময়িককালে তিনি "কবিগুরু" হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছ্নে। সামাজিক ও ব্যঙ্গকবিতাগুলোর জন্য ঈশ্বরগুপ্তের সর্বাধিক খ্যাতি। তার রঙ্গরসপ্রবণতা ও লঘু চপলভঙ্গি কবিতাগুলোকে উৎকর্ষ দান করেছে। তাঁর কবিতায় স্বদেশ, স্বভাষা ও ধর্মের প্রতি গভীর ভালবাসা ফুটে ওঠে | ১৮১২ সালের আজকের দিনে তিনি পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কাঞ্চনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নির্ভীক সাংবাদিক ও কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ২০২তম জন্মদিন আজ। গুপ্ত কবির জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।



কবি ঈশ্বরচন্দ্র গু্প্তে ১৮১২ সালের ৬ মার্চ ভারতের পশ্চিম বঙ্গেরে চব্বিশ পরগনা জেলার কাঞ্চনপল্লী (বা কাঞ্চনপাড়া) গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা হরিনারায়ণ দাশগুপ্ত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ছিলেন। মায়ের নাম শ্রীমতি দেবী। তাঁর বয়স যখন দম তখন তাঁর মা পরলোকগমন করেন। এর পর ঈশ্বরচন্দ্র অপ্রাপ্তব্যবহারাবস্থাতেই ইংরাজি বিদ্যাভ্যাস এবং জীবিকান্বেষণ জন্য কলিকাতায় কোলকাতার মামার বাড়ীতে বাস করতে শুরু করেন। মাত্র ১৫ বৎসর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় গৌরহরি মল্লিকের কন্যা রেবার সঙ্গে। ঈশ্বর গুপ্তের সারাজীবন মোটেই সুখের হয়নি৷ ‘ঈশ্বরগুপ্ত, সাংবাদিক কবি ও গদ্যশিল্পী’তে ড. রেণুপদ ঘোষ লিখেছেন, “তাঁর সেই ব্যর্থ দাম্পত্যজীবনের দুঃখ বা গ্লানির মত অসুস্থতা থেকে ‘সংবাদ প্রভাকর’-ই ঈশ্বর গুপ্তকে মুক্তির নাসিংহোমের নির্ভুল ঠিকানা দিতে পেরেছিল৷ রচনায় বৈচিত্র থাকলেও ঈশ্বর গুপ্ত কবি হিসেবেই পরিচিত। তার কবিতার সংখ্যা যেমন অগণিত, তেমনি বিষয়ের বৈচিত্রও কম নয়। বঙ্কিমচন্দ্র ঈশ্বর গুপ্তের কবিতাগুলোকে বিষয়ানুযায়ী কয়টি ভাগে বিভক্ত করেছিলেনঃ ১। পারমার্থিক ও নৈতিক বিষয়ক কবিতা, ২। সামাজিক ও ব্যঙ্গপ্রধান কবিতা, ৩।রসাত্মক কবিতা, ৪। যুদ্ধ বিষয়ক কবিতা, ৫। . ঋতুবর্ণনা প্রধান কবিতা, ৬। বিবিধ বিষয়ক কবিতা, ৭। শকুন্তলার কাহিনী নিয়ে রচিত কবিতা, ৮। সারদা-মঙ্গল বা উমা-মেনকার প্রসঙ্গে কবিতা, ৯। কাব্যকানন, ১০। রসলহরী ও ১১। কবিতাগুচ্ছ।



কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সাহিত্যসাধনার সূত্রপাত হয় ১৮৩১ সাল থেকে ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রধান লেখক। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি তিনি সংবাদ রত্নাবলী পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। সংবাদ প্রভাকর ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা, তিনি এটিকে দৈনিকে রূপান্তর করেন ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে। ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক পাষণ্ড পত্রিকার সঙ্গে সম্পাদক হিসাবে সংযুক্ত। পরবতী বৎসর তিনি সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার দায়িত্বভার পালন করেন। ঈশ্বর গুপ্ত তাঁর সকল উদ্যমের সঙ্গে আমৃত্যু এই সাংবাদিকতাকে আশ্রয় করে ছিলেন৷ তাঁর কবি স্বভাবটিও অনেকখানি এই সাংবাদিকতা দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে৷ সাংবাদিক জীবনের প্রতিক্ষেত্রে যেখানেই তিনি অবিচার, অবিবেচনা কিংবা অন্যায় পক্ষপাত লক্ষ্য করেছিলেন সেখানেই তাঁর বলিষ্ঠ প্রতিবাদ প্রভাকরের সম্পাদকীয় কলমে সোচচার করে তুলেছিল৷ উচচশিক্ষিতরা ইংরেজি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি মোহগ্রস্থ হলে ঈশ্বর গুপ্ত তার প্রতিবাদে মুখর হন৷ সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদকীয়তে (১২ বৈশাখ, ১২৫৬ বঙ্গাব্দ) তিনি লেখেন –“দেশীয় লোকেরা পরদেশীয় ভাষাশিক্ষার জন্য অধিক মনোযোগি হওয়াতেই কর্তা সাহেবরা এতদ্দেশ মধ্যে ইংরাজি বিদ্যা বিস্তার নিমিত্ত অধিক যত্ন করিতেছেন৷ অতএব যুক্তিমতে বিবেচনা করিলে দেশীয় মহাশয়দিগের প্রতিই সকল দোষ অর্পিত হইতে পারে৷” যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ইংরাজের অনুকরণে দেশীয় ঐতিহ্যকে ঘৃণার চোখে দেখা তিনি স্বদেশের অবমাননা গণ্য করছেন, যার অর্থ তাঁর কাছে, শিকড় থেকে নিজেকে উৎপাটিত করা৷ তিনি যুব সম্প্রদায়ের মোহমুক্তি চেয়ে সম্পাদকীয় কলমে বারে বারে প্রতিবাদ করেছেন৷ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যাচার এবং পক্ষপাতমূলক বিচারের লক্ষ্যে ইংরেজদের শাস্তির আওতায় না রাখা ঈশ্বর গুপ্ত সুনজরে দেখেননি৷ এমন পক্ষপাতদুষ্ট শাসনব্যবস্থাকে তিনি তীব্র কষাঘাত করেছেন৷ একজন যথার্থ সাংবাদিক যেভাবে রাষ্ট্রকাঠামোর সর্বস্তরে বিচরণ করে সরকারের ত্রুটি বিচু্যতির দিকে সাধারণ মানুষের নজর টানার চেষ্টা করেছ়েন, যাতে সেই অসংগতি সংশোধিত হতে পারে, ঈশ্বর গুপ্ত নির্ভীকভাবে সেটাই করেছেন৷ যাবতীয় ত্রুটিগুলি তিনি দেখাবার চেষ্টা করেছেন, যাতে মানুষ অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হন৷ এখানেই নির্ভীক সাংবাদিক-সম্পাদক ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের আপসহীন কলমের সার্থকতা৷



সামাজিক ও ব্যঙ্গকবিতাগুলোর জন্যও ঈশ্বরগুপ্তের সর্বাধিক খ্যাতি। তার রঙ্গরসপ্রবণতা ও লঘু চপলভঙ্গি কবিতাগুলোকে উৎকর্ষ দান করেছে। সে আমলে ইংরেজি শিক্ষাসভ্যতার সংস্পর্শে বাঙালির সমাজ ও জীবনে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল ঈশ্বরগুপ্ত তাকে কবিতার উপজীব্য করেছেন। যেখানেই সামাজিক অনাচার, চারিত্রিক দৈন্য ও আদর্শহীনতা দেখেছেন সেখানেই তীব্র ব্যঙ্গ করেছেন।

ইংরেজদের আচার আচরণকে এ দেশের জন্য অকল্যাণকর মনে করে ইংরেজিয়ানা প্রীতির ব্যঙ্গ করেছেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তার ‘ইংরেজি নববর্ষ’ কবিতায়ঃ

গোরার দঙ্গলে গিয়া কথা কহ হেসে।

ঠেস মেরে বস গিয়া বিবিদের ঘেঁসে॥

রাঙ্গামুখ দেখে বাবা টেনে লও হ্যাম।

ডোন্ট ক্যার হিন্দুয়ানী ড্যাম ড্যাম ড্যাম॥

পিঁড়ি পেতে ঝুরো লুসে মিছে ধরি নেম।

মিসে নাহি মিস খায় কিসে হবে ফেম?

শাড়িপরা এলোচুল আমাদের মেম।

বেলাক নেটিভ লেডি শেম্ শেম্ শেম্ ॥
(সংক্ষেপিত)



কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বর্তমান যুগ-প্রভাতের 'ভোরের পাখী' বলে বর্ণিত হয়েছেন | ইংরেজী কাব্যের প্রভাব থেকে তিনি মুক্ত অথচ পাশ্চাত্য ভাবে আবিষ্ট সমাজের আচার আচরণ এবং সমকালীন রাজনীতি তাঁর কাব্যে রঙ্গরসের খোরাক যুগিয়েছে | ঈশ্বরচন্দ্রের স্মৃতিশক্তি বাল্যকাল হইতে অত্যন্ত প্রখর ছিল। একবার যাহা শুনিতেন, তাহা আর ভুলিতেন না। কঠিন সংস্কৃত ভাষার দুর্বোধ্য শ্লোকসমূহের ব্যাখ্যা একবার শুনিয়াই তাহা অবিকল কবিতায় রচনা করিতে পারিতেন। তিনি মুখে মুখে পদ্য রচনা করতেন।তিনি গ্রাম গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন এবং কবিগান বাঁধতেন। প্রায় বারো বৎসর গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রাচীন কবিদের তথ্য সংগ্রহ করে জীবনী রচনা করেছেন। ঈশ্বর গুপ্ত অজস্র কবিতা রচনা করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম ঈশ্বর গুপ্তের ‘কবিতা সংগ্রহ’ দীর্ঘ ভূমিকাসহ প্রকাশ করেন। তবে অশ্লীলতার কারণে সব কবিতা তিনি সংগ্রহ করেন নি। তার অন্যান্য রচনা হচ্ছেঃ ১।কালীকীর্তন, ২। রামপ্রসাদ সেন লিখিত, ঈশ্বর গুপ্ত সম্পাদিত; কবিবর ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের জীবনবৃত্তান্ত; ৩। প্রবোধ প্রভাকর; ৪। নিজস্ব কবিতার সঙ্কলনঃ হিত-প্রভাকর, ৫। হিতোপদেশের গল্প গদ্যপদ্যে রচিত, মহাকবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত মহাশয়ের বিরচিত কবিতাবলীর সারসংগ্রহ, ৬। কবিভ্রাতা রামচন্দ্র গুপ্ত কর্তৃক সংবাদ প্রভাকর থেকে সংগৃহীত কবিতার খন্ড খন্ড সঙ্কলন, বোধেন্দুবিকাশ, ৭। নাটক; সত্যনারায়ণের ব্রতকথা। পত্রিকা সম্পাদনাঃ ১। সংবাদ প্রভাকর, ২। সংবাদ-রত্নাবলী ৩। পাষন্ড পীড়ন ও ৪।সংবাদ সাধুরঞ্জন।

১৮৫৯ সালের ২৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরন করেন কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।

কে বলে ঈশ্বর গুপ্ত, ব্যপ্ত চরাচর,

যাহার প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর।




আজ গুপ্ত কবির ২০২তম জন্মদিন। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৭

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ২০২তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা!

০৬ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫

কোবিদ বলেছেন:

ধন্যবাদ দেশ প্রেমিক বাঙালী
খুব ভালো লাগে আমার প্রায়
প্রতিটি লেখায় আপনার স্বরব
উপস্থিতি। ভালো থাকবেন
এবং সাথে থাকবেন আগামীতে
এই প্রত্যাশায়।

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:০৮

উদাস কিশোর বলেছেন: কবি ও সাহিত্যিক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ২০২তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা!

৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬

শাহারিয়া বাংলা বলেছেন: কবি ও সাহিত্যিক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ২০২তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা!

৪| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১৮

রূপা কর বলেছেন: কবি ও সাহিত্যিক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের ২০২তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.