নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতি-কবি হিসেবে সুপরিচিত বিহারীলাল চক্রবর্তীর ১৭৯তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা

২১ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫



উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতি-কবি হিসেবে সুপরিচিত এবং 'ভোরের পাখি' বলে খ্যাত কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী। আধুনিক রোমান্টিক কবিতা নিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের জগতে হাজির হয়েছিলেন যখন বাংলা সাহিত্যে চলছিল মহাকাব্যের ঘনঘটা। অতি অল্পকালের ভিতরে তিনি বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার ধারা চালু করেন। প্রথাগত ধারার বাইরে কোন কাজ করলে শুরুতে সমাজে তার গ্রহনযোগ্যতা থাকেনা। এটাই সমাজের নিয়ম। এই বিশুদ্ধ কবিও পরেছিলেন এমনই বিপাকে। তার রচিত সারদামঙ্গল, প্রেমপ্রবাহিণী, বঙ্গসুন্দরী প্রভৃতি কবিতার বই বাংলা কবিতাকে নতুন ধারায় প্রবাহিত করে । তার আবেগের ঘনমেঘে আচ্ছন্ন হয় পাঠকও। এগুলো প্রথাগত ধারার সঙ্গে যায় না । তিনি হয়ে ওঠেন বাংলা ভাষার প্রথম খাপ-না-খাওয়া কবি।নিজের অজান্তেই তিনি শুরু করেছিলেন আধুনিক গীতিকবিতার নবযুগ। ভোরের পাখি খ্যাত গীতি-কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর আজ ১৭৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৩৫ সালের আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে কবিকে ফুলেল শুভেচ্ছা।



গীতি কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী ১৮৩৫ সালের ২১ মে কলকাতার জোড়াবাগান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে বিহারীলাল তাঁর মাকে হারান। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় খুব বেশি শিক্ষিত হতে পারেননি বিহারীলাল, তবে নিজ উদ্যোগে তিনি বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত সাহিত্য পড়েন আর অল্প বয়সেই শুরু করেন কবিতা লেখা। খুব অল্প সময়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্যের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার রদবদল ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার প্রবর্তন করেন। এর আগে বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতার অল্পবিস্তর প্রচলন থাকলেও এ ধরনের কবিতা যথাযথ রূপ পায় বিহারীলালের হাতেই। তার অসাধারণ কাব্য প্রতিভার কারণে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে নিজ কাব্যের গুরু মানতেন। রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহধর্মিনী কাদম্বরী দেবী বিহারীলালের খুব ভক্ত ছিলেন। ঠাকুরপো রবীকে তিনি বিহারীলালের মত কবিতা লিখতে বলতেন। একদিন সত্যিই রবী তা পেরেছিলেন এবং পরিশেষে বিহারীলালকেও অনেক গুণ ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। কারন তার মধ্যে প্রচুর রোমান্টিক আবেগ থাকলেও সেটাকে পুরোপুরি রূপ দেয়ার শক্তি ছিল না। এই শক্তিটা পুরো মাত্রায় ছিল রবীন্দ্রনাথের।



বিহারীলাল চক্রবর্তীর কবিতায় প্রকৃতি ও প্রেম, সংগীতের উপস্থিতি, সহজ-সরল ভাষা কবিতাকে দিয়েছে আলাদাধারার বৈশিষ্ট্য। তার কবিতা পড়লে মনে হয় তিনি বাস করছেন আবেগের কাতরতার মধ্যে, স্বপ্নের মধ্যে। বাস্তবতা নয় বরং স্বপ্নলোকেই তিনি বাস করতে পছন্দ করতেন। বিহারীলাল তাঁর কবিতায় ভাবের আধিক্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ তারই উত্তরসূরী। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বাঙলা গীতি কাব্য-ধারার 'ভোরের পাখি' বলে আখ্যায়িত করেন। সেটাই তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম হয়ে গেছে।



হুমায়ুন আজাদ তার লাল নীল দীপাবলি গ্রন্থে বিহারীলাল সম্পর্কে লিখেছেনঃ "যে-কবি নিজের মনের কথা বলেন, যে-কবি অদ্ভুতকে, সুন্দরকে, রহস্যকে আহ্বান করেন, যে-কবি যা পান না বা পাবেন না, তা চেয়েচেয়ে জীবন কাটান, তিনি রোম্যান্টিক কবি"। বিহারীলাল বাঙলা কবিতার প্রথম রোম্যান্টিক কবি, প্রথম খাঁটি আধুনিক কবি। বিহারীলালের লেখা হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলিতে উল্লেখিত কবিতার নিচের চরণগুলো খুবই বিখ্যাতঃ

"সর্বদাই হুহু করে মন,

বিশ্ব যেন মরুর মতন,

চারিদিকে ঝালাপালা,

উঃ কি জ্বলন্ত জ্বালা!

অগ্নিকুণ্ডে পতঙ্গ পতন।"


এই জ্বালার কোন কারণ নেই বলেই এটা অসহ্য। কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি একাধিক পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।



৩৫ বছরের কবি জীবনে অসংখ্য গীতিকবিতা ও রূপককবিতা রচনা করেছেন বিহারীলাল। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীঃ ১। স্বপ্নদর্শন (১৮৫৮), ২। সঙ্গীতশতক (১৮৬২), ৩। বঙ্গসুন্দরী (১৮৭০), ৪। নিসর্গ সন্দর্শন (১৯৭০), ৫। বন্ধুবিয়োগ (১৮৭০), ৬। প্রেমপ্রবাহিনী (১৮৭০), ৭। সারদামঙ্গল (১৮৭৯), ৮। সাধের আসন ইত্যাদি। বিহারীলালের প্রায় সব কটি কাব্যগ্রন্থকেই কাব্য নাটিকা বলা যেতে পারে,যার ফলে আলাদা আলাদা অংশ পড়ে কবিতার সার্বিক বোধ উদ্ধার অনেকাংশেই অসম্ভব। সারদামঙ্গল কাব্য বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ রচনা। অকারণ বেদনার উপর ভিত্তি করে যে রোমান্টিসিজম তৈরি সেই রোমান্টিসিজমের প্রথম দৃষ্টান্ত দেখা যায় বঙ্গসুন্দরী কাব্যে। এটি মূলত গীতিকবিতাধর্মী কাব্য। আখ্যানকাব্য হলেও এর আখ্যানবস্তু সামান্যই। এই কাব্য জুড়ে রয়েছে আবেগের আতিশয্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কাব্য সম্পর্কে লিখেছেন, “সূর্যাস্ত কালের সুবর্ণমণ্ডিত মেঘমালার মত সারদামঙ্গলের সোনার শ্লোকগুলি বিবিধরূপের আভাস দেয়। কিন্তু কোন রূপকে স্থায়ীভাবে ধারণ করিয়া রাখে না। অথচ সুদূর সৌন্দর্য স্বর্গ হইতে একটি অপূর্ণ পূরবী রাগিণী প্রবাহিত হইয়া অন্তরাত্মাকে ব্যাকুল করিয়া তুলিতে থাকে।” সমালোচক শিশিরকুমার দাশের মতে, “মহাকাব্যের পরাক্রমধারার পাশে সারদামঙ্গল গীতিকাব্যের আবির্ভাব এবং শেষপর্যন্ত গীতিকাব্যের কাছে মহাকাব্যের পরাজয়ের ইতিহাসে সারদামঙ্গল ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ কাব্য। সারদামঙ্গল কাব্যের মাধ্যমেই তিনি উনিশ শতকের গীতিকবিদের মধ্যে শীর্ষস্থান লাভ করেন। এ কাব্যটি পড়ে রবীন্দ্রনাথ বিহারীলালকে 'ভোরের পাখি' বলে আখ্যায়িত করেন। সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন বিহারীলাল। পূর্ণিমা, সাহিত্য সংক্রান্তি, অবোধবন্ধু ইত্যাদি তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা।



উনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিমান এই কবি ১৮৯৪ সালের ২৪ মে মৃত্যুবরণ করেন। আজ কবির জন্মবার্ষিকী। ১৮৩৫ সালের আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাঙলা কবিতার প্রথম রোম্যান্টিক কবির জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.