নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র বিপ্লবী কমরেড নলিনী দাসের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৯ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৩৭



কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বিপ্লবী কমরেড নলিনী দাস। বিপ্লব ও সংগ্রামের একটি নাম নলিনী দাস। যে নামটি শুনলে চেতনার কল্পনায় ভেসে ওঠে বিপ্লবী জীবনের প্রতিচ্ছবি, ফাঁসির দৃশ্য ও আন্দামান সেলুলার জেলের নিষ্ঠুর-নির্মম নির্যাতন এবং মৃত্যু। এ এক অদ্ভুদ অনুভূতি। তবে যে মানুষের চেতনায় দেশপ্রেম নেই, মানবতা-মনুষ্যত্ববোধ নেই, সে নলিনী দাস কেন; কোনো সংগ্রামী ও বিপ্লবীকে বুঝতে পারবে না।ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে প্রথম সারির অন্যতম বিপ্লবী নলিনী দাস। ইস্পাত দৃঢ় সংকল্প ও অফুরন্ত কর্মশক্তির অধিকারী, আমৃত্যু ত্যাগী এই বিপ্লবী তাঁর সারাটি জীবন মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। মানব সভ্যতাকে সাম্যবাদে উত্তরণের ক্ষেত্রে বিপ্লবী সংগ্রামে তিনি ছিলেন আত্মনিবেদিত। মার্কসবাদের মতবাদকে গ্রহণ করে কমিউনিজমের মহান ব্রত নিয়ে নিবেদিত করেছেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত । নলিনী দাস তাঁর ৭২ বছরের ২৩ বছর আন্দামান, ব্রিটিশ-ভারতের জেলে ও পাকিস্তানের জেলে ছিলেন। এছাড়া আরো ২০ বছর ৯ মাস তাঁর কাটে পলাতক জীবনের বিপ্লবী রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায়। ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী নেতা কমরেড নলিনী দাস ১৯৮২ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিপ্লবী কমরেড নলিনী দাসের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।



১৯১০ সালের ১ জানুয়ারী বরিশাল জেলার উত্তর শাহাবাজপুর (বর্তমান ভোলা জেলায়) জন্মগ্রহণ করেন নলিনী দাস। তাঁর পিতা দূর্গামোহন দাস ছিলেন ভোলার স্থানীয় জমিদারী এস্টেটের নায়েব। নলিনী দাসের পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। শৈশবে তাঁর শিক্ষা জীবন ভোলাতেই শুরু হয়। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে জ়ড়িয়ে পড়েন। দুরন্ত চঞ্চল মেধাবী এই বালক ১৯২১ সালের কংগ্রেস ও খেলাফত কমিটির আহবানে হরতাল ধর্মঘটের সময় ৫ শ্রেণীর ছাত্র অবস্থায় গ্রেফতার হন। এক দিনের সাজা দিয়ে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়। এ কারণে কিশোর নলিনী দাস ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতমাতাকে মুক্তি করার জন্য অগ্নি শপথ নেন। ১৯২৪ সালে তিনি যুক্ত হন বিপ্লববাদী যুগান্তর দলে। পড়াশুনা আর দেশের স্বাধীনতার জন্য দৃঢ়চিত্তে শুরু অক্লান্ত পরিশ্রম। ১৯২৮ সালে সশস্ত্র বিপ্লববাদী দলের সাথে যুক্ত অবস্থায় প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর বরিশালের বিএম কলেজে আইএসসি’তে ভর্তি হন। আইএসসি পরীক্ষার পূর্বে কলকাতা মেছুয়া বাজারে বোমার মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরয়ানা জারী হলে শুরু হয় তার পলাতক জীবন।



১৯৩০ সালের নবেম্বর মাসে কলকাতায় পুলিশ কমিশনার টেগার্ট হত্যা প্রচেষ্ঠা মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় সত্যেও ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ডেটিনিউ করে প্রেসিডান্সি জেলে প্রেরণ করে। তারপর ১৯৩১ সালে তাঁকে হিজলী ক্যাম্পে পাঠানো হয়। ১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হিজলী ক্যাম্পে ব্রিটিশ পুলিশ রাজবন্দীদের উপর গুলি বষণ করলে নলিনীদাস আহত হন। আহত অবস্থায় নলিনী দাস ও ফনী দাসগুপ্ত হিজলী জেল থেকে পলায়ন করে ফরাসী অধিকৃত চন্দননগরের একটি বাড়ীতে আশ্রয় নেন নলিনী দাস,বীরেন রায় ও দিনেশ মজুমদার। পরবর্তীতে এই ৩ জনই চন্দননগর রাস্তায় পুলিশের সাথে ৪ ঘন্টাব্যাপী খণ্ডযুদ্ধ চালিয়ে যান। এতে পুলিশ কমিশনার কিউ নিহত হয়। শেষ পর্যন্ত বীরেন রায় গ্রেপ্তার হন। চন্দননগরের ঘটনার পর কর্নওয়ালিশ স্ট্রীটে বিপ্লবী কর্মী নারায়ণ ব্যানার্জীর তত্ত্বাবধানে নলিনী দাস, দিনেশ মজুমদার ও জগদানন্দ মূখার্জী আশ্রয় গ্রহণ নিলেন। ১৯৩৩ সালের ২২ মে পুলিশ ওই বাড়ী ঘেরাও করে। শুরু হয় বিপ্লবীদের সাথে খণ্ডযুদ্ধ। এক পর্যায় আহত অবস্থায় ধরা পড়েন তিন বিপ্লবী। বিচারে দিনেশ মজুমদারের ফাঁসি হয়। এ সময় নলিনী দাস ও জগদানন্দ মুখার্জীর বিরুদ্ধে ফাঁসি দেয়ার মত কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় তাঁদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে ১৯৩৪ সালের মে মাসে আন্দামান সেলুলার জেলে পাঠানো হয়।



আন্দামান সেলুলার জেল। এটা ছিল ব্রিটিশদের তৈরি করা দ্বিতীয় মৃত্যুকূপ। খোপ খোপ করা বিশাল এক কারাগার। ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠীর তৈরী করা নিকৃষ্টতম জেল। যেখানে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদেরকে অসভ্য বর্বর মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করা হত। যার পরিণতি মৃত্যু। সেখানেও নলিনী দাস অন্যান্য বিপ্লবীকে নিয়ে এক প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৩৪ সালের শেষের তিনি তাঁর বিপ্লবী জীবনের হিসেব-নিকেশ শুরু করলেন। ভাবনা-চিন্তা করতে থাকলেন সকল স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের নিয়ে। বিপ্লববাদী পথ নিয়েও ভাবলেন। সেলুলার জেলকে বিপ্লবীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনণত করার জন্য শুরু হয় পড়াশুনা। কমরেড কার্ল মার্ক্সের সাম্যবাদের ইশতেহার, লেনিনের পার্টিতত্ত্ব, স্টালিনের লেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিপ্লবীরা জ্ঞান অর্জন করে এখানে। নলিনী দাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এই আন্দামান সেলুলার জেলে কমিউনিস্ট পার্টির গ্রুপ গঠিত হয়। ওই সময় কমিউনিস্ট কনসলিডেশন দুটি হাতে লেখা পত্রিকাও প্রকাশ করে, ‘দুনিয়ার খবর’ও দি কল’। এর দায়িত্বে ছিলেন নলিনী দাস।



চট্টগ্রামের সূর্য সেন, বরিশালের নলিনী দাস ছিলেন ব্রিটিশরাজের আতঙ্ক। তৎকালীন সময়ে তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁকে দুর্ধর্ষ বিপ্লবী খেতাব দেন। ১৯৩৮ সালের ১৯ জানুয়ারী ব্রিটিশ সরকার চাপের মুখে আন্দামান বন্দীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়। কিন্তু নলিনী দাসসহ ৩০ জনকে দেশে এনে মুক্তি না দিয়ে আলীপুর, দমদম, প্রেসিডেন্সি ইত্যাদি কারাগারে পাঠানো হয়। এ সমস্ত জেলে নলিনী দাস রাজবন্দীদের নিয়ে পার্টির গ্রপ গঠন করেন। ব্রিটিশ সরকার এক পর্যায়ে তাকে কোনো বন্দীদের সাথে যোগাযোগ করতে দিত না। তখন তিনি আন্দামান সেলুলার জেলের এক অনবদ্য ইতিহাস ‘দ্বীপান্তরের বন্দী’ একটি বই রচনা করেন। যে বইটি ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়। এটিই আন্দামানের নির্মমতার একমাত্র তথ্যবহুল ইতিহাস। অবশেষে ১৯৪৬ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর নলিনী দাস মুক্তি পান। দেশে ফিরে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়ে কৃশক সমিতিকে গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। গোটা পাকিস্তান আমলটাই তার কেটেছে জেলে আর আত্মগোপনে। প্রথমে মুসলীম লীগের শাসন আমলে ১৯৫০-১৯৫৫ সাল পর্জন্ত পুনরায় তার কেটেছে জেল জীবন আর আইয়ুব শাহীর এক দশক ধরে আন্ডারগ্রাউন্ড জীবন।



১৯৭১ এর স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম সারির সংগঠকদের মধ্যেও তিনি ছিলেন উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশে নবউদ্যমে নলিনী দাস বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রক্ত পতাকা হাতে নিয়ে অগ্রসেনানী হিসেবে শোষণ মুক্তির লড়াইকে অগ্রসর করতে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭২-৮২ সাল পর্যন্ত দেশ গড়ার কাজে গণমানুষের মধ্যে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই তিনি মানুষের স্বাধীনতা, অধিকার ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যয় করেছেন। দেশমাতৃকা ও দেশের মানুষের সার্বিক মুক্তির আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ কমরেড নলিনী দাস লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের পৈত্রিক সম্পত্তি পিতা দূর্গামোহন দাসের নামকরণে একটি জনকল্যাণ ট্রাষ্টের নিকট হস্তান্তর করেন।



এদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের এতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র কিংবদন্তি কমরেড নলিনী দাস ১৯৮২ সালের ১৯ জুন মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিপ্লবী কমরেড নলিনী দাসের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৩১

হামিদ আহসান বলেছেন: কমরেড নলিনী দাসের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমিও স্মরণ করছি তাকে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.