নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রাচ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী, গবেষক ও সমাজ সংস্কারক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি ছিলেন একাধারে ভাষাবিদ, গবেষক, লোকবিজ্ঞানী, অনুবাদক, পাঠসমালোচক, সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যিক, কবি, ভাষাসৈনিক এবং একজন খাঁটি বাঙালি মুসলিম ও দেশপ্রেমিক। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা ও ভাষাতত্ত্ব নিয়ে তাঁর গবেষণা আজো অতুলনীয়। তিনি ২৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন, এগুলোর মধ্যে ১৮টি ভাষার ওপর তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিলো। বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাষা সংস্কৃতের ওপর তাঁর পান্ডিত্য ছিল অসাধারণ। ভারতীয় উপমহাদেশে তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় ইরানের বিশিষ্ট কবি হাফিজ ও ওমর খৈয়ামের বই অনুবাদ করেন। একনিষ্ঠ ধার্মিক হিসেবে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কুরআন হাদিসের অনুবাদ যেমন করেছিলেন, তেমনি ধর্মপ্রচারেও সক্রিয় ছিলেন। জ্ঞান-সাধনার উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন বলেই শিক্ষিত সমাজে তাঁকে "চলমান বিশ্বকোষ" হিসেবে সম্মান করা হতো। তিনি ছিলেন একটি কাল, একটি শতাব্দী, একটি জাতি, একটি সংস্কৃতি; অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, ধর্মবেত্তা ও সূফীসাধক। তিনি ছিলেন আজীবন ছাত্র এবং আজীবন শিক্ষক। সারাটি জীবন শুধু জ্ঞানের পিছু ছুটেছেন এবং জ্ঞান বিলিয়ে দিয়েছেন সবার মাঝে। অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁ ও আবুল কাশেম সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মিরপুরে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলা কলেজ। মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই শিক্ষক তিনি; একই কারণে দেশপ্রেমিক এবং মনেপ্রাণে বাঙালী। জাতিসত্তা সম্পর্কে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র স্মরণীয় উক্তি ছিল “আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালি”। জ্ঞানপ্রদীপ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৮৮৫ সালের আজকের দিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১২৯তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে জ্ঞানতাপস ড.মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর প্রতি আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবা মফিজ উদ্দিন আহমদ এবং মাতা হরুন্নেছা খাতুন। পরিবারে তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে শহীদুল্লাহ ছিলেন পঞ্চম সন্তান। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন দারুণ আমুদে ও আত্মভোলা তাই বাড়ীর সবাই আদর করে তাঁকে 'সদানন্দ' বলে ডাকত। গ্রামের পাঠশালায় পণ্ডিত মশাইরা তাঁকে ডাকতেন 'সিরাজ দৌল্লাহ' নামে। কিন্তু তিনি নিজের নাম রেখেছিলেন 'জ্ঞানানন্দ সংগ্রামী'। তবে প্রথম দিকে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নাম রাখা হয় মুহম্মদ ইব্রাহীম। কিন্তু পরবর্তীকালে পিতার পছন্দে আকিকা করে তাঁর নাম পুনরায় রাখা হয় মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ৪ বছর বয়সে গ্রামের মক্তবে তাঁর হাতেখড়ি হয়। তাঁদের পরিবার ছিল আরবী, ফার্সি ও উর্দুতে শিক্ষিত পরিবার। শহীদুল্লাহর বাবা ৫টি ভাষা জানতেন। ১০ বছর বয়সে শহীদুল্লাহকে হাওড়া জেলার সালদিয়া মাইনর স্কুলে ভর্তি করা হয়। স্কুলজীবন থেকেই তিনি আরবী-ফার্সী-উর্দুর পাশাপাশি হিন্দি ও উড়িয়া ভাষা পড়তে শিখেছিলেন। ১৯০৪ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে তিনি কৃতিত্ত্বের সাথে সংস্কৃতসহ প্রবেশিকা পাশ করেন। এরপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে ১৯০৬ সালে এফ.এ পাশ করেন। অসুস্থতার কারণে অধ্যয়নে সাময়িক বিরতির পর তিনি কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন ১৯১০ সালে। বাঙালি মুসলমান ছেলেদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম অনার্স নিয়ে পাস করেন।
সংস্কৃতিতে অনার্স পাস করার পর সংস্কৃত নিয়ে উচ্চতর পড়াশুনা করতে চাইলে তৎকালীন হিন্দু পণ্ডিতগণ তাঁকে পড়াতে অস্বীকার করেন। ফলে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯১২ সালে এ বিভাগের প্রথম ছাত্র হিসেবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর দু'বছর পর ১৯১৪ সালে তিনি আইনশাস্ত্রে বিএল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২৬ সালে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ইউরোপ গমন করেন। বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শণ চর্যাপদাবলি বিষয়ে গবেষণা করে ১৯২৮ সালে তিনি প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরাসী ভাষার মাধ্যমে বাংলা ভাষার সবচেয়ে পুরনো কাব্যগ্রন্থ ‘চর্যাগীতি' সম্পর্কে দু'বছর গবেষণা করে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরই ধ্বনিতত্ত্বে মৌলিক গবেষণার জন্যে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯২৮ সালে দেশে ফিরে শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি পত্র-পত্রিকার বাংলা ও ইংরেজিতে উঁচু মানের প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি নবগঠিত "বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি"র সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৩১ সালে তার প্রথম প্রবন্ধের বই ‘ভাষা ও সাহিত্য' প্রকাশিত হয় । এরপর তিনি একের পর এক বই লিখতে থাকেন। তাঁর লেখা বইয়ের সংখ্যা একশ'র কাছাকাছি আর দেশি-বিদেশি ভাষায় লেখা তার প্রবন্ধের সংখ্যা কয়েকশ'। জীবনভর ভাষা ও সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ এই জ্ঞানতাপস পাকিস্তান সরকার কর্তৃক 'প্রাইড অফ পারফরম্যান' এবং ১৯৬৭ সালে ফরাসী সরকার তাঁকে 'নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্ট লেটার্স' পদকে ভূষিত করেন। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করেন।
১৯৬৭ সালে ২৭ ডিসেম্বর প্রথম সেরিব্রাল থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন এই জ্ঞানানন্দ প্রবাদপুরুষ। জীবন সায়াহ্নে যখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেহাসপাতালের বিছানায়, তখন ডান হাতের লেখার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই সুদীর্ঘ কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে তাঁর। ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল সংলগ্ন মূসা খাঁন মসজিদের পশ্চিম পাশে তাঁকে কবর দেয়া হয়। ভাষাক্ষেত্রে তার অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ঐ বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল। জ্ঞানতাপস ড.মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর আজ ১২৯তম জন্মবার্ষিকী। বহুপ্রতিভাধর দার্শনিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ১২৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
১০ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:২১
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ হামিদ ভাই
প্রাতে উপমহাদেশের স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব, বহুভাষাবিদ,
বিশিষ্ট শিক্ষক ও দার্শনিক ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহর
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য
২| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:২১
রাজিব বলেছেন: ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ শ্রদ্ধেয়, স্মরণীয় এবং অনুকরণীয়।
১০ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:২৩
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজিব সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইলো........
৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
রাজিব বলেছেন: পোস্টটি স্টিকি করা হোক
১০ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজিব আপনার
আন্তরিকতার জন্য।
৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১
ডি মুন বলেছেন: তিনি ২৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন, এগুলোর মধ্যে ১৮টি ভাষার ওপর তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিলো।
তাঁর এই ব্যাপারটাই আমাকে সবচেয়ে বিস্মিত করে।
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
১০ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৫৬
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ ডি মুন
সত্যি সে এক অবাক বিস্ময়
"চলমান বিশ্বকোষ" এর
জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:০৩
হামিদ আহসান বলেছেন: বহুভাষাবিদ, বিশিষ্ট শিক্ষক ও দার্শনিক ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মবার্ষিকীতে আমার পক্ষ থেকেও ফুলেল শুভেচ্ছা রইল..................