নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যই সুন্দর

আমি সত্য জানতে চাই

কোবিদ

আমি লেখালেখি করি

কোবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

৯ আগস্টঃ ২০তম আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস আজ, চাই আদিবাসী হিসেবে তাদের স্বীকৃতি

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:০১



আজ ৯ই আগষ্ট'১৪ ইং ২০তম আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। এবারের আদিবাসী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্টায় মুক্তিকামী জনতার সেতুবন্ধন’। আদিবাসী, নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং উপজাতি বলতে সাধারণত এমন সামাজিক গোষ্ঠীকে বোঝায়, যাদের নিজেদের মধ্যে কিছু চরিত্রগত মিল থাকে। তারা সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থেকে সুস্পষ্টভাবে আলাদা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ উপ-কমিশনের কর্মকর্তারা তাদের প্রথম সভায় আদিবাসী দিবস পালনের জন্য ৯ আগস্টকে বেছে নেয়। আদিবাসী জনগণের মানবাধিকার, পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুদৃঢ় করা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করাই বিশ্ব আদিবাসী দশক, বর্ষ ও দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। জাতিসঙ্ঘ ১৯৯৩ সালকে আদিবাসী বর্ষ, ৯ আগস্টকে আদিবাসী দিবস ও ১৯৯৫-২০০৪ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দশক হিসেবে ঘোষণা করে। জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি ১৯৯৩ সাল থেকে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে।



বাংলাদেশে ৪৫টির মতো আদিবাসী আছে। এদের বেশির ভাগ পাবর্ত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে থাকে। এই ৪৫টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ৩০ লাখ লোক, যারা নিজ নিজ ৪০টি ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলে। তাদের সামাজিক রীতিনীতি, বিয়ে, জন্ম-মৃত্যু, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি সামাজিকতায় দেশের অন্যান্য অংশের জনগণ থেকে ভিন্ন ধরনের। আদিবাসীরা তাদের নৃ-তাত্ত্বিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভূমি ও সম্পদের ব্যবস্থাপনাসহ সর্বক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট।উপজাতি বা আদিবাসীদের বৈশিষ্ট্য যে, এরা প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। জীবন, জীবিকা, আচার-আচরণ ও বিশ্বাসে এরা প্রকৃতিনির্ভর। বাংলাদেশের আদিবাসীেদের ২৪ ভাগ হিন্দু, ৪৪ ভাগ বৌদ্ধ, ১৩ ভাগ খ্রিষ্টান এবং ১৯ ভাগ অন্য ধর্মাবলম্বী। আদিবাসীদের চেহারার মধ্যে চীনাদের মতো মঙ্গোলিয়ান বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এ বছর সারাবিশ্বের ৯০টি দেশের প্রায় ৪০ কোটিরও অধিক আদিবাসী জনগণের মধ্যে বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ সারা দেশের ৩০ লাখ আদিবাসী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি পালন করবে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আদিবাসীদের জীবনধারা, তাদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার, আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সদস্যরাষ্ট্র জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম, আদিবাসী জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করে তোলা এবং আদিবাসী মানুষের অধিকারের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করা।



জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারসংক্রান্ত সংস্থাগুলো, আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা, বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক আইন আদিবাসী শনাক্ত করার জন্য নিম্নোক্ত চারটি বৈশিষ্ট্য ঠিক করেছে। যথাঃ

১। আদিবাসীরা সাধারণত তাদের পূর্বপুরুষদের বাসভূমি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বংশানুক্রমে বসবাস করে।

২। তারা তাদের এলাকাগুলোতে সুস্পষ্টভাবে নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ধারণ করে ও মেনে চলে।

৩। তাদের একটি বিশেষ চরিত্র হলো, তারা নিজেদের ভৌগোলিক ও প্রতিষ্ঠানগত সংস্কৃতিক রক্ষা করে চলে এবং বিদ্যমান বৃহত্তর সমাজগোষ্ঠীর সাথে মিশে যেতে চায় না। এবং

৪। তারা নিজেদের আদিবাসী অথবা উপজাতি হিসেবে পরিচয় দেয়।

এছাড়াও আইএলও কনভেনশনের ১০৭ ধারার ১১ অনুচ্ছেদে আদিবাসীদের ভূমির ওপর ব্যক্তিগত ও যৌথ মালিকানা স্বীকার করা হয়েছে। জাতিসংঘ আদিবাসী অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্র ২০০৭ এর ১০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আদিবাসীদের জোর করে তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশ এ কনভেনশন ও ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও একের পর এক আদিবাসীদের ভূমি দখল করে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নতুন পদ্ধতিতে আদিবাসী ভূমি দখল চলছে। আদিবাসীদের না জানিয়ে তাদের ভূমিতে উদ্যান, ইকোপার্ক, অবকাশকেন্দ্র নির্মাণ, সামাজিক বনায়ন, বিমান বাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, আদিবাসী ভূমিকে খাস জমি ঘোষণা, হয়রানি, সরকারি ভূমি অফিসের দুর্নীতির মাধ্যমে আদিবাসীদের ভূমি দখল হচ্ছে।



আদিবাসী সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশে একটি জটিল আকার ধারণ করেছে। সরকার বলছে আদিবাসী নেই। বাংলাদেশ সরকার তার রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থার কারণে আদিবাসী নেই বলে বিভিন্ন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে আদিবাসীদের উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। একথা অনস্বীকার্য আর্ন্তজাতিকভাবে আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক একটি সনদ আছে সেটা সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। আদিবাসী দিবস আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃতি ও ঘোষিত দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো প্রতিবছর আর্ন্তজাতিক ঘোষিত দিবস হিসেবে বাংলাদেশেও আদিবাসী দিবস পালন করা হচ্ছে। তা হলে আর্ন্তজাতিক আইন যদি সরকার মানেন তা হলে জাতিসংঘের ঘোষিত আর্ন্তজাতিক আইনও সরকারকে মানতে হবে। কারণ আদিবাসী দিবস আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দিবস। সুতরাং সরকার যে আদিবাসী নেই বলছে তা ঠিক নয়। কারণ বাংলাদেশ সরকারও জাতিসংঘের সদস্যভূক্ত রাষ্ট্র। তাই আদিবাসী ও জাতীয়তার পরিচয়ের ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে পাহাড়ীর জনগোষ্ঠির দাবীগুলো বিবেচনা করে পুরো বাংলাদেশে আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান আবশ্যক।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:২৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: আদাবাসীরা এদেশে ভয়ংকর রকম নিগৃহিত।

২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:০৭

টিভি পাগলা বলেছেন: এইদিন যাদের উপজাতি হিসাবে চিনে এসেছি, তারা তাহলে আদিবাসী?

বাংলাদেশের এই সমতল ভূমির আদিবাসী কারা?

বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ সমতল এলাকা বাদ দিয়ে আদিবাসীরা কেন আদিকালে পাহাড়ে বসতি গেড়েছিলো?

৩| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪

এক্স রে বলেছেন: আমি আসলে বুঝি না তাদের কেন আদিবাসীর মর্যাদা দেয়া হয়না।

৪| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:০৯

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: একমাত্র সাঁওতালরা ছাড়া বাকি সবগুলা আদিবাসির কোন সংজ্ঞায় পরে আপনার কাছে আমার প্রশ্ন রইলো।
???????????

আর ইদানিং তারা এই সরকারের এত অনৈতিক সুবিধা পাবার পর ও মাঝে মাঝে যেসব মামু বাড়ির আবদার নিয়া হাজির হচ্ছে, এখনই দমন না করলে ওরা পরে একদিন জামাত শিবিরকেও হার মানাবে।

৫| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৫৪

জীবনকেসি বলেছেন: বাংলাদেশে ৪৫টির মতো আদিবাসী আছে। হঠাত করে আদিবাসী । ৫ বছর আগেও সবাই উপজাতি ছিল।
এখন আদিবাসী কেন??
দেশের খেয়ে পরে দেশদোহিতাই কথিত আদিবাসীর কাম। বাস্তবে আসেন। ঢাকা বসে আর নেট ঘেটে কাউকে আদিবাসী বানানো যায়না ভাই।
উদ্দেশ্য ভাল না- উপজাতীদের।

৬| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৫৭

জীবনকেসি বলেছেন: আদিবাসীদের না জানিয়ে তাদের ভূমিতে উদ্যান, ইকোপার্ক, অবকাশকেন্দ্র নির্মাণ, সামাজিক বনায়ন, বিমান বাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, আদিবাসী ভূমিকে খাস জমি ঘোষণা, হয়রানি, সরকারি ভূমি অফিসের দুর্নীতির মাধ্যমে আদিবাসীদের ভূমি দখল হচ্ছে। আপনার কাছে কোনো প্রমান আছে। ৫৬০০০ বর্গমাইলের যেকোন ভুমি সরকার চাইলে নিতে পারে উপযুক্ত ক্ষতিপূরনের বিনিময়ে। তাহলে পার্বত্য এলাকায় কেন পারবেনা?

৭| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:২৮

শাশ্বত স্বপন বলেছেন: পাকিস্থানীরা অামাদের যা যা করেছে, আমরাও ওদের ওপর তাই তাই করছি। যেমন, ওরা বিহারী দিয়ে দেশ ভরতে চেয়েছে, আমরাও বাঙ্গালী দিয়ে পাবর্ত্য এলাকা ভরে দিচ্ছি। কোবিদ ভাই, নারী কালো ছিল বলে তার বিবাহ হতে অনেক দেরী হয়েছে, অনেক যৌতুক লেগেছে, সেই নারীই তার ছেলের জন্য কালো বই আনতে চায় না, সেও তার পুত্রের জন্য অনেক টাকা চায়। ইতিহাস বা নিজের জীবন থেকে কেউ কিছু শেখে না, আমিও না...।

৮| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ১. বাংলাদেশে আদিবাসী-ভুল প্রচারণার চারিত্র্য
বাংলাদেশে 'আদিবাসী' পদটি একাধারে একটি সাম্প্রতিক আরোপণ, একটি ভুল পারিভাষিক পদ প্রচারণা, একটি ক্রমশ বিস্তৃত বিভ্রান্তি, একটি খাপছাড়া ভাবাবেগ, পূর্বাপর সংগতিবিহীন 'উদারতাবাদী' অভিধা লাভের অভিলাষ এবং দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে নানা মারাত্মক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রাজনীতির সূক্ষ্ম-জটিল, কখনো ক্রুর-কঠিন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান অমনস্ক যেকোনো আবেগপ্রবণতার চড়া মূল্য অবধারিত। বাংলাদেশে 'আদিবাসী ভুল প্রচারণায় যাঁরা নির্বিকার অংশগ্রহণ করছেন তাঁরা হয়তো বা তাঁদের অজান্তেই জাতীয় স্বার্থবিরুদ্ধ অবস্থানে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।'
আদিবাসী প্রচারণা আরেকটি মারাত্মক ইতিহাস বিকৃতি। বাংলাদেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির কবলে নিপতিত। শুদ্ধ বুদ্ধিজীবীরা আজ বহুদিন 'চিৎকার' করছেন, কিন্তু জনজীবন উৎসজাত 'প্রকৃত' রাজনীতিকদের দুর্বলতা বা অদূরদর্শিতা অথবা ব্যর্থতা-অপারগতায় আজও তাদের প্রতিহত করা যায়নি। অবাধে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ বিচরণ করছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধীরা। নানা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে, আগুনে, মৃত্যুতে, নির্যাতনে পতিত এখন জনজীবন।
২. 'আদিবাসী বললে কী হয়?
নিবন্ধের এই উপশিরোনামটি লেখিকার কাছে উত্থাপিত অনেকের সরল প্রশ্ন এবং মৌখিক ভাষার এই সংক্রমণ থেকে তিনি নিজেও রেহাই পাননি। অল্প সময়ে এই সংক্রমণ কাটিয়ে ওঠা গেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান শাস্ত্রের পারিভাষিক শব্দ বিশ্লেষণের আবশ্যকতায়। নিজ অভিজ্ঞতা সূত্রে দুটি বিষয় স্পষ্ট যে প্রথমত, দেশে শব্দটি প্রচলিত হচ্ছে; দ্বিতীয়ত, এর পেছনের উদ্দেশ্য ছোট-বড় নৃগোষ্ঠীভুক্ত সাধারণ জনগণের কাছে অজানা। এর প্রচলন এমন সরল আদলে ঘটছে, যেন বাঙালি ছাড়া অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর, প্রধানত মঙ্গোলীয় আদলের চেহারার জনগণের জন্য ঢালাওভাবে 'আদিবাসী' শব্দটিই প্রযোজ্য এবং তা বাংলা ভাষার একটি আধুনিক রূপ! সেই সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে 'অনগ্রসর' শব্দটি; যদিও বাংলাদেশের কয়েক লাখ গরিব-দুঃখী ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত জনগণের বৃহদাংশ শুধু নয়, বিশাল বাঙালি নৃগোষ্ঠীর কয়েক কোটি গরিব-দুঃখী জনগণও একই ধরনের অনগ্রসর। খাদ্য-পুষ্টি-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা এবং শোষণ, অপশাসন ইত্যাদি বিচারে কার চেয়ে কে অনগ্রসর, কে 'বেশি' দুঃখী, কে 'বেশি' নিপীড়িত-নিষ্পেষিত বলা কঠিন বৈ নয়।
নৃগোষ্ঠীগত বিভাজন পারস্পরিক দূরত্ব, সন্দেহ, অবিশ্বাস ও প্রীতিহীনতার জন্ম দেয়। রাষ্ট্রের অর্থ-সম্পদ-সুবিধাদির বরাদ্দ নৃগোষ্ঠী বিভাজনপূর্বক নয়, মানুষের প্রয়োজন ও এলাকাভিত্তিক বাস্তব চাহিদার ভিত্তিতে অকুণ্ঠ হওয়া আবশ্যক। ছোট ও বড় নৃগোষ্ঠীর যে একটি ক্ষুদ্র অংশ 'আঙুল ফুলে কলাগাছ' হয়ে যাচ্ছে অথবা হয়ে আছে, ভূমি, সম্পদ ও সুবিধা বণ্টনের বিচারিক দৃষ্টিভঙ্গি সেদিকে নিবদ্ধ করে কিছু করা গেলে সব নৃগোষ্ঠীর দুঃখী মানুষদের অগ্রসর জীবন নিশ্চিত করা অনেক সহজ হতো। সেটাই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি।
বর্তমান নিবন্ধে তথাকথিত আদিবাসী প্রচারণা বিষয়ে জনগণের হাতে কয়েকটি রাষ্ট্রীয় স্বার্থগত সংগত প্রশ্ন তুলে দেওয়া হলো।
এক. ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্য 'আদিবাসী' পদটি কি বাংলাদেশের ইতিহাস সমর্থিত?
দুই. এই 'পদ'টির প্রতি, অতিসম্প্রতি ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর (প্রধানত: পার্বত্য চট্টগ্রামের) নেতৃত্বের এত আগ্রহ সৃষ্টি হলো কেন?
তিন. 'আদিবাসী' পদ ও জাতিসংঘের ঘোষণা কি বাংলাদেশের জন্য আদৌ প্রযোজ্য?
চার. 'আদিবাসী' পদ প্রতিষ্ঠা দ্বারা বাংলাদেশের ভূমির অখণ্ডতার (Territorial integrity) ওপর কি কোনো আঘাত আসতে পারে? দেশের প্রতি ইঞ্চির ভূমির ওপর রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের স্বরূপ কী হবে?
পাঁচ. 'আদিবাসী' পদকেন্দ্রিক নৃগোষ্ঠীগত রাজনীতি কি বাংলার জনজীবনের শান্তি বিঘি্নত করতে পারে?
ছয়. ইতিহাস অসমর্থিত 'আদিবাসী' শব্দের পক্ষে পুস্তক-পুস্তিকা, মুদ্রণ মাধ্যম, 'ইলেকট্রনিক' মাধ্যম ইত্যাদিতে এখন যাঁরা ভাবাবেগে অংশ নিচ্ছেন, সারা দেশে যদি এই কৃত্রিমতার প্রায়োগিক বাস্তবতায় নৃগোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব-সংঘাত, রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা সৃষ্টি হয়, তাঁরা তখন কিভাবে সামাল দেবেন? পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যাকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দৃষ্টান্ত সামনেই আছে।
সাত. এই নৃগোষ্ঠীগত রাজনীতি (Ethnic-politics) কি জাতীয় সংহতি (National integration) অর্জন সাপেক্ষে জাতীয় শক্তি (National power) বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে?
আট. এই পদ বাংলাদেশে কি নিরাপত্তার কোনো হুমকি সৃষ্টি করতে পারে?
৩. জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র ও বাংলাদেশে 'আদিবাসিত্বের' কৃত্রিম পুঁজি
ওপরে উত্থাপিত প্রশ্নগুলো সূত্রে এ মর্মে কৌতূহল স্বাভাবিক যে এই একটিমাত্র ছোট শব্দ এত বহুমাত্রিক সমস্যার সম্ভাব্য উৎস কেন ও কিভাবে হয়?
সংক্ষিপ্ত উত্তর, ২০০৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১তম অধিবেশনের United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples, বাংলায় যা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্র, যা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও বর্তমান বিশ্বের রাষ্ট্র ব্যবস্থার বাস্তবতায় ঘোষণাপত্রটি পাঠপূর্বক প্রতীয়মান হয় যে এর উদ্দেশ্য মহৎ হলেও এটি অনেক ক্ষেত্রে সংগতিপূর্ণ নয় এবং রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতা বা সার্বভৌমত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে এর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নসাপেক্ষ। সর্বোপরি এই ঘোষণাপত্রটি একপেশে বক্তব্যে আকীর্ণ এবং নির্বিঘ্ন শান্তির সংকেত দেয় না।
ইতিহাসের বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্য অপ্রযোজ্য এই ঘোষণাপত্রটি পার্বত্য ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর ক্ষুদ্র একটি অংশের আদিবাসী পদের প্রতি আকর্ষণের মূল কারণ। এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশের কোনো কোনো ভূখণ্ড, অরণ্য, নদী, প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ছোট গোত্রজ নৃগোষ্ঠীর মালিকানা প্রতিষ্ঠা। ভূমি প্রসঙ্গে জাতিসংঘের ঘোষণার অনুচ্ছেদ ২৭-এর নির্দেশনা দৃষ্টিগ্রাহ্য- 'আদিবাসীদের ঐতিহ্যগতভাবে মালিকানাধীন কিংবা এর অন্যথায় ভোগ দখলে থাকা বা ব্যবহার্য ভূমি, ভূখণ্ড ও সম্পদসহ তাদের ভূমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের ওপর তাদের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া বা বৈধতা দানের লক্ষ্যে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এর আইন, ঐতিহ্য, প্রথা ও ভূমিস্বত্ব ব্যবহারের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদানপূর্বক রাষ্ট্র আদিবাসীদের সঙ্গে যৌথভাবে একটি অবাধ, স্বাধীন, নিরপেক্ষ, উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করবে।'
মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের ছোট নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রধানত চাকমাদের একটি ক্ষুদ্র স্বার্থগোষ্ঠীর (সব চাকমা নয়) দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি, ভূখণ্ড, অরণ্য, নদী, পাহাড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তাদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, প্রশাসন ইত্যাদিও তাদের হাতে থাকতে হবে। অন্য কথায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম তাদের ও বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের নাগরিক বাঙালিরা সেখানে তাদের অনুমোদন ছাড়া জমি ক্রয় বা বসবাস করতে পারবে না। বিগত তিন-চার দশকে যেসব বাঙালি, প্রধানত গরিব-দুঃখী-ভূমিহীন বসতি স্থাপন করেছে, কিংবা বাংলাদেশ সরকার বসতি স্থাপনের সুযোগ দিয়েছে, সেসব বাঙালিকে ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিতে হবে। প্রশ্ন, যে গরিব বাঙালি ৩০-৪০ বছর আগে ৩০ বছর বয়সে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেছে, আজ তার বয়স ৬০ বা ৭০ বছর। বাংলাদেশের নাগরিকদের বাংলাদেশেরই একটি ভূ-অঞ্চল থেকে উচ্ছেদ করার সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অমানবিক দাবিকে জোরদার করতে জাতিসংঘের ঘোষণায় আশ্রয় খুঁজছে এই ক্ষুদ্র স্বার্থগোষ্ঠীটি। এ দাবি একজন নাগরিকের চরম মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত।
পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে, ইতিমধ্যেই দু-একজন করে বাঙালি প্রশ্ন করতে শুরু করেছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছোট নৃগোষ্ঠীদের জমি ক্রয়-বিক্রয় ও বাসা-ফ্ল্যাটে বসতি, রাষ্ট্রের প্রশাসনে চাকরি ইত্যাদির আগ্রহ ও অধিকার নিয়ে। বাঙালির এই উষ্মার দু-একটি ফুলকি ভবিষ্যতে যদি দাবানলের মতো কোটি কোটিতে ছড়ায় তার দাহ কি ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত নাগরিকরা সহ্য করতে পারবে? তখন কি জাতিসংঘ থেকে 'শান্তি মিশন' পাঠানো হবে? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাইরের স্বার্থবাদীদের সে ধরনের কথাবার্তাও নজরে এসেছে। স্মরণে রাখা প্রয়োজন, শান্তি মিশন ও সার্বভৌমত্ব যেহেতু দ্বান্দ্বিক যখন, তখন এর প্রস্তাব উত্থাপন প্রশ্নাতীত হতে পারে না। পার্বত্যের দাবিদাওয়া তাই প্রশ্নসাপেক্ষ।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য দরদি বহির্বিশ্বের সাহায্য-সহযোগিতার ৯৮ শতাংশ ব্যয় হয় ছোট নৃগোষ্ঠীদের জন্য এবং ২ শতাংশ বড় নৃগোষ্ঠীভুক্ত বাঙালিদের জন্য। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে ছোট ছোট নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি নৃগোষ্ঠীর জনসংখ্যা প্রায় সমান-সমান। সুতরাং প্রথম প্রশ্ন, নৃগোষ্ঠী বিভাজন করে এভাবে 'দুঃখী' খুঁজে বের করার রহস্য কী? দ্বিতীয় প্রশ্ন, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে গারো, কোচ, সাঁওতাল, মণিপুরি, হাজং ইত্যাদি আরো যে ৩৫-৪০টি ছোট নৃগোষ্ঠী রয়েছে, বহির্বিশ্বের দুঃখমোচন তৎপরতা কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামে কেন? তাহলে ছোট নৃগোষ্ঠী নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূখণ্ডটিই কি মূল উদ্দেশ্য? এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে, বর্হিবিশ্ব ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধার সিংহভাগ যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং প্রধানত চাকমা সুবিধাভোগীদের (সাধারণ গরিব-দুঃখী চাকমা নয়) ভাগে। এমনকি পার্বত্যের তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মারমা ও অন্যরা এত সুযোগ পাচ্ছে না। এ ধরনের সুবিধাভোগিতা বিষয়ে ভবিষ্যতে অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া এই রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নতুন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে কি? অতি বিস্ময়কর ও সন্দেহ উদ্রেককর তথ্য এই যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছোট নৃগোষ্ঠীর নেতৃত্বের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকদের আলোচনার মধ্যে বিদেশিরা বাঙালি সরকারি অফিসারকে থাকতে দেয় না। বাংলাদেশ সরকার এই ঔদ্ধত্যের কোনো জবাব চেয়েছিল কি? প্রশ্ন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বহির্বিশ্বের কাদের দৃষ্টি ও স্বার্থ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এবং কেন? বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডটি বহির্বিশ্বের কাদের সামরিক পরিকল্পনার জন্য উপযোগী? আরো প্রশ্ন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ছোট ছোট নৃগোষ্ঠীভুক্ত সাধারণ সরল, বাংলাদেশের নাগরিকরা আন্তর্জাতিক কূটিল রাজনীতির ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে না তো?
Ref- Blogger Ginipig
বাংলাদেশে তথাকথিত 'আদিবাসী' প্রচারণা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ প্রশ্নসাপেক্ষ

৯| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ৭. পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশ্ন এ বড় অদ্ভুত যে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্তে কাপ্তাই বাঁধ দ্বারা চাকমা নৃগোষ্ঠীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে মর্মে নিজ চাকমা জনগণের দুঃখ-ক্ষোভকে গ্রাহ্যে না নিয়ে চাকমা অঞ্চলের তৎকালীন সার্কেল চিফ ত্রিদিব রায় (বর্তমান সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায়ের বাবা) ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান নেন। আবার উল্লেখ্য, সব চাকমা জনগণ নয়। যুদ্ধ শেষে তিনি নিজ নৃগোষ্ঠীর গরিব-দুঃখীকে ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান এবং মৃত্যু পর্যন্ত অতি উচ্চপদে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনপূর্বক পাকিস্তানের সেবা করেছেন।
চাকমা নেতৃত্বের একটি ক্ষুদ্রাংশে (সবাই নয়) এইরূপ স্ববিরোধিতা আরো আছে। যেমন- সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্ট্রে নয়, ধর্মনিরপেক্ষ উদারনৈতিক বাংলাদেশে তাদের নানারূপ সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু হয়। প্রশ্ন, কেন মানবিক মূল্যবোধহীন সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি পরিচিতি লুপ্ত হওয়া মাত্র ক্ষুদ্র চাকমা নৃগোষ্ঠীগত পরিচিতির প্রশ্নটি 'তাৎক্ষণিকভাবে' এত বড় হয়ে উঠল, এত উত্তেজিত যে তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিল? যুদ্ধবিধ্বস্ত নিজ মাতৃভূমির অগণিত ক্লিষ্ট, আহত-নিহত-পর্যুদস্ত জনগণের প্রতি দায়িত্ব ও দরদ থাকল না কেন? বাকি ৫০টি ছোট নৃগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তো এইরূপ দাবি ও সশস্ত্র তৎপরতা ঘটেনি। অনিবার্য রাজনৈতিক প্রশ্ন, এত অস্ত্র, রাতারাতিই বলা যায়, তারা কোথায় পেল? এই পরিচিতির বিষয়টি কি পাকিস্তানের উসকে দেওয়া? বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অশান্তি সৃষ্টি করে রাখার কোন নীল নকশা? বর্তমানে (২০১৩) বাংলাদেশের যেমন পারিভাষিক শব্দ 'গণহত্যা' ব্যবহারপূর্বক ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর বিশ্বনিন্দিত অতিকায় গণহত্যাকে ম্লান করার প্রচেষ্টা চলছে, সেইরূপ পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে বিজয়ী বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ম্লান ও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার প্রচেষ্টায় কি একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিচয় নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে? পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে, বাংলাদেশের একটি মহল বাঙালি পরিচিতি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে বড় কুণ্ঠায় রয়েছে। এটি ইতিহাস বিস্মৃতি, ইতিহাস অস্বীকৃতি, নাকি ইতিহাস বিকৃতি? পাকিস্তানে বসবাসকারী ত্রিদিব রায়কে পাকিস্তান কি ব্যবহার করেছে? সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান সরকার সুদূর পূর্ব বাংলার এবং অমুসলমান ও ছোট একটি নৃগোষ্ঠীর নেতাকে সারা জীবন অতি উচ্চপদে আসীন রাখে কেন? প্রশ্ন, অতি ধীশক্তিসম্পন্ন দূরদর্শী ও অতীব উচ্চমান রাজনীতিক বঙ্গবন্ধু কোনো সন্দেহ পোষণ করেছিলেন কি? এই উদারতাবাদী মানুষটি বাংলাদেশের স্বার্থের ব্যাপারে চিরকাল ছিলেন আপসহীন এবং ইতিহাসের এই পর্বে তাঁকে অনড় দেখা যায়। লক্ষণীয়, পাকিস্তানি সৈনিক শাসকরা বলেছিল যে তাদের বাঙালি জনগণকে প্রয়োজন নেই, 'মিট্টি' (ভূমি/ভূখণ্ড/মাটি) চাই। পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি অতি ক্ষুদ্র কায়েমি স্বার্থবাদী অংশ বলছে, পার্বত্যের ভূমি বা ভূখণ্ড তাদের, বাঙালি সেখানে থাকতে পারবে না। প্রশ্ন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুক্ত করতে পাকিস্তানি দখলদারদের সঙ্গে যে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন, রক্ত দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তা কি পার্বত্য চট্টগ্রামকে 'বাঙালি মুক্ত' করার জন্য? তারা মরেছেন কি পার্বত্যের ভূখণ্ড ওই ক্ষুদ্রাংশকে দিয়ে দেওয়ার জন্য?

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস : দৈনিক কালের কণ্ঠ, ৩০ জুলাই, ২০১৩
সোর্স : বাংলাদেশে তথাকথিত 'আদিবাসী' প্রচারণা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ প্রশ্নসাপেক্ষ

১০| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৪

কোবিদ বলেছেন:
'আদিবাসী' শব্দ ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা:

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের দু’দিন আগে গত ৭ আগস্ট, ২০১৪ ‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহার পরিহারের জন্য নির্দেশনা জারি করে সরকার।
সরকারি ওই তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমানে দেশে আদিবাসীদের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও বিভিন্ন সময় বিশেষ করে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে ‘আদিবাসী’ শব্দটি বারবার ব্যবহার হয়ে থাকে।
পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে উল্লেখ করে তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা ও টকশোতে ‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহার পরিহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
‘এ সকল আলোচনা ও টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদিবাসী শব্দটির ব্যবহার পরিহারের জন্য পূর্বেই সচেতন থাকতে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’
সুতরাং সকল বিতর্ক ও সমস্যার সমাধান দিয়েছেন সরকার।
তবেঃ
সরকার 'আদিবাসী' শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও 'বিশ্ব আদিবাসী দিবস' রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।
গত ৫ আগস্ট রাজধানীতে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সন্তু লারমা এ দাবি উত্থাপন করেন। একইসঙ্গে তিনি সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ফেরৎ দেয়ার দাবি জানান।
সন্তু লারমা বলেন, ৯ আগস্ট, ২০১৪ ২০তম আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশ ২০ বছর ধরে এ দিবসটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করে আসছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার আদিবাসীদের প্রাণের এ দিবসটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করছে না।

১১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:০৩

জীবনকেসি বলেছেন: আমরা বাস্তবতা না জেনে কারণে অকারণে সুলতানা কামাল হচ্ছি কেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.