![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবিতায় বাঁচি
পর্ব..........১
মোবারক মিয়া খুউব সুন্দর করে পুথি পাঠ করত।পুথির প্রতিটা শব্দের সাথে নিজের সুন্দর বচন প্রতিভা জুড়ে দিয়ে তার সামনে উপস্থিত শ্রোতাদের বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিত।চার গ্রামে তার পুথি পাঠের কদর ছিল।কাউকে ঘটা করে জানানোর প্রয়োজন হতনা।বাড়ির সামনে খানকা ঘরটা গ্রামের সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।সন্ধার পর যার যার কাজ শেষে, গ্রামের মাতবর, কৃষক,রাখাল বাড়ির কামলা, ছেলে-বুড়ো পাড়া প্রতিবেশী দিনের ক্লান্তি ভুলে এক খন্ড বিনোদনের জন্য খানকা ঘরটি (বাড়ির বৈঠক খানা) সবার কাছে আপন হয়ে উঠেছিল। মোবারক মিয়া দিনের সমস্থ কাজ সেরে স্ত্রীর হাতের যত্নে পরিস্কার করে ধোয়া, অথচ খুবই সাদামাটা কাপড়ে পুথি নিয়ে খানকা দরবারে যখন হাজির হত, তখন দরবারের সমস্থ মানুষের মধ্যে একটা আনন্দের ফোয়ারা বইত।মোবারকের বসার স্থানটির সামনে কেরোসিনের কুপির আলোতে তাদের সে উৎসুক আনন্দমাখা মুখগুলো কুপির আলোর চেয়েও লক্ষগুন উজ্জল মনে হত। কুপির ক্ষীণ আলোর শিখাও সে আলোয় নিজেকে বিসর্জন দিয়ে ভক্ত স্রোতা হয়ে যেত।গৃহস্থলি কাজ শেষে পল্লীর বধুরা লোকচক্ষুর একটু আড়ালে ঘোমটা দিয়ে মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে পুথিপাঠ শুনত। মোবারকের বৈঠক খানা (খানকা ঘরটি) এলাকার বিশেষ শ্রী।শুধু পুথিপাঠ নয়,এলাকার বিচারিক কার্যক্রম ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হত এখান থেকেই। তাই দিন রাত সব সময় ঘরটি গ্রামের লোকের পদভারে মুখরিত হয়ে থাকত। বাইরে থেকে কোন মেহমান এলে এই ঘরটি অতিথি পানশালা হিসেবে ব্যাবহার হত। আজ মোবারক যে অবস্থায় আছে,সমস্থই তার স্ব শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার মন্ত্রের জোরে। এখানে একটা কথা বলা দরকার পুথিপাঠ কেবল আপামর সাধারণের বিনোদনের জন্য তা নয়।পুথিপাঠের মাধ্যমে সমাজের চৈতণ্য পিরিয়ে দেওয়া এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থেকেই বিভিন্ন পাঠ্যবই থেকে গুরুত্তপূর্ণ উপাদান সংগ্রহ করে পুথি আকারে পাঠ করে সমাজকে উদ্ধার করার চেষ্টা, তার নিত্যব্রত ছিল। যে সব গেরস্থের চোখের সামনেই সে আজকের পরিণত মোবারক, তারা মোবারকের কতৃত্ব পরায়নে ঈর্ষান্বিতায় খানকা ঘরের কুপির মত ধুকে ধুকে জ্বলছিল।কিন্তু সে জ্বলা, কেবলি জ্বলা। এ তো গেল সন্ধা লগনে আলো আঁধারের মিলন মেলায় মোবারক জীবনের একখন্ড চিত্ররুপ।এরপর! এরপর আরো আছে! রাতের নীরবতায় সে তার প্রেমময়ী স্ত্রী কে নিয়ে জোছনা পোহায়। ২৫বৎসর আগে মোবারকের ১৮ বৎসরের কৈশর জীবনে ১১ বৎসরের আনোয়ারা মোবারকের হৃদয়ে ধুমকেতুর মতই আবিভূত হয়েছিল। তখন সংসার, সমাজ, স্বামী কোন কিছুরই মর্মতন্তু উপলব্ধি করার সাধ্য আনোয়ারার ছিলনা।খেলার ছলে বিয়ের পিঁড়িতে বসে সে শুধু কবুল বলেছে। তখন মোবারকের ছোট্র সংসারে আনোয়ারার স্বাধীণ চলাচলে বাধা ছিলনা।বিয়ের আগে পুতুলের বিয়ে নিয়ে ঠিক যে ভাবে ব্যাস্ত থেকেছে, বিয়ের পর বাস্তব জীবনেও ঠিক সে রুপ মোবারকের ঘরটাও তার কাছে পুতুলের ঘর বলে মনে হয়েছে।মোবারক এই বালিকা বধুর হৃদয়ের বরবেশি পুতুল। অ পরিপক্ক স্ত্রীর মূল্যবোধের অভাব মোবারক তার তরুণ হৃদয় দিয়ে উপভোগ করত।ভোগের মাতমে নয়, সুন্দরের পুঁজা অর্চণা করাতেই তার সমস্থ হৃদয় অনায়াসে উপবাস থাকতে পারে।পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় সে স্ত্রীর প্রতি জোর খাটায়নি। শুধু হৃদয়ের আকর্ষণে কাছাকাছি থাকবার ব্যাকুল বাসনা, স্ত্রীর দুরন্ত পনা, এ ঘর ও ঘর ছুটাছুটি, রুপের ঝলকানী, চলাফেরা, কথাবার্তা সমস্থ সৌন্দর্যের মিশ্রনে মোবারকের কেবলি মনে হয়েছে এ এক দুর্লভ ফুল,যার দর্শণে শত জনম ধণ্য ।......চলবে......
©somewhere in net ltd.