![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবিতায় বাঁচি
পর্ব -২
আমেনা বেগম গত হয়েছেন বছর পাঁচেক হল। পরিপূর্ন সংসারে ফরমায়েস খাটিয়ে, সংসারকে সাঁজিয়ে গুছিয়ে হটাৎ করেই তিনি বিদায় নিলেন। জন্মবধি বড় পুত্রবধুর অপারগতাকে তিনি ক্ষমা করতে পারেননি। পুরুষ মানুষ কুপথে পা বাড়াবেই, সে পায়ে বেড়ি পরানো ঘরের লক্ষিরাণীর কাজ। তাই বড় বউকে দুরে দুরে রেখে সংসারের সমস্থ কাজের নৈপুন্য, কলা কৌশল তিনি ছোট বউয়ের হাতেই জিম্মি রেখে বিদায় নিয়েছেন।সময়ের ব্যাবধানে জাফর মিয়া ও মোবারক মিয়ার সংসার পৃথক হয়েছে। তবে আত্মার ব্যাবচ্ছেদ হয়নি। শুধু সম্পত্তির বনিবনা হয়েছে মাত্র।তাছাড়া যেমন ছিল ঠিক তেমনি রয়েছে।অশুভ অসৌজন্যতার কোন বালাই ছিলনা।জাফর মিয়ার বড় ছেলে বাহার, নামের সাথে বাহ্যিক ও ভেতরকার পূর্ণ যোগসুত্র ছিল বটে। সঠিক মাপের উচ্চতা ও গোলগাল শ্যামলা গড়ন। চোখে মুখে উদার উদাসী ভাব।বংসের বড় ছেলে আদর যত্নের কমতি ছিলনা।বিশেষ করে সিংহ ভাগেরও বেশি আদর যত্ন পেয়েছে দাদী আমেনার কাছে।বংসের প্রথম মুখ তাই সমস্থ পরিধি ঘিরে আমেনার ছাঁয়া বাহারের ছাঁয়ার সাথে লেপটে থাকত।শুনেছি বাড়ির গন্ডি পেরিয়ে বাইরের অনেকখানি রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে আমেনা পরিস্কার করে রাখত, অন্য কারো জন্যে নয় শুধু সে রাস্তায় তার নাতি চলাচল করবে বলে। এমনি আর্শিবাদ পুষ্ট হয়ে এন্ট্রাস পাশ করে কলেজে পা রাখতেই বাহারের জীবনের এই মহিয়সি নারী তাকে বিদায় জানালো।তার পর বাহার মিয়ার দিন যাপনের গল্পগুলো তার কাছে হটাৎ করেই খাপছাড়া হয়ে গেল।সাধু, চলিত, সংস্কৃতি, অপসংস্কৃতি বিভিন্ন শব্দের শব্দ দুষনে সমস্থ প্রেক্ষাপটটাই দুর্বোধ্য হয়ে গেল।মায়ের যত্ন আত্তির বালাই নাই, শ্বাশুড়ি বেঁচে থাকতেই সে সংসারের প্রতি খাপছাড়া ছিল। শ্বাশুড়ির মৃত্যুর পর সে ভাব আরো শক্ত পরিপক্ক হয়েছে।শ্বশুড়ির ভয়ে এতদিন স্বামীর অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে পারেনি, এখন জাফর মিয়া যখন কোন ছুঁতো ধরে তাকে মারতে যায় তখন শাস্তনবাণুর ভেতরের প্রতিবাদী রুপটা জেগে উঠতে দেখা যায়।স্বমীর মুখের উপর জবাব দেয় “ মিন্সি ছাই-পাস গিলি মরতে পারিস না পাড়ার মাগীর কাছে যা তারা তোক খাতি দেয়না, আমাক খালি খালি মারতে আসিস তোর হাত পঙ্গু হয়ে যাবি তুই চলতে পারবুল্যা তখন তোক কিডা দেখবি” এই কথাগুলো তার এত দিনকার নির্যাতনের স্পষ্ট সাহসী উচ্চারণ।জাফর মিয়াও তার ভেতরকার এই তেজস্বনী রুপ এতদিন দেখেনি। প্রচন্ড সত্যের স্পষ্ট উচ্চারণে জাফর মিয়া বিহবল।কোথা থেকে সে পেল এমন শক্তি? এ যেন ঝড়, ঝড়ের বাতাসে বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্র থেকে উল্কার মত ছুটে আসা বাণ তার বুকে বিধছে।তার রক্তাক্ত চক্ষু নিরুপায় হয়ে চেয়ে দেখছে!নির্বিকার! জাফর যখনই তার প্রতি এমন চড়া্ও হয়েছে,তখনই এ রকম ঝড়ো বিচরণে তার শক্তি খর্ব হয়ে গেছে। কিন্তু কেন? মনে মনে অনুসন্ধান করতে লাগল জাফর। উত্তর ও পেল। পাপ যে কেবলি পোড়ায়? এত দিনের উত্তপ্ত লাভা আগ্নেগিরি অগ্নিৎপাতের মাধ্যেমে জ্বালা মুখ করে বের হয়ে আসছে। কিন্তু এর আগেও তো ছিটেফোটা লাভা তিনি বের হতে দেখেছেন, তা তার শক্তিতে আঘাত হানেনি।কিন্তু সেই একই শক্তি আজকে নিরুপায়…কেন? কারণ সেই শক্তিকে যে উস্কে দিত সে আজ বেঁচে নেই। তাই পর্যাপ্ত শক্তি না থাকায় আজ তার এই বেহাল দশা। নিরুপায় আত্মসমার্পন। নাহ! ভুল, বয়স ছিল, রক্ত গরম ছিল তাই তার এমন উত্তাপ।নিজ স্ত্রীর চুল দু ভাগ করে তা বাঁসের খুঁটিতে পেঁচিয়ে বেঁধে যতক্ষণ সাধ না মেটে ততক্ষণ নির্যাতণ চলতে থাকে। আমেনা এমন পরিস্থিতিতে পুত্রকে সমর্থণ দিয়ে বলেছে, বাপ ও মানুষ না, মাগী কু-লক্ষনে ওর উপর বদ জীন আছে। ওর কিচ্ছু হবিনানে, তুই হাপিয়ে গেলি।যেখানে জাফরের নিষ্ঠুর অ-মানুষিক বেত্রাঘাতে শাস্তনবাণুর জীবন যায় যায়, যেখানে মানবতার এমন চরম অবমূল্যায়ন, যেখানে শাস্থনবাণুর শরীর রক্তাক্ত , ক্ষত বিক্ষত সেখানে নারী হয়েও আরেকজন নারীর প্রতি এমন বর্বরতায় অমেনার মনে এতটুকু করুণার উদ্রেগ হয় নাই।সে পুত্রকে দিয়ে শাস্তনবাণুকে শায়েস্তা করতে পেরে খুশি।পুত্রকে পাশে বসিয়ে পাখা দিয়ে বাতাস করে, আদর করে খাওয়ায়, আর বিলাপ করে বলে, আমার এমনি সোনার মত রাজপুত্র, এই অলক্ষি মাগী তছনছ করে দিল।কি তছনছ করল? কি কারণে অলক্ষির প্রতি তার এমন আচরণ? কেন এই হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ, এর স্পষ্ট কারণ জানা নাই। তার মনের আশার যথার্ত প্রতিফলন ঘটেছে এটাই আমেনার স্বস্তি।মানবতা লুন্ঠনের বিকৃত খেলার জন্ম এখানেই। জাফর এই সত্যকে অ-স্পষ্ট করে উপলব্ধি করতে পারে।কিন্তু যে তেজে সে এতদিন স্পর্ধা দেখিয়েছে সে কি এত সহজে বিলুপ্ত হওয়ার। হার মানতে নারাজ। তাই বিষয়টা তার কাছে এভাবে দাঁড়ায়, আজ বুঝবার সময় হয়েছে তাই এমন উচ্চ মূল্য দিয়েই তাকে বুঝতে হচ্ছে। সময়ের কাছে সত্যকে গলা টিপে ধরে মারবে , তবুও সত্যের কাছে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে পাপ সুধরাতে আপত্তি আছে। তাতে নিজের ভাবমুর্তি নষ্ট হয়।আত্মার মাঝেই আত্মার ব্যাবচ্ছেদ করে জীবন চলার পথকে কন্টকময় করার কু শিক্ষা কবে কোথা থেকে ভিত করে গন্তব্য শুরু করেছিল তা জাফর মিয়ার জানা নেই।তবে এই শিক্ষাকে ভেদ করে নিজেকে জানার ইচ্ছাও তার নেই। আবার প্রকৃতির খেয়ালে মাঝে মাঝে বিবেক জাগ্রত হলেও তার আঁতুড় ঘরেই মৃত্যু হয়েছে। এ সংসারের পাপ তাকে ছোঁয় না, কারণ সে যমের বাড়ির নেমন্ত্রণ খায়।তার আবির্ভাব হয়না, বেসুরা ছন্দে আগমন হয়। জাফরের চরিত্রের যে বিকাশ তার জন্য কি শুধু জাফরই দায়ী? আমার তেমনটা মনে হয়না, আমার মনে হয় জাফর মিয়ার উপর পেতাত্মা ভর করেছিল, সেই খারাপ আত্মা কেউ না, তার মা আমেনা।ছেলেকে দায় মুক্তি দিয়ে সমস্থ দায়-দায়ীত্ব ছেলের বউয়ের উপর চাপিয়ে যে বিকৃত আত্মার খেলার জন্ম দিল , কাল-ক্রমে সেই একই আত্মা শুধু রুপ পাল্টাইলো । বিজ্ঞানে পড়েছি শক্তির ক্ষয় নাই । শুধু এক রুপ থেকে আরেক রুপে আবিভূত হয়। আজ এই অপশক্তিই কেবল ভেল পাল্টাইয়া শুধু স্থানতরিত হয়েছে। আমেনা থেকে জাফর, জাফর থেকে শাস্তনবাণু
( কালক্রমে এর বিস্তৃত বর্ণণা দেওয়া হবে) চলবে……..
২| ২১ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:২৮
কবি জাকির হাসান (পাবনা) বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে মে, ২০১৬ রাত ১:০৬
রাহাত চৌধুরী(দুঃখ বিলাসী কবি) বলেছেন: ভালোয় লাগলো