নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কল্পনায় মেশানো কাব্য

কল্পকাব্য

কল্পকাব্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছুটা আবেগ , ভালোলাগা আর সব ভালোবাসা

১০ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৪:৫৬

প্রিতু বনানি থেকে বাস এ উঠলো। বাসায় যাবে। মোহাম্মাদ পুর। কাকলি তে বাস দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পর একটা মেয়েও বাস এ উঠলো। প্রিতু অপার দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে। এতো মায়াময়ী চোখ থেকে প্রিতু চোখ সরাতে পারেনা। মেয়েটির ও চোখ প্রিতুর চোখের সাথে মিলে যায়।
প্রিতু কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে। প্রিতু আবার ও তাকায়। মেয়েটি এখনো তার দিকে তাকিয়ে। এবার প্রিতু ভালোই লজ্জা পেল। প্রিতু আর তাকানোর সাহস পায় না। লাভ এট ফার্স্ট সাইট এ প্রিতু কখনো বিলিভ করতো না। প্রিতুর আজ ভূল ভেঙে যায় বলা যায় ।
বাস চলছে তার গতিতে । প্রিতু আর তাকায় না মেয়ে টার দিকে । এখন ও কিছু টা লজ্জা অনুভব করছে । শেষ পর্যন্ত সাহস করে তাকালো আবার । মেয়ে টি জানালার দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে । অপরূপ লাগছে সত্যি । প্রিতু এবার আর বেশিক্ষন তাকালোনা । এবার মেয়ে টি বুঝতে পারলে তুলকালাম হয়ে যেতে পারে । প্রিতু নিজে নিজে হাসছে । প্রিতু কেমন যেন মেয়েটির মায়ায় পড়ে গেছে ।
বাস শ্যামলি ক্রস করছে । প্রিতু আবার দেখলো , মেয়েটি গান শোনায় ব্যস্ত । সে হঠাত দেখলো , মেয়েটিও আড় চোখে দেখলো তাকে । আবার ও চোখ নিচে নামিয়ে ফেলল সে । প্রিতু ও গান শুনতে লাগলো । শিয়া মসজীদ এ বাস থামলো । সবাই নামতে লাগলো । প্রিতু মেয়েটির নামার অপেক্ষায় । মেয়েটি নামলো বাস থেকে । প্রিতু ও বাস থেকে নামলো । মেয়ে সামনে , প্রিতু পেছনে হাটছে । শিয়া মসজিদের কাছে এসে মেয়ে টি বামে যেতে লাগলো । প্রিতুর মনে একটু আক্ষেপ হলো । কারন তার ডানে যেতে হবে । মেয়েটি ও তো ডানে যেতে পারতো । আর কিছুক্ষন না হয় মুগ্ধতায় হারানো যেত ।
প্রিতু শিয়া মসজীদ এর ফুটপাথ এর উপর দাঁড়িয়ে মেয়েটির যাওয়া দেখতে লাগলো । হঠাত করে মেয়েটি দাঁড়িয়ে গেল । পেছনে ফিরলো । প্রিতু এবার দিয়ে তিন বার থতমত খেল । মেয়েটি প্রিতুর দিকে হেটে আসছে । প্রিতু কিছু টা ঘাবড়ে গেল । রাস্তার মাঝ খানে মেয়েটি উলটা পাল্টা কিছু করে বসলে বিপদ ।
প্রিতু বুঝতে পারছে সে হাটতে পারছেনা । সে যে দৌড় দেয়ার চিন্তা করেনি এমন নয় কিন্তু তার দুই পা তাকে ভালোই ধোকা দিল । দোয়া দরূদ পড়তে লাগলো প্রিতু ।
-লক্ষ্য করলাম বাসে ওঠার পর থেকে তাকিয়ে আছেন আপনি আমার দিকে । কারন টা জানতে পারি ?
প্রিতু কিছু বলেনা । তার কোন কথা আসছেনা । বলতে চেয়েও কিছু বলতে পারছেনা ।
-কথা বলেন না কেন? বোবা নাকি ?
- না । বোবা না । ঠিক ।
-তাহলে ?
- ( কোন কথা নাই প্রিতুর )
- নাম কি আপনার ?
- প্রিতু । আপনার ?
কথা টা বলেই প্রিতুর মনে হলো ভূল করে ফেলছে । এমনি দোষ করছে তার উপর আবার নাম জানতে চাচ্ছে । মাইর আজ মিস নাই । কিন্তু মেয়ে টি প্রিতু কে ভূল প্রমানিত করে বলল
- অনেষ্বা ।
- ও ।
- কোথায় পড়েন ? কি পড়েন ?
- জি । এয়াইইউবি তে পড়ছি ।
- কি পড়েন ? ( হেসে )
- জি ইইই তে ।
- কোন সেমি তে আছেন ?
- জি । টেনথ ।
- ও । আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না ?
- জি ??
- আমি ব্র্যাক এ আছি । বিবিএ তে । থার্ড সেমি তে ।
- ও । ভালোই তো ।
- হুম ।
দুজনেই কিছু বলছেনা আর । প্রিতু মাটির দিকে তাকিয়ে । অনেষ্বা প্রিতুর দিকে তাকিয়ে আছে ।
অনেষ্বাই এগিয়ে বলল
- আমরা ফ্রেন্ডশিপ করতে পারি ? ( মুচকি হেসে )
- জি ? (অবাক )
- পারিনা ? ঠিক আছে ।
- না মানে আসলে তা না । অবশ্যই । কেনো না ?
- :D :D
- আপনি লিমিটেড এ থাকেন ?না সোসাইটি ?
- লিমিটেড । আপনি ?
- তাজমহল রোডে
- ও ।
- ওকে । তাহলে আসি আজ ।
- ওকে । বাই
- বাই ।
দুজন দুদিকে লাগল । প্রিতু আবার ঘুরে ডাক দিল ।
-অনেষ্বা ?
-জি ?
- আবার কি দেখা হবে ?
- ভাগ্যে থাকলে হবে । :D
- ও
-মানে । আসলে .........
- বলেন । তোতলাচ্ছেন কেন ?
-না মানে আপনার ফোন নাম্বার টা পেতে পারি ?
- উমম । পারেন কিন্তু ?
- কিন্তু ? সমস্যা ? তাহলে থাক ।
- সমস্যা একটা আছে ।
- কি সমস্যা ?
- আপনার নাম্বার টা ও দিতে হবে যে :D :D
- হা হা হা
- ০১৭..................
- মিস্কল দিচ্ছি ।
- ওকে ।
- থ্যাঙ্কস
- :D :D
-বাই । ভালো থাকবেন ।
- আপনি ও ।
চলে গেল অনেষ্বা । হতভম্বের মত প্রিতু, অনেষ্বার চলে যাওয়া দেখতে লাগল । এক প্রকার ঘোরের মধ্যে কেটে গেল সময় টা ।
খানিক বাদে ,
প্রিতু বাসায় চলে আসে । দুপুরের খাবার খেয়ে ট্রাক চালানোর গেমে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ।
দুইদিন পর ,
একদিন সন্ধ্যায় প্রিতু বাসা থেকে বের হলো । হাটছে । মন কিছুটা খারাপ । নাম্বার আছে । কল দিতে পারতো । কিন্তু দেয়নি । কি ভাবে না ভাবে এই চিন্তা করছে । কিছু দূর যেতেই একটা কল আসল ফোনে ।হাত তার কিছু টা কাপছে । স্ক্রিনে অনেষ্বা লেখা ।
-হ্যালো
-কেমন আছেন ?
- ভালো । আপনি ?
- আছি ভালোই । আপনার কল আসবে ভেবেছিলাম । কিন্তু আসলো না তাই কি আর করার আমি ই দিলাম ।
- না, আসলে দিতে চেয়েছিলাম , কিন্তু ভাবলাম কি ভাবেন...... হা হা হা ।।
- কি ভাববো??
- না , মানে আসলে ...
- থাক , বলতে হবে না আর । বাদ দেন । কি করতেছেন ?
- এইতো একটু বাইরে আসলাম । হাটছি ।
- ও । ফ্রি আছেন ?
- হ্যা । কেন?
- না , তেমন কিছু না । ক্লাসে যাই নাই । বাসা থেকে বের হই নাই । ভাবলাম, একটু বের হবো । চা খাওয়া মানে পান করা উচিত :D :D সন্ধ্যা হয়ে গেছে । সবাই ব্যাস্ত । একা তো আর বাইরে চা খাওয়া যায় না । তাই না ? আসতে পারবেন তাজমহল রোডে ?
- হ্যা । আসতেছি ।
- বিএফসির সামনে আসেন ।
- ওকে ।
প্রিতুর মন ভালো হয়ে গেল । যার জন্য মন খারাপ সেই যদি মন ভালো করার জব হাতে নেয় তাহলে আর কিভাবে মন খারাপ রাখা যায় । প্রিতু বিএফসির সামনে অয়েট করতে থাকে । ১০ মিনিট পর অনেষ্বা আসে ।
প্রিতু – কেমন আছেন ?
অনেষ্বা – এইতো । যা দেখতেছেন ভালই ।
প্রিতু একটু লক্ষ্য করে । খুব সিম্পল হয়ে আসছে অনেষ্বা । সাদা গোলাপি মিক্সড সালোয়ার কামিজ ওড়না টা সাদা রঙ এর । প্রিতু অবিভুত হয়ে যায় মুগ্ধতায় । প্রিতু বলেই ফেলে
- অদ্ভত সুন্দর লাগছে আপনাকে ।
- কি ?
- না কিছুনা । (থতমত খেয়ে যায় প্রিতু )
- হা হা হা
( প্রিতু র মনে হয় তার সামনে সৌন্দর্য এর দেবী দাড়ায়ে আছে )
সে বলল
- চলেন চা খাই ।
- হ্যা চলেন ।
(হাটতে লাগল তারা )
- তারপর আপনার তো শেষ এর দিকে পড়াশুনা ?
- হ্যা । আর দুই সেমি।
- ভালোই । তারপর কি জব ?
- না ।
- তাহলে ?
- বিয়ে করবো ।
- কি ?? হা হা হা হা
- আজব তো ? হাসতেছেন কেন ?
- পাত্রী রেডি ?
- না । সময় হলে কি আর অভাব হবে ?
প্রিতুর মনে হলো অনেষ্বার মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেল । কিন্তু সে বুঝতে দিতে চাচ্ছেনা ।
প্রিতু টপিক চেঞ্জ করল ।
- আপনার ফ্যামিলি তে কে কে আছেন ?
- বাবা , মা , বড় ভাই , আমি । আপনার ?
- সেম ।
- গ্রেট ।
প্রিতু চা এর অর্ডার দেয় । চা দিয়ে গেলে , প্রিতু একটা ব্যান্সন দিতে বলল ।
অনেষ্বা বলল
- স্মোক করা উচিত না
- হ্যা ?
- হুম ।
- কেউ মানা করার নাই তো তাই আর ছাড়া হয়নি
- ও । আমি গন্ধ সহ্য করতে পারিনা ।
- ও । ঠিক আছে ।
( প্রিতু সিগারেটের অর্ডার টা ক্যান্সেল করলো )
অনেষ্বা বলল
- থ্যাঙ্কস
চা শেষ করল দু জনেই । প্রিতু জিজ্ঞেসা করে অনেষ্বা কে
- হাতে সময় আছে ?
- কেন ?বলুন তো ?
- না এমনি । ওইদিকে হাটতাম । আপনার সময় থাকলে ।
- চলুন ।
দু জনে ইকবাল রোডে হাটছে ।
প্রিতু – এই রোডে হাটতে আমার খুব ভালো লাগে । সোডিয়াম আলো খুব প্রিয় ।
অনেষ্বা – তাই ?
- হুম ।
- এইভাবে কোন দিন হাটা হয়নি আমার ।
- তাই ?
- হুম । থ্যাঙ্কস ।
- থ্যাঙ্কস কেন ?
- এই যে নিয়ে এলেন । আপনি না আনলে তো আর আমার আসা হত না ।
- ও । হাহহা । ব্যাপার না :D
প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তারা হাটে ধীরে ধীরে ।
অনেষ্বা বলে ওঠে
- আমার যে এখন যেতে হয় :(
- ও হ্যা । আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ।
- চলুন ।আপনাকে পৌছে দিয়ে আসি ।
- আচ্ছা চলুন ।
( প্রিতু ,অনেষ্বা কে বাসায় এগিয়ে দিয়ে যেতে লাগে । অনেষ্বা ডাক দেয় )
- প্রিতু ?
- হ্যা ?
- একটা কথা রাখবেন ?
- বলেন ।
- স্মোক করা ছেড়ে দিবেন ?
প্রিতু খুশি , দুখী দুটোই হয় । খুশি হয় অনেষ্বা বলেছে ছাড়তে এই জন্য , দুখী হয় সিগারেট ছেড়ে দিতে হবে এই জন্য ।
- ওকে ।চেষ্টা করবো ।
- প্রমিজ ?
- উমম ওকে ।
- থ্যাঙ্কস
- ফর হোয়াট ?
- নাথিং ।
- হাহ ?
- আর একটা কথা .........
- বলেন ম্যাম?
- আপনি করে বলা যাবেনা হিহিহি
- যো আজ্ঞা ম্যাম ।
- হিহিহি
- তুমি তো অনেক ভালো ছেলে । যা বললাম তাই হ্যা হ্যা করে গেলে । আমি কিন্তু মিথ্যা পছন্দ করিনা ।
- আমিও ।
- বাই ।
- বাই । ভালো থাকো ।
- তুমিও ।
প্রিতু , অনেষ্বা কে রেখে বাসায় চলে আসে । আজ তার অনেক খুশি লাগছে । রাতে প্রিতু কল দিয়ে অনেষ্বার ফেবু আইডি নেয় ।প্রোফাইল এর দেয়া সব গুলো ছবি দেখে সে । প্রিতুর আজ রাতে ঘুম আসবেনা :D
দিনের পর দিন তাদের বন্ধুত্ব আরো গভীর হয় । তারা একে অপর কে খুব ভালো করে বুঝতে পারে । ৮ টা মাস পার হয়ে যায় । প্রিতু নতুন জব এ ঢুকেছে । ভালোই যাচ্ছিল সব ।
একদিন,
প্রিতু বিকালে কল দেয় অনেষ্বা কে ।
অনেষ্বা – হ্যালো ।
প্রিতু – কোথায় ?
- বাসায় । তুমি ?
- আসলাম অফিস থেকে ।
- খেয়েছো ?
- না ।
- কেনো ?
- এমনি ।
- এমনি কেউ খায় না ? আমি রাতে খাব না আজ ।
- কেনো ?
- এমনি ।
- ঢং না ?
- তুমি করলে কিছুনা ।আমি করলে ঢং ?
- ওকে । খাচ্ছি । কথা হচ্ছে । একটু দরকার ছিল ।বাহিরে বের হতে পারবা ?
- হ্যা ।
- ৫ টার দিকে রেডি হয়ে থেকো । তোমাকে পিক করে সরোবর যাব ।
- সরোবর ? হঠাত ?
- আহা ।
- আচ্ছা বাবা । ঠিক আছে ।
- হুম । কল দিচ্ছি । ৫ টায় ।
- অকে । বাই
- বাই ।
৫ টার দিকে অনেষ্বা কে নিয়ে প্রিতু সরোবর যায় ।
প্রিতু – আজ কত তারিখ জানো ?
অনেষ্বা – হুম । ১৭ মার্চ
- মনে রেখ তারিখ টা । পরে কাজে দিবে ।
- ওকে । বাট কেনো কাজে দিবে ?
- কিছুক্ষন পর বুঝবা ।
- ওকে ।
প্রিতু পকেট থেকে একটা কালো গোলাপ বের করে
- ভালোবাসি ।
- কি ?
- হুম । ভালোবাসি ।
অনেষ্বা তাকিয়ে থাকে প্রিতুর দিকে । প্রিতু ও তাকিয়ে থাকে অনেষ্বার দিকে ।
- কিছু বলবেনা ?
- এতো দিনে সাহস হলো বলার ?
- কেন ? দেরী করে ফেললাম ?
- করেছো । কিন্তু খুব বেশি না ।
প্রিতু হাসছে
অনেষ্বা - ভালোবাসি ।
সরোবরে আজ মানুষ না থাকলে প্রিতু , অনেষ্বা কে তার বুকের হার্টবিট শোনাতো । কিন্তু পারলোনা অগনিত মানুষ থাকার কারনে । অনেষ্বার চোখে পানি চিক চিক করছে সূর্যের আলোয় ।খারাপ লাগছেনা । প্রিতু চখের পানি মুছে দিয়ে বলে
- কান্না যা করার করে নাও । আর কানতে পারবা না এর পরে ।
- ঠিক আছে । কিন্তু তোমার জন্য কানতে হলে মাইর খাবা । আর কি ? :D
- আহা । প্রথম দিনেই এই অবস্থা । বাকি দিন তো পড়েই আছে :D
- হিহিহিহিহি

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:০১

ওমেরা বলেছেন: ধন্যবাদ ।

১০ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:০১

কল্পকাব্য বলেছেন: :P :P :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.