![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্লিনিকে দিতীয় বার ভর্তি হতে হলো। কারনটা রাজনৈতিক। না আমরা কেউ রাজনীতি করি না। তখন দেশে খুব রাজনৈতিক অস্থিরতা। হরতালের পর হরতাল। ক্লিনিক আগেই ঠিক করা ছিল, চিকিৎসকের সুবিধা অনুযায়ী। প্রয়োজনে পায়ে হেটে যেন চিকিৎসক আসতে পারে। তবে আমার বাসা থেকে বেশ দুরে। চিকিৎসকের দেওয়া কাঙ্খিত সময়ের সাত দিন আগে বা পরে ভূমিষ্ঠ হওয়াটা স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিক সময়ে যখন হরতাল দিল, ঝুকি না নিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম। তবে গর্ভাবস্থা আর হরতাল দুটোই নিরুত্তাপে কাটলো। তাই হরতাল শেষে বাড়ি চলে এসেছিলাম। এরপর কাঙ্খিত তারিখ পার করে আবার ভর্তি হলাম।
সারাটাদিন আমাকে আর অনাগত ভ্রুণকে পর্যবেক্ষণ করা হলো, সবই স্বাভাবিক। ঠিক হলো আগামীকালের মধ্যে অবস্থার অগ্রগতি না হলে দুপুরে অপারেশন করা হবে। যেই নার্স ভ্রুণের রিৎকম্পন দেখছিলেন রাত দশটার পর তিনি চলে গেলেন, আপন স্বজনরাও বাড়ি গেলেন।
অপেক্ষমান নব্ব পিতা স্বয়ং চিকিৎসক হওয়াতে রাত গভীর হলে তিনি নিজেই ভ্রুণের রিৎকম্পন পর্যবেক্ষণ করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভ্রু কুঞ্চিত হলো। কারণ জিগগেস করাতে জানলাম ভ্রুণের রিৎস্পন্দন অনিয়মিত হচ্ছে। এর অর্থ ভ্রুণের রক্ত চলাচল ঠিকমত হচ্ছেনা। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলাম দুজনেই। চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঠিক হলো ভোর পাচটায় অপারেশন।
আপন স্বজনরা আসার আগেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পড়তে হলো। আমি অবশ্য তখন অজানা আশঙ্কায় কিছুই খেয়াল করতে পারছিলাম না।
এক সময় নবজাতকের চিৎকারে পুরোঘর ভরে গেলো। চিকিৎসক জানালেন মেয়ে হয়েছে। সন্তানের লিঙ্গ নিয়ে আমার ভাবনা ছিল না, আমি ব্যস্ত ছিলাম সুস্থতা নিয়ে।
জানলাম সন্তান সুস্থ, আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে কাদছে। আমার পেট মোচরায় বমি আসছে। ঔষধের প্রভাবে কান্না শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম ভাঙ্গলে শুনলাম নবজাতকের বড়ফুফু আর বড়খালার মধ্যে কথা হচ্ছে । বড়ফুফু বড়খালাকে মধু খাওয়ানোর কথা বলছেন। বড়খালা মুরুব্বি হিসাবে বড়ফুফুকে প্রথমে খাওয়াতে বলছেন। ফুফু আর খালা মধু খাওয়াচ্ছেন। শব্দে ঘর ভরে উঠেছে।
সেই চাকুম চুকুম শব্দ করে মধু খাওয়া সন্তান কে সুস্থ্য শরীর আর মন দিয়ে এই দিনে আমাদের কাছে আল্লাহ আমানত করে পাঠিয়েছিলেন।
শুভ জন্মদিন আল্লাহর আমানত।
©somewhere in net ltd.