নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধু হও, সাধু সাজিও না

কথামৃত

ক্রোধে পাপ, ক্রোধে তাপ, ক্রোধে কু্লক্ষয়

কথামৃত › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরমাণুর অধিকাংশ জায়গা ফাঁকা কেন?

০৪ ঠা মে, ২০২৫ দুপুর ১:২৪

পরমাণুর অধিকাংশ জায়গা ফাঁকা থাকার কারণ নিয়ে আলোচনায় যেতে হলে আমাদের নিউক্লিয়াস, ইলেকট্রনের স্থানিক বিন্যাস, কুলম্ব বল এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শক্তিশালী গাণিতিক কাঠামোর বিশ্লেষণ করতে হবে।

প্রথমেই আসি পরমাণুর গঠনে। একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস, যার ব্যাসার্ধ সাধারণত 10^(-15) মিটার (ফেম্টো মিটার), অত্যন্ত ক্ষুদ্র। অন্যদিকে, পরমাণুর পুরো ব্যাসার্ধ প্রায় 10^(-10) মিটার (আঙ্গস্ট্রম)। এই দুই মাত্রার অনুপাত বিশ্লেষণ করলে পাই,

R_atom / R_nucleus ≈ 10^(-10) / 10^(-15) = 10^5

এই তুলনা থেকে দেখা যায়, নিউক্লিয়াসের তুলনায় পরমাণুর আকার প্রায় এক লক্ষ গুণ বড়। অর্থাৎ, পরমাণুর অধিকাংশ জায়গাই ফাঁকা।

কিন্তু নিউক্লিয়াসের চারপাশের এই ফাঁকা জায়গায় ইলেকট্রন কীভাবে ছড়িয়ে থাকে? এর ব্যাখ্যা পেতে হলে শ্রোডিঙ্গার সমীকরণ ব্যবহার করতে হবে। শ্রোডিঙ্গার সমীকরণ হল,

-ħ²/(2m) * ∇²ψ + Vψ = Eψ

এখানে, ħ হলো h/(2π), যেখানে h হলো প্ল্যাংকের ধ্রুবক (6.626 × 10^(-34) Js), m হলো ইলেকট্রনের ভর (9.109 × 10^(-31) kg), V হলো নিউক্লিয়াস এবং ইলেকট্রনের মধ্যে কুলম্ব বলের জন্য সম্ভাব্য শক্তি এবং E হলো সিস্টেমের মোট শক্তি। ψ হলো ইলেকট্রনের ওয়েভ ফাংশন যা ইলেকট্রনের সম্ভাব্য অবস্থান বর্ণনা করে।

এই সমীকরণ সমাধান করে পাই যে ψ একটি এক্সপোনেনশিয়াল ফাংশন, যা নিউক্লিয়াস থেকে দূরে গিয়ে ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়। কিন্তু এটি কখনো শূন্য হয় না। এই কারণে ψ², যা ইলেকট্রনের অবস্থানের সম্ভাবনা ঘনত্ব প্রকাশ করে, নিউক্লিয়াসের চারপাশে বিস্তৃত হয়ে থাকে। এই সম্ভাবনা ঘনত্ব আমাদের বলে দেয়, ইলেকট্রন পুরো পরমাণুতে ছড়িয়ে থাকে এবং নির্দিষ্ট কোনো স্থানে সীমাবদ্ধ নয়।

এখন আমরা কুলম্ব বলের দিকে নজর দিই। নিউক্লিয়াসের প্রোটন এবং ইলেকট্রনের মধ্যে আকর্ষণশক্তি কুলম্ব বল দ্বারা নির্ধারিত হয়। এই বলের গাণিতিক রূপ হল,

F = k * (q1 * q2) / r²

এখানে, k হলো কুলম্ব ধ্রুবক (8.987 × 10^9 Nm²/C²), q1 এবং q2 হলো প্রোটন এবং ইলেকট্রনের চার্জ (প্রতিটি 1.602 × 10^(-19) C), এবং r হলো তাদের মধ্যে দূরত্ব। এই বল ইলেকট্রনকে নিউক্লিয়াসের দিকে আকর্ষণ করে। তবে একই সাথে ইলেকট্রনের গতিশক্তি এবং তরঙ্গ প্রকৃতিও কাজ করে।

ডি ব্রোগলি সমীকরণ অনুযায়ী, ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য λ নির্ধারিত হয়,

λ = h / p

এখানে p হলো ভরবেগ। যেহেতু ইলেকট্রনের ভর অত্যন্ত কম, তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য বড় হয়। এর মানে ইলেকট্রনের তরঙ্গ প্রকৃতি তাকে নিউক্লিয়াসের সাথে সম্পূর্ণভাবে মিলিত হতে বাধা দেয় এবং একটি বৃহৎ স্থানিক অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়।

তবে ইলেকট্রন যদি নিউক্লিয়াসের খুব কাছে আসার চেষ্টা করে, তখন হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি কার্যকর হয়। এই নীতি বলে,

∆x * ∆p ≥ ħ / 2

যদি ইলেকট্রনের অবস্থান (∆x) খুব ছোট হয়, অর্থাৎ এটি নিউক্লিয়াসের খুব কাছে থাকে, তাহলে ভরবেগের অনিশ্চয়তা (∆p) অনেক বেশি হয়ে যায়। এর ফলে ইলেকট্রন একটি উচ্চ ভরবেগ নিয়ে নিউক্লিয়াস থেকে দূরে সরে যায়। এই ভারসাম্যের কারণে ইলেকট্রন কখনো নিউক্লিয়াসে ধসে পড়ে না।

এখন পরমাণুর শক্তিস্তর বিশ্লেষণ করা যাক। হাইড্রোজেন পরমাণুর জন্য ইলেকট্রনের শক্তি স্তর নির্ধারিত হয়,

E_n = -13.6 Z² / n² eV

এখানে Z হলো পারমাণবিক সংখ্যা এবং n হলো কোয়ান্টাম সংখ্যা। ইলেকট্রন সবসময় একটি নির্দিষ্ট শক্তি স্তরে থাকে এবং নিম্ন শক্তি স্তরে যেতে চাইলে ফোটন নির্গত করে। কিন্তু এটি কখনোই সম্ভাব্য শক্তির সর্বনিম্ন মানে (যেমন -∞) যেতে পারে না, কারণ এটি নিউক্লিয়াসের সাথে ধসে পড়ার সমতুল্য হবে, যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়মের পরিপন্থী।

অতএব, পরমাণুর অধিকাংশ জায়গা ফাঁকা থাকার প্রধান কারণ ইলেকট্রনের ঢেউ প্রকৃতি এবং হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি। শ্রোডিঙ্গার সমীকরণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ψ ফাংশন ইলেকট্রনের সম্ভাব্য অবস্থানকে পুরো পরমাণুর আকার জুড়ে ছড়িয়ে দেয়। নিউক্লিয়াস অত্যন্ত ছোট এবং ঘন হলেও ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও কুলম্ব বলের ভারসাম্য তাকে একটি বৃহৎ ফাঁকা স্থান তৈরি করতে বাধ্য করে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.