নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধু হও, সাধু সাজিও না

কথামৃত

ক্রোধে পাপ, ক্রোধে তাপ, ক্রোধে কু্লক্ষয়

কথামৃত › বিস্তারিত পোস্টঃ

তমোপদার্থ কী এবং এটি মহাবিশ্বের বেশিরভাগ ভর কেন গঠন করে? এটি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

০৪ ঠা মে, ২০২৫ দুপুর ১:২৫

তমোপদার্থ নিয়ে কথা বলা শুরু করলেই একটা প্রশ্ন মাথায় আসে, "এটা তো আমরা দেখতেই পাই না, তাহলে এটাকে নিয়ে এত আলোচনা কেন?" একটু ধৈর্য ধরুন, গল্পটা জমজমাট।

তমোপদার্থ এমন এক জিনিস যা আছে, কিন্তু চোখে ধরা পড়ে না। এমনকি কোনো আলো বিকিরণও করে না, শোষণও করে না। তবে মজার ব্যাপার হলো, এর উপস্থিতি গ্যালাক্সির ঘূর্ণন, মহাকর্ষীয় লেন্সিং, আর মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বিকিরণের পর্যবেক্ষণ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়। এর প্রমাণের পেছনে আছে অঙ্কের এক বিশাল কারুকাজ। চলুন ব্যাপারটিকে একটু বিস্তারিতভাবে দেখি।

প্রথমে চলুন গ্যালাক্সির ঘূর্ণন নিয়ে কিছু কথা বলি। গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে একটি দূরত্ব r-এ ভরের ঘনত্ব r(r) ধরি। ভর কীভাবে r পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে তা বোঝার জন্য আমরা একটি সমীকরণ ব্যবহার করি।

এটি হলো, M(r) = ∫(0 থেকে r) 4π r'^2 r(r';) dr'।

এখানে r(r';) হলো r' দূরত্বে ভরের ঘনত্ব, আর r' হলো ইন্টিগ্রেশনের চলমান ভেরিয়েবল। অর্থাৎ, r পর্যন্ত সমস্ত ভরের যোগফল হিসেব করা হচ্ছে। এবার আসি মহাকর্ষীয় বলের প্রসঙ্গে। নিউটনের সূত্র অনুযায়ী, এই ভরের কারণে r দূরত্বে একটি ভরের ওপর মহাকর্ষীয় বল হবে:

F = G M(r) m / r^2,

যেখানে G হলো মহাকর্ষ ধ্রুবক, আর m হলো বস্তুটির ভর। যদি আমরা বলি বস্তুটি একটি বৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরছে আর তার গতি v(r), তাহলে তার কেন্দ্রাতিগ বল হবে:

Fc = m v(r)^2 / r

এখন এই দুই বল সমান হলে আমরা পাই

m v(r)^2 / r = G M(r) m / r^2

এখানে দুই পাশে m বাতিল করে পাই

v(r)^2 = G M(r) / r

এখন এই সমীকরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে r দূরত্বে একটি বস্তুর ঘূর্ণন বেগ v(r) মূলত M(r) এবং r-এর ওপর নির্ভরশীল।

কিন্তু সমস্যা হলো, যদি M(r) শুধুমাত্র দৃশ্যমান পদার্থ দিয়ে গঠিত হতো, তাহলে r-এর সঙ্গে সঙ্গে r(r) খুব দ্রুত কমে যেত, আর সেই সঙ্গে v(r) কমে যেত। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি গ্যালাক্সির প্রান্তেও v(r) প্রায় ধ্রুবক থাকে। এটি প্রমাণ করে যে M(r)-এ এমন কিছু ভর আছে যা দৃশ্যমান নয়। এই অদৃশ্য ভরই হলো তমোপদার্থ।

তমোপদার্থ কীভাবে ছড়িয়ে আছে সেটা বোঝার জন্য আমরা সাধারণত নাভো-ফ্রেঙ্ক-হোয়াইট প্রোফাইল ব্যবহার করি। এটি একটি জনপ্রিয় ভর-বণ্টন প্রোফাইল, যার রূপ হলো

r(r) = r_0 / ((r / r_0) * (1 + r / r_0)^2)

যেখানে r_0 হলো কেন্দ্রে ভরের ঘনত্ব এবং r_0 হলো একটি স্কেল প্যারামিটার। এই প্রোফাইলটি বলে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ঘনত্ব বেশি থাকে এবং প্রান্তে ধীরে ধীরে কমে। এবার মোট ভরের জন্য সমীকরণ হবে:

M(r) = ∫(0 থেকে r) 4π r'^2 (r_0 / ((r'/r_0) * (1 + r'/r_0)^2)) dr'

এই সমীকরণ সমাধান করা সহজ নয়, কারণ এটি একটি জটিল ইন্টিগ্রাল। বিজ্ঞানীরা এটি সমাধান করতে হাইপারজিওমেট্রিক ফাংশনের মতো সংখ্যাত্মক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এবার আসুন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা নিয়ে কিছু কথা বলি। তার বিখ্যাত ক্ষেত্র সমীকরণ হলো:

R_uv - (1/2) g_uv R + Λ g_uv = (8π G / c^4) T_uv

এখানে R_uv হলো রিচি টেনসর, যা স্থান-কাল বক্রতার পরিমাপ। g_uv হলো মেট্রিক টেনসর, যা স্থান-কাল গঠনের বর্ণনা দেয়। R হলো স্কেলার কার্ভেচার, আর Λ হলো কসমোলজিকাল ধ্রুবক। T_uv হলো শক্তি-ভর টেনসর, যা মহাবিশ্বে ভর এবং শক্তির বণ্টন বোঝায়। তমোপদার্থ এই শক্তি-ভর টেনসরে একটি অতিরিক্ত উৎস তৈরি করে, যার ফলে স্থান-কাল বেঁকে যায়।

তমোপদার্থের প্রভাব শুধু স্থান-কালের বক্রতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণেও বড় ভূমিকা পালন করে। ফ্রিডম্যান সমীকরণে আমরা দেখি:

H(t)^2 = (8π G / 3) (r_matter + r_radiation + r_dark) - k / a^2 + Λ / 3

এখানে H(t) হলো হাবল প্যারামিটার, r_matter হলো দৃশ্যমান ভরের ঘনত্ব, r_radiation হলো বিকিরণের ঘনত্ব, এবং r_dark হলো তমোপদার্থের ঘনত্ব। তমোপদার্থের ঘনত্ব সময়ের সঙ্গে কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা বুঝতে আমরা ভরের সংরক্ষণ সূত্র ব্যবহার করি। সূত্রটি বলে:

d(r_dark a^3) / dt = 0

এটি সমাধান করলে পাই:

r_dark = r_dark0 / a^3

এর মানে হলো, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হলেও তমোপদার্থের ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমে। তবে এটি বিকিরণের ঘনত্বের মতো দ্রুত কমে না। তমোপদার্থ মহাবিশ্বের বড় কাঠামো তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি গ্যালাক্সি এবং গ্যালাক্সি ক্লাস্টারকে একত্রিত করে, এবং এই বড় কাঠামোগুলোকে স্থিতিশীল রাখে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.