নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধু হও, সাধু সাজিও না

কথামৃত

ক্রোধে পাপ, ক্রোধে তাপ, ক্রোধে কু্লক্ষয়

কথামৃত › বিস্তারিত পোস্টঃ

Grand Unified Theory কি?

০৪ ঠা মে, ২০২৫ দুপুর ১:২৭

গ্র্যান্ড ইউনিফাইড থিওরি (GUT) মূলত তড়িৎচুম্বকীয় বল, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল এবং সবল নিউক্লিয়ার বলকে একটি বৃহত্তর কাঠামোতে একীভূত করার তত্ত্ব। স্ট্যান্ডার্ড মডেলে এই তিনটি বলকে ভিন্ন গেজ গ্রুপ দিয়ে বর্ণনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, তড়িৎচুম্বকীয় বলের ক্ষেত্রে গেজ গ্রুপ U(1), দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের জন্য SU(2), এবং সবল নিউক্লিয়ার বলের জন্য SU(3)। এই কাঠামোটি একত্রে লেখা হয় SU(3) × SU(2) × U(1)। ধারণা করা হয়, GUT স্কেলের উচ্চ শক্তিতে এই তিনটি বল একটি বৃহত্তর গেজ গ্রুপের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে, যেমন SO(10) বা E6।

ল্যাগ্রেঞ্জিয়ান এমন একটি গাণিতিক ফাংশন, যা কোনো সিস্টেমের গতিশীল আচরণকে প্রকাশ করে। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মোট ল্যাগ্রেঞ্জিয়ানকে কয়েকটি অংশে ভাগ করা যায়: গেজ ক্ষেত্রের জন্য, ফার্মিয়ন কণার জন্য, হিগস ক্ষেত্রের জন্য এবং তাদের ইন্টারঅ্যাকশনের জন্য। গেজ ফিল্ডের জন্য ল্যাগ্রেঞ্জিয়ানের সাধারণ রূপ হলো L_gauge = -(1/4) Fμν^a Fμν^a, যেখানে Fμν হলো গেজ ফিল্ড টেনসর।

গেজ ফিল্ড টেনসর Fμν^a এর পূর্ণ রূপ হলো Fμν^a = ∂μ Aν^a - ∂ν Aμ^a + g f^abc Aμ^b Aν^c। এখানে ∂μ হলো আংশিক ডেরিভেটিভ, যা স্থান ও সময়ের উপর ক্ষেত্রের পরিবর্তন নির্দেশ করে। Aμ^a হলো গেজ ভেক্টর ফিল্ড এবং g হলো গেজ কাপলিং কনস্ট্যান্ট, যা ইন্টারঅ্যাকশনের শক্তি নির্দেশ করে। f^abc হলো স্ট্রাকচার কনস্ট্যান্ট, যা গেজ গ্রুপের অভ্যন্তরীণ গঠনকে প্রকাশ করে।

U(1) গেজ গ্রুপের ক্ষেত্রে f^abc সবসময় শূন্য হয়, কারণ এখানে ফোটন কোনো নিজস্ব ইন্টারঅ্যাকশন করে না। তাই U(1)-এর ক্ষেত্রে Fμν = ∂μ Aν - ∂ν Aμ হয়, যা ক্লাসিক্যাল ম্যাক্সওয়েল টেনসরের সমতুল্য। তবে SU(2) গেজ গ্রুপের ক্ষেত্রে তিনটি গেজ ভেক্টর ফিল্ড থাকে: W1, W2 এবং W3, যা নিজেদের মধ্যে ইন্টারঅ্যাকশন করে দুর্বল নিউক্লিয়ার বল তৈরি করে। অন্যদিকে, SU(3) গেজ গ্রুপে আটটি গেজ ভেক্টর ফিল্ড বা গ্লুয়ন থাকে, যা কোয়ার্কের মধ্যে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার ইন্টারঅ্যাকশন তৈরি করে। SU(3)-এর ক্ষেত্রে f^abc শূন্য নয়, কারণ গ্লুয়নরা নিজেদের মধ্যেও ইন্টারঅ্যাকশন করতে পারে। এটিই কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্স (QCD)-এর মূল বৈশিষ্ট্য।

হিগস ক্ষেত্র সিমেট্রি ব্রেকিংয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের হিগস ক্ষেত্রটি SU(2) × U(1) ডবলেট আকারে প্রকাশিত হয়: Φ = (Φ+, Φ0)। এখানে Φ+ হলো চার্জযুক্ত অংশ এবং Φ0 হলো নিরপেক্ষ অংশ। ভ্যাকুয়াম অবস্থায় Φ+ এর মান শূন্য হয় এবং Φ0 ভ্যাকুয়াম এক্সপেকটেশন ভ্যালু (VEV) ধারণ করে v/√2 আকারে। অর্থাৎ Φ = (0, v/√2)।

এই ভ্যাকুয়াম এক্সপেকটেশন ভ্যালু SU(2) × U(1) সিমেট্রিকে ভেঙে U(1) তড়িৎচুম্বকীয় সিমেট্রি রেখে দেয়। ফলস্বরূপ W বোজনের ভর হয় m_W = g v / 2 এবং Z বোজনের ভর হয় m_Z = v / 2√(g² + g'²)। এখানে g হলো SU(2)-এর কাপলিং কনস্ট্যান্ট এবং g' হলো U(1)-এর কাপলিং কনস্ট্যান্ট। ফোটনের ভর শূন্য থাকে, কারণ এটি U(1) তড়িৎচুম্বকীয় সিমেট্রির অংশ।

গ্র্যান্ড ইউনিফাইড থিওরির একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস হলো প্রোটনের ক্ষয়। প্রোটন মূলত কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত, যা শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বলের মাধ্যমে একত্রে বাঁধা থাকে। কিন্তু GUT অনুসারে, SU(3) × SU(2) × U(1) কাঠামোর উপরে একটি বৃহত্তর গেজ গ্রুপ থাকলে অতিরিক্ত ভারী গেজ বোজন, যেমন X এবং Y বোজোন, উপস্থিত হতে পারে। এই বোজোনগুলো প্রোটনকে ক্ষয় করতে পারে। একটি সম্ভাব্য ক্ষয়ের প্রতিক্রিয়া হলো p → e⁺ + π⁰, যেখানে p হলো প্রোটন, e⁺ হলো পজিট্রন এবং π⁰ হলো নিউট্রাল পাই-মেসন।

প্রোটনের গড় আয়ু T_p নির্ভর করে GUT স্কেলের শক্তি M_GUT এর উপর। আনুমানিক সমীকরণ হলো T_p ∝ (M_GUT)^4 / (M_proton)^5, যেখানে M_proton হলো প্রোটনের ভর। GUT স্কেল যত বেশি হয়, প্রোটনের ক্ষয়ের হার তত কম হয়, অর্থাৎ প্রোটন দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে এখনো পরীক্ষাগারে প্রোটনের ক্ষয় পর্যবেক্ষণ করা যায়নি, তাই GUT এখনও প্রমাণিত হয়নি।

মহাকর্ষকে GUT কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে কোয়ান্টাম গ্রাভিটির তত্ত্ব প্রয়োজন। স্ট্রিং থিওরি এই সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে। স্ট্রিং থিওরি অনুযায়ী, মৌলিক কণাগুলো আসলে একমাত্রিক স্ট্রিং, যা বিভিন্ন মোডে কম্পিত হয়। প্রতিটি কম্পনের মোড বিভিন্ন ধরনের কণার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। স্ট্রিংয়ের শক্তি প্রকাশ করা হয় E_n = (n + 1/2) ħ ω আকারে, যেখানে n হলো কম্পনের সংখ্যা, ħ হলো পরিবর্তিত প্ল্যাঙ্ক কনস্ট্যান্ট এবং ω হলো কম্পাঙ্ক।

স্ট্রিংয়ের টেনশন T_s নির্ণীত হয় T_s = 1 / (2π α';) আকারে, যেখানে α' হলো স্ট্রিং টেনশন প্যারামিটার। স্ট্রিং তত্ত্বের উন্নত সংস্করণ হলো M-থিওরি, যা ১১ মাত্রার স্থানকালের ধারণা দেয়। এখানে স্ট্রিং ছাড়াও উচ্চ মাত্রার মেমব্রেন নামক অবজেক্ট থাকতে পারে।

গ্র্যান্ড ইউনিফাইড থিওরি এমন একটি তত্ত্ব, যা তড়িৎচুম্বকীয়, দুর্বল এবং সবল নিউক্লিয়ার বলকে একীভূত করে একটি একক কাঠামো তৈরি করতে চায়। এটি প্রমাণিত হলে মহাবিশ্বের উৎপত্তি, বিকাশ এবং কাঠামো সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা পাওয়া যাবে। তবে কোয়ান্টাম বল এবং মহাকর্ষকে একই কাঠামোয় আনতে আরও উন্নত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা প্রয়োজন। স্ট্রিং থিওরি বা M-থিওরির মতো তত্ত্ব এই পথে আমাদের এগিয়ে নিতে পারে, তবে সত্যিকারের "থিওরি অফ এভরিথিং" প্রতিষ্ঠার জন্য বিজ্ঞানীদের আরও অনেক কাজ বাকি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.