![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যখন কেউ মারা যায়, শরীরের ভেতরের প্রক্রিয়া, বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাস (রেসপিরেশন), বন্ধ হয়ে যায়। আপনার জীবিত শরীর গ্লুকোজ (C6H12O6) আর অক্সিজেন (O2) ব্যবহার করে শক্তি (ATP), পানি (H2O), আর কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) তৈরি করে। এই রাসায়নিক প্রক্রিয়া আপনাকে জীবিত রাখে।
C6H12O6 + 6O2 → 6CO2 + 6H2O + শক্তি (ATP)
কিন্তু যখন শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়, তখন ATP তৈরি হওয়া থেমে যায়। শরীরের কোষগুলো, যেগুলো বেঁচে থাকার জন্য এই শক্তির উপর নির্ভরশীল, ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। কোষের ভেতরের এনজাইমগুলো, যেমন হাইড্রোলেজ, নিজের কোষের ঝিল্লি বা মেমব্রেন গলাতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে অটোলাইসিস।
অক্সিজেনের অভাবে, শরীরের টিস্যুগুলো অ্যানায়রোবিক (অক্সিজেন ছাড়া) অবস্থায় চলে যায়। পেটের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া তখন শর্করা ভেঙে গ্যাস তৈরি করে, যেমন মিথেন (CH4), হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S), আর অ্যামোনিয়া (NH3)। এজন্য পচা শরীরের গন্ধ এতটা তীব্র।
শর্করা, বিশেষ করে গ্লুকোজ, অ্যানায়রোবিক ফার্মেন্টেশনে ভেঙে যায় এইভাবে:
C6H12O6 → 2C2H5OH + 2CO2
প্রোটিন, যেগুলো অ্যামাইনো অ্যাসিড দিয়ে তৈরি, ভেঙে অ্যামাইন তৈরি করে। এই অ্যামাইন পরে অ্যামোনিয়া বা অন্যান্য নাইট্রোজেন যৌগে পরিণত হয়। আপনার শরীরের নাইট্রোজেন, শেষমেশ নাইট্রেট (NO3-) হয়ে মাটিতে মিশে যায়, যা গাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
শরীরের চর্বি বা ফ্যাট, যেগুলোকে বলে ট্রাইগ্লিসারাইড (C55H98O6), গ্লিসারল আর ফ্যাটি অ্যাসিডে ভেঙে যায়। ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো অক্সিডাইজড হয়ে অ্যালডিহাইড আর কিটোন তৈরি করে, যেগুলো খুবই তীব্র গন্ধযুক্ত।
C55H98O6 + H2O → গ্লিসারল (C3H8O3) + ফ্যাটি অ্যাসিড
হাড়ের কথা যদি বলি, আপনার হাড় প্রধানত ক্যালসিয়াম ফসফেট (Ca10(PO4)6(OH)2) দিয়ে তৈরি। যদিও এগুলো বেশ শক্ত, সময়ের সাথে মাটির অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে ফসফেট আয়নে ভেঙে যায়। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত আপনার হাড় টিকে থাকতে পারে, তবে একদিন সেটাও প্রকৃতির অংশ হয়ে যাবে।
আপনার ডিএনএও সময়ের সাথে সাথে ভেঙে যায়। এটি নিউক্লিওটাইডে বিভক্ত হয়, যা পরে শর্করা, ফসফেট, আর নাইট্রোজেন বেসে ভেঙে যায়। এই বেসগুলো, যেমন অ্যাডেনিন (C5H5N5), পরে ইউরিয়া (NH2CONH2) বা অ্যামোনিয়াতে পরিণত হয়।
তবে এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে আপনার চেতনা বা "আপনি" থাকেন না। কারণ মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো, যেগুলো ATP আর ইলেকট্রোকেমিক্যাল গ্রেডিয়েন্টের উপর নির্ভরশীল, তা শক্তি না পেলে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যখন এই প্রক্রিয়া থেমে যায়, তখন চেতনাও থেমে যায়।
সুতরাং, মৃত্যুর পরে কি জীবন থাকে? আপনার দেহের পরমাণুগুলো ঠিকই থেকে যায়। কার্বন (C) কার্বন চক্রে, নাইট্রোজেন (N) নাইট্রোজেন চক্রে মিশে যায়। হয়তো একদিন আপনি মাটিতে, বাতাসে, বা কোনো গাছে স্থান পাবেন। কিন্তু "আপনি," অর্থাৎ যে ব্যক্তি চিন্তা করে, কথা বলে, তা আর থাকবে না।
মৃত্যু আসলে প্রকৃতির এক বিশাল রসায়ন প্রক্রিয়া। হাইড্রোলাইসিস, ফার্মেন্টেশন, অক্সিডেশন ইত্যাদি সবই চলে। শরীর পুনঃচক্রায়িত হয়, আর জীবন আপনাকে ছাড়াই এগিয়ে যায়। তাই জীবিত থাকতে আপনার দেহের রসায়নকে উপভোগ করুন, কারণ মৃত্যুর পর যা থাকে তা শুধুই এনট্রপি আর ক্ষয়। Cheers!
©somewhere in net ltd.