নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধু হও, সাধু সাজিও না

কথামৃত

ক্রোধে পাপ, ক্রোধে তাপ, ক্রোধে কু্লক্ষয়

কথামৃত › বিস্তারিত পোস্টঃ

শূন্য আসলে শূন্য নয়

২১ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:৪০

শূন্য আসলে শূন্য নয়। আপনি ভাবছেন, শূন্য মানে তো কিছুই নেই। কিন্তু এই 'কিছুই নেই' এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে সবচেয়ে অদ্ভুত সব রহস্য। আমরা যদি বিজ্ঞানের চোখ দিয়ে শূন্যকে দেখি, তাহলে সে হয়ে ওঠে এক সৃষ্টিশীল গোলযোগ, এক ক্যাওস, এক নিরব ঘূর্ণাবর্ত। চলুন, এই শূন্যর ভেতরে ঢুকে দেখা যাক কী কী বিস্ময় লুকিয়ে আছে।

1/T = (∂S/∂E)

এই সমীকরণটি থার্মোডাইনামিক্সের বুকের ভেতর থেকে উঠে এসেছে। এখানে T হলো তাপমাত্রা, S হলো এনট্রপি, আর E হলো অভ্যন্তরীণ শক্তি। এই সমীকরণটি বলে, একটি সিস্টেমের শক্তি যত বাড়বে, তার বিশৃঙ্খলতা অর্থাৎ এনট্রপির পরিবর্তন সেই হারে বাড়বে বা কমবে। এখন ভাবুন, যদি তাপমাত্রা T শূন্যের দিকে যায়, তাহলে ডান পাশে থাকা ∂S/∂E হবে অসীম। মানে সিস্টেম এত নিখুঁতভাবে সাজানো হতে হবে যে বাস্তবে তা সম্ভব নয়। কারণ কোয়ান্টাম বলছে, আপনি যতই ঠান্ডা করুন, কণারা ততটাই দুলতে থাকে। একেবারে জমাট স্থিরতা নেই।

Δx * Δp ≥ ħ / 2

এবার আসি অনিশ্চয়তার দেশে, যেখানে Heisenberg বসে আছেন একটি মোটা বই হাতে। এই সমীকরণ বলে, আপনি যদি একটি কণার অবস্থান (x) খুব নিখুঁতভাবে জানেন, তবে তার ভরবেগ (p) জানা যাবে না। যদি ভরবেগ একদম নিশ্চিত করতে চান, তাহলে অবস্থান হয়ে যাবে ঝাপসা। ঠিক যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা কণা। এই অস্থিরতা আমাদের বলে দেয়, শূন্য অনিশ্চয়তা বলে কিছু নেই। সবকিছুই গড়বড়।

∫ from a to a of f(x) dx = 0

এই সহজ সমীকরণটি ইন্টিগ্রালের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আপনি যদি কোনো ফাংশনের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে চান, আর শুরু এবং শেষ এক জায়গাতেই থেমে যান, তাহলে সেই ক্ষেত্রফল হবে শূন্য। মানে আপনি যতই ঘুরে বেড়ান, যদি যাত্রার শুরু আর শেষ একই হয়, তাহলে কোনো জমানো কিছু থাকে না।

E = γmc^2, যেখানে γ = 1 / √(1 - v^2 / c^2)

Einstein এখানে এসে বলছেন, আপনি যদি কোনো বস্তুকে আলোর গতির দিকে ঠেলেন, তাহলে তার ভর এবং শক্তি অজস্র বাড়তে থাকবে। γ যাকে বলে Lorentz factor, সেটি v → c গেলে অসীম হয়ে যায়। মানে আলোর গতিতে যেতে গেলে অসীম শক্তি দরকার। অসম্ভব এক কাজ। শূন্যের কাছাকাছি গেলেও শক্তির চাহিদা ভয়ানক বেড়ে যায়।

E = pc

এই সমীকরণটা ফোটনের জন্য। তার ভর একেবারে শূন্য, কিন্তু শক্তি আছে। এখানে p হলো ভরবেগ। মানে কণার ভর না থাকলেও, সে শক্তি বহন করতে পারে। শূন্য ভর মানেই অনুপস্থিতি নয়, বরং এক অদ্ভুত রকম উপস্থিতি।

(iγ^μ∂_μ - m)ψ = 0

এটি Dirac equation, যেখানে স্পিনার ফাংশন ψ কীভাবে কোয়ান্টাম ফিল্ডে আচরণ করে তা বলা হচ্ছে। এখানে যদি m = 0 ধরি, অর্থাৎ ভরহীন ফার্মিয়ন, তাহলে সমীকরণে একটা গাণিতিক ঐক্য রক্ষা হয়। শূন্য ভরও একটা ছন্দ রক্ষা করতে সাহায্য করে। যেন শূন্য না থাকলে সংগীতটা বেসুরো হয়ে যেত।

r_s = 2GM / c^2

এটি হলো Schwarzschild radius। কোনো বস্তুকে যদি এতটাই চেপে ফেলা যায় যে সে এই ব্যাসার্ধের মধ্যে চলে আসে, তাহলে আলোও আর বের হতে পারে না। একটি ব্ল্যাক হোল জন্ম নেয়। কিন্তু r → 0 হলে কী হয়? তখন ঘনত্ব হয়ে যায় অসীম। আপনি পৌঁছে যান singularity-তে। একেবারে নিয়মভঙ্গের কেন্দ্রে।

F = k * q₁q₂ / r^2

Electrostatics বলছে, দুটি চার্জের মধ্যে বল তাদের দূরত্বের বর্গের বিপরীত অনুপাতে চলে। r → 0 হলে বল চলে যায় অসীমে। মানে বাস্তবে কোনো পয়েন্ট চার্জ সম্ভব নয়। কারণ শূন্য দূরত্ব মানেই সীমাহীন প্রতিক্রিয়া। শূন্য কাছে এলেই শুরু হয় ঝড়।

H = - ∑ p_i * log₂(p_i)

তথ্য তত্ত্বের এই সমীকরণটি আমাদের বলে দেয় একটি সিস্টেম কতটা অনিশ্চিত। যদি কোনো সম্ভাবনা p_i শূন্য হয়, তাহলে ঐ term টিকে আমরা 0 ধরি, কারণ 0 * log(0) এক অস্পষ্ট রকমের অবস্থা। শূন্য এখানে এক গাণিতিক কুয়াশা। এক ধরনের অনিশ্চয়তার প্রতীক।

E₀ = ½ħω

Quantum harmonic oscillator-এর এই ground state energy বলে দেয়, আপনি যতই একটি কণাকে ঠান্ডা করেন, তার ভেতরে এক ধরনের 'জিরো-পয়েন্ট এনার্জি' থেকে যায়। মানে শূন্য শক্তি নয়, বরং এমন এক শক্তি যা কিছুই না থাকা জায়গাকেও কাঁপিয়ে তোলে।

e^(iπ) + 1 = 0

Euler এর এই অসাধারণ সমীকরণটি যেন এক গাণিতিক কবিতা। এখানে একসাথে আছে e, i, π, 1 আর 0। সব মিলে এমন এক ছন্দ তোলে যা গণিতের আত্মা ছুঁয়ে যায়। এখানে শূন্য এক সমাপ্তি, আবার এক সূচনা।

F(k) = ∫ from -∞ to ∞ of f(x) * e^(-2πikx) dx

Fourier transform আমাদের বলে দেয়, আপনি একটি ফাংশনকে কেমন করে ফ্রিকোয়েন্সি ডোমেইনে বিশ্লেষণ করতে পারেন। যদি f(x) হয় δ(x), অর্থাৎ একটি ডিরাক ডেল্টা ফাংশন, তাহলে F(k) হয় 1। এক বিন্দুর স্পন্দন ছড়িয়ে যায় গোটা frequency জগতে। শূন্য অবস্থান, সর্বত্র কম্পন।

ζ(s) = ∑ 1 / n^s

Riemann zeta function-এর এই সাধারণ রূপ শুধুমাত্র তখনই কাজ করে যখন Re(s) > 1। কিন্তু এই ফাংশনের non-trivial zeros হলো গণিতের সবচেয়ে রহস্যময় ধাঁধা। Riemann Hypothesis এখনো অমীমাংসিত। এখানে শূন্য এক রহস্যের নাম। এক অনন্তের ফাঁকে থাকা ছায়া।

⟨ϕ⟩ ≠ 0

শেষে আসি Higgs ফিল্ডে। যেখানে vacuum expectation value শূন্য নয়। মানে খালি জায়গাও খালি নয়। সেখানে Higgs বসে আছে শান্তভাবে। আর সেই থেকেই কণাগুলো ভর পায়। শূন্য শক্তির মধ্যেও চলতে থাকে এক অলিখিত নৃত্য।

তাই, শূন্য মানে ফাঁকা নয়। শূন্য আসলে এক জাদুর খনি। আপনি যেখানেই তাকান, শূন্য আছে তার ছায়ার মতো। শূন্য এক মৌন সুর, এক স্থির ঢেউ, এক পটভূমি যেখানে পুরো বিশ্ব নাটক মঞ্চস্থ হয়। শূন্যই থেকেই সব কিছুর শুরু।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: যত শুন্য তত বেশী, তবে সামনে একটা সংখ্যা (১ থেকে ৯) থাকলেই হল!

২| ২৫ শে জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৮

অপলক বলেছেন: বুঝলাম আপনি ফিজিক্স নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন। পড়ে সবটা বুঝিনি। তাও ভাল লাগল।


আপনার কম করে হলেও ৩ ঘন্টা গেছে এই ব্লগটি লিখতে । বাংলায় এ ধরনের রিসোর্স কম। আশা করি আরও এমন কিছু নিয়ে লিখবেন।

৩| ২৫ শে জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৪

অপলক বলেছেন: কোথাও একবার পড়েছিলাম, বস্তু কণার ভর আছে। সেই কণা ভর হারায় যখন সে আলোর গতিতে ছুটতে থাকে। পুরো ভরটাই তখন আলোক শক্তিতে রুপান্তর হয়। তাই আলোর গতিতে ছুটতে থাকা কোন কণা ভর শূন্য হয়। অথচ শূন্য আসলে শূন্য নয়। শক্তি এক রুপ থেকে অন্য রুপে রুপান্তর হয়। শক্তির কোন ধ্বংস বা ক্ষয় নেই।

ঠিক বললাম?

২৯ শে জুন, ২০২৫ রাত ১০:২৩

কথামৃত বলেছেন: আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুসারে, কণা যখন আলোর গতির খুব কাছাকাছি পৌঁছায়, তখন তার কার্যকরী ভর বেড়ে যায়।

এটি একটি সাধারণ সূত্র

[ E = mc^2 ]

একটি কণা যখন প্রতিটি গতিতে উঠতে থাকে, তখন তার ভর এবং শক্তির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আলোর গতিতে পৌঁছানোর জন্য, কণার ভর অসীম হয়ে যায়, অর্থাৎ কণাটি তখন কার্যত ভরহীন হয়ে ওঠে।

এটি বোঝায় যে কোনও কণাকে আলোর গতিতে নিয়ে আসা সম্ভব নয়, কারণ এই অবস্থায় কণার ভর শূন্য হয়ে যাবে, যা কার্যত অসম্ভব।

২৯ শে জুন, ২০২৫ রাত ১০:৩৪

কথামৃত বলেছেন: বাস্তবে কোন কণা আলোর গতিতে যেতে পারে না।

৪| ২৯ শে জুন, ২০২৫ রাত ১১:০২

অপলক বলেছেন: যখন কণা বলা হচ্ছে তখন আসলে আলোর গতিতে চলার শর্ত পূরণ করতে পারছে না। তাই সম্ভব না...

সুন্দর সহজ কথায় বোঝাতে পারেন। চালিয়ে যান।

৩০ শে জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৫৮

কথামৃত বলেছেন: আলোর গতিতে চলা কণার বিষয়টি প্রকৃতপক্ষে বাস্তবে অসম্ভব। যখন আমরা কণাদের কথা বলি, তখন তাদের গতিতে যেমন বৃদ্ধি ঘটে, তখন তাদের কার্যকরী ভরও বৃদ্ধি পায়, যা আলোর গতির কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমাণকে অদ্ভুতভাবে বাড়িয়ে দেয়।

বিশেষ আপেক্ষিকতা অনুযায়ী, যেকোনো কণার জন্য যে ভরের স্থানান্তর ঘটবে এবং আলোর গতিতে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অসীম। তাই সত্যিকার অর্থে একটি দৈহিক কণা (যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন ইত্যাদি) আলোর গতিতে পৌঁছানো অসম্ভব।

অতএব, আলোর গতিতে চলার শর্ত পূরণে কণার ভর হারানো বা শূন্য হওয়া কোনো বাস্তব পরিস্থিতি নয়। এটি একটি তাত্ত্বিক ধারণা যা পদার্থবিজ্ঞানে ভিত্তি করে, কিন্তু বাস্তবে kশক্তির প্রাপ্যতার কারণে কণাগুলি আলোর গতিতে পৌঁছাতে পারবে না।

যদি একটি কণার ভর m₀ < 0 হয়, তাহলে এর গতিশক্তি (Kinetic Energy) হবেঃ
KE = (‌‌y - 1)m0c^2

v → c হলে γ → ∞, তাই KE → ∞
- কোনো সসীম শক্তি দিয়ে অসীম KE অর্জন সম্ভব নয়।

৫| ০১ লা জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:০৫

অপলক বলেছেন: দারুন ব্যাখ্যা।

ধন্যবাদ বাঙ্গালী পদার্থবিদ।

আমার পছন্দের সাবজেক্ট ছিল রসায়ন। এখন তো দেখছি পদার্থ বিজ্ঞানেও মজা আছে, টু্ইসট আছে। ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.