নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে আল্লাহ! সঠিক বিচারের মালিক, সর্বশক্তিমান, মহা ক্ষমাশীল।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান

আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।

মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুত্ব

১৩ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:৫৬

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই বন্ধুত্ব আর কৃতজ্ঞতা নিয়ে অনেক কাহিনী শুনেছ। কারণ এই দু'টি বিষয় মানুষের জন্মের পর থেকেই আগ্রহ ছিল আছে এবং থাকবে। এত পুরনো বিষয় হবার পরও আমরা কিন্তু এখনও জানি না, কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত আর কার সঙ্গে উচিত নয়। আজকের আসরের শুরুতেই আমরা এ সম্পর্কে কিছু মূল্যবান কথা বলব। এরপর থাকবে কচ্ছপ ও বিচ্ছুর বন্ধুত্ব নিয়ে একটি রূপকথার গল্প। আর সবচেয়ে থাকবে বাংলাদেশের এক নতুন বন্ধুর সাক্ষাৎকার। তাহলে প্রথমেই জেনে নিই কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা উচিত?







ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধুর মর্যাদা অনেক উপরে। এজন্যই মহান আল্লাহ, নবী করিম (সাঃ) এবং তাঁর বংশের মহান ইমামগণ বন্ধু নির্বাচন করার ব্যাপারে মূল্যবান কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, "মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এমনটি করবে, আল্লাহ তাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখবেন না।" আর হাদিসে বলা হয়েছে, "মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে ওঠে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনের সময় খেয়াল করা উচিত সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।"



রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে।এজন্য বন্ধু নির্বাচনের আগে তাকে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি।"







অন্যদিকে আমিরুল মুমেনিন হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি চিন্তাভাবনা করে যথাযথ বিচার বিশ্লেষণ করে বন্ধু নির্বাচন করবে, তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হবে।"



ইমাম গাযযালী (রহঃ) বলেন, "সবাইকে বন্ধু নির্বাচন করা যাবে না, বরং তিনটি গুণ দেখে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। গুণ তিনটি হল- (১) বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ (২) বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময় এবং (৩) বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান।'



ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহঃ) বলেছেন, 'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ'। এ উক্তির মূলকথা হচ্ছে, একজন উত্তম বন্ধু যেমন জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে পারে। তাই যাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তাকে আগেই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। জ্ঞানী, সৎ, ন্যায়পরায়ণ, ত্যাগী, নিঃস্বার্থ, চরিত্রবান, সহজ-সরল ইত্যাদি গুণাবলি দেখে বন্ধু নির্বাচন করলে আশা করা যায় সে উত্তম বন্ধু হতে পারে।



বন্ধুরা, বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা করলাম তা তোমাদের জীবনে কাজে লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তো আসরের এ পর্যায়ে রয়েছে 'কচ্ছপ ও বিচ্ছুর বন্ধত্ব' নিয়ে একটি গল্প।



কথিত আছে যে, একটা কচ্ছপ আর এক বিচ্ছু পাশাপাশি বাস করত। একে অপরের প্রতিবেশি। দীর্ঘদিন ধরে একত্রে বসবাস করতে করতে তাদের পরস্পরের মাঝে অনেকটা কাছের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠল। একজনের আরেকজনকে দেখে অভ্যস্থ হয়ে গেল। কিন্তু পরিচিতি আর বন্ধুত্ব কি এক কথা? গ্রামে কিংবা শহরে কোনো এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করলে মুখগুলো তো প্রায় চেনা হয়ে যায়। চেনা মুখ দেখতে দেখতে আপনও মনে হয়। কিন্তু তাই বলে কি সবাই বন্ধু হয়? হয় না।



যাই হোক, কচ্ছপ আর বিচ্ছু যে এলাকাতে থাকে একদিন সেই এলাকায় ঘটে গেল একটা ঘটনা। এমন ঘটনা যে তাদের জীবনটাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেল। জীবনের ঝুঁকি যেখানে, সেখানে তো আর যাই হোক, অন্তত বসবাস করাটা ঠিক নয়। তাই তারা ওই এলাকা ছেড়ে যাবে বলে ঠিক করল। এ যাওয়া তো বেড়াতে যাওয়া নয়, বাধ্য হয়ে যাওয়া। কচ্ছপ আর বিচ্ছু তাই আগপাছ না ভেবেই রওনা দিল একসাথে। কিন্তু কোথায় যাবে কিছুই জানে না।



তাদের অবস্থা যেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের মতো। সরকারি বাহিনীর অত্যাচারে ঘরবাড়ি ছেড়ে যখন তাদের চলে যেতে হয় তখন তারা জানে না কোথায় যাবে। শুধু জানে যেতে হবে, তাই যায়। কেউ সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে মরে আবার কেউ বন জঙ্গলে গিয়ে। কচ্ছপ আর বিচ্ছুও আপন ভিটে ছেড়ে নিরুদ্দেশে পাড়ি জমায়। যেতে যেতে তাদের সামনে পড়ে একটা নদী। বিচ্ছু তো নদীর দিকে তাকিয়ে হতাশায় স্তব্ধ হয়ে গেল। সে কচ্ছপকে বলল: দেখেছ! কী দুর্ভাগ্য আমার!



কচ্ছপ বলল: কেন কী হয়েছে। দুর্ভাগ্য বলছো কেন?



বিচ্ছু বলল: সামনে নদী! অথৈ পানি। আমি এখন না সামনে যেতে পারব, না পেছনে। যদি সামনে যাই নদীর পানিতে ডুবে মরব। আর যদি পেছনে ফিরে যাই তাহলে তোমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাব।



কচ্ছপ বলল: চিন্তা কর না বন্ধু! আমাদের বন্ধুত্ব তো একদিনের নয়। সামনে যত বিপদই কিংবা যত সুযোগই আসুক সবকিছুই সমানভাবে ভাগ করে নেব। তোমার সুখে দুখে আমি শেয়ার করব আর আমার সুখে দুখে তুমি, ঠিকাছে। আমি তোমাকে নিরাপদে নদী পার করিয়ে দেব, চিন্তা কর না। তুমি আমার পিঠে চড়ে বস আমি পানিতে ভেসে ভেসে নদী পাড়ি দেব আর তুমি আমার পিঠে বসেই চলে যাবে। বন্ধু তো সে-ই যে বিপদে বন্ধুর হাত ধরে, তাই না!



কচ্ছপ বলল: আল্লাহ তোমার মঙ্গর করুন। হে বিশ্বস্ত বন্ধু আমার। আমি কোনোদিন সুযোগ পেলে তোমার এই বন্ধুত্বের ঋণ শোধ করার চেষ্টা করব।



এই বলে বিচ্ছু কচ্ছপের পিঠে চড়ে বসল। কচ্ছপও সাঁতরাতে সাঁতরাতে পাড়ি জমালো নদীতে। নদীর পানির উপর দিয়ে কী আরামে যাচ্ছে বিচ্ছু। কোনোদিন কল্পনাই করতে পারেনি সে এভাবে নদী পার হবে। আহা! কী যে আনন্দ লাগছে তার। কচ্ছপও বন্ধুকে পিঠে নিয়ে আনন্দে ভাসতে লাগতে নদীর পানির ওপর।



ভাসতে ভাসতে হঠাৎ তার মনে হলো পিঠে যেন কেমন আঁচড় আঁচড়ের মতো লাগছে। বিচ্ছুকে জিজ্ঞেস করল: পিঠে বসে কী করছো? কেমন যেন আঁচড় টানার শব্দ পাচ্ছি! আসলে কীসের শব্দ ওটা?



বিচ্ছু জবাব দিল: না, তেমন কিছু না। চেষ্টা করছি একটা উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করতে।



কচ্ছপ আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইল: কেন, কী করবে?



বিচ্ছু বলল: কেন বুঝতে পারছ না! তোমার গায়ে হুল ফোটাতে...।



কচ্ছপ বিস্মিত হয়ে বলল: এই নিমকহারাম! নির্দয় বে-ইনসাফ! আমি আমার জীবনের মায়া ত্যাগ করে তোকে মহাবিপদ থেকে বাঁচাতে নদী পাড়ি দিলাম। তোকে সম্মানের সাথে আমার পিঠে বসালাম, আর তুই এই তার প্রতিদান দিলি? আমাকে হুল ফুটাতে চাচ্ছিস! ছি ছি ছি..! শোন! তুই যত চেষ্টাই করিস আমার গায়ে হুল ফুটাতে, কোনো লাভ হবে না.., পারবি না তুই। আর আমাকে কামড় দিয়েও কোনা কাজ হবে না। তোর কামড়ের কোনো প্রভাব আমার ওপর পড়বে না। কিন্তু আমি ভীষণ আশ্চর্য হচ্ছি, তুই এরকম অকৃতজ্ঞতা কেন দেখালি? কেন তুই খেয়ানত করলি। আমাকে মারতে চাইলি কী কারণে?



বিচ্ছু বলল: দেখ বন্ধু! সবকিছুরই একটা স্বভাব প্রকৃতি আছে। আগুনের বৈশিষ্ট্য হলো পোড়ানো। শুধু পোড়ানো। ধারের কাছের, আত্মীয়ের, বন্ধুর স্বজন পরিজনের গুরুত্ব তার কাছে নেই। তার কাজই হলো পোড়ানো। তাই সে সবারটাই পোড়ায়। আমারও নিজস্ব একটা বৈশিষ্ট্য, একটা স্বভাব হলো হুল ফোটানো বা কামড়ানো। এমনিতে তোমার সাথে তো আর আমার কোনো শত্রুতা নেই, না তুমি আমার কোনো ক্ষতি করেছো, বরং নিজের জীবন বাজি রেখে আমাকে নদী পার করাচ্ছো। তুমি আমার বন্ধু, ছিলাম, আছি এবং থাকব। শোনোনি.. বিচ্ছুর কামড় প্রতিহিংসার জন্য নয়, এটা তার প্রকৃতিরই অনিবার্য দাবি।



কচ্ছপ বিচ্ছুর কথায় সায় দিয়ে বলল: হ্যাঁ বন্ধু! তুমি ঠিকই বলেছ! তোমার তো কোনো দোষ নেই, দোষটা আসলে আমারই।



বিচ্ছু আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইল: তোমার আবার কী দোষ, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না, একটু খুলে বলবে?



কচ্ছপ বলল: হ্যাঁ বলছি! আমার দোষটা হলো: এতো এতো প্রাণী থাকতে আমি কেন তোমার মতো একটা অকৃতজ্ঞকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিলাম.. সেটাই আমার দোষ। আমি যতই তোমার উপকার করব, তোমার ভালো চাইব, তোমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করব.. তুমি তোমার স্বভাব প্রকৃতি অনুযায়ী হিংস্র আচরণই করবে আমার সাথে। তাই বন্ধু! তোমার সাথে আর দোস্তি করে কাজ নেই। তোমার মতো বন্ধু থাকার চেয়ে বন্ধুহীন নিঃসঙ্গ থাকাটা অনেক অনেকগুণ ভালো। বুঝতে পেরেছো দোস্ত...!



বিচ্ছু এবার আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করল: ..না, মানে... তুমি ঠিক কী বলতে চাইছো... এই মাঝনদীতে....



বিচ্ছুর কথা শেষ হতে না হতেই কচ্ছপ বলল: জীবনে তো অনেক বুঝেছো.. আর বুঝে কাজ নেই...



এই বলেই কচ্ছপ একটা দোল দিয়ে বিচ্ছুটাকে তার পিঠ থেকে নদীর পানিতে ফেলে দিলো। কচ্ছপ আপন মনে নদী পাড়ি দিয়ে চলে গেল ওপারে। কে জানে বিচ্ছুটাও হয়তো ততক্ষণে চলে গেছে কোনো মাছের পেটে, কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর পেটে, নদীর গহীনে...জীবনের ওপারে...!



বন্ধুরা, কচ্ছপের সঙ্গে বিচ্ছুর প্রতারণা ও পরিণতি সম্পর্কে গল্পটি শুনলে। কচ্ছপ যদি বিচ্ছু সম্পর্কে জেনেবুঝে বন্ধুত্ব করত তাহলে এত তাড়াতাড়ি সম্পর্ক নষ্ট হতো না। মানুষের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। ইমাম জয়নুল আবেদীন (রাঃ)পাঁচ শ্রেণীর মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই পাঁচ শ্রেণীর মানুষ হলো- মিথ্যাবাদী, ইতর, কৃপন, অভদ্র ও নির্দয়। অন্যদিকে ইমাম জাফর সাদেক (রাঃ) তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই তিন শ্রেণী হলো- বিশ্বাসঘাতক, নির্মম ও মিথ্যাবাদী। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, শেষ বিচারের দিন সকল বন্ধুই শত্রুতে পরিণত হবে তবে একমাত্র সৎ বন্ধুই সেদিন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেবে। তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সততা, আমানতদারি, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা প্রভৃতি গুণের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

আমিন! ।আমিন!! সুম্ম-আমিন!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.