![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এক জন্ স্বাধীন চেতা মানুষ, ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলাম, কর্ম জীবনে একজন সরকারী কর্মচারী (অব:), বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছি।
নতুন মধ্যপ্রাচ্য গঠনের কথা বলেছিলেন আমেরিকার বুশ প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিজ কন্ডোলিজা রাইস। লেবাননে ইসরাইলের বোমাবর্ষণ আর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার বিভীষিকাকে তিনি বলেছিলেন নতুন মধ্যপ্রাচ্যের প্রসববেদনা।
এর মধ্যে আমেরিকান আর্মড ফোর্সেস জার্নালের এক প্রবন্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল রালফ পিটার নতুন মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র প্রকাশ করেন। এরপর গত আট বছরে মধ্যপ্রাচ্যে ঘটেছে অনেক উত্থান-পতন। আমেরিকার নেতৃত্বে ইরাক দখল, আরব বসন্তের জের ধরে তিউনিসিয়া ও মিসরে সরকার পরিবর্তন, লিবিয়ায় পাশ্চাত্যের বিশেষ বিমান হামলায় গাদ্দাফি সরকারের পতন ঘটানো, সিরিয়ায় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ, গোটা মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা ও ইরান-সৌদি আরব প্রক্সিযুদ্ধ এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে মধ্যপ্রাচ্যে। বিভিন্ন আরব দেশে সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিভাজনে যখন একে অন্যের গলা কাটার পরিস্থিতি চলছে, তখন নেতানিয়াহু স্বপ্ন দেখছেন বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার। আরব ও আশপাশের অনেক দেশই গোপনে ইসরাইলের সাথে গড়ে তুলছে বিশেষ সম্পর্ক। গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলের সেনা অভিযানে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এখন চলছে তার নৃশংস এক মহড়া। রালফ পিটারের নতুন মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রকে একসময় যারা কল্পনাবিলাস হিসেবে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন তারাও এখন পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করছেন।
যুগসন্ধিক্ষণে বৈশ্বিক ব্যবস্থা
হজরত ইব্রাহিম আ:-এর স্মৃতিবিজড়িত মক্কা নগরীকে মনে করা হয় পৃথিবীর আদি পবিত্র স্থান। জাজিরাতুল আরব ও এর আশপাশের নগরীগুলোতে বহুসংখ্যক খ্যাতনামা নবী-রাসূলের আবির্ভাব ঘটেছে। পৃথিবীর আদি সভ্যতার অনেকগুলোরই বিকাশ এই অঞ্চল ও তার আশপাশে ঘটেছে। এসব কারণে বিশ্বব্যবস্থার ওপর আরব অঞ্চলের প্রভাব সব সময় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আড়াই দশক আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার মধ্য দিয়ে দ্বিমেরুর বৈশ্বিক ব্যবস্থার অবসান হয়ে সৃষ্টি হয় এক মেরুর বিশ্বব্যবস্থা। এর প্রভাব প্রবলভাবে পড়ে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে। সোভিয়েত বলয়ের দেশগুলোর মধ্যে যেসব রাষ্ট্র নিজস্ব শক্তির জোরে বিদ্যমান সরকারব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে পেরেছে, সেখানে ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে। আর অবশিষ্টের মধ্যে বেশির ভাগ দেশের শাসনব্যবস্থায় একধরনের উদার গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রবণতা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সার্বিকভাবে বিশ্বে এক মেরুর নিয়ন্ত্রণ জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এ সময়। কিন্তু আরব জাগরণের ধারাবাহিকতায় বিমান হামলা চালিয়ে লিবিয়ায় গাদ্দাফির পতন ঘটানোর পর চলমান ভারসাম্যে নতুন বিন্যাস ঘটতে শুরু করে। সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিবাদ একসময় প্রতিরোধযুদ্ধে রূপ নিলে নতুন ভারসাম্যের প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে ওঠে এ অঞ্চলে। তিন বছর ধরে চলা সিরিয়ার এই গৃহযুদ্ধে দুই লাখের কাছাকাছি লোকের মৃত্যু হয়। এক দিকে আমেরিকা-রাশিয়া অন্য দিকে ইরান-সৌদি আরব সিরিয়াকেন্দ্রিক প্রক্সিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এই যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ার সাথে সাথে জাতিগত সঙ্ঘাতের প্রবণতা বাড়তে থাকে। বিধ্বস্ত হয় গোটা রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। সিরিয়াকে কেন্দ্র করে হিজবুল্লাহ-আলকায়েদা প্রত্যক্ষযুদ্ধ আর ইরান-সৌদি আরব প্রক্সিযুদ্ধ শিয়া-সুন্নি সঙ্ঘাতকে প্রবল করে তোলে। সিরিয়ার সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়ে ইরাকে। লেবানন ও জর্ডানেও এ সঙ্ঘাতের বিস্তৃতি ঘটার আশঙ্কা জোরদার হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় নতুন মধ্যপ্রাচ্য সৃষ্টির যে ‘প্রসববেদনা’র কথা কন্ডোলিজা রাইস ইসরাইলের লেবানন হামলার সময় বলেছিলেন, সেই ‘গঠনমূলক ধ্বংসযজ্ঞই’ যেন ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে।
আরব অঞ্চলের এই অস্থিরতায় বৈশ্বিক শক্তিগুলো যেভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে ঠিক একইভাবে বৈশ্বিক ব্যবস্থায়ও পড়ছে এর প্রভাব। সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রক্সিযুদ্ধে শক্তি পরীক্ষার পর ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ বংশোদ্ভূতদের দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। ইউক্রেনের অংশবিশেষের ওপরও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে রাশিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত প্রজাতন্ত্রগুলোর ওপর রুশ প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা নতুন করে শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া বিশেষ মৈত্রী তৈরি করেছে চীনের সাথে। চিনোরাশিয়া বলয়টি বৈশ্বিক ব্যবস্থায় আমেরিকার বিপরীতে একটি সাধারণ অবস্থান গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এশিয়ায় বিকল্প বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের পর আইএমএফের বিকল্প ব্যাংক এবং আমেরিকান ডলারের বিপরীতে আন্তর্জাতিক লেনদেনের সাধারণ মুদ্রা প্রচলনের সক্রিয় প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।
বৈশ্বিক পর্যায়ের এই মেরুকরণের বিষয়টিকে কাজে লাগাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তিগুলো। সৌদি আরব আমেরিকান বলয়ের সাথে সম্পর্ক রেখেই চীন ও রাশিয়ার সাথে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। অন্য দিকে ইরান চীন-রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক রেখেই পারমাণবিক আলোচনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার সাথে নতুন সমীকরণ তৈরির প্রচেষ্টা নিয়েছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে আমেরিকান অভিযানের সময় ইরানের নীরব সমর্থন এ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করেছে। আর এসবের পথ ধরেই এগিয়ে চলছে নতুন মধ্যপ্রাচ্যের পরিকল্পিত অবয়ব দানের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া।
কন্ডোলিজা ও নতুন মধ্যপ্রাচ্য
‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ শব্দটি আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস জুন ২০০৬ সালে তেল আবিবে পুরনো শব্দ বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তে প্রথম ব্যবহার করেন। শব্দ বা ধারণার এই পরিবর্তন পূর্ব ভূমধ্যসাগরের তেল টার্মিনাল বাকু-তিবিলিসি-সিহান (বিটিসি) উদ্বোধন একই সাথে হয়। পরবর্তীকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী উভয়েই লেবাননের অ্যাংলো-আমেরিকান সমর্থনে ইসরাইলের লেবানন অবরোধের সময় এই শব্দটি ব্যবহার করেন। তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ উলমার্ট আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে জানান, লেবানন অভিযানের মধ্য দিয়ে ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ প্রকল্পের সূচনা ঘটানো হয়েছে।
এই ঘোষণার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে একটি অ্যাংলো-আমেরিকান-ইসরাইলি ‘সামরিক রোডম্যাপ’ কার্যকর করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত করা হয়। এই প্রকল্পটি কয়েক বছরে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা করা হয়, যার মধ্যে ছিল লেবানন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল, ইরান ও আফগানিস্তানে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা এবং সহিংসতার একটি চাপ সৃষ্টি করা।
‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ প্রকল্প ওয়াশিংটন ও তেলআবিব জনসমক্ষে আনার পর লেবানন পরিণত হয় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে চাপ সৃষ্টির প্রথম কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকে ‘গঠনমূলক বিশৃঙ্খলার’ সূত্রপাত ঘটবে এমন ধারণা করা হয়। আর পরিকল্পনা অনুসারে এই ‘গঠনমূলক বিশৃঙ্খলা’ থেকে সহিংসতা ও যুদ্ধ পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়বে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইসরাইল তাদের ভূকৌশলগত প্রয়োজনীয়তা ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র আবার বিন্যাসের কাজ এগিয়ে নেবে।
লেবাননে ইসরাইলি হামলার পর কন্ডোলিজা রাইস সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমরা এখানে [লেবানন ধ্বংস ও লেবাননে ইসরাইলি হামলা] যা দেখছি এক অর্থে, এটি হলো একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের জন্মের প্রসববেদনা আর আমরা যা কিছু করব তা নতুন মধ্যপ্রাচ্যকে এগিয়ে নেয়ার জন্য করব। আর পুরনো মধ্যপ্রাচ্য কোনো সময় ফিরবে না। কন্ডোলিজা রাইস এ বক্তব্যের জন্য লেবাননে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হন। ইসরাইলি বিমানবাহিনী লেবাননে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করছে যার জন্য একটি জাতি ভুগছে আর রাইস বলছেন, এ যন্ত্রণা প্রসববেদনা। অকৃতদার রাইসের অবশ্য নিজের প্রসববেদনার কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার জন্য অ্যাংলো-আমেরিকান সামরিক রোডম্যাপটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস ভাষণে যা বলেছেন তা আগে থেকে নির্ধারণ করা ছিল। লেবাননে ইসরাইলি হামলা আমেরিকা ও ব্রিটেন পুরোপুরি অনুমোদন করে। আর এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইসরাইলের বিদ্যমান ভূ-কৌশলগত উদ্দেশ্যের সাথেও পরিপূরক ছিল। অধ্যাপক মার্ক লেভাইনর বক্তব্য এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘‘নব্য উদার বিশ্বায়নবাদী ও নব্য রক্ষণশীল এবং পরিশেষে বুশ প্রশাসন তাদের নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরির প্রত্যাশায় একটি উপায় হিসেবে ‘সৃজনশীল ধ্বংসের পথ’ অনুমোদন করেছেন।” আর নব্য রক্ষণশীল দার্শনিক ও বুশের উপদেষ্টা মাইকেলের কথায়, “এই সৃজনশীল ধ্বংসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল ‘একটি ভয়ঙ্কর বিপ্লবী বাহিনী’। অ্যাংলো-আমেরিকানদের ইরাক দখল, বিশেষ করে ইরাকি কুর্দিস্তান দখল ছিল মধ্যপ্রাচ্যকে বিভাজনের জন্য উত্তপ্ত করা এবং পরিকল্পিত স্থিতির জন্য প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ।” ইতোমধ্যে প্রকাশ করা নতুন ম্যাপে যেভাবে এই অঞ্চলকে ভাগ করা হয়েছে তার অনুকরণে তিনটি অংশে ইরাককে বিভক্ত করতে ইরাকি সংসদ ও ইরাকি ফেডারেশন কাঠামো তৈরির নামে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়। (পিটারের ম্যাপ দেখুন)। এ ছাড়াও অ্যাংলো-আমেরিকান সামরিক রোডম্যাপে মধ্যপ্রাচ্যের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার মধ্যে একটি প্রবেশপথ তৈরির প্রচেষ্টাও লক্ষণীয়। মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিশেষত মধ্য এশিয়ার সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোয় মার্কিন প্রভাব সম্প্রসারণের জন্য পদক্ষেপ ঠিক করা হয়। এক অর্থে এই পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যকে মধ্য এশিয়ার দক্ষিণাংশে সম্প্রসারণ নকশা হিসেবে কাজ করছে। অনেক রুশ ও মধ্য এশীয় বিশেষজ্ঞ, সামরিক পরিকল্পক, কৌশলবিদ, নিরাপত্তা উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ মধ্য এশিয়াকে ভঙ্গুরপ্রবণ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রভাবাধীন নরম পেটতুল্য বিবেচনা করতে চান। সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেবিগনিউ ব্রেজেজিনস্কি তার বই The Grand Chessboard: American Primacy and Its Geo-strategic Imperatives এ উল্লেখ করেছেন, আধুনিক মধ্যপ্রাচ্য হলো একটি সময়ের নিয়ন্ত্রক স্থান। তার ভাষায় এটি হলো ইউরেশিয়ান বলকানস। যার মধ্যে রয়েছে ককেসাস (জর্জিয়া, আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র ও আর্মেনিয়া) এবং মধ্য এশিয়া (কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তান) আর ইরান ও তুরস্ক উভয়ে। ইরান ও তুরস্ক উভয়ে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তরতম (ককেসাস বাদে) প্রান্ত যা ইউরোপ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছে।
‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ মানচিত্র
২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ন্যাটো সেনা মোতায়েনকৃত আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কৌশলগত লোকবল, সরকারি কর্মকর্তা, ন্যাটোর নীতি এবং সামরিক বিশ্লেষকদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের একটি অপেক্ষাকৃত অজানা মানচিত্র প্রচার করা হয়। এটা জনসমক্ষে প্রচার করা হয়ে থাকতে পারে হয়তো একধরনের ঐকমত্য গড়ে তুলতে যাতে জনগণ সম্ভাব্য এই পরিবর্তনের ব্যাপারটি মানসিকভাবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়ে ওঠে, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের সে পরিবর্তন সহিংস ও রক্তক্ষয়ী হলেও। এটি হলো মধ্যপ্রাচ্যের এমন একটা ম্যাপ যেখানে বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক সীমানার নববিন্যাস ও নতুন কাঠামো দিয়ে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য।’
নতুন মধ্যপ্রাচ্যের এই মানচিত্রটি আমেরিকান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল রালফ পিটার তৈরি করেন। এটি জুন ২০০৬ সালে আমেরিকান আর্মস ফোর্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়। পিটার মার্কিন ন্যাশনাল ওয়ার অ্যাকাডেমি থেকে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন। লে. কর্নেল রালফ পিটারের কপিরাইটকৃত এই মানচিত্রটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে পেন্টাগন ডকট্রিন প্রতিফলিত না হলেও এটি ন্যাটোর ডিফেন্স কলেজে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে ব্যবহার করা হয়। এই মানচিত্র এবং সেই সাথে অনুরূপ অন্যান্য মানচিত্র ন্যাশনাল ওয়ার অ্যাকাডেমির পাশাপাশি সামরিক প্লানিং সার্কেলে ব্যবহার করার কথা জানা যায়।
‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ শীর্ষক এই মানচিত্রটি আকস্মিকভাবে এসেছে এমনটি নয়। এ ধরনের অন্য অনেক ম্যাপের ওপর ভিত্তি করে এটি তৈরি করা হয়, যার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য সীমানা সংবলিত পুরনো মানচিত্রও রয়েছে। এই মানচিত্রটি মার্কিন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল র্যালফ পিটারের উদ্ভাবন হিসেবে প্রচার ও উপস্থাপন করার মধ্যে একটি কৌশলগত বিষয় থাকতে পারে। পিটার উল্লেখ করেন যে, তার আঁকা মানচিত্রটি মধ্যপ্রাচ্যের জাতিগত ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কটের সমাধান করতে পারে।
‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ মানচিত্র ১০ জুলাই, ২০০৬ সালে প্রকাশিত অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিটারের Never Quit the Fight শিরোনামে প্রকাশিত বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল Blood Borders: How a better Middle East would look শিরোনামে মার্কিন সামরিক বাহিনীর জার্নালেও পিটারের মন্তব্যসহ মধ্যপ্রাচ্যের এই মানচিত্রটি প্রকাশিত হয়। এই মানচিত্রটির প্রণেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিটারের সর্বশেষ পোস্টিং ছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ইন্টেলিজেন্স-সংক্রান্ত ডেপুটি চিফ অব স্টাফের অফিসে। তিনি পেন্টাগনের সামরিক জার্নাল ও ফরেন পলিসি জার্নালের কৌশলগত বিষয়ে বহুসংখ্যক আলোচিত রচনার লেখকে পরিণত হন।
আমেরিকান সরকার ও সামরিক বলয়ে পিটারের চারটি কৌশলগত বিষয়ে লেখা বই অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু পিটারের কাজ রহস্যপূর্ণই থেকে যায়। প্রশ্ন ওঠে কোনো ব্যক্তি এর পুরোপুরি বিপরীত কোনো অবস্থান নিলে তিনি কি পার পেতে পারতেন? মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ওয়াশিংটন ডিসি ও এর কৌশলগত পরিকল্পনাকারীরা যা পরিকল্পনা করেছেন র্যালফ পিটার কি তাই প্রকাশ করেছেন?
পিটারের এই ধারণাকে পরিকল্পিতভাবেই মধ্যপ্রাচ্য ও তার চার পাশের এলাকার মানুষ লাভবান হবে এমন একটি ‘মানবিক’ ও ‘উপযুক্ত’ বিন্যাস হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। র্যালফ পিটার তার মানচিত্র প্রসঙ্গে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমানা সম্পূর্ণভাবে ন্যায়ানুগ হয় না। তবে এ ক্ষেত্রে অবিচারের মাত্রা সম্মুখ শক্তিকে একত্র বা বিভাজিত করে, বড় আকারের মতের ব্যবধান সৃষ্টি করে আর স্বাধীনতা ও নিপীড়ন, সহনশীলতা ও পাশবিকতা, আইনের শাসন ও সন্ত্রাসের শাসন, এমনকি শান্তি ও যুদ্ধের মধ্যে প্রায়ই পার্থক্য সৃষ্টি করে।’
তার মতে, বিশ্বের সবচেয়ে একতরফা ও বিকৃত সীমান্ত তৈরি করা হয়েছে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। স্বার্থান্বেষী ইউরোপীয়দের (তাদের নিজস্ব সীমানা নির্ধারণেও অনেক সমস্যা রয়েছে) দ্বারা আঁকা আফ্রিকার সীমানা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে লাখ লাখ লোকের মৃত্যু ঘটিয়ে চলেছে। চার্চিলের কাছ থেকে ধার করা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যায্য সীমানা তার চেয়েও বেশি কষ্টের কারণ তৈরি করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের অকার্যকর সীমানার চেয়ে অনেক বেশি সমস্যা সৃষ্টি করছে মারাত্মক বৈষম্য থেকে সৃষ্ট সাংস্কৃতিক অচলাবস্থা আর ধর্মীয় চরমপন্থা।
পিটার যখন এই মানচিত্র প্রকাশ করেন অথবা কন্ডোলিজা যখন নতুন মধ্যপ্রাচ্যের প্রসববেদনার কথা উল্লেখ করেন তখন আজ যে অগ্নিগর্ভ মধ্যপ্রাচ্য দেখা যাচ্ছে তা ছিল না। কিন্তু এসবের মধ্যে একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার যোগসূত্র যে রয়েছে তাতে সংশয়ের খুব একটা অবকাশ থাকে না।
২০০৩ মার্কিন মিত্রশক্তির আগ্রাসনের পর থেকে ইরাককে টুকরো টুকরো (পিটারের মানচিত্রে এর অবয়ব দেয়া হয়েছে) করার অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। সুন্নি, শিয়া ও কুর্দিদের মধ্যে জাতিগত বিবাদকে নানাভাবে উসকে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভলকানাইজেশন বা অস্থির করার এই প্রক্রিয়ায় খুব তিক্তভাবে দেশটি বিভক্ত হয়ে আছে। এই অস্থির করে তোলার অংশ হিসেবে ইরাকে গোপনভাবে কুর্দি দলগুলো পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের তৈরি করছে। সিরিয়া ও ইরানেও তাদের ভেতরে ভেতরে সংগঠিত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে অনেক কুর্দি তুরস্ক ও আর্মেনিয়ার পূর্বাঞ্চলে বাস করে। তাদের দিয়েও অস্থিরতা সৃষ্টির গোপন চেষ্টা রয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো পিটারের মানচিত্রে কুর্দিস্তান নামে যে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের কথা রয়েছে সেই কুর্দিরা হলো ক্রুসেড সেনাপতি গাজী সালাউদ্দিন আইয়ুবির বংশধর। তাদের এই গৌরবোজ্জ্বল পটভূমির কারণে কুর্দিদের অঞ্চলকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বিন্যাসের সময় চার ভাগে ভাগ করেছেন। আর এসব দেশের সরকার কুর্দিদের দমন করার জন্য এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে প্রতিটি দেশেই কুর্দিরা একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এখন কুর্দিদের ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে এসব রাষ্ট্রের মধ্যে বিভাজন ও অস্থিরতা সৃষ্টির দাবার ঘুঁটি হিসেবে। যারা কুর্দি জাতিকে রাষ্ট্রহারা করেছে তারাই এখন চারটি রাষ্ট্র ভেঙে কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে গোপনে সমর্থন দিচ্ছেন। এটি আসলে মধ্যপ্রাচ্যের ভলকানাইজেশন পরিকল্পনার একটি অংশ। আর এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে ইসরাইলের ইনোন পরিকল্পনার।
ইনোন পরিকল্পনা ও বৃহত্তর ইসরাইলের স্বপ্ন
ইনোন পরিকল্পনা (Yinon Plan) হলো আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য ১৯৮২ সালে নেয়া ইসরাইলের কৌশলগত পরিকল্পনা। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ওদেদ ইনোন ( Oded Yinon) এই পরিকল্পনা তৈরি করেন। এরপর তেলআবিবের সব সরকার প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এই কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই পরিকল্পনায় বলা হয়, ইসরাইলকে তার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে চার পাশের আরব দেশগুলোকে উত্তপ্ত করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য ভূরাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় ইরাককে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর ইনোন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইরাক-ইরান প্রায় দশককাল ধরে যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধের পর সাদ্দাম হোসেনের কুয়েত দখল এবং এরপর ইরাকে আমেরিকান আক্রমণে সাদ্দামের পতন হয়। এরপর দেশটিতে সূচনা হয় শিয়াপ্রধান শাসনের।
শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বের পথ ধরে এখন দেশটিতে প্রতিদিন বোমাবাজি ও সহিংসতায় শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এখন কার্যত ইরাক তিনটি অংশে ভাগ হয়ে আছে। উত্তরে কুর্দিদের প্রায় স্বাধীন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, সিরিয়া সীমান্ত থেকে বাগদাদের কাছাকাছি পর্যন্ত বিরাট অঞ্চলে আইসিসের ইসলামি খেলাফত রাষ্ট্র, আর বাগদাদসহ বাকি এলাকায় রয়েছে নূরি আল মালিকির শিয়াপ্রধান সরকারের নিয়ন্ত্রণ।
বস্তুত দু’টি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ইনোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করা হচ্ছে। এই দু’টির একটি হলো ইসরাইলকে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই আঞ্চলিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত করতে হবে নিজেকে। দ্বিতীয়ত, পুরো অঞ্চলকে নৃতাত্ত্বিক ও সম্প্রদায়গত পার্থক্যের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। আর এসব দেশের মধ্যে এমনভাবে বিরোধ-সঙ্ঘাত লাগিয়ে রাখতে হবে যাতে একপর্যায়ে এসব দেশের সরকার তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে কার্যত ইসরাইলের আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সেই সাথে তাদের অবস্থা এমন যেন হয়, যাতে তারা কোনো সময় ইসরাইলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে না দাঁড়াতে পারে।
ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রথম যখন পত্তন হয় তখন এ ধারণাটি ছিল না। এটি ইনোন পরিকল্পনার মাধ্যমে গ্রহণ করে ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যে এর পরের বিভিন্ন ঘটনা এবং সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি সামনে রাখা হলে এটি স্পষ্ট হবে।
ইসরাইলে বর্তমানে ক্ষমতাসীন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের লিকুদ পার্টি এবং দেশটির সামরিক ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের বড় অংশ বৃহত্তর ইসরাইলের ধারণায় বিশ্বাসী। ইহুদিবাদের প্রতিষ্ঠাতা তিইডর হার্জল মিসর থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত ইসরাইলের সীমানা হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন তার বইয়ে। ইহুদি রাব্বি ফিশকম্যান যে ইসরাইলের কথা তার বইয়ে লিখেছেন তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন সিরিয়া ও লেবাননের একটি অংশকেও। ইরাকের বর্তমান পরিস্থিতি, ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধ ও সাম্প্রতিক শিয়া-সুন্নি সঙ্ঘাত, ২০১১ সালের লিবীয় যুদ্ধ, সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি, মিসরের শাসন পরিবর্তন, নীল নদের উজানে ইথিওপিয়ায় বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার ও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগÑ এসব কিছুতে বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার এই প্রকল্পে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আরবদের বিরোধিতা এবং পশ্চিমের লোকদেখানো আপত্তির মুখে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের কাজ এখন অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলছে।
বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনায় বেশ ক’টি প্রক্সি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও রয়েছে। তবে কোন কোন দেশকে এই প্রক্সি রাষ্ট্র বানানো হবে সেটি উল্লেখ করা হয়নি। কানাডার মন্ট্রিয়ালের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশনের সমাজতাত্ত্বিক ও গবেষক মেহদি দারবিশ নাজেমোরায়া গ্লোবাল রিসার্র্চে লেখা এক নিবন্ধে এ ব্যাপারে বিস্তারিত ধারণা দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো তিনি আরব জাগরণের সূচনালগ্নে এর গতিপথ সম্পর্কে সম্ভাব্য যে ধারণা ব্যক্ত করেছিলেন তা এখন অনেকাংশে বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক অস্থিরতা ও রক্তক্ষয়ের মধ্যেও একমাত্র দেশ ইসরাইল আমেরিকার সর্বাত্মক সহায়তায় স্থিতি বজায় রাখতে পারছে। অধিকন্তু চার পাশের দেশগুলোর অস্থির অবস্থা দেশটির প্রভাব সম্প্রসারণের কাজকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে। এতে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে ইহুদি বসতি বিস্তারের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে পারছে ইসরাইল। এ ক্ষেত্রে দেশটির যা কিছু প্রয়োজন তা তার মিত্ররা সরবে বা নীরবে দিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে আরব উপদ্বীপে তৈরি হয়ে আছে এক বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থা। এখানকার বংশপরম্পরায় শাসিত সব ক’টি আরব দেশের ভঙ্গুর শাসন টিকিয়ে রাখা আমেরিকান, ক্ষেত্র বিশেষে ইসরাইলের সাহায্য ছাড়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইসরাইলের সাথে অপ্রকাশ্য সম্পর্ক তৈরি করেছে অনেক আরব দেশ। এসব দেশের সরকারের সামনে টিকে থাকাটাই এখন মূল এজেন্ডায় পরিণত হয়েছে। জনগণের মৌলিক প্রয়োজন পূরণে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব আর তীব্র বণ্টন ও চাকরিবৈষম্য থেকে সৃষ্ট অসন্তোষকে এখানকার বেশির ভাগ দেশে অনেকটা ছাইচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। এখানকার শাসক পরিবারগুলোর অভ্যন্তরীণ বিরোধও মাঝে মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু ক্ষমতা হারানোর অভিন্ন ভীতি তাদের আবার একই কাতারে নিয়ে আসে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে আজ যে অস্থিরতা তার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি হলো ইসরাইল। দেশটির নিরাপত্তা কৌশলের অংশ হলো, প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলোর ভেতরে এবং পরস্পরের মধ্যে সঙ্ঘাত বাধিয়ে রেখে এক দিকে তাদের নিরাপত্তার জন্য ইসরাইলের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল করে রাখা, অন্য দিকে দেশটির ভূখণ্ড সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি করা। প্রথম দিকে আরব জাগরণে বিভিন্ন দেশে শাসন পরিবর্তনে ইসরাইলকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন মনে হয়েছিল; কিন্তু এর রেশ ধরে যে পরিবর্তন সেখানে ঘটছে, তাতে এর বড় সুবিধাভোগী মনে হচ্ছে তেলআবিব। ইসরাইল ২০ বছর ধরে অসলো চুক্তির ধারাবাহিকতায় দুই রাষ্ট্র সমাধানের ব্যাপারে ফিলিস্তিনের সাথে আলোচনা করে চললেও কখনো এ ফর্মুলায় সমাধানে কার্যকরভাবে উদ্যোগী হয়নি; বরং কট্টরপন্থীরা অদ্ভুত এক সমাধান ফর্মুলা দিয়েছেন। সেটি হলো পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ফিলিস্তিনিরা সরে গিয়ে জর্ডানে চলে যাবে। সেখানে জর্ডান-ফিলিস্তিন যৌথ সরকার হবে। এ অদ্ভুত ফর্মুলা কোনো সময় আলোচনায় সেভাবে আসেনি; কিন্তু যেভাবে বেপরোয়া গতিতে পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, তাতে সেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসরাইল রাজি না হওয়ার ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। অন্য দিকে, শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে যে সিনাই উপত্যকা মিসরকে ছেড়ে দিয়েছিল ইসরাইল, সেটি আবার দখল করে নেয়ার কথা বলছে কট্টরপন্থী ইসরাইলিরা। এ জন্য সিনাইয়ে জঙ্গি তৎপরতার কথা বেশ ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার পর গাজায় হামাসের সরকার এখন আর নেই; কিন্তু ইসরাইলের হামলা সেখানে চলছে নিয়মিতভাবে। এ জন্য তিন ইসরাইলি যুবক অপহরণের নতুন একটি নাটক তৈরি করা হয়েছে। ইসরাইল তার ভূখণ্ড সম্প্রসারণের পথে প্রধান বাধা মনে করত মিসরকে। মিসরের শক্তিশালী সেনাবাহিনী এবং দেশটির জনপ্রিয় ইসলামি দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে মুখোমুখি করে দু’টি শক্তিকেই দুর্বল করার ব্যবস্থা হচ্ছে। হত্যা ও দমন তৎপরতায় সেনাবাহিনী বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, অন্য দিকে ব্রাদারহুডের হচ্ছে শক্তি ক্ষয়। ইহুদি বংশোদ্ভূত মায়ের সন্তান হিসেবে জেনারেল আল সিসির ইসরাইলের প্রতি আনুকূল্য এখন এক ধরনের ওপেন-সিক্রেট বিষয়। নতুন অবস্থায় ইসরাইল তার রাষ্ট্রের সীমানা সম্প্রসারণে অনুকূল অবস্থা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে দ্রুত। আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা এ ধরনের উদ্যোগে সমর্থন করবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে এর বিরুদ্ধে তারা কার্যকর কোনো ভূমিকা নেবে বলেও মনে হয় না। মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি যে সঙ্ঘাত এখন চরম আকার নিয়েছে, তার পেছনে কলকাঠি নেড়েছে ইসরাইলি গোয়েন্দারা। যেসব আরব দেশ এখনো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের অনেকের সাথে গোয়েন্দা সংস্থাপর্যায়ে নিয়মিত আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে ইসরাইলের।
অচিরেই মধ্যপ্রাচ্যের নতুন অবয়ব!
অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছর সময়ের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি একটি নতুন অবয়ব নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেখানে সক্রিয় বিভিন্ন শক্তি নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। ইসরাইল যেমন তার নিজস্ব ছক অনুসারে সব সাজাতে চাইছে, তেমনিভাবে কট্টরপন্থী ইসলামিস্ট অথবা মধ্যপন্থী ইসলামি আন্দোলনও তাদের নিজস্ব হিসাব-নিকাশ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি থেকে যুক্তরাষ্ট্র অথবা পাশ্চাত্য নিজেদের গুটিয়ে নেবে, এমনটা মনে করারও কারণ নেই। রাশিয়া এখানে অধিকতর সক্রিয় হয়ে ঊঠবে। বাণিজ্য স্বার্থের পরিসর ছাড়িয়ে প্রভাবকে আরো বিস্তৃত করতে চাইতে পারে চীন। উপসাগরীয় দেশগুলোর শাসকদের মধ্যে ঐক্য এখনকার মতো না-ও থাকতে পারে। ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রভাব বিস্তারে সঙ্ঘাত ও সমঝোতার টানাপড়েন আরো বেশ কিছু দিন চলতে থাকবে। রাজতান্ত্রিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা, সেনাবাহিনীকে কর্তৃত্ব ধরে রাখতে ইন্ধন জোগানো এবং শিয়া-সুন্নি দুই পক্ষের মধ্যে সঙ্ঘাত লাগিয়ে রেখে ইসরাইল তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। আর এ সঙ্ঘাত ও অস্থিরতার পথ ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ায় নতুন রাষ্ট্রবিন্যাস অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। এ পথে এখন রয়েছে সিরিয়া ও ইরাক। এরপর তালিকায় স্থান পাবে লিবিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এমনকি উপসাগরের স্থিতিশীল সরকারগুলোও একপর্যায়ে অস্থির হয়ে উঠতে পারে। এর পেছনে বিশ্বব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিগুলোর যে পরিকল্পনা ও ইন্ধন সক্রিয়, তাতে সন্দেহ নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের সীমান্ত এখন ক্রমেই যে ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে তার পেছনে রয়েছে নতুন মধ্যপ্রাচ্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। ১৯১৬ সালে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে অনুষ্ঠিত সিকেস-পিকট চুক্তি অনুসারে মধ্যপ্রাচ্যের যে সীমানা তৈরি হয়েছিল, তা না রাখার মধ্যেই স্বার্থসিদ্ধি দেখছে ইসরাইল ও তার পৃষ্ঠপোষকেরা। এখানে অরাষ্ট্রিক বিভিন্ন শক্তি যে একের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষ লড়াইয়ে নেমেছে তার পেছনে রয়েছে নানা রহস্যময় তৎপরতা। লেবাননে যে হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার প্রতিরোধ যুদ্ধের কারণে তখনকার নতুন মধ্যপ্রাচ্যের প্রসববেদনা বা ‘গঠনমূলক ধ্বংসযজ্ঞ’ সফল হয়নি সেই হিজবুল্লাহ এখন আর ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেই। এটি লড়াই করছে সিরিয়ায় সুন্নি মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে। এ ধরনের সঙ্ঘাতের ইতি ঘটানো না গেলে নতুন মধ্যপ্রাচ্য থেকে জন্ম নেবে এক বিরাটকায় ইসরাইল যা মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম শক্তিকে স্থায়ীভাবে পদানত করে রাখতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্রকারীরা যেমন এগিয়ে চলেছে তেমনিভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গোষ্ঠীও সক্রিয়।
বছরের পর বছর অবরুদ্ধ থেকেও গাজার মানুষ সেই লড়াইয়ে জীবন দিচ্ছে। এই শক্তিটিই ইসরাইলের দখলদারিত্বকে সামনে এগোতে দিচ্ছে না কোনোভাবেই। এই চেতনাকেই শেষ করে দিতে চাইছে ইসরাইল ও তার মিত্ররা।
আমার শেষ কথা আজ তোমরা ঘুমিয়ে আছে। , জাগো, জাগো হে, আমার মুসলমান ভাই ও বোনেরা, শান্তির ছায়া তলে আসো, বুঝতে চেষ্টা করো ওরা কারা, ওরা কেন মুসলমানদের সাথে এমন ব্যবহার করছে। তোমাদের জাগার সময় হয়েছে আর ঘুমিয়ে থেকো না।
যারা আজ, এই ইসরাইলিদের হাত মিলায় তাহাদেরকে আমার মুসলমান ভঅবতে কষ্ট হয় কিন্তু তারা যে কালিমা পাঠ করেছে। তবে তারা যে মুনাফিক এতে এটাই অকট্য প্রমান হয়।
আমাদের উচিৎ আল সৌদ সম্প্রদায় কে হুসিয়ার করে দেয়া। তারা যেন সাবধান হযে যান, না হয় তারা ইতিহাসের আস্থাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানের কাছে, ঘৃনার পাত্র হবেন। আমার সন্দেহ হয়, আস সৌদ রাজারা আমার নবীর অনুসারি কিনা। বা কৌরাইশ বংসের কিনা।
আসুন আমরা সবাই মিলে তাদের জন্য দোয়া করি আল্রাহ তায়ালা যেন তাগের কে প্রকৃত ইসলামের দাস বানায়।
আমিন!!!!
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২২
মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন: হ্যা, ইমরান আশফাক ভাই, আপনার চিন্তা সত্যি, একান্তই সত্যি, আমাকে বারবার আঘাত করে, হৃদয়কে খন্ড বিখন্ড করে, কিন্তু ভাবতে বড়ই কষ্ট হয়, কেন আমরা একাত্রিত হতে পারি না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫০
ইমরান আশফাক বলেছেন: মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র আরও একাধিকবার পরিবর্তিত হবে অত:পর আরব মুসলমানদের চৈতন্য হবে যে আমরা বারবার এইভাবে খন্ডিত হবো কেনো? তখন থেকে তারা চেষ্টা করবে একতাবদ্ধ হবার জন্য, তার আগে ওদের কোন বোধোদ্বয় হবে না।
আর সৌদ বংশের কথা এই স্যামুতেই অনেক আলোচনা হয়েছে, আপনি খুজে নিয়ে পড়ে দেখবেন।