![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গণজাগরন:
ফেব্রুয়ারি ৫ তারিখ। রাজাকার কাদের মোল্লার বিচারের রায় ঘোষনা হলো। মৃত্যুদন্ডের বদলে দেওয়া হলো যাবজ্জীবন কারাদন্ড। একজন "কসাই", যে ৩৪৪ জন কে হত্যা করেছে তার জন্য এইটি "গুরু পাপে লঘু দন্ড"। এই রায় কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারলেন না কিছু সাহসী "দেশপ্রেমিক"।
"দাবী একটাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই" স্লোগান নিয়ে তারা নেমে আসলেন রাস্তায়, একত্রিত হলেন শাহবাগে। তাদের সাহসিকতার বিচ্ছুরনে জেগে উঠল অসংখ্য ঘুমন্ত দেশপ্রেমিক। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে '৭১ এর চেতনা বুকে নিয়ে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে তারা মিলিত হলেন শাহবাগের মোহনায়। এই চেতনা ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে। শুরু হলো "গণজাগরন"।
আন্দোলন চলছিল দিন-রাত ২৪ ঘন্টা, আবিরাম। ছিলনা কোনো দলীয়, ধর্মীয় ভেদাভেদ - সবার পরিচয় একটাই "আমি বাঙালী"। গণজাগরনের দাবানলে জামায়াত-শিবির মাঠ ছেড়ে ফেইসবুকে ফটোশপের দক্ষতা দেখানো শুরু করল, আশ্রয় নিল মিথ্যাচারের, ব্যক্তিগত আক্রমনের। পাশাপাশি আরেকটা দল আসলো যাদের দাবী "বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান না করে ৪২ বছর আগের ঘটনা নিয়ে মাতামাতি কেনো?" জবাবে '১৩ এর মুক্তিযোদ্ধারা ফেইসবুকে, ব্লগে মিথ্যাচার প্রতিহত এবং আন্দোলনের যৌক্তিকতা বোঝাতে লাগলেন। ঐ দলটি একটি সার্বজনীন উপাধি পেল "ছাগু"। শুরু হলো অনলাইন যুদ্ধ।
রাস্তায়, অনলাইনে আন্দোলন চলছিল, সর্বত্র "জয় বাংলায়" মুখরিত। জামায়াত-শিবির অনলাইনে ও কোনাঠোসা, "ছাগু" দের গলার স্বর নিম্নমুখী। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো হিসেব নিকেশে বসে পড়ল। এমন সুযোগ যে হাত ছাড়া করা যাবে না। অধিকাংশই একাত্ততা ঘোষনা করল। আওয়ামীলিগের তো সোনায় সোহাগা, বিএনপি এর মাথায় হাত। আন্দোলন তখনো স্বতঃস্ফুর্ত, সার্বজনীন, অহিংস। কোনো উস্কানির ফাঁদে পা দেওয়া যাবেনা। আন্দোলনে অনেক স্লোগানের মধ্যে শোনা গেল "একটা, একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর"। রাজনৈতিক নেতারা বারবার অনুপ্রবেশ করতে যেয়ে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলেন। গণজাগরনের সুফল ইতিমধ্যে আসা শুরু হয়েছিল। এইভাবেই কালের পরিক্রমার অমোঘ নিয়ম মেনে চলে এল ১৫ ই ফেব্রুয়ারি।
রাত ৯ টার দিকে পল্লবী তে নিজ বাসার পাশে নৃশংসভাবে খুন হন স্থাপতি আহমেদ রাজীব হায়দার ওরফে "ব্লগার রাজীব"।
রাজনীতি ও ইসলাম:
হত্যাকান্ডের খবর সেই রাতেই টেলিভিশনে, অনলাইনে লাইভ ফিডে জায়গা করে নিল। সর্বত্র প্রতিবাদের জোয়ার। ব্লগার রাজীব তার ব্লগকে যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, গণজাগরন মঞ্চে তিনি ছিলেন প্রথম সারির যোদ্ধা। '৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজেদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে জামায়াত এই দেশকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য বুদ্ধিজীবিদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল, একই ভাবে '১৩ এর মুক্তিযুদ্ধে ঠিক যখন জামায়াত-শিবিরের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল তখনই ব্লগার রাজীবকে হত্যা করা হল (তদন্ত এখনো চলছে, কিছু অনলাইন পত্রিকায় তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে যা পড়লাম তাতে ভারতের চলচ্চিত্র "গ্যাংগস অফ ওয়াসিপুর " এর অন্যতম প্রধান চরিত্র সরদার খানের হত্যার প্লটের সাথে মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে) । রাজীব পেলেন '১৩ এর মুক্তিযুদ্ধের "প্রথম শহীদ" উপাধি। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবীর সাথে যুক্ত হল আরেকটা দাবী "জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা হউক"। কেউ কেউ একটু আগ বাড়িয়ে বললেন "ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হউক"। কিন্তু জামায়াত-শিবির তো এত সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। ১৯৭৮ সালে পূণর্জন্মের পর তাদের আছে ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা। এই ৩৫ বছরে গাছ অনেক ডালপালা ছড়িয়েছে। সবগুলো ডালের ব্যবহারই তারা করবে। না, তারা এইবার আর ডালের দিকে হাত বাড়ালনা, সরাসরি শিকড়ে চলে গেল। এই শিকড়ের নাম তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে কাস্টমাইজডকৃত "ইসলাম"।
হত্যাকান্ডের ১২ ঘন্টার মধ্যে ব্লগার রাজীব সম্পর্কে আরেকটি তথ্য বায়ুর চেয়েও তীব্র বেগে ছড়িয়ে পড়ল যে তিনি যুদ্ধাপরাধী ছাড়াও মানুষের অস্তিত্বের সাথে জড়িত একটি অনুভূতির বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। সেটি হলো "ধর্ম"। মুসলিম প্রধান দেশে তার ব্লগ নামক অস্ত্রের মুখ্য নিশানা ছিল "ইসলাম"। নির্দলীয়, ধর্ম নিরপেক্ষতা, স্বতঃস্ফুর্ততার বেড়াজাল ভেঙে অবশেষে আশার আলো দেখলো "রাজনীতি"।
নিজেদের রাজনীতির নিভু নিভু প্রাণ প্রদীপকে আবার জ্বলে উঠতে দেখে জামায়াত-শিবিরের তখন "পোঁয়া বারো"। কিন্তু এতে তারা খুশি হলনা, "পোঁয়া বারো" কে "পোঁয়া চব্বিশ" করতে উঠেপড়ে লাগল। রঙের কৌঁটা আগে থেকেই খোলা ছিল, তারা এই কৌঁটার সাথে আরও কয়েকটি কৌঁটা এনে ইচ্ছেমত সর্বত্র রঙ ছিঁটাতে শুরু করল। নিজেরাই হয়ে উঠল "ইসলাম বিদ্বেষী"। অত্যন্ত রহস্যজনক ভাবে রাজীবের নিজের লেখা ব্লগগুলো অধিকাংশই উধাও হয়ে গেল (সূত্র: ডেইলি স্টার )। "সোনার বাংলা" ব্লগ সাইট বিটিআরসি (BTRC) ব্লক করে দিল। বিভিন্ন ব্লগ সাইট থেকে "থাবা বাবা" ক্রমশ বিলীন হয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু তার ফেইসবুক আইডি তখনো ডাটাবেইজে অক্ষত অবস্থায় ছিল।
মহোৎসাহ নিয়ে ব্লগারের ফেইসবুক আইডি তে গেলাম, নোটগুলো পড়তে লাগলাম। পড়তে পড়তেই হঠাৎ মনে কি যেন একটা সজোরে ধাক্কা দিলো আর সেই ধাক্কায় আমার অন্তর চক্ষু তার দৃষ্টিশক্তি হারালো। দৌড়ে গিয়ে বাবা কে বললাম "রাজীব তো নাস্তিক ছিল, ওর উচিৎ শিক্ষাই হয়েছে।"
বছরের পর বছর হরেক রকমের ঘটনার অভিজ্ঞতায় ভারী এই অন্তর চক্ষু ক্ষনিকের জন্য অন্ধ হয়েছিল বটে, তবে আবার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতেও তার খুব একটা বেশী সময় লাগলো না। ঘন্টা তিনেকের মধ্যে আরেকটি ফেইসবুক পোস্ট তাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করল। সে আবার চোখ মেলে তাকালো। (চলবে)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: উপরে বর্ণিত সকল ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত অথবা মৃত কোনো ব্যক্তির সাথে ঘটনা ও চরিত্র মিলে গেলে তা নেহাৎই কাকতালীয়। এই জন্য লেখক কোনো ভাবেই দায়ী নয়।
©somewhere in net ltd.