নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিত্য নতুন স্বপ্ন দেখি,দূর থেকে তাই আড়াল করি।

কুশল রাজ রায়

আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে\nআসে নাই কেহ অবনি পরে\nসকলের তরে সকলে আমরা\nপ্রত্যেকে আমরা পরের তরে।\n\nএই আমার পরিচয়, আমার নীতি।\nফেইসবুকঃ- www.facebook.com/kushal.raj120

কুশল রাজ রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি জীবনের অবসান -হতে পারত অন্য কিছু?

২১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৫৬

আজ থেকে প্রায় এক বছর আগে শহর থেকে কিছু দূরে এক গ্রামে গিয়েছিলাম, গ্রামের সৌন্দর্যের তারিফ শুনে আর থাকতে পারি নি সে রাতেই একা একা বেড়িয়ে পড়ি গ্রামের পথে, শহরের খুব কাছাকাছি হওয়ায় তেমন একটা অসুবিধায় ও পড়তে হয়নি। ভারী সুন্দর এক গ্রাম, চারিদিক ঘিরে রেখেছে নদী, ফসলের মাঠ, গ্রামীণ ঘরবাড়ি, শহরের পাশে এত সুন্দর জায়গা আছে আমার জানা ছিলো না। জ্যোৎস্নার আলোয় গ্রামটিকে দেখে মনে হচ্ছিলো স্বর্গপুরী থেকে এই গ্রাম কোনো অংশেই কম হবে না।



গ্রামের শেষমাথায় একেবেকে গেছে নদী। পাশেই বড় একটি ঘাট, দিনের বেলা এদিকে মানুষ যাতায়াত করে। ঘাটলার ছাউনী তলে একটি লোককে দেখতে পেলাম, হুইল চেয়ারে বসে আছে,হাতে ভিক্ষার থাল বোঝাই যায় এ একজন ভিক্ষুক। ছোটবেলা থেকেই এই ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি, লোকটির পাশে গিয়ে দাড়ালাম,দীর্ঘ এক ঘন্টা লোকটির সাথে কথা বলে যা বুঝেছিলাম ভাগ্যের নির্মম পরিহাস একে এখানে ঠেলে দিয়েছে।লোকটির নাম রমিজ,এককালে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি চাকরী করত, এক দূর্ঘটনায় পা দুটি হারায়, বউ ছেলে মেয়েও তাকে ছেড়ে চলে গেছে।শেষ সম্বল এই গ্রামের বাড়ি, আর বৃদ্ধ মা। জ্যোৎস্নার স্পষ্ট আলো নদীর জলে মিশে চারিদিকে জ্যোতি ছড়াচ্ছে, অপরূপ সে দৃশ্য,নিষ্পলকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। রমিজ মিয়া অনেক ভালো ভাটিয়ালি গান করে,শুনতে ভারী সুন্দর লাগে। প্রকৃতি পরিবেশের সাথে গানগুলো বেশ মানানসই, এরই মাঝে আমাকে কয়েকটি গান শুনালো,দারুণ গানের গলা। প্রশংসা না করে থাকতে পারলাম, উনাকে বলেছিলাম ইচ্ছা করলে আনেক ভালো গায়ক হতে পারেন। সত্যি বলতে আমাদের দেশের গ্রাম-গঞ্জে এরকম অনেক প্রতিভাধর আছে কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে এরা আজীবনভর ঘরের কোণেই রয়ে যায়। রাত্রি বাড়ার সাথে সাথে চাদের আলো যেন আরো বেশী জ্যোতি ছড়াচ্ছে, এবার যাবার পালা, উঠার আগে লোকটি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদল।অনেকদিন ধরে কেউ তার সাথে কথা বলে না আজ অনেকদিনপর আমার সাথে কথা বললো। লোকটির জন্য কষ্ট লাগলেও কি আর করার আছে আমার। মূল্যহীন অনুভূতি না থাকাই ভালো, এতে শুধু কষ্টই বাড়ে। বিদায় নিয়ে ফিরলাম আপন গন্তব্যের পথে।



তারপর কেটে গেলো একটি বছর নানা ঝুট ঝামেলায় আর যাওয়া হয়নি গ্রামটিতে,আস্তে আস্তে ভুলতে শুরু করেছিলাম রমিজ মিয়াকে। সেদিন চার রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে বসে আছি, চাওয়ালার ভাঙা টেপ রেকর্ডার এ গানটি,



" আমি যে তোমার রে বন্ধু,

তুমি বন্ধু কার?

তোমার লাগি কান্দে রে বন্ধু

প্রাণপাখি আমার! ”



বেজে উঠল, গানটি আমার অনেক পরিচিত। বিশেষ করে আমাদের ভাটি অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়, কিন্তু আমার মনে আছে আজ থেকে এক বছর আগে রমিজ মিয়ার কণ্ঠে এই গানটি শুনে ছিলাম। কিন্তু রমিজ মিয়া কোথায়? আমি আজই যাব সেই গ্রামে।

সাথে সাথেই রওনা হলাম গ্রামের উদ্দেশ্যে,রমিজ মিয়াকে খুব দেখার ইচ্ছা হলো, দীর্ঘ এক বছর হতে চলল তাকে দেখি না। সময় খুব তাড়াতাড়ি পার হয়ে যায়, এইতো সেদিন রমিজ মিয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো। কিন্তু আজ প্রায় এক বছর হতে চলল।সন্ধ্যেবেলা গ্রামে এসে পৌঁছলাম কিন্তু রমিজ মিয়াকে কোথায় পাই, বেশীদূর যাওয়া লাগলো না তার আগেই একজন বলে দিলো রমিজ মিয়ার মৃত্যুর খবর।ক্ষনিকের জন্য নীরব হয়ে গেলাম,হঠ্যাত করেই কেমন নিষ্টুরের মতোন মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়ব।রমিজ মিয়ার মৃত্যুর সপ্তাহ দুয়েক হয়েছে। খুব ইচ্ছে ছিলো আজ তাকে ভালো কিছু খাওয়াবো, আমাকে সেদিন বলেছিলো অনেকদিন ধরে ভালো কিছু খাওয়া হয়না। কিন্তু কোথায় সে,পৃথিবী ছেড়েই চলে গেলো ভাবতেও খারাপ লাগে। ধীরে ধীরে রাত্রি হচ্ছে,চারিদিক নীরব, নির্জন জনপদ। আজও বসে আছি সেই স্থানে যেখানে সেদিন আমি আর রমিজ মিয়া বসেছিলাম।কিন্তু আজ রমিজ মিয়া নেই, জায়গাটা কেমন জানি ফাকা মনে হচ্ছে । আজও আকাশে চাদ উঠেছে,নদীর জলে মিশিয়ে দিচ্ছে আপন আলো। নদীর স্রোতোবহা চলছে আপন গতিতেই সময়ের তালে।সেদিন কেউ একদিন আমাকে ধরে কেঁদেছিল, মনের কথাগুলো বলেছিল।নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে শুরু হলো।মাঝে মাঝে ভাবি, মূল্যবান মানুষের কথা শুনার জন্য অনেকেই আছে কিন্তু একজন মূল্যহীন মানুষের কথা হাজারো মূল্যবান হলেও কারো শুনার সময় নেই। তাদেরই একজন ছিলো হয়তো রমিজ মিয়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.