নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা দেখি তাতেই আশ্চার্যনিত হই!!

লাল চাঁন

[email protected]

লাল চাঁন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের গার্মেন্টস শিল্প ও ব্র্যান্ডিং

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪



গত শুক্রবার (২৬.০৪.২০১৩) আমার বাসার কাছের বেঙ্গল নিট কম্পোজিট নামের এক গার্মেন্টস থেকে গার্মেন্টস কর্মীরা দৌরা্চ্ছে আর কাঁদছে। তাদের চোখে মুখে ভয় ! সাভার ট্রাজেডি এখনও বিদ্যমান। আমরা প্রশ্ন করছি কেউ কিছু বলছেনা। ভাবলাম আগুন লাগলো কিনা? এলাকার এক চাচা বহু কষ্টে একজনকে থামাতে পারলো, সে হাপাতে হাপাতে বলতে লাগলো, একদল মানুষ মিছিল নিয়ে এসে গার্মেন্টেসএ ঢিল ছুড়ছে আর আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে। ঢিলের আঘাতে দুইজনের মাথা ফেটে গেছে, তাই গার্মেন্টস বন্ধ কইরা দিছে, ভয় পাইছি তাই কানতাছি। মুরুব্বি টিপ্পনি কেটে উত্তর দিলো " গার্মেন্টস বন্ধ হইলে হেতেগো (গার্মেন্টস মালিক) কি হইবো? হেতেরা কোটি কোটি টেকার মালিক এরম দুই একটা গার্মেন্টস বন্ধ হইলে কিচ্ছু হইবো না! গার্মেন্টস বন্ধ হইলে বেতন না পাইলে তোরা খাবি কি? বাসা ভাড়া দিবি কেমনে? মেয়েটা চুপসে গেলো এবং মাথা নিচু করে চলে গেলো, অত কিছু মাথায় তার ঢোকে না শুধু এটুকু বোঝে মালিকরা শোষন করছে আর তাদের বিপদের মুখে রেখে কাজ করিয়ে নিচ্ছে।



চাচা বকবক করেই গেলো, একটি পরিত্যাক্ত বড় ভবন দেখিয়ে আমাকে চাচা বললো দেখো ভাইস্তা এই বিল্ডিংটা একটা গার্মেন্টস আছিলো, মারামরি কইরা বন্ধ হইছে মালিকের কিছু হইছে? কিন্তু এলাকার অনেকেই আগে কাম কাইজ কইরা খাইতো, বাসা ভাড়া দিতো। অহন বেকার, বাসা ভাড়াও হয় না।



জ্বী, চাচা যে কথা বলছে তা নির্মম হলেও বাস্তব। দেশে রপ্তানীতে শির্ষে এই শিল্পটি চিন, শ্রিলংকা ও ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশের সাথে প্রবল প্রতিযোগীতা করে টিকে আছে । আর এই শিল্পটি পরোক্ষভাবে টিকিয়ে রেখে ব্যবসার মুখ দেখিয়েছে আধপেটি ঐ মানুষগুলী। শ্রমিদের দেখার যেন কেউ নেই, অন্যান্য দেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম মুজুরিতে শ্রমিক লভ্যতায় দেশে গড়ে উঠেছে দেশেী-বিদেশী মালিকদের বহু গার্মেন্টস শিল্প। দেশের স্বার্থে আমাদেরই বাঁচিয়ে রাখতে হবে এ শিল্প। এতগুলো দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক যাতে বেকার না হয়ে পরে এ ব্যাপারে শিল্প মালিকদের এ শিল্পে ব্র্যান্ডিং করা জরুরী হয়ে পড়েছে।



মিডিয়ার কল্যানে আমরা দেখেছি সাভার ট্র্যাজিডিতে বেঁচে যাওয়া মানুষের অনুভূতি, তারা সুস্থ হলে আর এ পেশায় আসতে চান না। টিভিতে তাদের আর্তনাদ দেখে ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে দেশের প্রায় ১২ লাখ কর্মী যার ৮৫ ভাগই নারী কর্মী। স্পেক্টরা, ফনিক্স, তাজরীন এর পর রানা প্লাজা ধস, আগুন সতীর্থদের মৃতু্ দেখে গার্মেন্টস শ্রমিকরা দিশেহারা! তাহলে কি পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ! পিছিয়ে থাকবে কি এ শিল্পের উদ্যোক্তরা?? এ শিল্পের পজেটিভ ব্র্যান্ডিংই বর্তমানে কর্মরতদের আস্থা ফিরতে পারে বলে আমি মনে করি !



শ্রমিকদের আস্থা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের ইমেজ বৃদ্ধিতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিলে আশা করি দ্রুত এ পরিস্থিতি বদলে যাবে।

১. এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান ঢাকার বাহিরে স্থাপন বা স্থানান্তর করা। এতে শহর এর জ্যাম কমবে, শহরের ব্যয়বহুল জীবন যাত্রার কবল থেকে শ্রমিকরাও রক্ষা পাবে।



২. সর্ব্বোচ্চ তৃতিয় বা চতুর্থ তলার মধ্যে গার্মেন্টস শিল্প স্থাপন করতে হবে।



৩. গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভবনটি রাজউক/ স্থানীয় নির্মাণ তত্বাবধায়নকারী সরকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আছে কিনা? কত তলা পারমিশন ছিলো? বানিজ্যিক বা আবাসিক কিনা তা জেনে নিতে হবে



৪. শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ও বিকল্প সিড়ির ব্যবস্থা করা



৫. প্রতি বছর একবার ভূমিকম্প/ অগ্নি বিষয়ক মহড়া প্রদান



৬. শ্রমিকদের যথাসম্ভব আবাসন ব্যবস্থা ও ট্রান্সপোর্ট সুবিধা প্রদান করা।



৭. শ্রমিকদের ডিজিটাল আইডি কার্ড প্রদান



৮.হেলথ্ চেক আপ এর ব্যবস্থা রাখা



৯. সম্ভব হলেগ্রুপ ইনসুরেন্স এর ব্যবস্থা করা



১০. বাৎসরিক খেলাধুলা, বনভোজন আয়োজন করা।



১১.শ্রমিকদের সকালের নাস্তা প্রদান ( ডিম, কলা, রুটি অথবা শুধু ডিম),

খুব সকালে ডিউটি থাকে বলে এরা অনেকে খেয়ে আসতে পারে না।



১২. সম্ভব হলে চাইল্ড কেয়ার রুম রাখা, অনেক শ্রমিক তার দুধের বাচ্চা রেখে কাজে আসে তাই কাজে মন দিতে পারে না।



১৩.শ্রমিক, মালিক, কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তিনমাস/ ছয়মাস পর পর মতবিনিময় অনুষ্ঠান আয়োজন, এতে গার্মেন্টস কর্মীরা তাদের সমস্যা সরাসরি মালিক পক্ষের কাছে বলতে পারে।



১৪. প্রতি মাসে সেরা কর্মী বাছাই করে ক্রেস্ট / নগদ ইনসেনটিভ প্রদান



১৫.গার্মেন্টস মালিকরা এই মূহুর্তে রানা প্লাজার দূর্ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি আহতদের পাশে দাড়ানো, মৃতদের পবিরারে আর্থিক সাহায্য তুলে দেয়া এবং পঙ্গুদের দায়িত্ব গ্রহন এর ঘোষনা প্রদান



১৬. প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিকদের কি কি সুবিধা দেয়া হচ্ছে এ ব্যাপারে সাইনবোর্ড প্রদর্শন



১৭. প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বা সেবা সর্ম্পকে বিলবোর্ডে প্রদর্শন।



১৮. প্রতিষ্ঠানের উপরোক্ত কার্যক্রম প্রেস রিলিজ বা বিজ্ঞাপন আকারে জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করা।



* আমাদের দেশের অনেকে গার্মেন্টসএ ইতিমধ্যে এসব সুযোগ সুবিধা ও ব্র্যান্ডিং শুরু করেছে। বাকীরা এগিয়ে আসলে এমন মৃতু্ আর হতাশা দেখতে হবে না। সাভার ট্র্যাজেডিতে নিহতদের আত্বার মাগফিরাত কামনা করছি আর আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।



ব্র্যান্ড বিষয়ক পর্ব ভিত্তিক অন্যান্য লেখা (ব্র্যার্ন্ডিং ও আমাদের দেশিয় পণ্য)

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:১৮

সানফ্লাওয়ার বলেছেন: খুব সুন্দর করে বাস্তব বর্ণনা করেছেন, স্বপ্ন দেখি আপনার লেখা বাস্তবায়ন হচ্ছে।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:৪৯

লাল চাঁন বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩

শোকার্ত উপকূল বলেছেন: সুন্দর পোস্ট

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৫

লাল চাঁন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৩| ১০ ই মে, ২০১৩ ভোর ৫:৩৮

রিফাত হোসেন বলেছেন: + দিলাম আমি এই রকম বহু মন্তব্যই করেছি কিন্তু কেউ তেমন সারা দিল না । :( তবে আপনাকে ধন্যবাদ । :)

কিন্তু থেকে যায় ! এইভাবে এই ক্ষেত্রের মান বৃদ্ধি করলে তাদের বেতন স্কেল তথা net wage সামান্য বৃদ্ধি করলেও gross wage অনেক বৃদ্ধি পাবে ! যা মালিক পক্ষে ইহ জীবনে করবে না :(

আর সেটা করলে বাংলাদেশ আদতে কাপড় তৈরী খরচ পুষিয়ে বাহিরের অর্ডার ধরতে পারবে কিনা ? নাকি বাহিরের কোম্পানীরা সস্তা কিন্তু উন্নত কাপড় খরিদদাররা আগ্রহী হবে কিনা সেইটাই প্রশ্ন ! :(

এই সব ফ্যাসেলিটি তো প্রত্যেক দেশে তারা নিজেরাই কাপড় তৈরী করতে পারে, বিশেষ করে ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের দেশগুলি কিন্তু তাদের পারিশ্রমিক মূল্যায়ন করে ঠিক যেভাবে আপনি উপরের পয়েন্টু মূল্যায়ন করেছেন , অনেকক্ষেত্রে আরও বেশী !

যে আশা আপনার সেটা আমরাও কিন্তু আদতে তা সহজে হবার নয় । আম্রিকায় শ্রমিকের কর্ম ঘন্টা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়ে সারা পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পরে সেই আম্রিকায় কিন্তু শ্রম আইন ততটা শক্তিশালী নয় যতটা ইউরোপে ! তাই ইউরোপ নিজেরাই নিজেদের কুড়াল দিয়েছে বলেন বা নিজেদের জন্য মানুষ হিসেবে সঠিক জিনিসটা গ্রহন করেছে সেটাও বলতে পারেন । তাই তাদের জন্য বাহিরের শ্রমই ভরসা ! এইজন্যই চীন, ভিয়েতনাম, সার্কভুক্ত দেশ সমূহ ইত্যাদি থেকে তাদের চাহিদা সস্তাতে কিন্তু কোয়ালিটিতে মিটিয়ে থাকে !

...... এখন... সুন্দর পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছি । .......


মন্তব্য শেষ । :)

১১ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:১১

লাল চাঁন বলেছেন: প্রথমেই মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ, এ লেখায় দেখে থাকবেন যে শ্রমিকের মজুরীর ব্যাপারে আমি কিছুই বলিনি বলেছি গার্মেন্টস এর পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে। মূলত এই সুবিধাগুলো এ্যাড করলেই খরচ বেড়ে যাবে। তারপরও আমি মনে করি এ সুবিধা প্রদান করলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় কম খরচই পোশাক রপ্তানী করতে হবে

৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৯

আরিফ আহমেদ বলেছেন: টক লট ব্যবসায়ীদের জন্য সাইট লট হাট ভিজিট করার আমন্ত্রন রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.