![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কি তা আমি নিজেই জানি না ! হয়তো ঘাস কিংবা কাঁচপোকা কিংবা কিছু অন্য গল্পের অন্য রাজ্য
বাজারে প্রায়ই দেখা যায় লোকটিকে, ময়লা একটা পাঞ্জাবী পরে সবার কাছে একটাই আবেদন করে, “ভাই কয়ডা ট্যাকা দেন না ভাই, বউ পোলাপান লয়া খামু”
লোকটার নাম জাফর শেখ পদ্মার পাড়ে একটা ঝুপড়ি বানিয়ে থাকে । দারিদ্রতা যেমন তার পাঞ্জাবিকে গ্রাস করেছে ঠিক তেমনি গ্রাস করেছে তার সেই ঝুপড়ি ঘরটিকে । হাজার জোড়াতালি দেয়া ঝুপড়ি ঘরটি যে কিভাবে দাঁড়িয়ে আছে সেটাও ভাবার বিষয় !
জাফর শেখের পরিবারে তার স্ত্রী আর একটাই মেয়ে নাম --- রুপা । রুপাটার বয়স ৫ বছর । সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ায় পদ্মার ধারে । এইতো কয়েক বছর আগে জাফর শেখ যখন হোটেলে কাজ করতো তখন এক বর্ষার রাতে তাদের ঘর আলো করে এসেছিল রুপা ।
জাফর শেখের হাঁপানির সমস্যাটা না থাকলে হয়তো হাত পাততে হতো না তাকে, কাজ করে যেকোনো ভাবেই হোক তার পরিবার চালানোর খরচ জোগাড় করতো সে । মানুষের কাছে হাত পেতে দিনানিপাত করতে অনেক কষ্ট হয় তার । লজ্জায় কখনো মাথা তুলে কথা বলতে পারে না সে কোন জায়গায় !
সবকিছুতেই বাঁধ সেধেছে তার দুর্বোধ্য হাঁপানিটা , হোটেলের ধোঁওয়াতে খুব সমস্যা হতো তার, হোটেলে যতদিন কাজ করেছে , তার শরীর কখনো সাঁয় দেয় নি । সারারাত খুক খুক করে শুকনো কাশি দেয়া দায়িত্বটুকু ঠিক নিতে পেরেছিল শুধু ঐ শরীরটা !
তাই শরীর বাবাজীকে ঠিক রাখতে সারা বাজার ঘুরে ঘুরে যা পায় তা দিয়েই সংসার চালায় জাফর শেখ !
কোন রকমে আধপেটা খেয়েই দিন পার করে জাফরের পরিবারের তিন সদস্য ।
জাফর দরিদ্রের শ্রেণীতে পড়ে না, তার সীমাটা মনে হয় এর থেকেও নীচে ।
কখনো কারও আবদার পূরণ করতে পারেনা সে ।
রমজান মাস আসায় আবার নতুন বিপত্তি বেঁধেছে,
রুপাটা খুব আবাদার করছে কয়েকদিন ধরে
সারাদিন ঘুরে জাফর শেখ যখন বাড়ি ফেরে রুপাটা ঠিক বেড়ালছানার মতো গা ঘেঁষে বসে যায় জাফর শেখের পাশে
রুপাটার একটাই বায়না প্রতিদিন-
“ বাজান আমারে কিন্তুক গুলাপি একটা জামা কিইন্যা দেয়ন ই লাগবো ঈদোত । বুঝলা বাজান কি কইলাম ? ও বাজান শুনসো তো কি কইলাম আমি ”
প্রতিদিনের এই আবাদার আবদার খেলা দেখতে ক্লান্ত মরিয়ম বিবি । মরিয়ম বিবি রুপার মা । ডাটা রান্না করা আর আলু ভর্তা করা যেন তার নিত্যদিনের চাকরি ।
বাবা আর মেয়ের এই নিরস আবদার খেলা দেখে ক্লান্ত হয়ে একদিন সে বলেই বসে জাফর শেখ কে –
“ কিগো ! তুমি এত পাষাণ ক্যান ? এতোটুকুন একটা মাইয়্যা বেশী কিছু তো চায়নায় গো । একটা জামা চাইসে তাতেই তুমি কুনু উত্তর করো না ক্যান ?
তুমি খালি পাষাণের বুক বাইন্ধা শুনো । মাইয়া ডারে কুনু কিসুই কও না ক্যান ?”
অভাবে হয়তো অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়, কিংবা অনুভূতিকে একদম চিবিয়ে খেয়েই ফেলে অভাব ! তাই সেদিন জাফর তার স্ত্রীর প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারে নি
শুধু মাথা নিচু করে একটা শব্দ করেছিলো-
“হু”
অতঃপর চাঁদ রাতঃ
জাফর শেখ রাত ৯টার দিকে ২৭০ টাকা খুব শক্ত করে মুঠবন্ধ করে--- এই দোকান সেই দোকান ছুটোছুটি করছে । একটা গোলাপি জামা তার চাইই চাই !
রুপাটা যেদিন থেকে বায়না ধরেছিল জামার সেদিন থেকেই জাফর শেখ ১০-২০ টাকা আলাদা করে জমা করতো প্রতিদিন
কিন্তু একটা সমস্যা হয়েছে । গোলাপি জামা মানেই কি অনেক দামি নাকি ?
হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু না, ইদানিং নাকি যে রঙের চল বেশী সে রঙের জামার দামও বেশী
শেষমেশ গোলাপি জামা কিনতে পারে না জাফর শেখ
ঐ টাকায় একটা সবুজ জামা কিনে সে, রুপার জন্য
“সবুজ রঙ তো ঠাণ্ডা রঙ, সবুজ রঙ চোখের জ্যোতি বাড়ায় এসব কথা জানে না জাফর শেখ !”
কিন্তু এটা খুব ভালভাবে জানে এই জামাটা হয়তো রুপার চাহিদা টাকে ঠাণ্ডা করতে পারবে !
রাত ১১টার দিকে বাড়ি ফিরে জাফর শেখ
রুপা তখন ঘুমাচ্ছে
আলতো হাতে রুপার ঘুম ভাঙিয়ে জাফর শেখ বলে-
“ মা দ্যাখ তোর লাইগা নতুন জামা আনসি আমি , তুই রাগ করিস না মা গুলাপি জামা কিনতে পারি নাই রে মা । গুলাপি জামার অনেক দাম । তুই একদম রাগ করিস না মা”
নতুন জামা পাওয়ার আনন্দে রুপা একলাফে ঘুম থেকে জেগে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে ঠিক জোঁকের মতো !
আর বলে —
“ থাক বাজান আমার এই জামাডাই ভালা , লাগবো না আমার গুলাপি জামা”
রুপা বেড়ালের মতো গা ঘেঁষে ঘেঁষে বলে
বাজান আমি তুমারে অন্নেক ভালবাসি বাজান !
জাফর শেখ তখনো হাঁপাচ্ছে কিন্তু এই হাঁপানিটা অসুখের না ।
এই হাঁপানি আনন্দের !!!!!
©somewhere in net ltd.