নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত কথন

শুন্য দেখছি !

লাট্টু

আমি কি তা আমি নিজেই জানি না ! হয়তো ঘাস কিংবা কাঁচপোকা কিংবা কিছু অন্য গল্পের অন্য রাজ্য

লাট্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফুলির ফুলশয্যা

২১ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:১৮







বুড়িগঙ্গায় একটা লাশ ভাসছে, সকাল এখনো হয়নি । কালো রাত পায়নি এখনো আলোর ছোঁয়া, অবশ্য রাতের কালো আর বুড়িগঙ্গার পানির রঙ প্রায় একই !

লাশটাকে বুকে নিয়ে কি, কোন পাপ করেছে বুড়িগঙ্গাটা ? নাহ পাপ করেনি !

সব কালো নোংরা আবর্জনা বুকে ধরাতো বুড়িগঙ্গার অভ্যাস !



কয়েকটা কাকের ডাক শোনা যাচ্ছে মাঝে মাঝে, কাকগুলো এখনো হয়তো লাশটা দেখতে পায়নি, দেখতে পেলে অবশ্যই ঠুকরে দিতে আসবে !

অযত্নে ভেসে আসা লাশতো আবর্জনার মতোই !



সস্তা সুতি শাড়ি আর রঙ্গিন বাটিকের ব্লাউজ পরা লাশটা তাই আপন গতিতেই এগুচ্ছে তীরের দিকে ! লাশ তো লাশ ই, লাশের আবার নাম থাকে নাকি ?



লাশটা যখন জীবিত ছিল তখন কিন্তু খুব দাপট ছিল তার !

নামও ছিল খুব চমৎকার !

ফুলবানু , সবাই ডাকতো ফুলি নামে ।

ছোটবেলায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করতো সে,

সেই কারনেই নামটা হয়েছে ফুলি !



“ফুল নিবেন গো আপা ফুল, বকুল ফুলের মালা !” এই কথা বলতে বলতে তাকে দেখা যেত গোটা সিগন্যাল আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে ।

ছোট বেলায় চঞ্চল থাকা ফুলি, বড়বেলায় তার চঞ্চলতা হারিয়ে হয়ে ওঠে চটুল চপলা !



“স্যুট টাই এর মোড়কে বাঁধা সভ্য সমাজ চপলাতা নিয়ে সোচ্চার হয়,

চটুলতা নিয়ে কথা বলে কিন্তু সে কথা গুলোর উদ্দেশ্য তার কন্যা কিংবা পরিচিত গণ্ডি ,

ফুলির মতো পতিতার মোড়ক যেখানে চপলতা এবং বিজ্ঞাপন হিসেবে ওষুধের মতো কাজ করে চটুল স্বভাব, সেখানে—

সভ্য সমাজ চোখে কোন অদৃশ্য পট্টি বাঁধে নিশ্চয়ই !

আচ্ছা সে পট্টিটা কি বাঁধা হয় কামদেবির সুগন্ধি রুমাল দিয়ে,

নাকি ওটাও কোন পতিতার ছিড়ে যাওয়া আঁচল ?”



পার্কে প্রেমিক প্রেমিকা দেখলেই ফুলি বলতো — “ভাইয়া আপারে ফুল কিইন্যা দেন না, খুবই সুন্দর গন্ধ”

---হ্যাঁ “গন্ধ”

---- ফুলের যেমন গন্ধ থাকে,

ফুলির ও ঠিক সেরকম গন্ধ ছিল ,

তা না হলে ফুলির কাছে অনেকেই সুখ জোয়ারে ভেসেছে কেন ?



ফুলির চেহারা ফুলের মতোই বলতো অনেকে,

ছোটকালে বয়স যখন ছিল ১২ কি ১৩ তখন অনেক বিদেশী পর্যটক ফুল হাতে তার ছবি তুলত !



অভাবের আঁধার ঘোচানোর জন্যই হয়তো ছিল সুন্দর চেহারা । প্রহসন ই বলা চলে এটাকে, কারন একটা সুন্দর আয়না কেনার যার সামর্থ নেই সে কি রূপ ধুয়ে পানি খাবে ?



“ফুলি তো এখন লাশ ! তবে কি মিডিয়া আসবে না ছবি তুলতে ?

ফুলিকে নিয়ে কি হবে না কোন রিপোর্ট ! থাক রিপোর্ট না হলেই ভালো, কারন পেটের দায়ে গার্মেন্টসে যখন কাজ করতো সে তখন তো রিপোর্টার যায় নি ফুলির কাছে !

উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করেনি এত কম আয়ে কিভাবে চলে খরচা !”



কিংবা পেটের দায়ে যখন সে পতিতা হয়

তখন তো আসেনি কোন মানবাধিকার কর্মী !

মানুষ থাকতে আসে না কোন মিডিয়া, পতিতা হওয়ার আগে আসে না কোন মানবাধিকার কর্মী ! তবে তারা লাশ দেখতে আসবে কেন ?

লাশ হওয়ার জন্য কি কারন ছিল ফুলির ?

ফুলি তো কোন দোষ করেনি ওর জানামতে !



দোষ কার ? দোষ তাহলে ক্ষুধার অথবা একটু ভালো থাকতে চাওয়ার !



ফুলির কোন প্রেমাধিকার ছিল না ,

ফুলি কানে ফুল গুঁজতো খদ্দের খুশি করার জন্য ।



চোখে কাজল দেয়াটাও আনতোনা তাই অলস ভাবনার আনাগোনা !

ফুলির পাঁজরের হাড় গুনেছে কতো হাত । ফুলি মনে রাখতোনা কিংবা জানতোনা , ক্ষণিকেই ভুলে যেত !



কতো সভ্য সমাজের স্যুট টাই পরা লোকের সাথে ফুলি করেছিলো অবোধ লীলা । বাদ যায় নি গালভর্তি দাড়ি ওয়ালা মোল্লাও !



ফুলির কয়েকটা স্বপ্ন ছিল, বাঁচার স্বপ্ন ! কিংবা সেটা সুস্থ স্বপ্ন !

কতো মানুষের “হারামজাদী বেশ্যা” গালি শুনেও সে স্বপ্ন বুনতো !

ফুলিতো কবি ছিল না ! কিন্তু চৌকাঠে হেলান দিয়ে যখন সে ভাবতো তখন তাকে ঠিক উদাসীন কবির মতোই মনে হতো !



ফুলির সখিরা আনমনা ফুলিকে দেখলেই বলতো,

কি ফুলবানু? নাগরের কথা ভাবতসো নি ?

ফুলি বিরক্ত হয়ে বলতো – “যা তো খালি ত্যারা মার্কা কথা কস ক্যান তোরা ? আমাগোর কি স্বপ্ন দ্যাখোন মানা নাকি রে ?”



ফুলি সংসার করার স্বপ্ন দেখতো । পলাশ নামের এক খদ্দের মাঝে মাঝে বলতো “ফুলি তুই আমার হয়া যা

আমি তোরে এই শহর থেকে অনেক দূরে নিয়া যামু !

তোরে যেইদিন পরথম দেখসি সেইদিনই তরে আমি ভালবাসছি রে ফুলি

জানস ফুলি তোরে না খুব আদর যত্ন করতে মনে চায় আমার !

হাচা কইতাসি ফুলি, তরে আমি খুব ভালোবাসুম ,

আমার ঘরে তোরে যত্ন কইরা রাখমু !



ফুলি প্রথম প্রথম বলতো--- এহ পতিতার আবার ঘর সংসার !



কিন্তু পলাশ ঠিক আঠার মতো লেগে থাকতো ।

“পলাশ বেশ দক্ষ এই কাজে । সে মফস্বল থেকে সুন্দরি পতিতাদের এভাবে বড় বড় হোটেলে কিংবা দালালের কাছে নিয়ে যায় । পলাশ ঠিক জানতো একদিন না একদিন ফুলি রাজি হবেই !”



ফুলি রাজি হয়েছিলো , সংসারের লোভে ফুলি পলাশের হাত ধরে বের হয়ে খুব মুক্তি খুঁজেছিল !

চুলে গেঁথেছিল সেদিন রজনীগন্ধার মালা ।

নতুন আলতা কিনে পরেছিলো পায়ে !

কাজলে খুব মায়া বুনেছিলো ফুলি সেদিন !

ফুলির স্বপ্নের ডানা পাখা মেলার আগেই, পলাশ তাকে নিয়ে যায় আরেক মহাজনের কাছে ।

ফুলিকে বলে--- নে হারামজাদী তোর নতুন সংসার ।

এহ পতিতার কি শখ সংসারের,

হারামজাদী ভাবসে ওরে আমি বিয়া করুম ।

খায়া কাম নাই আমার তাই না ?

কতো মানুষের লগে রাইত পার করসস তার হিসাব নাই ! সংসার করার স্বপ্ন দেখনের আগে তোর লজ্জা করে না ?



দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলে----



“তোরে বিয়া করুম রে আমি

ভালো মতো চিন আমারে

আমি কেমন ভালো মতো বুঝ শালি

তোর মতো কতো বেশ্যারে স্বপ্ন দেখাইসি আমি !”



ফুলি সব শুনে চুপ করে থাকে, কিছুই বলে না সে ! কিন্তু স্বপ্ন দেখে সেটা মোছার শক্তিটুকু কোথাও খুঁজে পায় না ফুলি ,



ফুলির আর চৌকাঠে হেলান দিয়ে ফুলশয্যার স্বপ্ন দেখা হবেনা

কিংবা হবেনা আর কোনোদিন শান্ত স্বপ্নপাখির ডানায় আলতো হাত বোলানো !

জীবনের পাতাটা হঠাৎ এরকম ওলটানো সহ্য করতে পারেনি ফুলি !



সবকিছু ভুলে যেতে তাই

গভীর রাতে বুড়িগঙ্গায় ঝাঁপ দেয় সে

ফলাফলে কিছুই আসে না অবশ্য ,

ফলাফলে বাড়ে একটা বেওয়ারিশ লাশ ,

আর কতো গুলো হলুদ দাঁতের ডোমের নিত্য দিনের কাজ !

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.