নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন

লক্ষণ ভান্ডারী

কবিতা

লক্ষণ ভান্ডারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসা শুধু ভালবাসা (নবম পর্ব)

১৬ ই মে, ২০১৯ সকাল ১০:৫৮

ভালবাসা শুধু ভালবাসা (নবম পর্ব)



আশায় বাঁধি খেলাঘর
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

-হেই বাপ! তু মানুষ খুন করেছিস? ঝুমলি আঁতকে ওঠে।

-মানুষ নয় রে ঝুমলি, আমি যাকে খুন করেছি সে একটা ব্রিটিশের পা চাটা কুত্তা। পঞ্চাশ কোটি ভারতবাসীর আশা আকাঙ্খাকে যারা দুপায়ে মাড়িয়ে দিতে পারে তাদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

-তুর কুথা হয়ত ঠিক। কিন্তু পুলিশ তুকে ছাড়বেক লাই। তুর জেহেল হতি পারে।

- না ঝুমলি। অরণ্যের ঘুম ভাঙছে। জেগে উঠেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য উত্তাল হয়ে উঠেছে। একদিন ব্রিটিশদের এদেশ ছেড়ে যেতেই হবে। হুঁসিয়ার সাবধান।

-বাবুজি!

-এই কয়দিনে তোমরা আমার যা উপকার করেছো তার দাম হয়তো আমি কোন দিনই দিতে পারবো না। ভারতবর্ষের ইতিহাস যদি কোনদিন লেখা হয় তাতে হয়তো তোমার নাম লেখা থাকবে না। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার জন্য তুমি যা করলে তার দাম অনেক। একজন তরুণ বিপ্লবীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে না দিয়ে তাকে থাকার অধিকার দিয়ে তুমি আমার অনেক বড় উপকার করলে।

তারপর 1947 সালের 15ই আগস্ট। দেশ হল স্বাধীন। স্বাধীন ভারতবর্ষে উড়লো অশোক লাঞ্ছিত ত্রিবর্ণ পতাকা। স্বাধীনতার পর এক এক করে কতগুলো বছর কেটে গেল, কিন্তু বাবুজির কোন সংবাদ পেল না ঝুমলি। ঝুমলি আজও তাকে খুঁজে বেড়ায়। আজও সেই তরুণ বিপ্লবী তার হৃদয় জুড়ে আছে। ঝুমলির চোখে স্বপ্ন তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার। জীবনের বালুচরে বাঁধা এরকম কত ঘরই যে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে কে তার খবর রাখে?

অথচ আজও শাল পিয়ালের বনে মোরগেরা ডেকে ওঠে। বাঁশের বাঁশির সুরে সাঁওতালেরা মাদল বাজায়। মহুল বনে মহুলের নেশায় সবাই যখন মাতাল হয়ে ওঠে ঝুমলি ভাবে এটা সামাজিক রীতি নয়। মাতাল হওয়াটা আজ তাদের কাছে স্বাভাবিক বলেই আদিবাসী সমাজে স্বীকৃতি পেয়েছে।

ঝুমলি কিন্তু আজও বিয়ে করে নি। ঝুমলি তার বাবাকে দেখে নি। জন্মের পরে মাকে হারিয়েছে। তার মা মারা যাবার পর দাদু তাকে কোলেপিঠে মানুষ করেছে।

তার দাদু মংলি মাঝি তাকে শিখিয়েছে- “মত ডর বিটিয়া। তু জিন্দা বাঘের সাথে ঘর করবি, মহুলের নেশায় বুঁদ হয়ে পাহাড়ী চিতা বুকে লিয়ে লাচবি। তুই মংলি মাঝির লাতিন বুঠে। তুহার ডর করলে চলবেক নাই।”

সেই দাদুকে হারানোর পর অনেকেই তাকে বিহা করার জন্য কথা বলেছে কিন্তু ঝুমলি রাজি হয় নাই। বাকি জীবনটা সে এভাবেই কাটিয়ে দেবে।
শাল পিয়ালের বনের ধারে অজয় নদী তির তির করে বয়ে চলে।

মাঝিরা সুর করে ভাটিয়ালি গাইছে-
ও পরাণ বন্ধু রে……….
সাধ করে তুই বালুচরে কেন বাঁধলি খেলাঘর।
জীবননদীর ঝড় তুফানে ভাঙবে তোর সে ঘর।
আমি আশায় বাঁধি খেলাঘর।

গানের সুরে সুর মিলিয়ে ঝুমলি তারে আজও ডাকে- “বাবুজি তু ফিরে আয়, তু ফিরে আয়। হামি তুহার লাগি আজও বিহা করি লাই। তু ফিরে আয় বাবুজি তু ফিরে আয়”।
ঝুমলির দু’চোখ জলে ভরে আসে।

ঝুমলির কান্না ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে কান্না হয়ে নেমে আসে অজয় নদীর বাঁকে। বলাকারা পাখা মেলে নীল আকাশে উড়ে যেতে যেতে এখানে এসে থমকে দাঁড়ায়। হয়তো এখানে কোথাও লুকিয়ে আছে কোন এক অজানা তরুণ বিপ্লবী আর ঝুমলির নীরব ভালবাসার ইতিকথা।

ঝুমলি নীল আকাশের দিকে আজও চেয়ে থাকে। সোনালী আলোয় অজয়ের চর রঙিন হয়ে আসে। ধীরে ধীরে নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। নীল আকাশে চাঁদ ওঠে। শাল পিয়ালের বনে জোছনার লুকোচুরি চলে। ঝুমলির চোখে ঘুম নেই। অজয় নদীর বাঁকে শেয়াল কেঁদে ওঠে।

(চলবে)
আগামী দিনে ভালবাসা শুধু ভালবাসা দশম পর্ব প্রকাশিত হবে। আক্রমনাত্মক বা কড়া সমালোচনামূলক মন্তব্য করবেন না। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততার জন্য সময়ের অভাবে অথবা প্রয়োজনবোধে লেখক প্রতিটি মন্তব্যের প্রত্যুত্তর নাও দিতে পারেন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:


বাবু, এটা কি ছবি দিলেন? লোকজন বেকুব নাকি, মেয়েদের গায়ে পা রেখে কি হচ্ছে?

২| ১৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৮:০২

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার লেখা।

৩| ১৭ ই মে, ২০১৯ ভোর ৪:২৯

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.