নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন

লক্ষণ ভান্ডারী

কবিতা

লক্ষণ ভান্ডারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড সপ্তম পর্ব

২৭ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:৫১

ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড সপ্তম পর্ব।



সানাই বাজে ভালবাসা কাঁদে
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

-এটাই তোমার শেষ কথা?
-হ্যাঁ বাবা, অভিনব ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি তাকে ভালবাসি বাবা।
-অভিনবকে তোমাকে ভুলে যেতে হবে মা। আগামীকাল পাত্রপক্ষ তোমাকে দেখতে আসবে। ওদের পছন্দ হলেই আমি ভালো দিন দেখে সেই পাত্রের হাতেই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা পাকা হবে।

সুনীতার মা এবার এগিয়ে আসে। বলে- “মেয়েকে আস্কারা দিয়ে তুমি মাথায় তুলেছো। আগেই বলেছিলাম ভালো দিন ক্ষণ দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও। কলেজে পড়া ওর হবে না। তখন তো শোন নি এবার কি করবে তুমিই ভেবে দেখো।”

সুনীতা মায়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। কাঁদতে কাঁদতে বলে- “মা, তুমি বাবাকে বুঝিয়ে বল না। ওকে ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।”

সুনীতার বাবা এবার হুংকার ছাড়েন। বলেন- “কি আছে অভিনবর মধ্যে। কোন কাজ করে না। বেকার। বেকার ছেলের হাতে তোমাকে দিলে পারবে তুমি সুখী হতে?”

সুনীতা বলে- “কাজ করে না ঠিকই কিন্তু ওর একটা মন আছে, বাবা মন। যা অন্য কারো ভালবাসা থেকে আলাদা। ওকে আমি কোনদিনই ভুলতে পারবো না মা।”

মাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে সুনীতা।

চোখের জল! বড় ভয়ংকর জিনিস। মায়েরা মেয়েদের সব সইতে পারে, পারে না শুধু চোখের জল দেখতে। তাই সুনীতার মা বলে ওঠেন- “ওগো, তুমি পাত্রপক্ষকে বারণ করে দাও। বলবে- মেয়ের এখন বিয়েতে মত নেই। কলেজের পড়া শেষ করে তবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবে।”

এবার সুনীতার বাবা গর্জন করে উঠলেন। বললেন- “ওদের আমি আসতে বলেছি। আগামীকাল পাত্রী দেখতে আসছেন। এখন ওদের কি বারণ করা চলে? তোমরা কি ভাবো আমার কথার কোন দাম নেই।”

পরে আর একটু স্থির হয়ে বললেন- “তুমি একটু সুনীতাকে বোঝাও। কি আছে অভিনবর। না চাকরি, না টাকাপয়সা, ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স- নাথিং কিচ্ছু না। ওই ছেলেকে বিয়ে করলে তোমার মেয়ে সুখী হতে পারবে?”

এরপর আর কোন কথা নেই। অগত্যা সুনীতার বাবার কথাই থাকলো। আগামীকাল পাত্রপক্ষ পাত্রী দেখতে আসবেন- তার ব্যবস্থা করা হলো। সেদিন সন্ধ্যায় সুনীতার বাবা অভিনবকে ডেকে পাঠালেন। অবশ্য সুনীতাই অভিনবকে বলেছিল- “বাবা তোমাকে ডেকেছেন। আসবে কিন্তু অবশ্যই।”

সেদিন সন্ধ্যায় সুনীতা মাকে নিয়ে একটু ঘুরতে বেরিয়েছে। বাড়িতে কেউ নেই। সুনীতার বাবা একা বসে একটা বাংলা টিভি সিরিয়াল দেখছিলেন, এমন সময় অভিনব এলো। বলে- আপনি আমায় ডেকেছেন কাকাবাবু!

সুনীতার বাবা বললেন- “হ্যাঁ, বসো। তোমার সাথে কথা আছে।”

এরপর গম্ভীরভাবে বলতে শুরু করলেন। “আমি জানি তুমি সুনীতাকে ভালবাস? কিন্তু তোমাদের ভালবাসাকে আমি মেনে নেবো না। আর মনে রেখো- গরীব হয়ে একটি ধনীর মেয়েকে ভালবাসা অপরাধ। আর সেই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত তোমাকে করতে হবে।”

-“বলুন কি করতে হবে”?

- “ভালবাসার মিথ্যা অভিনয় করতে হবে। তুমি বলবে সুনীতা, আমি তোমাকে ভালবাসি না। যেটা ছিল সেটা হল মিথ্যা, অভিনয়। আমি আর একটা মেয়েকে ভালবাসি। তাকে নিয়ে আমি ঘর বাঁধতে চাই।”

“না, না, অমন কথা বলবেন না কাকাবাবু। আমি সুনীতাকে ভালবাসি, সুনীতাও আমাকে ভালবাসে। এর পর আমি যদি আপনার বলা কথাগুলো বলি- সুনীতা মনে কষ্ট পাবে। ওর কষ্ট মানে আমার যন্ত্রণা।”

“তুমি কি চাও না যে সুনীতা সুখী হোক। যদি তাই হয় তাহলে তাকে সুখী করতে একথা বলতে তোমাকে হবেই।”

এমনি সময়ে সুনীতাকে নিয়ে সুনীতার মা আসে।

বলে, “আরে অভিনব! কখন এলে? বসো, আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসছি”

“না কাকীমা, বসবো না। আর চায়ের প্রয়োজন হবে না। আমি চলে যাচ্ছি কাকীমা।”

সুনীতা কিছুই বুঝতে পারে না। অভিনব এর আগে যতবারই তাদের বাড়ি এসেছে, নিজেই তার মাকে চায়ের অর্ডার দিয়েছে। আজ একি হলো অভিনবর।

অভিনব বলতে শুরু করে- “সুনীতার সাথে জরুরী একটা কথা বলার ছিলো। তাই এসেছিলাম”।

সুনীতা তাকে হাতে ধরে সোফায় বসায়।

সুনীতা বলে “কি জরুরী কথা? কিসের কথা? কার সাথে? নিশ্চয়ই আমার সাথে?”
বল অভিনব কি বলবে?

“এতদিন তোমার সঙ্গে আমার যে অবাধ মেলামেশা ছিল। সেটা ছিলো শুধু ভালবাসার অভিনয়। আমি তোমায় ভালবাসি না, বাসতে পারি না। সোনার চামচ মুখে দিয়ে তোমার জন্ম হয়েছে, কেন তুমি একটা গরীবের ছেলেকে ভালবেসে দুর্ভাগ্যের বোঝা মাথায় নেবে। তুমি আমাকে ভুলে যেও সুমিতা। আর কোন তোমার সাথে আমার দেখা হবে না। এই দেখাই শেষ দেখা।” কথাগুলো কোনরকমভাবে বলেই চলে গেল অভিনব।

সুনীতার মনে আজ বিষাদের ছায়া। তার চোখের সামনে থেকে পৃথিবীর মাটি সরে সরে যাচ্ছে। মাথার উপর আকাশটা হয়তো এখুনি সশব্দে ভেঙে পড়বে। সুনীতার চোখে টপ টপ করে দু’ফোঁটা অশ্রু ঝরে পরে সুনীতার দুই চোখে।

পরদিন সকালেই পাত্রপক্ষ এসে হাজির। সুনীতার মা- বাবা সবাই তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত। সুনীতার মনটা আজ ভালো নেই। তবু আজ মায়ের পরিয়ে দেওয়া বেনারসী শাড়িতে দারুণ লাগছে সুনীতাকে।

পাত্রপক্ষের মেয়ে পছন্দ হয়েছে। এবার দিনক্ষণ দেখে বিয়ের দিন ধার্য করা।
অবশেষে তাই হলো। আগামী ১২ ই ফাল্গুন, শুক্রবার বিয়ের দিন স্থির করা হোল।
সবাই বিয়ের আনন্দে মেতে ওঠে।

আজ ১২ ই ফাল্গুন, বিয়ের দিন। সকাল থেকেই বাড়িতে বিয়ের সানাই বাজছে।
আর সেই সাথে সানাইয়ের সুরে কাঁদছে ভালবাসা।

বিয়ে বাড়িতে সাউণ্ডবক্সে বেজে ওঠে করুণগীতি-
কেন রে তুই …………………..
নদীর কিনারায় মিছেই করিস আশা,
জীবন নদীর ঝড় তুফানে কাঁদছে ভালবাসা।




(চলবে)
এই পর্বের শেষ অংশ আগামী দিনে প্রকাশ দেওয়া হবে।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৫:১৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনার লেখায় গতি আছে। ভালই লাগলো।

২৭ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৫:২১

লক্ষণ ভান্ডারী বলেছেন: আপনার সু-মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সাথেই থাকবেন এটা প্রত্যাশা করি।
জয়গুরু!

২| ২৭ শে মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: লেখায় মাটি ও মানুষের আমেজ পাওয়া যায়। মনে হয় সবই যেন সত্য কথা। বেশি বেশি মাটি ও মানুষের কথা লিখুন।

৩| ২৭ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: জয় গুরু।

অজয় নদী অনেক মিস করি।

২৮ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০০

লক্ষণ ভান্ডারী বলেছেন: অজয়ের ঘাটে আজিকে প্রভাতে
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

(শুধু আপনার জন্য)

অজয়ের ঘাটে আজিকে প্রভাতে
উঠিল সোনার রবি,
সোনালী আলোতে অজয়ের তটে
দেখি যে সুন্দর ছবি।

খেয়াঘাটে এসে মাঝিরে ডাকিছে
ঘাটে বসে যাত্রীদল,
অজয়ের বাঁকে আসে ঝাঁকেঝাঁকে
শালিকের কোলাহল।

রাঙা চেলি পরা গাঁয়ের বধূরা
কাঁখেতে কলসী লয়ে,
রাঙাপথ ধরে হাঁটে ধীরে ধীরে
জল নিয়ে যায় বয়ে।

অজয়ের জলে স্নান সারা হলে
ফিরিছে সবাই ঘরে,
ক্রমেক্রমে ধীরে বেলা আসে পড়ে
অজয় নদীর চরে।

দিবা অবসানে পশ্চিমের পানে
রবি যবে অস্ত যায়,
আঁধার ঘনায় সাঁঝের বেলায়
অজয়ের কিনারায়।

রাতের আকাশে তারারা ফুটিল
চাঁদ উঠে নদীঘাটে,
জোছনার রাশি খেলে হাসি হাসি
অবশেষে রাত কাটে।

(ব্লগে অপ্রকাশিত কবিতা) আগামীকাল প্রকাশ দেব।

খুব শীঘ্রই আসছি অজয় নদীর কাব্য নিয়ে। ধারাবাহিক ভাবে চলবে এটা প্রত্যাশা করি।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.