![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তুমি নাও একতারা- আমি তুলি ক্লান্ত সরোদ
নাগ নাগিনীর প্রেম নিয়ে বাংলা ভাষায় সাহিত্য আর সিনেমা নেহাত্ কম হয় নি। সেগুলো কখনো গা শিরশিরানো রোমাঞ্চকর অথবা রোমাঞ্চধর, কখনো অবিশ্বাস্য; বেশীরভাগ সময়েই গাঁজাখুরী বলতে যা বোঝায়। কিন্তু আজ যে কাহিনীটা শোনাচ্ছি তাতে অত প্রলেপ দিতে পারবো না, কারণ নিরেট বাস্তব। একেবারে নির্জলা সত্যি কাহিনী যাকে বলে। সত্যি বলেই শোনানোর সাহস পাচ্ছি, নয়ত এমন ক্লিশে সাহিত্য রচনা করার দুঃসাহস দুঃস্বপ্নেও হত না।
যাই হোক ঘটনায় আসি। ঘটনাস্থল আমার এক বন্ধুর বাড়ির পেছন দিকটায়। সেখানে বিশাল এক মাজা পুকুর। কচুরীপানার দঙ্গল এত বিশাল আকারে জমেছে যে তার নিচে পানির ছিটেফোঁটা আদৌ আছে কিনা সেটা একটা রিসার্চের সাবজেক্ট হতে পারে। ছোট শহর না হলে হয়ত রিয়েল এষ্টেট ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে বিশ তলা মাল্টিকমপ্লেক্স সুপার মার্কেট হয়ে যেত, এবং একদিন বিল্ডিং ধ্বসে ........ জন শ্রমিক... যা বাবা কি লিখতে কি লিখছি। যাই হোক এমন গহন কচুরী পানারণ্য যে নাগ-নাগিনীদের অভয়ারণ্য হবে তাতে আর আশ্চর্য কি? মানুষজন ভুলেও তার ধারে কাছে পদধূলী বিসর্জনের সাহস পেতো না। দুপেয়েদের এমন আস্কারা পেয়ে পেয়ে পাহীন আর চতুষ্পদ সরিসৃপদের রাজত্ব সেখানে সগৌরবে অধিষ্ঠিত। অবশ্য কোথায় যেন শুনেছিলাম সাপের নাকি পাঁচ পা। আমি অবশ্য দেখিনি কখনো, আপনারা কেউ দেখেছেন?
এই যাহ আবার বকবক শুরু করলাম। তো সেই অভয়ারণ্যের এক নাগ দম্পতি সকালবেলা পানারণ্যে (জনারণ্যের বিকল্প শব্দ বলতে পারেন) প্রেম করতে লজ্জিত বোধ করে একটু নির্জনতার (অথবা নির্পানাতার) খোঁজে আড়ালে মানে উপরে মানুষের চলার পথে উঠে এসে কর্মকান্ড সম্পাদন করল এবং দুর্ভাগ্যক্রমে এক দুপেয়ের মুখোমুখি হয়ে গেল। মনুষ্যপ্রজাতি বড়ই বিবেকবর্জিত। এরকম সময়ে কাউকে আঘাত করা শাস্ত্রে বারণ থাকা সত্বেও তিনি বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে একখানা দণ্ড সংগ্রহপূর্বক উহাদের নির্লজ্জ অপকর্মের জন্য দণ্ডদানে উদ্যত হলেন। তারা দ্রুতবেগে নিজস্ব দণ্ডকারণ্যে প্রবেশের চেষ্টা করেও শেষরক্ষা করতে পারেনি। দণ্ডাঘাতে পেছনে পড়ে থাকা সর্পগৃহিনী অথবা সর্পপতির (কে সত্যি জানি না) ভবলীলা সাঙ্গ হল। আগে জানলে কি তারা এমন রসলীলায় মত্ত হত!! ভদ্রলোক একজনকে ঘায়েল করেই দায়িত্ব সম্পাদনের তৃপ্তি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে নিষ্ক্রান্ত হলেন। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সত্যি হৃদয়বিদারক। অন্য সাপটি সঙ্গী (অথবা সঙ্গীনির) এমন অপমৃত্যু চাক্ষুষ দেখে আর চুপ থাকতে পারল না। প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে এসে মৃত সাপটিকে পেঁচিয়ে ধরে রইল। তার সেই পেঁচিয়ে থাকা বহাল রইল সাপটি পচে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আগ পর্যন্ত। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন প্রায় দু-তিনদিন। এই দীর্ঘসময় সে অনশনেই কাটিয়েছে নাকি মাঝে মাঝে ক্ষুণ্ণিবৃত্তি মিটিয়েছে তা অবশ্য কেউ বলতে পারেনি। তবে দিনের বেলা সাপটির তীব্র প্রেমের স্বাক্ষী অনেকেই হয়েছিল। অবশেষে ভগ্নমনোরথে সাপটি সবার চোখের সামনে ধীরে ধীরে পানার জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার ভাষা থাকলে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে কি বলত জানি না। বাংলা সিনেমায় ভিলেনের উদ্দেশ্যে নায়কের আস্ফালনের কথা স্মরণ করে দেখা যেতে পারে।
আধুনিক প্রাণীবিজ্ঞানীরা বলেন সাপ মানুষ চিনে রাখে- কথাটা ভুল। ছোটবেলায় আমরা শুনেছি সাপকে আঘাত করলে সে কখনো না কখনো ফিরে এসে প্রতিশোধ নেবেই। বিজ্ঞানীদের এমন অভয়বাণীর পরে যদিও আমরা কিছুটা নিশ্চিন্ত। কিন্তু তারপরেও শুনেছি সাপের প্রতিশোধের ভয়ে অনেকে বাসার চারদিকে তারপিন তেল ছিটিয়ে রাখেন। সাপ ঐ বস্তটিকে ভয় পায় অথবা এড়িয়ে চলে। আমাদের আজকের গল্পের ভিলেন ভদ্রলোক এতসব কাহিনীর ব্যাপারে আদৌ সচেতন ছিলেন না। সেদিন অফিসে চলে যাবার পরে কোন কারণবশত তিনি কর্মস্থলেই ছিলেন তিন চারদিন। ইতোমধ্যে অবশ্য এই হৃদয় বিদীর্ণ করা দৃশ্যের দর্শকদের বিচারে তিনি স্বজাতি বলে ছাড় পাননি। সবার সমবেদনা ঐ গা ঘিনঘিনে বিষাক্ত পিচ্ছিল সরিসৃপদ্বয়ের দিকেই চলে গিয়েছিল। (সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক।) ভদ্রলোক যতদিনে ফিরলেন ততদিনে এ নাটকের যবনিকা ঘটেছে।
ফেরার পরদিন সকালে তিনি সেই পানা পুকুরটির পাশেই নিজেদের পুকুরে হাত মুখ ধোয়ার জন্য ঘাটে আসলেন। এবং কাজ শেষ করে ফেরার আগেই সর্পদংশনে চিত্কার করে ঘাটের উপরে পড়ে গেলেন। কাছাকাছি যারা ছিল, ছুটে এসে একটা সাপকে ধীরে ধীরে পুকুরে নেমে যেতে দেখল। ভদ্রলোককে ধরাধরি করে প্রাথমিক চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হল। যে সাপটি এ ঘটনার নায়ক, তাকে কি কেউ চিনে রেখেছিল? চিনে রাখা সম্ভব কিনা আমি জানি না। তবে সবাই একবাক্যে বলতে লাগলেন, সাপটি প্রতিশোধ নিয়েছে। আমি পুরো ঘটনাটাই পরে শুনেছি, অথচ আমারো মনে হয়েছে, এটা সেই সাপটারই কীর্তি। আপনারা কি বলেন?
২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:৪৫
আজমান আন্দালিব বলেছেন: হতে পারে।
১১ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:৫৯
লুতফুল বারি পান্না বলেছেন: হয়ত...
৩| ১০ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:৪৮
তামজীদ ইবনে মিনহাজ বলেছেন: আজব ঘটনা, ছোট একটুকরো বাংলা সিনেমাই বলা যেতে পারে।এতো সুন্দর করে গুছিয়ে লেখার জন্যে ধন্যবাদ।
১১ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:০০
লুতফুল বারি পান্না বলেছেন: বাংলা সিনেমা কিনা জানিনা, তবে কাহিনীতে সাসপেন্স, ড্রামা, অ্যাকশন সবই আছে নিঃসন্দেহে...
৪| ১০ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:৫১
ঈবলিশ বলেছেন: অরিজিনাল নাগিন! ক্লিক!
৫| ১০ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ২:৩৮
প্রভাষক বলেছেন: কাকতালীয় হওয়া-ই স্বাভাবিক... কারণ... আমার বেশ কয়েক-জন বন্ধু-কে চিনি... যারা আজ-ও বেঁচে আছে!!!... সাপ মারা-র পর-ও...
১১ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:০৩
লুতফুল বারি পান্না বলেছেন: আমিও এমন অনেককে চিনি, ইভেন আমার বাবাও এসব মোটেই বিশ্বাস করতেন না। প্রচুর সাপ মেরেছেন। কিন্তু এই কাহিনীটা অবশ্যই একটু ব্যতিক্রম। ভালবাসা নামক একটা বিষয়ের ভূমিকা থাকতেও পারে...
৬| ১০ ই অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৬:৪৫
আকাশ_পাগলা বলেছেন: ঐ খানে ত আগে থেকেই সাপের আড্ডা। যে কোন একটা সাপ দংশন করতেই পারে।
কই যেন শুনছিলাম, সাপ অনেক বাচ্চা দেয়। কিন্তু লিকলিকে বাচ্চা গুলো পুরুষ সাপদের প্রিয় খাদ্য। ওরা ধুমাধুম খেয়ে ফেলে। আর স্বাস্থ্যবান বাচ্চাগুলো টিকে থাকে। এখন পেঁচায়া ধরার কী কারণ থাকতে পারে? এটা না ত?
১১ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:০৫
লুতফুল বারি পান্না বলেছেন: কোন কিছুই অসম্ভব নয়, বিশেষত অন্য প্রাণীদের মনজগত মানুষের মত হবে এমনটা ভাবাই তো অসংগত। তবু ঘটনাগুলো ঘটেছে... তার ব্যাখ্যাও নিঃসন্দেহে আছে...
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:৪১
লুতফুল বারি পান্না বলেছেন: দুঃখিত, ছবি অ্যাড করার চেষ্টাজনিত সমস্যার কারণে পোষ্টটি ডিলিট করতে হয়েছিল। তবু করতে পারিনি। কেউ ছবি অ্যাড করার সিস্টেম জানলে জানাবেন দয়া করে।