নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার একটি গল্প ছিল লিখবো বলে ফেলে রেখেছি...

গল্পক

নির্ঘুম জেগে থাকার নাম হতে পারে স্বপ্ন অথবা শুধুই একটি রাত..।

গল্পক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প- একজন পতিতার ত্যাগ ।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৪

ত্রিশ পেরিয়ে যাওয়া গোলাপী বেগমের এখনো খদ্দেরের অভাব নেই । অন্যান্যদের থেকে গোলাপী বেগম যেখানে আলাদা তা হলো, নিয়মিত যোগ ব্যয়াম করা, খাওয়া স্ট্রিক রুটিন মেনে চলা । এর ফলে তার শরীরের গঠন মুভির নায়িকাদের থেকে কোন অংশে কম নয়, নেতিয়ে পড়া যে কোন আধমরা লোকের যৌবনেও সজোরে কড়া নাড়তে বাধ্য এমন রগরগে শরীর। শারীরিক গঠন এবং লাবণ্য ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার সে সবই করে, শুধু মদ পান করাটা ছাড়তে পারছে না । এ জগতে পা রাখার সময় তাকে কেউ একজন বলেছিল, মাতাল হলে সকল প্রকার দুঃখ যন্ত্রণা ভুলে থাকা যায় । কিন্তু এখন যন্ত্রণা ভোলার জন্য তাকে মদ পানের পরও মাতালের ভান করে থাকতে হয় !

গোলাপী বেগমের নিয়মিত কিছু খদ্দেরের মধ্যে পিয়াল একজন । পিয়ালের দুই দিন পরপর গোলাপী বেগমকে দরকার হয়, কখনো সে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে আসে, আবার কখনো সে নিজে চলে যায় তার বাসায় । গোলাপী বেগমও এই খদ্দেরকে ধরে রাখতে চায়, কারণ পিয়াল টাকা বেশি দেয় আর তার অমায়িক ব্যবহার । পিয়ালেরও টাকা পয়সার অভাব নেই তাই সেও দেয়ার সময় তেমন কিছু ভাবে না ।

একটা সময় পিয়ালের এই বেহায়াপনা জেনে যায় তার স্ত্রী নিশি । নিশি একজন বন্ধ্যা নারী, তাই স্বামীকে কখনো তেমন কোন কিছুতে নিষেধ করে নি । সে পিয়ালকে এও বলেছিল সে যেন আরেকটা বিয়ে করে, যেখানে কোন নারী তার স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে চায় না সেখানে নিশি তা করতে চেয়েছিল অবলীলায়। কিন্তু এমন কুশ্রী কিছুর সম্মুখে নিশি কল্পনায়ও কখনো দাঁড়াতে চায় নি । নিশি যখন আসফাকের কাছে জানতে পারে পিয়াল এমনই কিছুর সাথে জড়িয়ে গেছে, সে তা বিশ্বাস করে নি । তাই সে নিজের চোখে দেখার জন্য একদিন বাবার বাসায় যাবে বলে বাসা থেকে বের হয় । কিন্তু সে বের হয়ে বাসার পাশে পার্কে বসে থাকে, প্রায় ঘন্টাখানেক পর সে দেখতে পেল শাড়ি পড়া একটা মেয়ে বাড়িতে ঢুকছে । সে মেয়েটার পেছন পেছন গিয়ে এক সিঁড়ি নীচে দাঁড়িয়ে থাকে । তখন শুনতে পায় পিয়াল আর মেয়েটার রসাত্বক কথাবার্তা । সে আর সহ্য করতে পারে নি, কম্পনহীন শরীর নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ।

নিশি সারারাত ঘুমাতে পারে নি । সে কল্পনায়ও কখনো পিয়ালকে এমন করে ভাবে নি । নিশি নিজের মনকে বোঝাতে চায়, আমাকে তার ভাল যদি নাই লাগে, আমি তো তাকে বলেছি আরেকটা বিয়ে করতে, আমি শত কষ্ট হলেও মেনে নিতে চেয়েছি কিন্তু সে আমার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করলো কেন ? তাও আবার একটা পতিতার সাথে ! এসব ভাবতে ভাবতে নিশি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে । প্রায় ভোর হয় হয়, নিশি বিছানা ছেড়ে উঠে, চোখে মুখে তীব্র বেগে পানি ছিটকায়, সে আয়নায় তাকিয়ে ভাবতে থাকে খুব দ্রুত এর একটা বিহিত করা দরকার, এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না ।

পিয়াল বারান্দায় বসে বসে পেপার পড়ছে । গোলাপী বেগমের কথা তার খুব মনে পড়ছে । পেপারটা হাত থেকে ভাঁজ করে রেখে চশমা খুলে আঙ্গুল দিয়ে চোখ মুছলো পিয়াল, একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বারান্দা পেরিয়ে পার্কটার দিকে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে । প্রায় এক বছর হতে চললো গোলাপী বেগমের কোন খোঁজ নাই । তার বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি, সন্ধ্যায় পার্কগুলোয় ঘুরে ঘুরেও তার কোন তালাশ মেলে নি । পিয়াল বুঝতে পারছে না, প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেল কিন্তু এখনো অতি নগণ্য একজন পতিতার জন্য তার এতো টান অনুভব হচ্ছে কেন ? কলিং বেলের শব্দ শুনে পিয়াল দরজা খুলতে যায় । দরজা খুলে দেখে নিশি দাঁড়িয়ে আছে, তার কোলে টাওয়াল মোড়ানো একটা ফুটফুটে বাচ্চা । নিশি বলছে , এই দেখো, বাচ্চাটা আমরা রেখে দেয়ার জন্য এনেছি, এটা হবে আমাদের দু'জনের বাচ্চা । পিয়াল বললো, তুমি এই বাচ্চা কোথায় পেলে ? নিশি বললো, আমি অনেকদিন ধরে কিছু হসপিটালের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলাম, পালার জন্য এমন কোন বাচ্চা তারা পেলে আমাকে খবর দিতে । আজকে একটা হসপিটাল থেকে ফোন আসলো । ব্যাস এই বাচ্চাটা পেলাম আর নিয়ে আসলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য ! নিশির চোখে মুখে উচ্ছাস বেয়ে পড়ছে, পিয়ালের মনেও এক রকম আনন্দ খেলা করছে । সে বাচ্চাটা কোলে নিয়ে দেখছে, হাত পা ছোটাছুটি করছে, তার দিকে তাকিয়ে আছে । পিয়ালও মেয়েটার চোখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, চোখ দু'টো দেখতে অবিকল গোলাপী বেগমের মত ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৯

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সুন্দর গল্প ।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৩

গল্পক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.